গার্মেন্টস ও নির্মাণ খাতে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভনে কিরগিজস্তান গিয়ে কাজ না পেয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন ১৮০ জন বাংলাদেশি। অবশেষে তারা দেশে ফিরেছেন।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেক থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক এবং সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম বিদেশ থেকে ফেরত আসা এই বাংলাদেশিদের বিমানবন্দরে আর্থিক সহায়তা ও জরুরি সেবা প্রদান করে।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, উচ্চ বেতনের কাজের প্রলোভনে এসব মানুষকে কিরগিজস্তানে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে অনেকেই কাজ ও বেতন থেকে বঞ্চিত হন এবং নথিপত্রহীন অবস্থায় পড়েন। কেউ কেউ ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন, এমনকি অনেক পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণও আদায় করা হয়েছে।
ফেরত আসাদের মধ্যে লালমনিরহাটের আদিতমারীর বাসিন্দা মো. শহীদুল ইসলাম (৪৫) একজন। তিনি জানান, ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করে ভালো বেতন পাওয়ার আশায় ২০২৪ সালের ৩ জুন বিশকেকে পৌঁছান। কিন্তু পৌঁছানোর পরের দিনই তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর নানা কাজ করে টিকে থাকার চেষ্টা করলেও সাত মাস বিনা বেতনে কাজ করতে হয়েছে তাকে। পরে কিরগিজ কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়ে তিন মাস কারাভোগ শেষে বিশেষ বিমানে দেশে ফেরেন।
আরেকজন ভুক্তভোগী শরীয়তপুরের সখীপুরের প্রিন্স মিয়া (২১)। দালালরা তাকে ইউরোপে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথমে দুবাই এবং সেখান থেকে ১৯ মে বিশকেকে নিয়ে যায়। বলা হয়েছিল, সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর তাকে ইতালি পাঠানো হবে। এ জন্য তিনি দালালকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণ না হয়ে তাকে মধ্য এশিয়ার জেলে ৪৪ দিন আটক থাকতে হয়।
কুষ্টিয়ার মিরপুরের মো. মিলন আলী (৩৮) জানান, কিরগিজস্তানে গিয়ে তিনি ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ওয়েল্ডিংয়ের কাজে দুর্ঘটনা ঘটলেও নিয়োগকর্তার কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাননি। টানা চার মাস বেতন না পেয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেই সেদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর অনিয়মিত অভিবাসী হিসেবে তিন মাসের বেশি সময় কারাগারে কাটাতে হয় তাকে। সেখানে তাকে ও তার সহযাত্রীদের তীব্র রোদে দাঁড় করিয়ে রাখাসহ নানা নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
ব্র্যাক জানিয়েছে, বিমানবন্দরে বিদেশ ফেরতদের জরুরি সহায়তা প্রদানে গত আট বছর ধরে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার কাজ করছে। সিভিল এভিয়েশন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক এবং এপিবিএনের সহযোগিতায় এ সময়ে ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৪০ প্রবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন