

নরসিংদীর শিবপুরে গরবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ও গরবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে রাখা হয়েছে সড়কের নির্মাণ সমাগ্রী। শুধু তাই নয়, সেখানে পিচ কার্পেটিংয়ের জন্য চলছে পাথর মিশ্রণের কাজও। এতে বিদ্যালয় দুটির শিক্ষার্থীরা সেখানে খেলাধুলা করতে পারছে না। পাশেই আগুন জ্বেলে গলানো হচ্ছে বিটুমিন। কালো ধোঁয়া ঢুকছে ক্লাসরুমে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান ও পরীক্ষা। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্র ও সরেজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে সড়ক নির্মাণ সামগ্রী-বালু, বিটুমিন, পিচ কার্পেটিংয়ের পাথরের স্তূপ করে রেখেছে মেসার্স রংপুর খায়রুল কবির রানা নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। বিদ্যালয়ে বর্তমানে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যেই মাঠে আগুন জ্বেলে গলানো হচ্ছে বিটুমিন। এতে কালো ধোঁয়া বিদ্যালয় ভবনের ক্লাসরুমে প্রবেশ করছে। শ্বাসকষ্টসহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া পিচ কার্পেটিংয়ে পাথর মিশ্রণের মেশিনের শব্দে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ব্যাঘাত ঘটছে।
বিদ্যালয়ের আরিফ, কামাল, সুমন, আমেনা, সুমাইয়াসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বিটুমিন গলানোর গন্ধে ক্লাসে বসা যাচ্ছে না। কালো ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তাদের। এমনকি মেশিনের শব্দে পরীক্ষার খাতায় কিছুই লিখতে পারছে না। যা মাথায় ছিল সব ভুলে যাচ্ছে। এত শব্দ যে কান যেন ফেটে যাচ্ছে। একাধিক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ঠিকাদার কীভাবে মাঠ ব্যবহার করেন। এর দায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসন এড়াতে পারে না।
গরবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, ঠিকাদারের লোকজন আমাদের অনুমতি না নিয়ে সড়কের নির্মাণ সামগ্রী রেখে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এতে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। ঠিকাদারের লোকজনদের বারবার অনুরোধ করে নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নিতে বললেও তারা সরাচ্ছে না। পরে বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
গরবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক মিয়া বলেন, মাঠে বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখায় স্কুলের ছেলেমেয়েদের চলাচলে সমস্যাসহ একাধিক সংকট তৈরি হয়েছে। একদিকে তারা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, পাশাপাশি দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে।
জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা টিটু মৃধা নামে একজন বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই মাঠে আমাদের বিভিন্ন জিনিসপত্র রেখে কাজ করছি। যেহেতু সরকারি কাজ, সেজন্যই স্কুল মাঠটা ব্যবহার করছি। সরকারি কাজে স্কুল মাঠ ব্যবহার করতে তো কোনো বাধা নেই।
এলজিইডির শিবপুর উপজেলা প্রকৌশলী খোন্দকার গোলাম শওকত বলেন, স্কুল মাঠ থেকে সড়কের নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে। তবে কেন এখনো সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়নি, বিষয়টি জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাঠে এ ধরনের কাজ করার কোনো সুযোগই নেই। আমি আপনাদের (সাংবাদিকদের) কাছ থেকে মৌখিকভাবে জেনেছি। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানানো হয়নি। যেহেতু আমি জেনেছি, দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন