

সংবিধান পরিবর্তনকে হুমকি হিসেবে নয়, বরং গণতান্ত্রিক বাস্তবতা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিদায়ী সংবর্ধনায় তিনি এই কথা বলেন। উভয় বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীদের উপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, গত ১৬ মাসে আপনারা যে সহযোগিতা দিয়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
তিনি উল্লেখ করেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তিনটি প্রধান অঙ্গের মাধ্যমে- আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ। এই প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্ট ভবন কেবল একটি স্থাপনা নয়, এটি নাগরিক জীবনের তিনটি ভিত্তির একটি। প্রধান বিচারপতি বলেন, জনগণের সংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে, তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানকে পরিবর্তন করতে পারে। বিচার বিভাগকে এটি হুমকি হিসেবে নয়, গণতান্ত্রিক সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের শক্তি কোনো একক পদে নয়, বরং ন্যায়, ভারসাম্য ও দূরদর্শিতার সঙ্গে সেবা দেওয়ার সম্মিলিত সংকল্পে নিহিত। সাধারণত রায়ের কৃতিত্ব বিচারকদের দেওয়া হয়, কিন্তু সেই রায়ের ভাষা, যুক্তি ও কাঠামো তৈরি করেন আইনজীবীরা। অস্থির বিশ্বে বিচার বিভাগের স্থিরতা, সংযম, সততা ও সাহসই জাতির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থিতিশীলতার উৎস হতে পারে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের কর্মময় জীবন নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আগামী ২৭ ডিসেম্বর অবসর গ্রহণ করবেন। তিনি ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াডাম কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে আইন শাস্ত্রের ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের টাফ্টস ইউনিভার্সিটির ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসিতে মাস্টার্স ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তিনি অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইউএনএইচসিআর-এর সঙ্গে কাজ করেছেন।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ ১৯৮৪ সালে ঢাকা জেলা আদালতে এবং ১৯৮৬ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে আইন চর্চা শুরু করেন। ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হন এবং দুই বছর পর স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে পদার্পণ করেন।
তিনি প্রথিতযশা আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ এবং ভাষা সৈনিক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমেদের ছেলে। তার পিতা দুই বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মন্তব্য করুন