হাসান আজাদ
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

২৪ হাজার কোটি টাকার পাইপলাইন করতে চায় সরকার

গ্যাস আমদানি বাড়ছে
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা, বিপরীতে কমে যাচ্ছে দেশীয় উৎপাদন। এই প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমদানি করা এলএনজির ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। যদি বড় কোনো নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হয়, তাহলে এলএনজি আমদানির বাইরে আপাতত কোনো বিকল্প নেই। এই লক্ষ্য সামনে রেখে সরকার তৃতীয় গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

‘মহেশখালী/মাতারবাড়ী-বাখরাবাদ তৃতীয় সমান্তরাল গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবও প্রস্তুত হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। পেট্রোবাংলা ও জিটিসিএলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, যেহেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে জিটিসিএল, তাই প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে জিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুণ ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তবে একাধিকবার ফোন করেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, এই গ্যাস পাইপলাইনের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে শেষ হবে ২০৩১ সালের জুনে। কাজ শেষ হতে সময় লাগবে পাঁচ বছর।

বর্তমানে মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) থেকে প্রতিদিন ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট আরএলএনজি সরবরাহ করা হয়। ভবিষ্যতে আরও ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যোগ হবে—৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট কুতুবজোমে একটি নতুন ভাসমান টার্মিনাল থেকে এবং ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট মাতারবাড়ীতে স্থলভিত্তিক টার্মিনাল থেকে।

ফলে মহেশখালী ও মাতারবাড়ী অঞ্চল থেকে মোট ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের প্রয়োজন হবে। অথচ বিদ্যমান পাইপলাইনের মাধ্যমে এ পরিমাণ গ্যাস পরিবহন সম্ভব নয়।

এ কারণে আন্তর্জাতিক পরামর্শক সংস্থা ক্যাললগ ব্রাউন অ্যান্ড রুট এশিয়া প্যাসিফিক প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে বিশদ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

সমীক্ষা অনুযায়ী, মহেশখালী সিটিএমএস থেকে কুমিল্লার বাখরাবাদ পর্যন্ত ৪৬ ইঞ্চি ব্যাসের ৩২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি মাতারবাড়ী থেকে উত্তর নলবিলা ভাল্ব স্টেশন পর্যন্ত ৪০ ইঞ্চি ব্যাসের আরও ৯ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে।

যদিও প্রকল্পটি জিটিসিএলের; কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব অর্থায়নে এটি বাস্তবায়নের সক্ষমতা নেই। এজন্য বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, আইডিএসহ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই পাইপলাইনের ওপরই নির্ভর করছে এলএনজি আমদানি বৃদ্ধির সক্ষমতা। বর্তমানে দুটি এফএসআরইউ দিয়ে ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি হলেও পাইপলাইনের সীমাবদ্ধতায় সর্বোচ্চ ১৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট আমদানি করা সম্ভব।

অন্যদিকে, দেশীয় উৎপাদন দিনদিন কমছে। এক সময় দেশীয় উৎস থেকে প্রতিদিন ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেলেও ২০ ডিসেম্বর সেই উৎপাদন নেমে আসে ১৭৪৮ মিলিয়নে।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানার মজুত দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। আগে যেখানে বিবিয়ানায় প্রতিদিন ১৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হতো, ২০ ডিসেম্বর তা নেমে এসেছে মাত্র ৮৫৫ ঘনফুটে।

পেট্রোবাংলার অনেক কর্মকর্তা আশঙ্কা করছেন, হঠাৎ করেই বিবিয়ানায় বড় ধরনের ধস নামতে পারে। ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক উৎপাদন ৫০০ মিলিয়নের নিচে নেমে যেতে পারে। যদি তা ঘটে, দেশীয় উৎপাদন নেমে আসবে দেড় হাজার মিলিয়নেরও নিচে।

এমন পরিস্থিতিতে মাতারবাড়ী ও মহেশখালীতে নতুন টার্মিনাল স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়ার খসড়া প্রস্তুত আছে। তবে সময় বাঁচাতে সরকার জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ভাবছে।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘উন্মুক্ত দরপত্রে গেলে শুধু চূড়ান্ত করতে এক বছর সময় লাগবে, এরপর টার্মিনাল বসাতে আরও দুই বছর। জিটুজি ভিত্তিতে করলে সময় বাঁচবে।’

এ বিষয়ে সৌদি আরব, কাতার, আজারবাইজানসহ চারটি দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। এখন আলোচনা চলছে—কে সবচেয়ে কম খরচে এবং কম সময়ে টার্মিনাল স্থাপন করতে পারবে।

বর্তমানে দেশে দুটি এফএসআরইউ চালু আছে—একটি সামিট গ্রুপ পরিচালনা করে, অন্যটি যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট। তৃতীয় টার্মিনালের জন্য বিগত সরকার সামিটের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করেছিল, তবে নির্ধারিত সময়ে নিরাপত্তা জামানত দিতে না পারায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেটি বাতিল করেছে।

এখন সামিট গ্রুপ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। এই জটিলতা এড়াতেই মহেশখালীর কুতুবজোমে প্রস্তাবিত টার্মিনালকে ‘চতুর্থ টার্মিনাল’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।

দেশে প্রতিদিনই কমছে গ্যাস উৎপাদন, আর চাহিদা বেড়েই চলেছে। এই ব্যবধান পূরণে হাতে তেমন বিকল্প নেই।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ২১ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘প্রতি বছর দেশীয় গ্যাস উৎপাদন গড়ে ২০০ মিলিয়ন করে কমছে। চেষ্টা করেও আমরা উৎপাদন ধরে রাখতে পারছি না। ঘাটতি পূরণে এলএনজি আমদানি করছি, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ ছাড়া আমদানির অবকাঠামোও এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টানা ৪২ ঘণ্টা গান গাইলেন স্যান্ডউইচ বিক্রেতা

প্যারিসে হাদি হত্যার ন্যায়বিচারের দাবিতে সমাবেশ

হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ

ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত নীলফামারীর জনজীবন

এক আসনে মনোনয়ন কিনলেন আপন ২ ভাই

বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও এসপিদের সঙ্গে ইসির বৈঠক আজ 

আজ টানা ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

ব্র্যাক ব্যাংকে চাকরির সুযোগ, আবেদন করুন আজই

কুড়িগ্রামে শীতে জনজীবন স্থবির, তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি 

ইরানের যে কোনো হামলার কঠোর জবাবের হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর

১০

আমরা একটা বৈষম্যহীন সমাজ চাই: ড. এম এ কাইয়ুম

১১

যাত্রী ওঠানামা নিয়ে বিরোধ, চাচার হাতে ভাতিজা নিহত

১২

ঢাকায় শীত নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা 

১৩

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

১৪

বুধবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৫

রাজধানীতে ১৪ তলা ভবনে আগুন

১৬

২৩ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৭

তিন দিন করে রিমান্ডে দিপু হত্যার ১২ আসামি

১৮

বেরোবিতে হাদি-আবরারের নামে ভবনের নামকরণ করলেন শিক্ষার্থীরা

১৯

গাজীপুরে তুলা ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

২০
X