গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটভুক্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে মনে করছে বিএনপি। দলটির অভিমত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজা শুরুর আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় দেশে যখন নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে, তখনই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে নানা দাবি-দাওয়া তোলা হচ্ছে। যেগুলোকে নির্বাচন বিলম্বিত কিংবা বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির নেতাদের মতে, এ ধরনের দাবি-দাওয়া পরিস্থিতিকে আরও অবনতিশীল এবং নির্বাচনের স্বাভাবিক পথকেও রুদ্ধ করতে পারে। তাই এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ-সতর্ক থাকতে হবে।
এমন প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে মনে করে বিএনপি। তাদের প্রত্যাশা, সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এবং নির্ধারিত সময়েই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গত রোববার অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়টি স্থায়ী কমিটিকে অবহিত করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ওই বৈঠকে সংস্কার, জুলাই সনদ, পিআরসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনায় দলের আগের অবস্থানই তুলে ধরে বিএনপি। এরপর এটি নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে।
দুটি ইস্যুতে বিএনপির স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে। একটি হচ্ছে, আগামী নির্বাচন বিদ্যমান পদ্ধতিতেই হতে হবে। কারণ, মানুষ পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) কী, সেটা বোঝে না। সংবিধানেও পিআর নেই এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও তা বাস্তবসম্মত নয়। অন্যটি হচ্ছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। বিএনপি এর আগে আওয়ামী লীগের অপকর্ম-গণহত্যার যেমন বিচার চেয়েছে, তারা মনে করেন—একইভাবে জাতীয় পার্টির অপকর্মেরও বিচার হতে পারে। গত সোমবার রাতে গণঅধিকার পরিষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত পাঁচ দফা প্রস্তাবের মধ্যে জাতীয় পার্টির বিচারের দাবিও রয়েছে। ওই বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, যমুনায় বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে গত রোববার পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোনো মহলের নির্বাচন বিলম্বিত কিংবা বানচালের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা, সারা দেশে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি এবং মানুষকে নির্বাচনমুখী করে তুলতে মাঠের কর্মসূচি শুরুর চিন্তা-ভাবনা করছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চলমান ছয় দিনের কর্মসূচি শেষে নতুন কর্মসূচি হিসেবে মাঠ পর্যায়ে সভা-সমাবেশের কথা ভাবা হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করছেন, কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জনগণকে ব্যাপকহারে সম্পৃক্ত করা গেলে এবং এর মধ্য দিয়ে মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করলে নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের সব চক্রান্ত ও অযৌক্তিক দাবি হারিয়ে যাবে, দেশও নির্বাচনমুখী হবে।
এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির বিষয়েও নেতারা আলোচনা করেন। জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার ভিত্তিতে বিভিন্ন খাতভিত্তিক বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সমন্বয়ে এই ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে।
জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এই হামলার নেপথ্য কারণ কী অথবা নির্বাচন বিলম্বিত করার জন্য এটা কোনো পক্ষের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র কি না, তা বোঝার চেষ্টা করছে বিএনপি। কারণ, এই হামলার ঘটনা যখন ঘটেছে, তার মাত্র এক দিন আগেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
মন্তব্য করুন