বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন করতে চায় জামায়াত। শুধু ভোট বা নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল নয় বরং আমরা আর্ত-মানবতার মুক্তি ও সমাজের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন করে দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিবর্তন করতে আপসহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি শুক্রবার (১৬ মে) বিকেলে রাজধানীর মগবাজারের আলফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত থানা মজলিসে শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্যদের শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় শিক্ষাশিবিরে দারসুল কোরআন পেশ করে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা আব্দুস সামাদ। বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জামাল উদ্দিন, মু. আতাউর রহমান সরকার, মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, শাহ আলম তুহিন ও ইঞ্জিনিয়ার নোমান আহমেদি প্রমুখ।
এ সময় ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন করতে চায়। আমরা এমনভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ঢেলে সাজাতে চাই যাতে রাষ্ট্রই সব মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারে। জামায়াত এমন এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেখানে মানুষে মানুষে কোনো বৈষম্য বা ভেদাভেদ থাকবে না। কিন্তু অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা একাজ করেনি বরং তারা আত্মস্বার্থ, ব্যক্তিস্বার্থ, শ্রেণি স্বার্থ, গোষ্ঠী স্বার্থ, সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ রক্ষাসহ রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করেছে। তাই জামায়াতকে সবসময় স্রোতের বিপরীতে কাজ করতে হয়েছে। সঙ্গত কারণেই আমরা নানাভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আর ইসলামী আন্দোলনের ওপর জুলুম-নির্যাতন নতুন কিছু নয় বরং নবী-রাসুলরাও তা থেকে রেহাই পাননি।
তিনি বলেন, অবিশ্বাসীদের জুলুম-নির্যাতনের মুখেই আল্লাহতায়ালা হজরত ঈসা (আ.) কে দুনিয়া থেকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। তাই যে কোনো জুলুম-নির্যাতনে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের হতোদ্যম হলে চলবে না বরং সব বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ময়দানে আপসহীন ভূমিকা পালন করতে হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের পথচলা অতীতে নির্বিঘ্ন ছিল না, এখনো নয়। স্বাধীনতা পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে তদানীন্তন জালিম সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে তারা সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল।
জামায়াত আমির বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মতৎপরতা কখনোই বন্ধ ছিল না। ১৯৭৮ সালে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর তা প্রমাণ হয়েছিল। তবে এজন্য বিভিন্ন সময়ে আমাদের অনেক জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। মামলা, হামলা, গণগ্রেপ্তার, রিমান্ড, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুপ্তহত্যা ছিল আমাদের নিত্যসঙ্গী। এমনকি জুডিশিয়াল কিলিং-এর মাধ্যমে আমাদের শীর্ষনেতাদের হত্যা করা হয়েছে। তবে আল্লাহতায়ালার অপার মেহেরবানীতে মুহতারাম এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো জীবিত আছেন। বিপ্লব পরবর্তী অনেক সময় পার হয়ে গেছে। আগামী ২৭ তারিখ তার মামলার রায় রয়েছে। তিনি এটিএম আজহারুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির জন্য সবাইকে আল্লাহ তায়ালার সিজদাবনত হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি করে না বরং আমরা ময়দানে জানমালের কোরবানির মাধ্যমে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রচলিত সব ধরনের অনিয়মের ইতিবাচক পরিবর্তন করতে চাই। এ কাজ করতে গিয়েই আমাদের অনেক ভাই শাহাদাতকে হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছেন। স্বজন হারিয়েছেন অনেকেই। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আমরা মজলুম হলেও জালেম হবো না। তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠাকে জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন