অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকা কাঁচামরিচের বাজার নিয়ন্ত্রণে ঈদের পর পর্যাপ্ত আমদানি হলেও তার কোনো সুফল মিলছে না বাজারে। দুদিন পণ্যটি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ফের ৪০০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত ভারত থেকে দেশে কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে প্রায় ৫২৯ টন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫১ হাজার ৩৮০ টন আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বাজার তদারকিতে ভোক্তা অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান চালালেও তার কোনো প্রভাব নেই বাজারে। ফলে সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, কাঁচামরিচ আমদানি করে কী লাভ হলো? এজন্য সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী চক্রের কারসাজিকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের নিয়ন্ত্রণে খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা। নিয়মিত এবং বিশেষ এসব সভা অনুষ্ঠিত হলেও সিদ্ধান্ত সভার টেবিলেই থেকে যাচ্ছে। এ নিয়ে জাতীয় সংসদেও জনপ্রতিনিধিদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা। এদিকে রোজার ঈদের পর থেকে বাড়তে থাকা দেশি পেঁয়াজের দাম পর্যায়ক্রমে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। সেই সময়ে বাজার স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি
দেয় সরকার। এরপর নিয়মিত পেঁয়াজ আমদানি হলেও দেশি পেঁয়াজের দাম সেই অর্থে কমেনি। গতকাল ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। অন্যদিকে বাজারে আলুর কেজি আবার ৪০ টাকা, পেঁপের কেজি ৫০ টাকা, বেগুনের কেজি মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ধুন্দল, ঝিঙা, ঢ্যাঁড়শ, চিচিঙ্গা, কাঁকরোলের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বরবটির কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। করলার কেজি ১২০ টাকা। কাঁচাকলার হালি ৪০ টাকা। লাউয়ের পিস ৬০ টাকা এবং লেবুর হালি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ীসহ অন্যান্য পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ টাকায়, যা খুচরা পর্যায়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। নিউমার্কেট বনলতা কাঁচাবাজারের সবজির দোকানে ১০০ গ্রাম কাঁচামরিচ কেনেন এক নারী। তিনি কালবেলাকে বলেন, চাহিদা বেশি থাকলেও দামের কারণে কম কিনতে হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে ওই দোকানি বলেন, ‘আমাদের কিছু করার নেই। দাম কমলে কমে বেচি, বাড়লে আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হয়!’। একই চিত্র প্রায় সব বাজার ও পাড়া-মহল্লার দোকানে।
দোকানে-দোকানে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতার দরকষাকষি ও কথা কাটাকাটি।
মফস্বলের বাজারেও কাঁচামরিচের দাম ঊর্ধ্বমুখী। লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, কাঁচামরিচ আমদানির এ সুবাতাস লাগেনি লক্ষ্মীপুরের বাজারে। আমদানির প্রভাবে প্রথম দিকে জেলার বাজারগুলোতে ৪০০ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এখন খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকার ওপরে। লক্ষ্মীপুর বাজারের এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী বলেন, কাঁচামরিচ দ্রুত পচনশীল পণ্য। তাই ব্যবসায়ীরা ভারতের আমদানি করা মরিচ এখানে আনে না। ফলে দামও কমেনি। বাজারে যা আছে, সব দেশি মরিচ।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, আমদানি শুরু হলে কাঁচামরিচের দাম নেমে যায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। তবে, দুদিনের ব্যবধানে তা বেড়ে আবারও কেজি প্রতি ৪০০ টাকা হয়েছে। গতকাল সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
খুচরা কাঁচামরিচ বিক্রেতা রনি বলেন, ভারতীয় কাঁচামরিচের সরবরাহ খুবই কম। যা আসছে, তা পাইকারি ব্যবসায়ীরা মজুত করে দাম বৃদ্ধি করছেন। আমরা খুচরা বিক্রি করি, মরিচ না পেয়ে তাদের দামে আমাদের ক্রয় ও বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী কালবেলাকে বলেন, সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভায় প্রতিযোগিতা কমিশনকে একটি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমাদের দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির অন্তরায়ের কারণ চিহ্নিতকরণ ও করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম ও নারায়গঞ্জ থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করেছি। অন্যান্য স্থান থেকেও তথ্য সংগ্রহ চলছে। এর মধ্যে কারখানার উৎপাদন পরিস্থিতি ও সরবরাহ ব্যবস্থার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজার চাহিদা ও সরবরাহের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদনের কাজ শেষ হবে। আশা করছি, সেখানে বাজার পরিস্থিতির চিত্র উঠে আসবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে সুপারিশ তুলে ধরা হবে।
সার্বিক বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান কালবেলাকে বলেন, বর্তমানে বাজারের কোনো নিয়মই মানা হচ্ছে না। এখন সহ্য করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। যে কিনতে পারবে সে খাবে, যে পারবে না সে খাবে না। আমরা যতই বলি, আর আপনারা (পত্রিকা) যতই লেখেন, তার কোনো প্রভাব বাজারে পড়বে বলে মনে করি না। ব্যবসায়ীদের লোভস্ফীতি কমবে না।
মন্তব্য করুন