

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে। মূল সমস্যা হচ্ছে, একটি জটিলতা কেটে গেলে নতুন আরেকটি দেখা দেয়। একটি রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আরেকটি বেড়ে যায়। দীর্ঘদিনের পুরোনো লিভারের জটিলতা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নতুনভাবে খালেদা জিয়ার কিডনি নিয়ে উদ্বিগ্ন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। তাদের ভাষ্য, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে খুব ধীরে।
এমন অবস্থায় খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি মেডিকেল বোর্ড। এখন তাকে প্রতিনিয়ত অ্যাডভান্সড চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশে নেওয়ার জন্য বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার বিষয়টি নির্ভর করবে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের ওপর। গতকাল সোমবারও বৈঠক করেছে মেডিকেল বোর্ড।
৮০ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্রসহ নানা রোগে ভুগছেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত ২৭ নভেম্বর তাকে নেওয়া হয় এভারকেয়ারের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দেশি-বিদেশি দুই ডজনের মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিন বৈঠক করে চিকিৎসায় পরিবর্তন আনছে।
গতকাল সন্ধ্যায় বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) উন্নতি হলেও সেটি আহামরি বলা যাবে না। বয়সজনিত কারণে সেরে উঠতে সময় লাগবে। এ দফায় তার উন্নতি হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। বহুমুখী জটিলতা থাকায় একটি রোগ থেকে সেরে উঠলে আরেকটি দেখা দেয়। লিভার সমস্যার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনি জটিলতায় বেশ ভুগছেন। কিডনির ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বর্ডার লাইন (ঝুঁকিপূর্ণ সীমা) অতিক্রম করেছে বেশ আগেই। এটা নিয়ন্ত্রণে রাখাই কষ্ট হচ্ছে। এখানে বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর। প্রতিনিয়ত ডায়ালাইসিস দিতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস বন্ধ করলেই কিডনির অবস্থার অবনতি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিসিইউতে নেওয়ার পর থেকে প্রতিদিন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত রয়েছে। প্যারামিটারগুলো খারাপ আসছে না, তবে একেবারে ঝুঁকিমুক্তও হচ্ছেন না। সিসিইউতে অ্যাডভান্স টিট্রমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ড প্রতি রাতে বৈঠকে বসে। যেখানে প্রত্যেকটি চিকিৎসক আলাদা রোগ নিয়ে আলোচনা করেন। রিপোর্ট দেখে কিছু ওষুধ বন্ধ করেন, আবার চালু করেন। কিছু ওষুধের মাত্রা কমান কিংবা প্রয়োজনে বাড়িয়ে দেন।’
খালেদা জিয়ার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে গুলশানের বাসা থেকে প্রতিদিন খাবার পাঠানো হচ্ছে। সার্বক্ষণিক খালেদা জিয়ার সঙ্গে আছেন পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান, সৈয়দা শামিলা রহমান, গৃহপরিচারিকা ফাতেমা এবং স্টাফ রূপা আক্তার। বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা সার্বক্ষণিক পাশে আছেন। তাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে কথা বলার চেষ্টা করেন খালেদা জিয়া।
দেশে ফেরার পর মেডিকেল বোর্ডে সশরীরে অংশ নেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ও বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা. জুবাইদা রহমান। তিনি বৈঠক শেষ করে বাসায় ফেরেন। দিনের বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে শাশুড়ির শয্যাপাশে কাটান তিনি। বাসায় থাকার সময়ও টেলিফোনে সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখছেন। চিকিৎসার বিষয়গুলোর তিনি সমন্বয় করেন। ডা. জুবাইদা বেশ কয়েকদিন দেশেই থাকবেন বলে জানা গেছে।
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স: উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আজ মঙ্গলবারও আসছে না। অ্যাম্বুলেন্স অপারেটরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আজ সকালে তাদের ঢাকায় অবতরণ এবং রাতে উড্ডয়নের অনুমতি দিয়েছিল; কিন্তু এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অপারেটর গতকাল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে আজকের ওই স্লট বাতিল করার আবেদন করেছে বলে সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানিয়েছে।
এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা। বিএনপি নেতারা বলছেন, লন্ডন যাত্রার বিষয়টি নির্ভর করছে তার শারীরিক অবস্থার ওপর। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তার চিকিৎসক দল। চিকিৎসার জন্য কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে গত শুক্রবার ভোরে তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল বিএনপির পক্ষ থেকে। পরে ‘কারিগরি ত্রুটির কারণে’ সেই অ্যাম্বুলেন্স আসতে বিলম্ব হওয়ার কথা জানায় দলটি; কিন্তু শুক্রবার কাতার দূতাবাস থেকে বলা হয়, তাদের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসছে না। তার বদলে কাতারের আমির জার্মানি থেকে ভাড়া করে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাবেন। সেই অ্যাম্বুলেন্স কবে আসবে কিংবা খালেদা জিয়াকে কবে লন্ডনে নেওয়া হবে, তা বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো জানানো হয়নি।
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। কাতার আমিরের দেওয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আসার বিষয়টি নির্ভর করবে ম্যাডামের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর। চিকিৎসকরা বললেই আমরা অ্যাম্বুলেন্স চাইব।’ তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল বলে তিনি জানান।
মন্তব্য করুন