বীর সাহাবী
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৩ এএম
আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ২০৩০ পর্যন্ত অপেক্ষা সম্ভব নয়

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ২০৩০ পর্যন্ত অপেক্ষা সম্ভব নয়

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ২০৩০ পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের লক্ষ্য পূরণে উন্নত দেশগুলোকে দ্রুত কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে উদ্যোগী হতে হবে। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

গতকাল সোমবার জাতিসংঘের আয়োজনে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে অনুষ্ঠিত ‘প্রাক-২০৩০ উচ্চাভিলাষ বিষয়ক বার্ষিক উচ্চপর্যায়ের মন্ত্রী পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠক’-এ তিনি এ কথা বলেন।

জলবায়ুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কীভাবে প্রতিদিন জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা মোকাবিলা করছে, তা তুলে ধরে উপদেষ্টা এ সংকট সমাধানে সমন্বিত বৈশ্বিক উদ্যোগের ওপর জোর দেন। তিনি উল্লেখ করেন, এ বছর দুটি ভয়াবহ বন্যা বাংলাদেশে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি করেছে, যা জাতীয় বাজেটের ১ দশমিক ৮ শতাংশের সমান। গত ১৮ মাসে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ১৫টি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটি। এর মধ্যে ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়। বৈশ্বিক গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ হলেও দেশটি চরম ক্ষতির শিকার।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২২ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ২৭ মিলিয়ন টন নিঃসরণ শর্তহীনভাবে এবং ৬১ মিলিয়ন টন শর্তসাপেক্ষে কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজন ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিজস্ব তহবিল এবং ১৩৫ বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক সহায়তা।

তিনি বলেন, জলবায়ু ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে উন্নত দেশগুলোকে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) শক্তিশালী করতে হবে, বাজার পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে এবং উচ্চমানের জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে।

পরে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ‘ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ মূল্যায়ন এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির জন্য বৈশ্বিক কার্যকরী ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বাংলাদেশকে আরও জলবিদ্যুৎ দিতে আগ্রহী নেপাল:

জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাংলাদেশকে আরও জলবিদ্যুৎ দিতে আগ্রহী নেপাল। গতকাল উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নেপালের পরিবেশমন্ত্রী আই বাহাদুর শাহী ঠাকুরি এ আগ্রহের কথা জানান।

বাকুতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ভুটান, নেপাল ও ভারতের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে। এ ছাড়া জানুয়ারিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের জন্য জাপান ও জার্মানির কাছে সহায়তা কামনা:

জাপান ও জার্মানির কাছে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা চেয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই রূপান্তরের জন্য সময়োপযোগী এবং সমতাভিত্তিক আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজন।

উপদেষ্টা বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৯)-এর ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-আইএমএফ প্যাভিলিয়নে আয়োজিত ‘রোড টু নেট জিরো: নেভিগেটিং দ্য এনার্জি ট্রানজিশন ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক সাইড ইভেন্টে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে মোট জ্বালানি ব্যবহারের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তবে, এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। চীনকে বাংলাদেশে সোলার ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থানান্তরের অনুরোধ জানানো হয়েছে, যা আমদানিনির্ভরতা কমাবে। এ ছাড়া, সোলার প্যানেলের ওপর কর হ্রাসসহ সংশ্লিষ্ট নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের আরেকটি আয়োজনে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আপডেটেড এনডিসি বাস্তবায়নে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন, যার মধ্যে ৩২ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ নিজস্ব উদ্যোগে অর্জন করবে। তবে, বাকি অংশ আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। তিনি জানান, বাংলাদেশ আগামী বছর এনডিসি ৩ দশমিক শূন্য জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

তিনি আরও বলেন, জিরো নেট কার্বন নিঃসরণ, দারিদ্র্যমুক্তি ও কর্মসংস্থান তৈরির ‘থ্রি জিরোস’ ভিশন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বিশ্বনেতাদের সহযোগিতা কামনা করছে। পাশাপাশি, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বাংলাদেশের নদীগুলো পরিষ্কারে জার্মানির সহায়তা চান।

পরে রিজওয়ানা হাসান জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘আর্টিক্যাল ৬ ইমপ্লিমেন্টেশন পার্টনারশিপ’ সেশনে অংশ নেন। তিনি জাপানের কাছে সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রজ্ঞাপন জারি / আইসিটিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে সংসদ সদস্যের অযোগ্য

আজ থেকে নতুন দামে স্বর্ণ বিক্রি শুরু, ভরি কত

আজ দেশের সব শিল্পকলায় আবরার ফাহাদের প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শনী

স্বর্ণের দাম আকাশছোঁয়া, আসল কারণ কী

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ-নারী নেত্রীদের সঙ্গে ইসির সংলাপ আজ

এলপি গ্যাসের দাম বাড়বে নাকি কমবে, জানা যাবে আজ

রাতে এই ৫ লক্ষণ দেখলে সতর্ক হোন, হতে পারে কিডনি সমস্যার সংকেত

তরুণ থাকতে সকালে গড়ে তুলুন এই ৫ অভ্যাস

ইউক্রেন যুদ্ধে চীনের সহায়তা নিয়ে মুখ খুলল রাশিয়া

সকালে খালি পেটে এক মুঠো কাঁচা ছোলার যত উপকার

১০

ঢাকায় কখন হতে পারে বৃষ্টি, জানাল আবহাওয়া অফিস

১১

থানার সামনের দোকানে ব্যবসায়ীকে গলাকেটে হত্যা

১২

সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

১৩

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

১৪

পলাশীতে ‘আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ’ উদ্বোধন আজ

১৫

ডিভিশনাল ম্যানেজার পদে চাকরি দিচ্ছে মিনিস্টার

১৬

মেঘনা গ্রুপে চাকরির সুযোগ, আজই আবেদন করুন

১৭

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৮

১০ কিলোমিটার হেঁটে মাঠে যাওয়া রিয়ানের পাশে ডিসি

১৯

৭ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

২০
X