

হকিতে সময়ের সেরা ড্র্যাগ ফ্লিকার বেছে নিতে বললে উচ্চারিত হবে হারমানপ্রীত সিং ও ব্লেক গোভার্সের নাম। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার এ দুই তারকার বয়স ২৯, তারা বাংলাদেশি ড্র্যাগ ফ্লিকার আমিরুল ইসলামের আইডল। দুজনই বয়সভিত্তিক পর্যায়ে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ছিলেন, সে সম্ভাবনা সিনিয়র পর্যায়েও অনূদিত হয়েছে। ২১ বছর বয়সী আমিরুল ইসলাম এখনো সম্ভাবনাময়। আইডলদের মতো এ প্রতিভা বিকশিত হবে তো!
আমিরুল ইসলামের খেলার ধরন অনেকটা হারমানপ্রীত সিংয়ের মতোই—রক্ষণভাগে খেলেন, মূল শক্তিটা ড্র্যাগ ফ্লিক, যা অনেক ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের জন্য মারণাস্ত্র হয়ে দাঁড়ায়! এ জায়গায় ভিন্ন ব্লেক গোভার্স—ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলায় ফিল্ড গোলের সঙ্গে পেনাল্টি কর্নার (পিসি) বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেন। বিশ্ব হকির দুই ‘দানব’ হারমানপ্রীত ও গোভার্সের সঙ্গে আমিরুল ইসলামের নাম উচ্চারিত হচ্ছে জুনিয়র ওয়ার্ল্ড কাপের বিস্ময়কর গোল স্কোরিং ক্ষমতার কারণে। ছয় ম্যাচে পাঁচ হ্যাটট্রিকে ১৮ গোল বিকেএসপির সাবেক এ ছাত্রের!
আসরে আমিরুল ইসলামের গোল করার ক্ষমতা ভারতীয় গণমাধ্যমের দৃষ্টি এড়ায়নি। একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে তাকে ভবিষ্যতের হারমানপ্রীত সিং ও ব্লেক গোভার্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে আমিরুল ইসলাম বলছিলেন, ‘আমি ভারতের হারমানপ্রীত সিংয়ের বড় ভক্ত। তার টেকনিক সবসময় অনুসরণের চেষ্টা করি। ড্র্যাগ ফ্লিক শুরু করার সময় থেকেই তাকে দেখে শিখেছি। অস্ট্রেলিয়ার ব্লেক গোভার্সকেও পছন্দ করি।’
বাংলাদেশ বরাবরই তরুণ প্রতিভা পেয়ে আসছে; যারা বিভিন্ন বয়সভিত্তিক আসরে উজ্জ্বল নৈপুণ্য দিয়ে দৃষ্টি কাড়েন। সঠিক পরিচর্যার অভাবে হারিয়ে যেতেও সময় লাগে না। বর্তমান জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আশরাফুল ইসলাম, সোহানুর রহমান সবুজ ও রোমান সরকার তার জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রথম দুজনই ড্র্যাগ
ফ্লিকার; পরেরজন ফরোয়ার্ড হিসেবে শুরু করেছিলেন, এখন খেলেন মাঝমাঠে। উঠে আসার সময় তাদের মাঝে যে সম্ভাবনার আলো ছিল, সময়ের সঙ্গে সেটা ধূসর হয়েছে।
নিয়মিত ঘরোয়া লিগ হয় না। যে কারণে খেলোয়াড়রা ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সার্ভিসেস বাহিনীতে নাম লেখান। বাহিনীগুলো থেকে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা খেলোয়াড়সত্তা বাঁচিয়ে রাখার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও আন্তর্জাতিক হকির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তা নিতান্তই অপ্রতুল, যে কারণে সময়ের সঙ্গে ফিকে হচ্ছে দেশের হকির উজ্জ্বল সম্ভাবনাগুলো। নিজেকে তীক্ষ্ণ রাখতে দলীয় অনুশীলনের বাইরে আলাদা কাজ করার কথা জানালেন ফরিদপুর থেকে উঠে আসা আমিরুল ইসলাম, ‘সবদিক থেকে নিজেকে আরও ভালো করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনুশীলনে মূলত দলীয় কাঠামো নিয়ে কাজ করতে হয়। অনুশীলনের আগে-পরে পিসি অনুশীলন করি। সাধারণত ১৫০টি করে ড্র্যাগ ফ্লিক করি।’ ওয়ার্ল্ড কাপে আমিরুলের ১৮ গোলের ১৫টি এসেছে পিসি থেকে, বাকি তিন গোল পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে। ওপেন প্লে থেকে কোনো গোল নেই। এ প্রসঙ্গে আমিরুল বলেছেন, ‘আক্রমণভাগের সতীর্থরা তো চেষ্টা করছেন। তারাই তো পিসি আদায় করে দিচ্ছেন। শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ফিল্ড গোল করা সহজ নয়। আমাদের কৌশলেরই অংশ বেশি পিসি আদায় করা, কারণ তাতে গোলের সুযোগ বেশি।’
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দলের প্রধান কোচ সিগফ্রিড আইকম্যান শিষ্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, ‘অক্লান্ত পরিশ্রম করে সে। প্রতিদিন সকাল-বিকেল প্রায় ৫০ থেকে ১০০টি করে বিভিন্ন ভ্যারিয়েশনের চেষ্টা করে। ভারী টপস্পিন দিয়ে বল ছোড়ে আর কবজির অসাধারণ শক্তি দিয়ে শেষ করে। সবই রিদমের ব্যাপার। ড্র্যাগ ফ্লিকটা আসলে একটা সুইং—খুব টেকনিক্যাল শট। গলফের পাটিংয়ের মতো।’
মন্তব্য করুন