

নীলফামারীর ডিমলায় বুড়ি তিস্তা নদী খনন প্রকল্পের প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে এলাকাবাসী। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে কুটিরডাঙ্গা গ্রাম থেকে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ মশাল হাতে বিক্ষোভে যোগ দেন।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, নদী খননের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে হাজারো পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে। বর্তমানে এসব জমিতে ধান, ভুট্টা, আলু, মরিচ, বাদাম, পেঁয়াজসহ বছরে তিন থেকে চারটি ফসল হয়। ২০০৯ সাল থেকে এই নদী নিয়ে দুপক্ষের বিরোধ ও বহু মামলা রয়েছে। তারা প্রকল্প বাতিল এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেন।
এলাকাবাসীর সংগঠন ‘জনগোষ্ঠী’র মুখপাত্র মো. আব্দুল আলিম জানান, সরকারের অনুমোদিত একটি ভুল প্রকল্পের বিরুদ্ধেই তাদের এই আন্দোলন। জমির মালিকানা তাদের হাতে থাকা সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ড তিন ফসলি জমি নষ্ট করতে চায়। স্থানীয়রা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেবে না বলে জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা হেকিম শামিম জানান, পাঁচ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জীবিকা এই নদীর দুই পাড়ের জমির ওপর নির্ভরশীল। আমরা হুমকি-ধমকির মুখে জীবন কাটাচ্ছি। মশাল মিছিলের মাধ্যমে আমাদের দুর্ভোগ দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে চায়।
জাহিদুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক জানান, নদী খননের পক্ষে থাকলেও মাঝখানে খনন করা হলে চারপাশের জমি হারাতে হবে। সম্পূর্ণ ৭৬ কিলোমিটার খনন হলে তারা জমি ছাড়তে রাজি। তিনি দাবি করেন, ২০১৮ সাল থেকে কৃষকদের নামে ১১টি মামলায় ৭৫০ জনকে ভুগতে হচ্ছে। এ কারণে তারা আদালতে সিভিল মামলা করেছেন।
স্থানীয় বয়স্ক ব্যক্তি হযরত আলী বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে সংসারের ১০ জন মানুষ খাই। বুড়া বয়সে অন্য শহরে গিয়ে কাজ করতে পারব না। জমি না থাকলে বাঁচব কীভাবে?’
২০২২ সালের ডিসেম্বরেও নদী খনন নিয়ে বড় উত্তেজনা তৈরি হয়। চলতি মাসের ২ ডিসেম্বর নতুন করে যন্ত্রপাতি আনার চেষ্টা করলে এলাকাবাসী বাধা দেয়। পরে পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আনুষ্ঠানিক মন্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান চান।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নীলফামারী অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান জানান, তারা শুধু অধিগ্রহণকৃত জায়গায় জলাধার পুনঃখনন করছেন। কিছু ব্যক্তি দখল করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন। ১ হাজার ২১৭ একর জমির মধ্যে ৬৬৭ একরে খননের কাজ হবে। এতে কৃষকরা স্বল্প খরচে সেচের সুবিধা পাবে এবং পরিবেশ রক্ষা পাবে বলে তিনি জানান।
মন্তব্য করুন