শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সারাদেশের ন্যায় নওগাঁর পাঁচটি আসনে বোরবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। এই পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট ২৯ জন প্রার্থী। তার মধ্যে এবারের নির্বাচনে ১৯ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, কোনো প্রার্থী যদি মোট প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট না পান তাহলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সেই হিসেবে নওগাঁ-১ আসনের দুজন প্রার্থী, নওগাঁ-৩ আসনে পাঁচজন, নওগাঁ-৪ আসনে চারজন, নওগাঁ-৫ আসনে দুজন ও নওগাঁ-৬ আসনে ছয়জন প্রার্থী প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট না পাওয়ায় প্রত্যেকের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
নওগাঁ-১ আসনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাধন চন্দ্র মজুমদার নৌকা প্রতীকে এক লাখ ৮৬ হাজার ৯০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেকুজ্জামান তোতা ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৭৬ হাজার ৭২৯ ভোট। এছাড়াও অন্য দুই প্রার্থী আকবর আলী (জাতীয় পার্টি) পেয়েছেন পাঁচ হাজার ২৫টি ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) মাজেদ আলী পেয়েছেন দু’হাজার ১১৬টি ভোট। এই আসনে মোট ভোটার ছিল চার লাখ ৫০ হাজার ৯৬১ জন। প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা দুলাখ ৭৮ হাজার ৯২৬। ফলে মোট প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট না পাওযায় দুই প্রার্থী আকবর আলী (জাতীয় পার্টি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) মাজেদ আলীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
নওগাঁ-৩ আসনে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী সৌরেন এক লাখ ৩৮ হাজার ৫৬১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছলিম উদ্দিন তরফদার পেয়েছেন ৬০ হাজার ৫১টি ভোট। এছাড়াও মাহবুব-উল মান্নাফ কাঁচি প্রতীকে পেয়েছেন এক হাজার ৩৩১ ভোট, মাহফুজা আকরাম চৌধুরী (ঈগল) ১২ হাজার ৭৮৬ ভোট, মাসুদ রানা (লাঙ্গল) তিন হাজার ৪৪১ ভোট, শামিনুর রহমার ওরফে চিকন আলী (কেটলি) এক হাজার ৭০১ ভোট, সোহেল কবির (সোনালী আঁশ) পেয়েছেন ৫৯৭ ভেট। এই আসনে মোট ভোটার ছিল চার লাখ ২০ হাজার ৯০৬ জন। ভোট পড়ে দু’লাখ ২৫ হাজার ৬৭৭। তাই এ আসনে মোট প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট না পাওযায় পাঁচ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
নওগাঁ-৪ আসনে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এখানে ট্রাক প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্রুহানি সুলতান মামুদ গামা আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাহিদ মোর্শেদকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়। ব্রুহানি সুলতান মামুদ গামা পেয়েছেন ৮৫ হাজার ১৮০ ভোট আর নাহিদ মোর্শেদ পেয়েছেন ৬২ হাজার ১৩২ ভোট। এছাড়াও কয়েকবারে সংসদ সদস্য ইমাজ উদ্দিন এবার নৌকা প্রতিক না পেয়ে ঈগল মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পেয়েছেন ১১ হাজার ১৯০ ভোট। এ আসনের আরও তিন প্রার্থী আফজাল হোসেন (কাঁচি) ৩৭৫ ভোট, আব্দুর রহমান (বাংলাদেশ কংগ্রেস) ৪৬৭ ভোট, আলতাফ হোসেন (জাতীয় পার্টি) ৪৪০ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে মোট ছিলেন তিন লাখ ১৯ হাজার ১৭৫। সেখানে ভোট পড়ে এক লাখ ৬৩ হাজার পাঁচ ভোট। সেই হিসেবে কয়েকবারে সংসদ সদস্য ইমাজ উদ্দিনসহ চারজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
নওগাঁ-৫ আসনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন জলিল জন এক লাখ ৪৬ হাজার ৬৭১টি ভেট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ পেয়েছেন ৫২ হাজার ৮৮৪টি ভোট। এছাড়াও অন্য দুই প্রার্থী আজাদ হোসেন মুরাদ (মশাল) পেয়েছেন ৭২৮ ভোট ও ইফতারুল ইসলাম বকুল পেয়েছেন এক হাজার ৯১৩টি ভোট। এই আসনে মোট ভোটার ছিল তিন লাখ ৪৪ হাজার ১৪৪ জন। ভোট পড়েছিল এক লাখ ৬৪ হাজার ৭৯০ ভোট। এই আসন থেকে দুই প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
নওগাঁ-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন আটজন প্রার্থী। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলালকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাক প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন। তিনি পেয়েছেন ৭৬ হাজার ৭১৭ ভোট আর আনোয়ার হোসেন হেলাল পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭১টি ভোট। এছাড়াও এই আসনে খন্দকার ইন্তেখাব আলম (আম) ১৯৯ ভোট, জাহিদুল (ঈগল) ৩৩১ ভোট, আবু বেলাল হোসেন (লাঙ্গল) ৫৮১ ভোট, নওশের আলী (কাঁচি) দুই হাজার ২৪৩ ভোট, পিকে আব্দুর রব সোনালী আঁশ) ২৮৮ ভোট, ও আব্দুস সাত্তার (ডাব) পেয়েছেন ২০৬ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার ছিলেন ছিল তিন লাখ ২৭ হাজার ৯৭৩ জন। ভোট পড়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৬৬০টি। তাই এ আসন থেকে ছয়জন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
উল্লেখ্য নওগাঁয় ৬টি সংসদীয় আসন হলেও নওগাঁ-২ আসনে এক স্বতন্ত্র প্রার্থী মারা যাওযায় ওই আসনের ভোট গ্রহন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনার। এদিকে স্থগিত হওয়া নওগাঁ-২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট) আসনে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনি এলাকা ৪৭, নওগাঁ-২ আসনের বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থী আমিনুল হকের মৃত্যুজনিত কারণে গত ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন ওই আসনের ভোট স্থগিত করে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১১ অনুচ্ছেদের (১) দফার বিধান অনুসারে ওই আসনে নির্বাচনের জন্য আজ সোমবার পুনঃতফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৭ জানুয়ারি, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১৮ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ ২৬ জানুয়ারি এবং ভোট অনুষ্ঠিত হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। ।
মন্তব্য করুন