

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বুড়ি তিস্তা নদী খননকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। খননের জন্য আনা ভারী যন্ত্রপাতি বুড়ি তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় পৌঁছালে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে এলাকাবাসী বিক্ষোভ শুরু করেন। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ডোমার, ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার হাজারো মানুষ নদী খননের বিরোধী। নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধসহ অনেকেই ব্যারেজের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তাদের দাবি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিতে হবে।
অন্যদিকে প্রশাসন ব্যারেজ এলাকার সামনে বসবাসকারী লোকজনকে দ্রুত জায়গা ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের আশঙ্কা, খনন শুরু হলে অনেক মানুষ বাড়িঘর ও আবাদি জমি হারাবেন। তাদের ভাষ্য, বুড়ি তিস্তা নদী ও ব্যারেজকে কেন্দ্র করেই এ অঞ্চলে বসতি, কৃষিকাজ ও জীবিকা টিকে আছে। কোনো আলোচনা বা ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা ছাড়া খনন হলে তারা তা মানবেন না।
বুড়ি তিস্তা খনন নিয়ে আগেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়দের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর। সেদিন দুই থেকে তিন হাজার মানুষ ‘কৃষক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগান দিয়ে সাদা গেঞ্জি ও মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে দেশীয় অস্ত্র হাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শেডে হামলা চালান। তারা একটি মোটরসাইকেল ও একটি ভেকুতে আগুন ধরিয়ে দেন, দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন এবং সিক্স সিলিন্ডার তিনটি মেশিন ও ৩২ হর্সপাওয়ারের দুটি মেশিন পুড়িয়ে দেন। এছাড়া একটি টিনের ঘরও ভাঙচুর করা হয়।
স্ট্যান্ডার ইঞ্জিনিয়ারিং জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘দেশের ৬৪ জেলায় অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায়’-এর আওতায় বুড়ি তিস্তা নদীর ১২০০ একরের মধ্যে ৫০০ একর জমি ক্যাট প্রকল্পে রয়েছে। এখানে ৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার প্রস্থে খনন হবে। ব্যারেজ এলাকায় ৬ হেক্টর জায়গায় ৯ ফুট গভীর করে খননের পরিকল্পনা আছে। এ কাজে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কাজের পরিধি কিছু কমানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ডিমলা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হলেও কোনো সমঝোতা হয়নি।
এলাকাবাসী বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে তারা এখানে বসবাস করেন এবং চাষাবাদ করে জীবিকা চালান। তিন উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসতি এই এলাকায়। কোনো নোটিশ ছাড়া হঠাৎ খনন শুরু করায় তারা উদ্বিগ্ন। তাদের দাবি, কাজ শুরু হলে গৃহহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।
কুটিরডাঙ্গা গ্রামের মানুষ জানান, নদী খননে আপত্তি নেই। তবে আবাদি জমি খনন করতে দেবেন না। তাদের বক্তব্য, যেখানে ম্যাপে নদী আছে সেখানেই খনন করা হোক।
ভুক্তভোগীরা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড আগেও তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে। কয়েক হাজার মানুষ এসব মামলায় আসামি। জমি নিয়ে হাইকোর্টে দুটি এবং নীলফামারী নিম্ন আদালতে তিনটি মামলা চলছে।
মঙ্গলবার আবার কাজ শুরু করার জন্য সেনা ক্যাম্প বসানো হলে সন্ধ্যার দিকে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, স্থানীয় জনগণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মুখোমুখি থাকায় যে কোনো সময় বড় সংঘর্ষ হতে পারে।
প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা চলছে। এলাকাবাসী দ্রুত বৈঠক ডেকে নিজেদের দাবি ও উদ্বেগ সরকারকে জানাতে আহ্বান জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন