কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৪, ০৪:৩৫ পিএম
আপডেট : ২৩ মে ২০২৪, ০৪:৪০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এমপি আনার হত্যা : ৪ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। ছবি : সংগৃহীত
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। ছবি : সংগৃহীত

ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা অপহরণের মামলার প্রতিবেদন আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালত এ আদেশ দিয়েছেন।

এর আগে, বুধবার (২২ মে) বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে বাবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা করতে শেরেবাংলা নগর থানায় যান নিহত এমপি আনারের কন্যা মুনতারিন ফেরদৌস ডরিন। ওই সময় তার সঙ্গে আরও একজন ছিলেন।

তার আগে, দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে যান এমপি আনারের কন্যা। পরে সেখানে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। সাংবাদিকদের মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, আজ আমি এতিম হয়েছি, যার বাবা থাকে না তার কেউ থাকে না।

মামলায় ডরিন উল্লেখ করেছেন, মানিক মিয়া এভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজিম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই। ১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। এতে লিখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউটাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দিব।’ এ ছাড়া আরও কয়েকটি বার্তা আসে। ক্ষুদে বার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোনো সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতীয় বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপরও আমরা খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে বাবাকে অপহরণ করেছে।

এদিকে, এই হত্যার ঘটনায় তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও। ইতোমধ্যেই তারা মূল হোতাসহ কয়েকজনকে আটকও করেছে।

ডিবির তদন্ত থেকে জানা যায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনে ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট ভাড়া করেন মূল পরিকল্পনাকারী এমপির বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন। আগে থেকেই ভারতে অবস্থান করা কয়েক সন্ত্রাসীর সঙ্গে চুক্তি করেন তিনি। এরপর ৫ কোটি টাকার চুক্তিতে বাংলাদেশ থেকে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে যান মূল কিলার চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহকে।

ঢাকার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শাহীন কিলার আমানুল্লাহকে নিয়ে কলকাতায় যান গত ৩০ এপ্রিল। সংসদ সদস্য আনার হত্যার ছক কষেন ওই ফ্ল্যাটে বসেই। এরপর সেখান থেকে ১০ মে দেশে ফেরেন শাহীন। তখন ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান করেন শাহীনের বান্ধবী শিলাস্তি রহমান, মূল কিলার আমানুল্লাহ, জিহাদ, সিয়াম, মোস্তাফিজ ও ফয়সাল। ১৩ মে রাতে হত্যা মিশন বাস্তবায়ন করে আমানুল্লাহ, শিলাস্তি ও ফয়সাল দেশে ফেরেন। তাদের আটকের পর হত্যারহস্য উদ্ঘাটন হয়। তাদের কাছে পাওয়া যায় এমপি আনার হত্যার লোমহর্ষক কাহিনি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর আনারকে শাহীনের টাকার জন্য চাপ দেন আমানুল্লাহ ও তার সহযোগীরা। একপর্যায়ে আনারের গলায় চাপাতি ধরেন আমানুল্লাহ। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। পরে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) এক কর্মকর্তা কালবেলাকে জানিয়েছেন, কলকাতার ওই ফ্ল্যাট থেকে সব তথ্য দেশে অবস্থানকারী মূলহোতা শাহীনকে জানানো হয়। হত্যার পর আমানুল্লাহ ঘটনা জানান শাহীনকে। তখন শাহীন লাশ গুম করার নির্দেশ দেন।

আমানুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, শাহীন আমানকে নির্দেশ দেন লাশ গুম করতে। সেই নির্দেশ পেয়ে আমান এমপি আনারের লাশটি কেটে টুকরো টুকরো করেন। এরপর বাইরে থেকে কিনে আনা হয় সাদা পলিথিন, ব্লিচিং পাউডার ও দুটি বড় সাইজের ট্রলি ব্যাগ। লাশ টুকরো করার পর তা ঢোকানো হয় পৃথক দুটি ট্রলিতে। লাশের টুকরোগুলো ব্যাগে ঢোকানোর পর বাইরে থেকে আনা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ওই ফ্ল্যাটের মেঝে পরিষ্কার করে ফেলা হয়।

আনোয়ারুল আজিম হত্যার তদন্তের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। তিনি (আনার) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ এলাকার জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকার মানুষ স্তম্ভিত। আমরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। এটি নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড, এটা মনে করেই তদন্ত কর্মকর্তারা কাজ করছেন। নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কয়েকজন আমাদের কাছে আছে, তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা সবকিছু বলতে পারছি না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সবাইকে জানিয়ে দিন, অর্থহীন আসছে : সুমন

গুয়েতেমালার বিপক্ষে জোড়া গোলে নতুন রেকর্ড মেসির

ইতালিতে ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন প্রবাসীরা

জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে এরদোয়ান 

কুমিল্লায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

ঈদে চাহিদা বেড়েছে চুইঝালের

সেন্টমার্টিন পরিদর্শনে বিজিবি মহাপরিচালক

‘রিপন তুমি শেষ করে দিলে সবকিছু’

আইনমন্ত্রীর গরুতে থানা পুলিশের ঈদ

সিরাজগঞ্জে মহাসড়কে গাড়ির চাপ কমেছে, নেই যানজট

১০

যেভাবে শুরু হলো কোরবানি

১১

লক্ষ্মীপুরের ১১ গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপিত

১২

সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি যুবক নিহত

১৩

বরিশালে গ্যাস সিলিন্ডারবোঝাই ট্রাকে বাসের ধাক্কা, নিহত ২

১৪

বঙ্গবন্ধু সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার টোল আদায়

১৫

লালমনিরহাটে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

১৬

জাতীয় ঈদগাহে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা : ডিএমপি কমিশনার

১৭

হারলেও যে সমীকরণে সুপার এইটে খেলবেন শান্তরা

১৮

আজ বাবাকে ভালোবাসার দিন

১৯

ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে প্রধান শিক্ষককে রাজসিক বিদায়

২০
X