আতাউর রহমান, ফরিদপুর থেকে
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:১৬ এএম
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:২১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফরিদপুর সদরে জনপ্রিয়তা বনাম পেশিশক্তির লড়াই

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন
ফরিদপুর সদরে জনপ্রিয়তা বনাম পেশিশক্তির লড়াই

ঢাকা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে চেপে ফরিদপুর জেলা শহরের পাশে রেলস্টেশনে নেমেই নির্বাচনী উত্তাপটা বোঝা গেল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সারি সারি পোস্টার শোভা পাচ্ছিল রাস্তার দুই পাশে। স্টেশন থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশায় চলতে চলতে চালকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। শহরের নির্বাচনী হালচাল জানতে চাইলে চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, কয়েকজন প্রার্থী থাকলেও এখানে (ফরিদপুর-৩ আসনে) জনপ্রিয় আর ক্ষমতাবান—দুই প্রার্থীর লড়াইটা জমে উঠেছে। পেশিশক্তিও রয়েছে এখানে।

রিকশা থেকে নেমে কে জনপ্রিয় আর কে ক্ষমতাবান প্রার্থী, সেই তথ্যানুসন্ধান চলতে থাকল ফরিদপুর শহর ও আশপাশের এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে। লোকজন বলছিলেন, ক্ষমতার দিক থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শামীম হক এগিয়ে। তবে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে এগিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কাদের আজাদ (এ. কে. আজাদ)। তিনি এ আসনে ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

শহরের কমলাপুর অনাথের মোড়ে কথা হয় দোকানি শমসের উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ফরিদপুরে এ. কে. আজাদ সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি বিভিন্ন সময়ে এলাকার লোকজনকে নানাভাবে সহায়তা করেছেন, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। সে তুলনায় নৌকার প্রার্থীর জনসম্পৃক্ততা কম। তবে তার দলীয় ক্ষমতা আছে। কী ক্ষমতা জানতে চাইলে শমসের উদ্দিন তা পরিষ্কার করলেন না। শুধু বললেন, খোঁজ নিয়ে দেখেন, প্রতিদিনই হামলার শিকার হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আজাদের লোকজন। তার নির্বাচনী ক্যাম্পও ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়।

ফরিদপুরের একটি কলেজের শিক্ষক কালবেলাকে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হওয়ায় শামীম হক ক্ষমতাবান। প্রকাশ্যে তার সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা রয়েছেন। তারা প্রভাব নিয়ে নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না পারলেও ভেতরের চিত্র ভিন্ন। তার মতে, ফরিদপুরে এমন ক্ষমতার দাপট আগেও ছিল। মানুষ তা ভালোভাবে নেয়নি। এবার লোকজন একটা আশ্বাস পেয়েছে, ভোট দিতে পারবে। সেই সুযোগটা নিতে ভোটাররাও প্রস্তুত।

মূল শহরের কিছুটা বাইরে অম্বিকাপুর এলাকা। ওই এলাকায় কথা হয় ব্যবসায়ী এখলাস উদ্দিনসহ নানা পেশার কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলেন, নৌকার প্রার্থী আর স্বতন্ত্র ঈগলের প্রার্থীর সঙ্গে লড়াইটা বেশ জমে উঠেছে। নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাই সবাই প্রকাশ্যে তার সঙ্গে রয়েছেন। নিজেদের প্রভাব, বলয় আর সামর্থ্য দেখাতে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও মাঠ গরম রাখছেন। এতে প্রায় প্রতিদিনই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর ছোটখাটো হামলা, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটছে। কোথাও কোথাও স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন তা প্রতিরোধ করতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যাচ্ছে।

এই আসনে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঝামেলা হচ্ছে নৌকা আর ঈগল প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে ভোটাররাও রয়েছেন অজানা আতঙ্কে। গতকাল মঙ্গলবার ফরিদপুর শহরের তেঁতুলতলা, খাবাসপুর, আলীপুর, টেপাখোলা, পুরান বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঘুরে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে আতঙ্কের আভাস মিলেছে। তারা বলছেন, পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে।

গতকাল নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জনসংযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদ। পরে তিনি পথসভায় বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং দলীয় প্রার্থী সমান অধিকার পাবে। পার্টির লোকজনও তার ইচ্ছেমতো নৌকার পক্ষে বা স্বতন্ত্রের পক্ষে কাজ করতে পারে দলীয় বাধা নেই। এই আশ্বাসে নির্বাচনে এসেছি। কিন্তু অনেকেই এটা সহ্য করতে পারছেন না। নৌকার প্রার্থীর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, তারা এমন কিছু লোককে, সন্ত্রাসীকে এখানে সম্পৃক্ত করেছে, তাদের নাম বলতে আমি নিজেও ভয় পাই। সন্ত্রাসীরা এখন আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করছে।

এ. কে. আজাদের সমর্থকরা জানান, এ পর্যন্ত ১৮ হামলা ও হুমকির ঘটনায় ১৩টি সাধারণ ডায়েরি করেছেন তারা। মামলা হয়েছে পাঁচটি। পুলিশ কিছু চুনোপুঁটিকে গ্রেপ্তার করলেও চিহ্নিতরা প্রকাশ্যেই মিছিল-মিটিং করে চলেছে। গতকালও পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা হয়। কুপিয়ে ঈগল প্রতীকের পাঁচ সমর্থককে আহত করা হয়। তাদের মধ্যে আবদুর রহমান নামে একজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের অভিযোগ, ঈগল ঠেকাতে নৌকার সমর্থকরা চোরাগোপ্তা হামলা শুরু করেছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের বক্তব্য জানতে তাকে ফোন দেওয়া হয়। তবে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অবশ্য জেলা আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক ও শামীম হকের সমর্থক আলী আজগর মানিক কালবেলাকে বলেন, শুরু থেকেই নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্রের এ. কে. আজাদ নানা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আসছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনই নৌকার পোস্টার ছিঁড়ছে এবং ঝামেলার সৃষ্টি করছে। তারা কোথাও অভিযোগ না দেওয়ায় বিষয়গুলো কেউ জানতে পারছে না।

অবশ্য ফরিদপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান কালবেলাকে বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সব সময় তৎপর। অভিযোগ ও মামলা অনুযায়ী অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

নির্বাচন অফিস থেকে জানা গেছে, ফরিদপুর-৩ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪ হাজার ৩১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২ হাজার ৭৭৫ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ৫৩৩। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন তিনজন। এই আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্রের ঈগল প্রতীক ছাড়াও জাতীয় পার্টিসহ আরও তিন প্রার্থী রয়েছেন। যদিও তারা আলোচনায় নেই।

এই আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এমপি ছিলেন। এরপর নবম সংসদ থেকে বর্তমান একাদশ সংসদ পর্যন্ত এমপি রয়েছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপির হাত থেকে ইসলামকে রক্ষা করতে হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিবে ঢাবি শিক্ষক সমিতি

চাকরি দেবে নোমান গ্রুপ, আবেদন করুন শুধু পুরুষরা

টাকা নিতে অস্বীকৃতি, পোলিং অফিসারকে মারধর

দীপিকার নাম বদলে দিলেন রণবীর

রাইসির মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা পাকিস্তানের

রাইসিকে শাস্তি দিয়েছেন ঈশ্বর, দাবি ইসরায়েলি ধর্মীয় নেতাদের

ইরানকে সহযোগিতায় সবকিছু করতে প্রস্তুত পুতিন

চাচিকে গলা কেটে হত্যাচেষ্টায় যুবক গ্রেপ্তার 

রাইসির মৃত্যুতে পাল্টে যাবে ইরানের পররাষ্ট্রনীতি!

১০

প্রাণ গ্রুপে নিয়োগ, আবেদনের বয়স ৪৫

১১

বদলি হবেন রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও 

১২

সাড়ে ৭ শতাংশ জমির জন্য গৃহবধূকে হত্যা

১৩

রাইসিকে বহনকারী সেই হেলিকপ্টারের ছবি-ভিডিও প্রকাশ্যে

১৪

রাইসির মরদেহ উদ্ধার, পাঠানো হচ্ছে তাবরিজে

১৫

লিচু চাষে বিপর্যয়, হতাশায় বাগান মালিকরা

১৬

টর্নেডোর আঘাতে লন্ডভন্ড শতাধিক ঘরবাড়ি

১৭

ডিপজলের শিল্পী সমিতির দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা

১৮

রাইসিকে কেন ভয় পেতেন ইসরায়েলের নেতারা

১৯

রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের পাশে ভারত

২০
X