সরকার যে কোনো উপায়ে বিদেশি রাষ্ট্রের সমর্থন জোগাড় করতে ব্যস্ত বলে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশে দেশে ধরনা দিয়ে মিনতি করছেন বর্তমান সরকার। ডামি ভোটের নকল সরকার হীনম্মন্যতায় ভুগছে। কিন্তু ধরনা দিয়ে অভিনন্দন বার্তা আনা দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। লুটের টাকায় ক্রয়কৃত অভিনন্দনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা বড় হাস্যকর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগের এই একদলীয় পাতানো নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি, ভোটকেন্দ্রে না যাওয়াটাই সেটির প্রমাণ। জনগণ এই নির্বাচন, এই অবৈধ সংসদ কখনো মেনে নেবে না। জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ডামি সরকারের পতন ঘটাবে।
রোববার (২১ জানুয়ারি) সকালে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সাজানো পাতানো ভাগবাটোয়ারার নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী ডামি সরকার বিএনপিকে দমন করতে গিয়ে বাংলাদেশকে পরাজিত করে ফেলেছে। জনগণের কথা শোনার কেউ নেই। দেশে চারদিকে হাহাকার। আওয়ামী সিন্ডিকেট কবলিত দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। মানুষ চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে, সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, ধারদেনায়ও সংসার চালাতে পারছে না। কাঁচামরিচ থেকে সোনাদানার বাজারদর আকাশ স্পর্শ করেছে। গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। গ্যাসের অভাবে একদিকে বাসাবাড়িতে চুলায় আগুন জ্বলছে না, অপরদিকে একেরপর এক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোডশেডিং সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। গ্যাসের অভাবে গাজীপুরে অর্ধেক শিল্পকারখানা বন্ধ হওয়ার সংবাদটি আজকের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রামের অবস্থা আরও ভয়াবহ।
রিজভী বলেন, একদিকে অর্ধাহার অনাহার, অপরদিকে হাড় কাঁপানো তীব্র শীতের যাতনা। অবৈধ ক্ষমতার দাপটে সরকার উষ্ণতা অনুভব করলেও শীত কাতর, খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানহীন মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। জনগণের প্রতি দখলদার সরকারের ন্যূনতম ভ্রুক্ষেপ নেই।
তিনি বলেন, বাজারদরের ভয়াবহ অবস্থা। সম্ভবত প্রতারণার ডামি ভোট বর্জনের কারণে জনগণকে শায়েস্তা করতে নির্বাচনের পরই দেশের মানুষকে ঘুষখোর, মুনাফাখোর, দুর্নীতিবাজ, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে নতুন করে সমর্পণ করেছেন শেখ হাসিনা। ডামি সরকারের শপথের পরদিনই চালসহ কিছু নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করা অভিসন্ধিপ্রসূত। ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম বেড়ে তিনগুণ হয়েছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। প্রতি কেজি চালের দাম গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা।
রিজভী আরও বলেন, দশ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর কথা বলে একসময় ভোট চাইলেও বর্তমানে মোটা চালের দামও ৫৫-৬৫ টাকার নিচে নয়। অন্যান্য চাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সিন্ডিকেটের লোকজন ভোট ডাকাতির নির্বাচনে সহযোগিতা করে এখন ফায়দা নিতেই চালের দাম বৃদ্ধি করেছে। যাকে খাদ্যমন্ত্রী করা হয়েছে তিনি চাল মিলের মালিক। খাদ্যমন্ত্রী চাল সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, চালের দাম সর্বোচ্চ ৬ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৫ দিন আগে খাদ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন চার দিনের মধ্যে চালের দাম কমিয়ে আনতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। বাজারে দায়সারা তদারকির নামে চুনোপুঁটি ধরতে ব্যস্ত প্রশাসন। রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাস্তবতা হলো- কোনো চেষ্টায় কাজ হবে না। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙবে না। ডামি সংসদের প্রায় সবাই ব্যবসায়ী। মজুতদার, মিল মালিক, লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী, লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ী সব সরকারের লোক।
তিনি বলেন, জনগণ চরম অসহায়। দ্রব্যমূল্য না কমলে মানুষ বাঁচবে না। কারণ আয় বাড়েনি, যে শ্রমিকের বেতন ৩০০ টাকা ছিল, এখন ৭০০ টাকা দিলেও তাদের পোষায় না। তারা বাজারে গিয়ে জিনিসপত্র কিনতে পারেন না। তারা ইলিশ মাছ-গরুর মাংস খেতে পারে না। বেগুন খাবে, সেটাও হয় না। এক দেড় বছর আগে চিনির দাম ছিল ৮৮-৯০ টাকা, এখন তা ১৪০-১৪৫ টাকা, ডিমের হালি এখন ৪৮-৫২ টাকা, রসুনের দাম বেড়েছে ২২৯ শতাংশ। শীতের বাজারে ভরা মৌসুমেও সবজি উৎপাদন বেশি হলেও ১০০ থেকে ১৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। আগে তারা বলেছিল আলু খেতে, কিন্ত এখন চালের চেয়েও আলুর দাম বেশি। গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি, রুই মাছ সবকিছুর দাম বেড়েছে। সিন্ডিকেট করে যে সবকিছুর দাম বাড়ানো হয় গরুর মাংস তার বড় উদাহরণ। কত রকমারি প্রতারণা জানে এই ডামি সরকার। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর থেকেই অত্যাচারী আর অনাচারী হয়ে ওঠা একটা রাজনৈতিক দল।
শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, এই সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই শেয়ারবাজার লুট করে। তারা ৯৬, ২০১০ সালে শেয়ার বাজার কারসাজি করে লক্ষ কোটি টাকা লোপাট করেছে। লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথের ফকির করেছে। শেয়ারবাজারের হতাশায় বহু বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা করেছে। এরইমধ্যে আবার শুরু হয়েছে কারসাজি। আবারও শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। দীর্ঘদিন মার্কেটকে ধরে রাখা ফ্লোর প্রাইস হুট করে তুলে দেওয়া হয়েছে কাউকে কাউকে বিশেষ সুবিধায় শেয়ার ক্রয়ের জন্য।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নুল আবদীন ফারুক, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, আসাদুল করিম শাহিন, আমিনুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন