শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২ আশ্বিন ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মিয়ানমারের চলমান সংঘাত সমগ্র অঞ্চলের জন্য উদ্বেগজনক : প্রধান উপদেষ্টা

জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টা। ছবি : সংগৃহীত
জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টা। ছবি : সংগৃহীত

মিয়ানমারে চলমান সংঘাত সমগ্র অঞ্চলের জন্য এক গভীর উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এটি যে শুধু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেই ঝুঁকিতে ফেলছে না, তা নয়, বরং বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনকেও কঠিন করে তুলেছে। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাংলায় ভাষণ শুরু করেন তিনি। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আট বছর পার হলেও রোহিঙ্গা সংকটের কোনো সমাধান দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। উপরন্তু, বাংলাদেশ প্রতিনিয়তই মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাধ্য হচ্ছে। স্পষ্টতই, সাংস্কৃতিক পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতির কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর অধিকার বঞ্চনা ও নির্যাতন রাখাইনে অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রান্তিকীকরণের প্রক্রিয়া আর চলতে দেওয়া যাবে না। যেসব বৈষম্যমূলক নীতি ও কর্মকাণ্ড আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তার সমাধান এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা এখনই গ্রহণ করা সম্ভব। তার জন্য পূর্ণাঙ্গ জাতীয় রাজনৈতিক মীমাংসার অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। রাখাইনের সমস্যাগুলোর চূড়ান্তভাবে রাজনৈতিক সমাধান করাও অপরিহার্য। তবে এর জন্য রাখাইন অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সব জাতিসত্তার অংশগ্রহণে এমন একটি বন্দোবস্ত প্রয়োজন যেন রোহিঙ্গারা সমঅধিকার ও নাগরিকত্বসহ সমাজের অংশ হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এই সংকটের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা, আর তাদের পরেই বৃহত্তম ভুক্তভোগী হলো বাংলাদেশ। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, রোহিঙ্গা সংকট কোনোভাবেই মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়। আমরা শুধু একটি দায়িত্বশীল প্রতিবেশী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে আমাদের মানবিক দায়িত্ব পালন করে আসছি।

ড. ইউনূস বলেন, তহবিল সংকটের কারণে আজকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ন্যূনতম জীবনমান বজায় রাখার আমাদের যৌথ প্রয়াসও ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি তাদের জরুরি সহায়তা কার্যক্রমে মারাত্মক তহবিল ঘাটতির বিষয়ে ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে। অবিলম্বে নতুন তহবিল না এলে, মাসিক রেশন অর্ধেকে নামিয়ে এনে মাথাপিছু মাত্র ৬ মার্কিন ডলারে নামতে পারে, যা রোহিঙ্গাদের অনাহার ও অপুষ্টিতে নিমজ্জিত করবে, যা তাদের আগ্রাসী কোনো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে। তহবিলের অতিরিক্ত কাটছাঁট হলে তা নিঃসন্দেহে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি করবে, যা ক্যাম্পের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাই আমি বিদ্যমান দাতাদের সাহায্য বাড়াতে এবং সম্ভাব্য নতুন দাতাদের অনুদান প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে এ বিপর্যয়কর পরিস্থিতি এড়ানো যায়।

তিনি বলেন, মানবিক সহায়তার জন্য নতুন ও বর্ধিত তহবিলের বাইরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমার সরকার বা রাখাইনের অন্যান্য অংশীদারদের উপর ইতিবাচক পরিবর্তন ও দ্রুত রাজনৈতিক সমাধানের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে। অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোকেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে কোনো যৌথ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ সদাপ্রস্তুত।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা আশা করি, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন বিশ্বব্যাপী দৃঢ় সংকল্প তৈরি করবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য বাস্তবসম্মত আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করবে, যেখানে তহবিল সংগ্রহ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিকভাবে একটি রোডম্যাপ গৃহিত হবে এবং সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, শুধু মিয়ানমার নয়, এ বছর, আমরা পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি প্রান্তেই সংঘাত প্রত্যক্ষ করেছি— ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে আমরা বাস করি। বিশ্বের আর কোনো অঞ্চলেই এত সংখ্যক পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র এত অল্প দূরত্বে অবস্থান করছে না। তাই নিরস্ত্রীকরণ ও পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তাররোধের গুরুত্ব আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারি।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা সময়ের সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়া বৈশ্বিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আমরা পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের যে অধিকার প্রতিটি দেশের রয়েছে তার প্রতি সমর্থন জানাই।

তিনি বলেন, একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে, আমাদের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার আগেই, এই বছর, আমরা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার আওতাধীন পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত যৌথ কনভেনশন-এ যোগদান করেছি। এই যোগদানের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মানের পারমাণবিক নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার প্রতি আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জাতিসংঘে ড. ইউনূসের সফরসঙ্গীর সংখ্যা জানালেন প্রেস সচিব

সম্প্রীতির জন্য নিজের মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে হবে : পার্বত্য উপদেষ্টা

শিশুদের জন্য আমাদের আরও অনেক কিছু করা বাকি : ডা. শাহাদাত

তুচ্ছ ঘটনায় সিলেটে যুবককে পিটিয়ে আহত

আমরা ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই : শরীফ

পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের

টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন / খুলনা বিভাগে রেজিস্ট্রেশন করেছে লক্ষ্যমাত্রার ৩১ শতাংশ শিশু-কিশোর

ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিনের গণসংযোগ

শখের রঙিন মাছে লাখপতি জয়

সরকার একটি দলকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে : মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক

১০

মিয়ানমারের চলমান সংঘাত সমগ্র অঞ্চলের জন্য উদ্বেগজনক : প্রধান উপদেষ্টা

১১

অভিষেকের ঝড়ো ফিফটিতে ভারতের রানের পাহাড়

১২

পিএসজি ম্যাচের আগে বার্সা শিবিরে বড় ধাক্কা

১৩

বিসিবি নির্বাচন নিয়ে ক্রিকেটারদের পোস্ট, যা বললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা

১৪

জাতিসংঘে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার পূর্ণাঙ্গ ভাষণ

১৫

বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা গুরুতর উদ্বেগের বিষয় : প্রধান উপদেষ্টা

১৬

শাবিপ্রবির তিন হলের নাম পরিবর্তন, নির্মাণাধীন তিনটির নামকরণ

১৭

প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েছে স্ত্রী, হেলিকপ্টারে নতুন বউ আনলেন স্বামী

১৮

শুটিংয়ের কথা বলে রিসোর্টে নিয়ে অভিনেত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ

১৯

পূজামণ্ডপ পাহারায় থাকবে বিএনপি : আমান

২০
X