বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা জরুরি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার সময় দেশের অর্থনীতি কতটা চাঙ্গা হবে এবং স্থানীয়রা তাতে কতটা উপকৃত হবে, তা বিবেচনা করা জরুরি। প্রথমে ভাবতে হবে এর ফল কী হবে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে একটি প্রকল্প নেওয়ার পর জনগণ তাতে কতটা উপকৃত হবে। দেশের উন্নয়ন এমনভাবে করতে হবে, যাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়বে এবং অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। গতকাল সকালে গণভবনে স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ বিনির্মাণে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কার্যক্রমের রূপরেখা সংক্রান্ত উপস্থাপনা অবলোকনকালে তিনি এসব কথা বলেন। রূপরেখা দেখার পর প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়াতে ও প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অগ্রাধিকার দিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম সাখাওয়াত মুন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে বলে দেশবাসী এর সুফল পাচ্ছে। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহের আহ্বান: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন উৎস থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য আরও তহবিল সংগ্রহের জন্য আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিল কমে গেছে। তই আইওএমের উচিত তাদের জন্য আরও তহবিল সংগ্রহ করতে নতুন অংশীদারদের খুঁজে বের করা। গতকাল সকালে গণভবনে আইওএমও মহাপরিচালক (ডিজি) অ্যামি পোপ সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম গণভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করতে আইওএমকে সহায়তা করার কথা বলেছেন। কারণ, এখানে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা, কর্মসংস্থানসহ সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরে এ পর্যন্ত ৩০-৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। বৈঠকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে আইওএম মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের নিরাপদ অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করেছে। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দল ও উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং তারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত। রোহিঙ্গারা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় স্থানীয়রা এখন সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। মহামারি মোকাবিলায় প্রস্তুতি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা স্থাপন, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পদক্ষেপে আস্থা তৈরি এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে জীবন বাঁচাতে মহামারি মোকাবিলায় প্রস্তুতি এবং সাড়া প্রদানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। গতকাল গণভবন থেকে নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং মহামারি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়ার জন্য স্বাধীন প্যানেলের কো-চেয়ার হেলেন ক্লার্কের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
২৩ ঘণ্টা আগে

ঢাবিতে টেকসই উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ শীর্ষক গোলটেবিল সভা 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের উদ্যোগে ‘উইমেন’স ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন : এ গেটওয়ে টু সাস্টেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  রোববার (৫ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত হয় এ সভা। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসিফ হোসেন খান এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. তানিয়া হক আলোচনায় অংশ নেন।  ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বাংলাদেশে নারীরা তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করে নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করছেন এবং দেশ-বিদেশের প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিংয়ে নারী সমাজের ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছে। এর ফলে নারীরা গৃহকর্মের পাশাপাশি ঘরে বসেই অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে তিনি নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানান। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রসার ও উন্নয়ন এবং এতে নারীর অধিকহারে অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, শিক্ষাজীবন শেষে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে নারীরা পুরুষের সাথে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ডিজিটাল প্লাটফর্ম-নির্ভর কর্মে তাদের ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে উপাচার্য উল্লেখ করেন। উপাচার্য আরও বলেন, ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহারে নারী-পুরুষ উভয়কেই সচেতন ও আগ্রহী করে তুলতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং নারীদের জন্য যথাযথ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
০৫ মে, ২০২৪

সিডিএ-চসিকের সমন্বয়হীনতা দূর হওয়ার আভাস
স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একসঙ্গে অস্ত্র ধরেন রেজাউল করিম চৌধুরী ও মোহাম্মদ ইউনুছ। এরপর স্বাধীন হয় দেশ, মুক্ত হয় চট্টগ্রাম। সেই যুদ্ধ থেকে বর্তমান রাজনীতির মাঠ, এক সঙ্গেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এই দুজন। একজন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, অন্যজন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান। চট্টগ্রাম নিয়ে ভাবনা তাদের দীর্ঘদিনের। লড়েছেন মাঠে, করেছেন সংগ্রাম। উন্নয়নের স্বপ্ন নিয়ে জাগিয়েছেনও আশা। তাই তাদের মূল্যায়নও করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ‘রক্তের দোষ দুই সংস্থায়’ প্রথম থেকেই সমন্বয়হীন তাদের কার্যক্রম। যার রেশ টানতে হয় নগরবাসীকে। বর্ষার দিনে কোমর পর্যন্ত ওঠে পানি, স্তূপ আকারে মশার কামড়ে বছরের পর বছর অতিষ্ঠ নগরবাসী। ফিরছেই না স্বস্তি। শুধু কী মশা আর পানি- নগরজুড়ে মানুষের হাহাকার, দুর্ভোগ নানা বিষয়ে। সবকিছুই মূলেই সবাই দুষছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সমন্বয়হীনতাকে। কিন্তু এবার দুই সংস্থার প্রধান দীর্ঘদিনের এক ঘরনার মানুষ হওয়ার চট্টগ্রামের উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার আভাস দেখছেন নগরবাসী। জানা যায়, বৃষ্টি হলেই ডুববে চট্টগ্রাম- এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এটি যেন নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষাকালে ‘চাটগাঁবাসী’র অবর্ণনীয় দুর্ভোগ কোনোভাবেই শেষ হচ্ছে না। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪টি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে শুরু হওয়া এসব প্রকল্পে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হলেও বন্দরনগরীর বাসিন্দাদের জল-ভোগান্তি দূর করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। উল্টো দিন দিন বেড়েই চলেছে ভোগান্তি। এর কারণ হিসেবে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি ও কোনো প্রকার ত্রুটি আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে ২০২১ সালের জুনে চট্টগ্রামে এসেছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ঘুরে দেখেন বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্প। ওই সময় তিনি নগরের সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তিনি বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান এবং সিটি মেয়র ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে একটি তদারকি কমিটি গঠন করে দেন। কমিটি প্রতি মাসে প্রকল্পের কার্যক্রম ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে ওই কমিটির তেমন কার্যক্রম নেই বললেই চলে। শুরু থেকে কমিটি কোনো প্রতিবেদন দিয়েছিল কি না, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আলাদা আলাদা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। উদ্দেশ্য একই হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এ তিন সংস্থার মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। প্রকাশ্যে একটি সংস্থা অন্যটিকে দোষারোপ করছে আর যে যার মতো করে কাজ করছে। এদিকে নগরের নালাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বহু নালায় জমেছে ময়লা ও পলিথিনের স্তূপ। নালা পরিষ্কারের দায়িত্ব কার, সেটা নিয়েও দ্বন্দ্ব রয়েছে চসিক-সিডিএর মধ্যে। এদিকে সম্প্রতি জাপানে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পের ব্যবস্থাপনা শীর্ষক এক সেমিনার। সেখানে যোগ দেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র (প্রতিমন্ত্রী) বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। গেল ১ মে বিকেলে চট্টগ্রামে পৌঁছান তিনি। চট্টগ্রামে পৌঁছা মাত্রই তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ।  এ সময় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে চসিক এবং সিডিএকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে হলে প্রতিষ্ঠান দুটির সমন্বয়ের বিকল্প নেই। এ ছাড়া সিডিএ যে খাল খনন প্রকল্প করছে তা যথাযথ ব্যবস্থাপনার আওতায় আসলে নগরীর মশাও কমবে। এসময় সিডিএর নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, আমি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখব। চসিক ও সিডিএর মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকবে না, সমন্বয়হীনতা থাকবে না। আমরা দীর্ঘসময় ধরে রাজপথে একত্রে লড়েছি। দুজনের অভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতায় চট্টগ্রাম এগিয়ে যাবে।  বর্তমানে চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে চান মোহাম্মদ ইউনুছ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের দায়িত্বভার নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। আর প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় ও স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের জন্য যেসব প্রকল্প চট্টগ্রামে বরাদ্দ দিয়েছেন সেসব চলমান প্রকল্প যাতে দ্রুত শেষ করাই আমার প্রথম লক্ষ্য। আর যদি কোনো কাজ শেষ না হয়ে থাকে কেন শেষ হয়নি এর সমাধানের পথ বের করা। পূর্ববর্তী বিজ্ঞ চেয়ারম্যানরা কী করেছেন আর কী করেননি তা বিচার বিশ্লেষণ করতে যাব না। তবে চলমান প্রকল্পগুলো শেষ করার পর আমি নতুন কিছু প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাব।  প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সিডিএনর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। বলা হয়ে থাকে, সংস্থাটি মানুষের গুরুত্বকে প্রাধান্য না দিয়েই নিয়েছিল নতুন নতুন প্রকল্প। পরে যা তদারকি করেই পারছিল না সংস্থাটি। এবার ঠিক কোনো পথে হাঁটবে তারা? নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, এই নগরে যারা বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সময়পোযোগী যেসব প্রকল্পের প্রয়োজন হবে সেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। পরিকল্পিত আবাসন নিশ্চিতের এবং পরিবেশ সহায়ক একটি শহর গড়ে তুলতে কাজ করব।
০৪ মে, ২০২৪

সেনাবাহিনী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে : সেনাপ্রধান
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহম্মেদ বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।  শনিবার (৪ মে) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নোয়াগাঁও ইউনিয়নের লাদুরচর এলাকায় আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। সেনাপ্রধান আরও বলেন, বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এ দেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।  আস্থা ফিডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে এসময় জাতীয় সংসদের হুইপ ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, ময়মনসিংহ-৫ আসনের সংসদ সদস্য কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম, বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় থানা আওয়ামী লীগের নেতাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
০৪ মে, ২০২৪

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ / কাজ না করেই ৪১ লাখ টাকার বিল পরিশোধ পিডির
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ‘ভূগর্ভস্থ সেচ নালা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে সেচ এলাকার সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে কাজ না করেই ৪১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার বিল পরিশোধের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়; অভিযোগ তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটি ২৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা তছরুপের প্রমাণও পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোট ৩২৯ কোটি টাকার বিএমডিএ’র এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে নিয়োগ পান বিএমডিএর চলতি দায়িত্বের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুর রহমান। দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। দুদকে পাঠানো অভিযোগপত্রে পিডি শহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রকল্পের কাজ না করেই ৪১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার বিল পরিশোধের অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ঠিকাদার কাজ না করলেও এই বিল পরিশোধ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, প্রকল্পের যেটুকু কাজ হয়েছে, তাতে নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহারের অভিযোগও ওঠে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি নিয়ে কাজ করা সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুল হুদাকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও করে। কমিটি গত ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী পরিচালকের (ইডি) কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে ২৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা তছরুপের প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ঠিকাদার কাজ না করলেও এই বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান শামসুল হুদা তদন্তের বিষয়টি স্বীকার করে কালবেলাকে বলেন, ‘অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন অনেক আগেই জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্তে কী পাওয়া গেল সেটি আসলে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (ইডি) অনুমতি ছাড়া বলা ঠিক হবে না।’  আর প্রকল্পের মনিটরিং কর্মকর্তা ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘বিভিন্ন মালামাল কেনায় অনিয়ম এবং দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা ইতোমধ্যে নির্বাহী পরিচালকের (ইডি) কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের একটি সূত্র বলছে, পিডি শহিদুর রহমান প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ইউপিভিসি পাইপ ও গেট ভাল্‌ভ কিনেছেন। নিম্নমানের পাইপ ও গেট ভাল্‌ভ কেনার বিষয়টি প্রকল্পের মনিটরিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফের নজরে আসে। এরপর আব্দুল লতিফ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে ১৮ ডিসেম্বর নির্বাহী পরিচালকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। এতে বলা হয়, বেঙ্গল প্লাস্টিক পাইপ লিমিটেডের কাছ থেকে যে ৪১ হাজার ১০০ মিটার পাইপ ৩ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার ২২ টাকায় কেনা হয়েছে, সেটি গুণগতভাবে অত্যন্ত নিম্নমানের। গোদাগাড়ী উপজেলার সাহাব্দিপুর, শিয়ালা, কিসমত গোবিন্দপুর এবং তানোর ও মোহনপুর, নওগাঁর মহাদেবপুর ও মান্দা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বৈদ্যপুর, নিজামপুর, কুশমাডাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্কিমে ব্যবহৃত এসব নিম্নমানের পাইপ ইতোমধ্যে ফেটে গেছে। এ কারণে বন্ধ হয়ে গেছে পানির সরবরাহ। অন্য স্কিমগুলোয়ও একই অবস্থা। এসব ফাটা পাইপ এখন বিএমডিএর উপজেলা কার্যালয়গুলোয় স্তূপাকারে পড়ে আছে। এদিকে রাইজার ভাল্‌ভ কেনার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। শিডিউলে ১৫ কেজি ওজনের ভাল্‌ভ কেনার কথা থাকলেও কেনা হয়েছে ১২ কেজি ওজনের। এ বিষয়টিও মনিটরিং কর্মকর্তা তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। প্রকল্পে গভীর নলকূপ স্থাপনের ক্ষেত্রে এমএস হাউজিং পাইপ এবং এসএস স্টেইনার ব্যবহারের বিষয়টি শিডিউলে উল্লেখ রয়েছে। এখানেও নিম্নমানের প্লাস্টিকের হাউজিং এবং স্টেইনার দিয়ে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পাইপ কেনায় অনিয়ম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিডি শহিদুর রহমান রাজশাহী মহানগরীর অভিজাত আবাসিক এলাকা উপশহরে ২৭১/২ নম্বর ১০ তলা ভবনের তিনতলায় এ ও বি নম্বরের দুটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। প্রতিটি ৩ হাজার বর্গফুটের এই ফ্ল্যাট দুটির একটি তিনি স্ত্রীর নামে করেছেন। ঢাকার উত্তরা এবং উত্তর বাড্ডায়ও তার দুটি ফ্ল্যাট আছে। দেশের বাড়ি কুষ্টিয়ায় কিনেছেন বিপুল পরিমাণ জমি। তবে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রকৌশলী শহিদুর রহমান জানান, তার শুধু রাজশাহীতে দুটি ফ্ল্যাট আছে। তাও একটি ফ্ল্যাট তার স্ত্রীর। অন্য কোনো সম্পদ নেই বলেও দাবি তার। দুর্নীতির চিত্র তদন্ত প্রতিবেদনে ওঠে আসার বিষয়টিকে বানোয়াট ও ভুয়া দাবি করে জানান, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। হয়রানি করতে দুদকেও অভিযোগ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তার দাবি, পাইপ উন্নত মানেরই কেনা হয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের কড়া মাটির কারণে পাইপ ফেটে গেছে। কাজ না করে বিল দেওয়ার অভিযোগও সত্য নয়। প্রকল্প পরিচালকের অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুর রশিদ জানান সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটিতে অনিয়ম হয়েছে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এখন নিয়ম অনুযায়ী পিডির কাছে কৈফিয়ত তলব করা হবে। তিনি ব্যাখ্যা দেবেন। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান নির্বাহী পরিচালক।
০৪ মে, ২০২৪

বিশেষ সাক্ষাৎকারে খুশী কবির / নারীর অধিকার খর্ব করে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়
নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় তৃণমূলে কাজ করে যাচ্ছেন মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির। দুঃস্থ নারীদের কল্যাণে সমন্বয়ক হিসেবে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ‘নিজেরা করি’-তে যোগ দেন। নারীর বর্তমান অবস্থান, ক্ষমতায়ন, সম-অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ নানা বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি-  কালবেলা: স্বাধীনতার বায়ান্ন বছরে বাংলাদেশে নারীর অগ্রগতি কতটা হলো? খুশী কবির: শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই যুগ যুগ ধরে নারীর অবদান অনেক। ঘরে, কৃষিতে, অফিস আদালতে, কলকারখানা— সব জায়গায় নারীর অবদান রয়েছে। উৎপাদনমুখী যে কোনো কাজে নারী এবং পুরুষ যেই অংশগ্রহণ করুক সকলেরই অবদান রয়েছে। কিন্তু সাধারণত সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে মূল্যায়নে নারীর অবদানকে সামনে নিয়ে আসা হয় না। নারীর অবদানকে উপেক্ষা করা হয়। শত বছর ধরে এটাই আমরা দেখেছি।  বিশেষ করে একজন নারী যখন বাইরের কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন না বা তার ঘরের কাজকে অর্থনৈতিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। নারীর ঘরের কাজের যে একটি অর্থনৈতিক মূল্যায়ন রয়েছে সেটা অর্থনীতিবিদরা এতদিন গ্রহণ করেননি। তবে এখন কিছু আধুনিক অর্থনীতিবিদ সারা বিশ্ব জুড়েই নারীর এই ঘরের কাজকে অর্থনৈতিকভাবে মূল্যায়নের কথা বলছেন। তারা দেশের জিডিপি হিসাব করার ক্ষেত্রেও এটাকে হিসাব করছেন। নারীর এই ঘরের কাজকে সেবামূলক খাতের মধ্যে ধরা হচ্ছে।  একজন নারীর কাজ পরিবারের সদস্যদের সামনে খাবার তুলে দেওয়া। পরিবারের উপার্জনকারী পুরুষ সদস্য ঘরে চাল নিয়ে আসলো কি আসলো না তার উপর নির্ভর করে একজন নারী বসে থাকতে পারেন না। তাকে চুলা জ্বালাতেই হয়। নারী বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করেন, হাঁস মুরগি পালন করেন, রান্নার কাঠ জোগাড় করেন। এই সবকিছুর একটি অর্থনৈতিক ভ্যালু রয়েছে। এই ভ্যালু অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে।  ঘরের সকল কাজ চিরকাল নারীরাই করেছেন। এদেশে বহু আগে থেকেই নারীরা কৃষি কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। ফসল লাগানো থেকে শুরু করে ফসল তোলা, প্রক্রিয়াকরণ এবং সংরক্ষণ সকল কাজেই নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে। বিশেষ করে ফসল তোলা এবং সংরক্ষণের কাজ প্রায় সম্পূর্ণটাই নারীরাই করে থাকেন। গত ২০-৩০ বছরে দেখা গেছে, নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কৃষিতে শ্রমিক হিসেবেও কাজ করছেন। কিন্তু সেখানে নারীরা অনেক কম মজুরি পাচ্ছেন। একজন পুরুষ শ্রমিক ৫০০ টাকা মজুরি পেলে একজন নারী শ্রমিক মজুরি পান ৩৫০ টাকা। সুতরাং নারীরা তাদের কাজের অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে মূল্যায়িত হচ্ছেন না। আমাদের সমাজে নারীকে পুরুষের সমানভাবে দেখা হয় না।  কালবেলা: আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছি। আমাদের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ নারী। নারীদের ক্ষমতায়ন না করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা কতটা সম্ভব? খুশী কবির: আমি যদি শুধুমাত্র অবকাঠামো এবং গড় আয়কে উন্নয়ন হিসেবে দেখি সেটা এক ধরনের হিসাব। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন দেশের রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো বলে কোনো কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। এরপর বন্যা এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংকট। সব মিলে সে সময় দারিদ্র্যের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশ আজকের এই জায়গায় এসেছে। মানুষের ঘরে এখন অন্তত দুইবার চুলা জ্বলে। কিন্তু একই সঙ্গে দেশে ধনী এবং গরিবের বৈষম্য অনেক বেড়ে গেছে। আমরা গড় যে মাথাপিছু আয় দেখছি সেটা দিয়ে দেশের মানব উন্নয়ন বিচার করা যাবে না। মাথাপিছু আয় একজন মানুষের হাজার কোটি টাকা এবং আরেকজন মানুষ ১০০ টাকার মালিক এই দুটিকে গড় করে দেখানো হচ্ছে। এভাবে দেখলে মাথাপিছু আয় অনেক মনে হয়, সকল মানুষের অনেক আয় আছে বলে মনে হয়। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি খুব একটা সুখকর নয়। বিপুল মানুষের আয় এখনো গড় আয়ের চেয়ে কম।  ধনী ও গরীবের ব্যবধান অনেক বেড়ে গেলে সেখানে শোষণ বেড়ে যায়। আমি যদি নিজেকে উন্নত হচ্ছি বলে দাবি করি তাহলে দেশের সকল মানুষের উন্নতির কথা চিন্তা করতে হবে। আমি যদি উন্নত হচ্ছি বলে মনে করি তাহলে নারীদের অংশগ্রহণও স্বীকার করতে হবে।  নারীদেরকে কর্ম ক্ষেত্রে নিয়ে আসার ব্যাপারে গার্মেন্ট শিল্প বড় ভূমিকা রেখেছে সত্য। কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরিতে তাদেরকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। নারীদের কম মূল্যে কাজ করানো হচ্ছে। অর্থাৎ সস্তা শ্রমের জন্য নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা উন্নত হচ্ছি কিন্তু শুধু গড় হিসাব দেখিয়ে উন্নয়ন হওয়া এবং সত্যিকারের মানব উন্নয়ন করা এক বিষয় নয়। উন্নয়ন মানে সকলের উন্নয়ন। মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকার সকলেই যাতে ভালোভাবে পূরণ করতে পারে সেটাই উন্নয়ন।  দেশের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশই নারী। নারীরা ঘরের কাজ করছেন পাশাপাশি পুরুষের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বাহিরের কাজও করছেন। কৃষি, শিল্প, সেবা খাত ও অফিস আদালত সকল ক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। এই সকল উৎপাদনমুখী কাজে নারী অংশগ্রহণ করেছে বলেই আমাদের অগ্রগতি দ্রুততর হয়েছে। নারীরা যদি আরও বেশি সংখ্যায় কর্ম ক্ষেত্রে আসেন তাহলে দেশের উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত এবং শক্তিশালী হবে। তাই নারীদেরকে বাদ দিয়ে কোনোভাবেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।  কালবেলা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছে ৫২ বছর হলো। এর ৩০ বছরের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নারী। এরপরেও নারীর অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়নি কেন?  খুশী কবির: অনেক বছর ধরে আমাদের দেশে নারী সরকার প্রধান দায়িত্ব পালন করছেন। এত বছর একটানা নারী প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর ইতিহাসে কমই আছে। তবে আমি ব্যক্তিকে দিয়ে একটি গোটা জাতিকে মূল্যায়ন করতে পারি না। ব্যক্তি আমাদের সামনে একটি উদাহরণ হিসেবে আসেন। একটি রোল মডেল হিসেবে আসেন। রোল মডেল মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে শেখায়। একজন নারী প্রধানমন্ত্রীকে দেখে একটি ছোট শিশু নারী কি করতে পারেন সেটা শিখতে পারে। কিন্তু গোটা ব্যবস্থা এবং চিন্তাধারা কোনো কিছু পরিবর্তন না করে শুধু একজন নারী সরকার প্রধানকে দিয়ে মূল্যায়ন করতে পারবো না। পরিবার থেকে শুরু করে গোটা সমাজ ব্যবস্থা নারীকে সুযোগ দিচ্ছে না।  কালবেলা: বিদ্যমান সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী?  খুশী কবির: পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার সবার আগে। নারী-পুরুষের লিঙ্গগত পার্থক্য ছাড়া, অন্য কোনো পার্থক্য আমার চোখে পড়ে না। আর যা পার্থক্য দেখেন, সেটা সমাজের সৃষ্টি। সমাজই চোখে আঙুল দিয়ে নারী আর পুরুষের আলাদা বৈশিষ্ট্য তৈরি করে বিভেদ সৃষ্টি করছে। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ অনেক উচ্চ পদে এখন নারীরা কাজ করছেন, ফলে নারীর ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সময় হয়েছে। কালবেলা: শুধু কী পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বা মানসিকতা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্য থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে মনে হয় আপনার? খুশী কবির: না, তেমনটা আমি মনে করি না। পুরুষের মানসিকতার সাথে সাথে নারীদেরও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। আমি অনেকের সাথেই কথা বলি। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বা কর্মজীবী নারীরও পরিবার থেকে বিয়ের ব্যাপারে চাপ থাকে। নারী বিদেশ থেকেও যদি উচ্চ শিক্ষা নিয়ে আসে কিংবা যতই মুক্তমনা পরিবারে বেড়ে উঠুক না কেন, একটা স্টেজের পরে তাকে বিয়ের জন্য নানাবিধ চাপ প্রয়োগ করা হয়। কালবেলা এ সময়ে এসেও নারীর স্বাধীনতাকে ভালো চোখে না দেখার কারণগুলো কী? খুশী কবির: এখন সমাজ যদি মনে করে, একজন নারীর স্বাধীনভাবে চলাচল করা উচিত না বা ভালো না, তবে তো আমি বলবো- আমাদের টোটাল সমাজ ব্যবস্থাই নারীকে ভয় পায়, নারীর স্বাধীনতাকে তারা ভয় পায়। নারীর স্বাধীনতাকে ভয় পায় বলেই এইসব প্রতিবন্ধকতা সমাজেরই সৃষ্টি। নারী স্বাধীনভাবে চলাচল করলে কিংবা স্বাধীনতা উপভোগ করলে, পুরুষের সম মর্যাদার হয়ে যাবে, এটাতেই তাদের ভয়। তারা কোনো অবস্থাতেই নারীকে পুরুষের সমকক্ষ হতে দেবে না। কালবেলা: একজন পুরুষ দিন হোক বা রাত, যে কোনো সময় রাস্তায় একা চলাফেরা করতে পারছে, কিন্তু একজন নারীর ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হচ্ছে না... খুশী কবির: মূল ভয়টা কী আসলে? নারীকে ধর্ষণ করা হবে? কিংবা অপহরণ করা হবে, তাই তো? এখন একজন পুরুষ যখন রাতের বেলায় বাইরে থাকে; সে যদি ছিনতাই, ডাকাতি বা খুন করতেও বাইরে অবস্থান করে, তাকে কিন্তু প্রমাণ করতে হয় না, সে ভালো কী খারাপ! তার চরিত্র নিয়েও কেউ প্রশ্ন করে না, যতই সে খারাপ কাজ করুক না কেন।  কিন্তু একই ঘটনা যদি একজন নারীর ক্ষেত্রে ঘটে! জরুরি কাজে হোক কিংবা ঘুরতেই বাইরে বের হোক, কেন একজন নারীকে তার চারিত্রিক সনদ দেখাতে হবে? কেন তাকে প্রমাণ করতে হবে- সে ভালো নাকি মন্দ? আপনার নিশ্চয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোমানা মঞ্জুরের ঘটনা মনে আছে? তার স্বামী যখন চোখ উপড়ে ফেললো, মিডিয়ায় সে খবরের চেয়ে বেশি ফলাও করে প্রচার করলো- রোমানার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা। আবার তার পরিবারও কিন্তু এটা ডিফেন্ড করার জন্য সবাইকে বুঝাতে চেষ্টা করলো- সে বেশ ধার্মিক মেয়ে, ভালো মেয়ে। ভালো-মন্দ প্রমাণ করতে হবে কেন? তার সঙ্গে একটা অমার্জনীয় অন্যায় করা হয়েছে। একজন পুরুষ হত্যা হলে বা তাকে কেউ হত্যার চেষ্টা করলে কি প্রমাণ করতে হয়- সে ভালো ছিল না কি মন্দ? নারীকে কেন করতে হবে? অপরাধী যেই হোক, সে তো অপরাধী-ই। ভিক্টিমাইজ যে হয়েছে, সে ভালো নাকি মন্দ এটা তো মূল বিষয় হওয়ার কথা না। এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। কালবেলা: কোন জায়গাটায় নজর দিতে হবে বলে মনে করেন?  খুশী কবির: প্রথমেই আমাদেরকে পরিবারের ভেতরে নজর দিতে হবে। এরপর নজর দিতে হবে সমাজে। আমাদের ভালো কিছু আইন রয়েছে। কিন্তু সে সকল আইনের প্রয়োগ একদমই নেই। এছাড়া আইনকে ব্যাখ্যা করার মধ্যে অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ: যখন ১৯৮৪ সালে ভূমি সংস্কার আইন করা হয় তখন খাস জমি বিতরণের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছিল। সেই নীতিমালায় বলা হয়েছে একজন নারী তখনই জমি পাবেন যদি তার একটি সক্ষম পুত্র সন্তান থাকে। একটি সক্ষম পুত্র সন্তান থাকার শর্ত দেওয়া হয়েছে। তাহলে যাদের সক্ষম পুত্র সন্তান নাই তাদের কী হবে? এভাবে বৈষম্য করা হয়েছে।  ধর্মীয় দিক থেকেও নারীদেরকে এক ধরনের বৈষম্যের মধ্যে রাখা হয়। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ইউরোপ বা ফিলিপাইন এক এক দেশে এক একটি ধর্মীয় মানুষ সংখ্যাগুরু। সব দেশেই প্রায় একই অবস্থা লক্ষণীয়। যারা ধর্ম প্রচার করছেন তারা এক ধরনের পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা পোষণ করেন।  যেহেতু রাষ্ট্র পিতৃতান্ত্রিক সুতরাং রাষ্ট্রের চিন্তার মধ্যে রয়েছে নারীকে দমিয়ে রাখা। ধর্ম যেভাবে প্রচারণা চালানো হয় সেটাও সাংঘাতিকভাবে পিতৃতান্ত্রিক, আমাদের আইনগুলো পিতৃতান্ত্রিক। সবকিছুই পিতৃতান্ত্রিক হওয়ার কারণে নারীরা উঠে আসতে পারেন না। এর মধ্য থেকে যে নারীরা উঠে আসেন তাকে প্রমাণ করতে হয় যে তিনি একজন পুরুষের থেকেও বেশি। সুতরাং পরিবর্তনটা করতে হবে একদম গোড়া থেকেই। পরিবার থেকে এই পরিবর্তনটা শুরু হওয়া উচিত।  কালবেলা: আমাদের দেশ নারীবান্ধব হয়ে উঠতে পারেনি কেন? খুশী কবির: পরিবর্তন আনতে পারিনি কারণ আমাদের দেশে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ১৯৭২ সালে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে বাতিল করা হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে আবার এই দলগুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর থেকে সকল দলই মনে করে ধর্মকে ব্যবহার করতে হবে তা না হলে জনগণ তাকে গ্রহণ করবে না। ফলে মূলত এই ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে জড়িয়ে ফেলার কারণে আমরা বাংলাদেশকে নারীবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি।  ধর্মীয় কারণ ছাড়াও বিভিন্ন আইনের মধ্যেও নারীর প্রতি বৈষম্য রাখা হয়েছে। যেমন খাস জমি বণ্টনের ক্ষেত্রে। নারীরা পাসপোর্ট করতে, জমি কিনতে বা একটি ফ্যাক্টরি তৈরি করতে, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে— যেকোনো কাজেই একজন পুরুষকে গ্যারান্টার হতে হবে। এটা অবশ্যই নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ।  কালবেলা: যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা বা সহযোগিতা পুরুষদেরকেই দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আপনার মত কী? খুশী কবির: মানুষ মনে করে, নারী যখন কাজ করেন বা উপার্জন করেন সেটা সাবসিডিয়ারি। নারীকে পুরুষের সহযোগী হিসেবে দেখা হয়। অর্থাৎ পরিবারের পুরুষ সদস্যের আয় ভালোভাবে সংসার চলছে না তাই পরিবারের নারী সদস্যের আয়কে পরিপূরক হিসেবে দেখা হয়। আলাদা সত্তা হিসেবে দেখা হয় না। নারীকে শুধুমাত্র পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখা হয়। যে কারণে প্রণোদনা, সহযোগিতা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। যখন খাস জমি দেওয়া হয় তখন স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের নামেই রেজিস্ট্রি হয়। কিন্তু স্বামী সেটাকে দেখেন, ওই নারী তার স্ত্রী বলেই জমিটা পেয়েছে। নারী একজন নাগরিক হিসেবে বা একক সত্তা হিসেবে জমি পাননি। আমরা যদি নারীদেরকে এবং নারীদের কাজকে আলাদা ব্যক্তি সত্তা হিসেবে দেখতে না পারি তাহলে পরিবর্তন আসবে না।  কালবেলা: দেশের নারীর ক্ষমতায়নের দিকটাকে কীভাবে দেখছেন? খুশী কবির: আগেই তো বলেছি- কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীরা বেশ এগিয়ে গেছে, অনেকেই নিজের অনেক ভালো অবস্থান তৈরি করেছে। আপনি ২০-২৫ বছর আগের কথাও যদি ভাবেন, নারীদের অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হতো। ঘর থেকে বের হতে পারতো না, পড়াশোনাও একটা স্টেজ পরে বন্ধ করে দিতে হতো। আর এখন খোঁজ নিলে জানতে পারবেন- প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেশি, লেখাপড়াতেও মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় ভালো ফলাফল করছে। এখন যে প্রতিবন্ধকতাগুলো আছে, ভবিষ্যতে আমাদের নারীরা এগুলো অতিক্রম করে আরো এগিয়ে যাবে বলে আশা করি। কালবেলা: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সম্পদের উপর নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রগতি কতটা? খুশী কবির: অনেক বড় প্রতিষ্ঠানের সিইও বা চেয়ারম্যান নারী রয়েছেন। কিন্তু তার হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। তাকে শুধুমাত্র লোক দেখানো সিইও বা চেয়ারম্যান বানিয়ে রাখা হয়েছে। ধনিক শ্রেণীর অনেকে স্ত্রীর নামে বাড়ি বা সম্পদ বানাচ্ছে। কিন্তু সেই সম্পদে স্ত্রীর আধিপত্য নেই। আমি এমন অনেক ধনী পরিবারের নারীকে চিনি, যারা অনেক অত্যাচারের সম্মুখীন হন। কিন্তু তারা কথা বলেন না এবং ওই পরিবার ছেড়ে চলেও আসেন না। আমি অনেককে জিজ্ঞেস করেছি, সম্পদের মালিকানা রয়েছে তার নামে তাহলে সে পরিবার ছেড়ে দিচ্ছে না কেন। অত্যাচার সহ্য করে পরিবার আঁকড়ে ধরে আছে কেন? তারা কেউ পরিবার ছাড়তে কোনোভাবেই রাজি নয়। তারা কম্প্রোমাইজ করেন, নিজে সহ্য করেন। কিন্তু পরিবার থেকে বের হতে পারেন না কারণ তাদের সাহস নেই। কারণ তারা জানেন, সমাজ তাকে গ্রহণ করবে না, সমাজ তাকে সেভাবে সাপোর্ট দেবে না।  কালবেলা: কর্মক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা বাড়ছে বলছেন কিন্তু নারীর কর্ম পরিবেশ কি বন্ধুত্বপূর্ণ হয়েছে? খুশী কবির: না, এখনো সেই প্র্যাক্টিস আমাদের গড়ে উঠেনি। সে জন্যই তো বারবার বলছি, আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন সবার আগে জরুরি। প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের উচিত তার নারী কর্মীদের যৌন নিপীড়ন বা হয়রানি রোধ করার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কমিটি গঠন করা। শুধু প্রতিষ্ঠানের নয়, প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকেও এক-দুই জন সদস্য সেখানে থাকতে পারে, নিরপেক্ষ জাজমেন্টের জন্য। এসব নীতিমালা কিন্তু আছে, কিন্তু কয়জন সেটা মেনে চলে? আবার দেখবেন যৌন হয়রানের শিকার কোনো নারী কর্মী যদি প্রতিষ্ঠানের কাছে অভিযোগ করতে যায়, অনেক ক্ষেত্রে ভিক্টিমকেও বাজে ভাবে দেখা হয়। ফলে এসব ক্ষেত্রে আমাদের এখনো আরো অনেক কাজ করা বাকি। পুরুষদের সহযোগিতা ছাড়া যেমন এগুলো করা সম্ভব  না, পুরুষদের মানসিকতাও আমাদেরই পরিবর্তন করতে হবে। কালবেলা: শহরে, নাকি গ্রামাঞ্চলে নারীরা বেশি নির্যাতিত হচ্ছেন?  খুশী কবির: আমাকে এই প্রশ্ন অনেকেই করে, আমি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই গ্রামের নারীদের সাথে কাজ করা শুরু করেছি, তাদের কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। গ্রামে তো মানুষের বেড়ার-টিনের ঘর, আর ঘরগুলো কাছাকাছি হওয়ার কারণে, কোনো ঘটনা ঘটলে সবাই জানাজানি হয়ে যায়। আমি যে সময়ের কথা বলছি, সে সময় কোনো গ্রাম্য সালিশে নারীর উপস্থিতির অধিকার ছিল না। বিচার যেটা করা হতো সেটাও এক তরফা। এখন তো এসব পরিবর্তন হয়েছে, সালিশে নারীরা উপস্থিত থাকে, কথা বলে। এ দিক দিয়ে বিবেচনা করলে নারী সচেতনতা বেড়েছে। তবে যে পরিমাণ নির্যাতন তার উপর হচ্ছে, এটা হয়ত আগে ছিল না। আগের নির্যাতনগুলো অন্য রকম ছিল- একঘরে করে রাখা হতো, জোর করে সব কিছু চাপিয়ে দেওয়া হতো। আর এখন নারীকে জোর করে ধর্ষণ করা হচ্ছে, সেটার আবার ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বা ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর এ সময়ে এসে এগুলো ঘটনা আমাদের সমস্ত অবদানকে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে। শহুরে নারীরা যে নির্যাতিত হচ্ছে না, তা কিন্তু না। কিন্তু সামাজিক ভয়ে, লোক লজ্জার ভয়ে,আর স্ট্যাটাসের কথা ভেবে শহুরে নারীরা খুব কমই এসব নিয়ে কথা বলেন। তাদের উচিত এগুলো বিষয়ে প্রতিবাদ করা, নতুবা তাদের সাথে গ্রামের অসহায় ওই নারীদের কি পার্থক্য থাকলো? তাও তো গ্রামের নারীরা প্রতিবাদ করছে, চিৎকার চেঁচামেচি, ঝগড়াঝাঁটি করছে, স্বামী-শ্বশুর বাড়ির ক্টু কথা, অপমান সহ্য করেও গ্রাম্য সালিশের শরণাপন্ন হচ্ছে, শহুরে নারীরা কিন্তু সেটা খুব একটা করছেন না। কালবেলা: নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে কঠোর আইন থাকলেও, যৌতুকের দাবি, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, হত্যা- এসব ঘটনা অহরহ ঘটছে কেন?  খুশী কবির: রাষ্ট্র যদি আইন করে থাকে, তবে তার দায়িত্ব হচ্ছে সেটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। কিন্তু রাষ্ট্র কি তা করছে? নারী নির্যাতন বন্ধে যে সকল আইন বা নীতিমালা হয়েছে, দুঃখজনক হলেও সত্য- এগুলো বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর ভূমিকায় নেওয়া হচ্ছে না। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করেছে এবং করছে অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে পচাঁত্তুরের পরে যখন জাতিসংঘ নারী দিবস পালন করা শুরু করলো, নারী দশক পালন করলো এর পর নারীদের জন্য বিশেষ কিছু উদ্যোগ নিলো যেমন প্লাটফর্ম ফর এ্যাকশনস নেয়া শুরু করলো তখন তৈরি হতে শুরু করলো নারী উন্নয়ন নীতি। জাতিসংঘ তার সদস্যভুক্ত সব দেশে থেকে নারীদের জন্য অবস্থান, উন্নয়ন পরিকল্পনা আহ্বান করা শুরু করে। তো জাতিসংঘ অনেক ইফোর্ট দিয়েছে নারীর উন্নয়নে, সেই সুরে বাংলাদেশও তাঁর উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারীদের অগ্রাধিকার দিয়েছে । স্যোশাল ডেভলপমেন্ট গোল-এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা কিন্তু তখনি নির্ধারণ করে সরকার। নারীর সমতাকে বিষয়ে সরকার বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। সমসতা ছাড়াও আরও অনেকগুলো বিষয় আছে যেগুলোর মধ্যে নারীর মর্যাদা, নারীর নিরাপত্তাসহ সবকিছু। আমরা সবাই এসব ইস্যু নিয়ে কাজ করার কথা বলছি কিন্তু প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্রটা দেখতে পাই। ঘরের ভেতরে, পরিবারে সমাজে, কর্মক্ষেত্রেই নারীর প্রতি সহিংসতাটা কিন্তু বেড়েই চলেছে। সেই মেয়ে হোক বিধবা বা সিঙ্গেল অথবা তালাকপ্রাপ্তা, সন্তানসহ কিংবা সন্তানছাড়া, ছাত্রী কি ছাত্রী না, বোরখা পড়ে কি বোরখা পড়ে না- সকলেই কিন্তু সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি সেটাকেই সহিংসতা বৃদ্ধির মূল কারণ বলে মনে করি আমি। নারীদের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল আছে। তারপরও এমন কিছু মান্ধাতা আমলের আইন আমাদের এখনও আছে যার পরিবর্তন করা সময়ের দাবি। অথচ সেই একই ধরনের আইন কিন্তু পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে পরিবর্তন করে সময়োপযোগী করা হয়েছে। ফলে কি হয়েছে, অপরাধ ঘটছে, অপরাধী ধরাও পড়ছে কিন্তু আইনের ফাঁকফোকর বেয়ে তারা বের হয়ে যাচ্ছে। যেকারণে অপরাধ কমছেই না। বিশেষ করে নারীর প্রতি সহিংসতার অপরাধ। কালবেলা: নারীর অধিকার সমুন্নত এবং দেশকে আরো নারীবান্ধব দেশ হিসেবে গড়তে আপনার পরামর্শ কী?  খুশী কবির: প্রথমত, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদের অধিকার যাতে খর্ব করা না হয় সেই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। আইনগুলো সংশোধন করতে হবে এবং নারীবান্ধব করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনতে হবে। ছোটকাল থেকেই বাচ্চাদেরকে শেখাতে হবে নারী-পুরুষ সকলে সমান। এটা ছেলেদের কাজ এটা মেয়েদের কাজ এভাবে কোনো বৈষম্য শেখানো যাবে না। পুরুষদেরকে তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের উত্তরাধিকার আইনটা সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের সংবিধান বলে যে নারীদের সবদিকেই সমান অধিকার হতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশেও সমান অধিকার দেয়া আছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও পারিবারিক আইন ধর্ম দ্বারা পরিচালিত। এর পরিবর্তন হওয়া জরুরি। পারিবারিক আইনে আছে উত্তরাধিকার, অভিভাবকত্ব, ভরণ-পোষণ আর আছে তালাকের বিষয়টা। এই সব জায়গায় ধর্মীয় বিধিনিষেধকেই আইন হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। একজন নারী অধিকার কর্মী হিসেবেই নয়, মানুষ হিসেবেও পরিবর্তন প্রত্যাশা করি। শ্রুতলিখন: মুজাহিদুল ইসলাম 
০৪ মে, ২০২৪

উন্নয়ন কাজের জন্য কোপ পড়ছে আড়াই হাজার গাছে
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের ক্যানেলে লাগানো গাছ কাটা হচ্ছে। গত দুই মাস ধরেই চলছে গাছ কাটা। এতে প্রায় আড়াই হাজার গাছে কোপ পড়বে বলে জানিয়েছে ক্রয়কারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দেশব্যাপী চলমান তাপপ্রবাহে যখন গাছের গুরুত্ব হাড়ে হাড়ে অনুভূত হচ্ছে, তখন বনবিভাগের এ কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ও পরিবেশবাদীরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তারাগঞ্জ উপজেলার তিস্তা সেচ ক্যানেলের উন্নয়ন কাজের জন্য ক্যানেলের দুধারে লাগানো গাছগুলো কেটে ফাঁকা করা হচ্ছে। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আয়তন অনুযায়ী ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও তারাগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ৩ শতাংশের কম। তিস্তা সেচ ক্যানেলকেন্দ্রিক বনায়নের একটি বড় অংশ থাকলেও গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। এরপরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উন্নয়নমূলক কাজের জন্য গাছগুলো কেটে ফেলার দরপত্র দিয়েছে। ইতিমধ্যে গত দুমাসে চার-তৃতীয়াংশ গাছ কাটা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ক্যানেলের দুধারে গাছ থাকায় পথচারী, যানবাহনের চালক ও শিক্ষার্থীরা কিছুটা স্বস্তি নিয়ে যাতায়াত করতে পারতেন। অনেকে সপরিবারে ঘুরতেও আসত। এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদ পড়ে। এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, এত গাছ একসঙ্গে কাটা ঠিক হয়নি। ক্যানেল সংস্কারের নামে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রজেক্টের তেমন দরকার ছিল না। এতে অর্থের অপচয় এবং গাছগুলো কেটে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত কেল্লাবাড়ি থেকে তারাগঞ্জের পাঁচ কিলোমিটার অংশের প্রায় আড়াই হাজার গাছ বিক্রি করা হয়েছে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জবা এন্টারপ্রাইজ সূত্রে জানা গেছে। ২২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫০ টাকায় জবা এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এসব গাছ দেওয়া হয়। গাছ বিক্রির ৮০ শতাংশ টাকা উপকারভোগী ও ২০ শতাংশ টাকা বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ পাবে। গাছ কাটা ঠিকাদার দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার কুচদহ এলাকার মাসুদ রানা বলেন, বন বিভাগে দরপত্র দিয়ে আমরা গাছ কিনেছি। সময় হয়েছে, তাই গাছ কাটছি। তবে গাছ না থাকলে এই ক্যানেলের পাশের সড়ক দিয়ে সত্যি যাতায়াতে খুব কষ্ট হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল রানা বলেন, গাছগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন বিভাগের। তবে তাপপ্রবাহের সময় গাছগুলো কাটা ঠিক হয়নি। বাকি গাছগুলো যাতে তাপপ্রবাহ না কমা পর্যন্ত কাটা না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বলব। উপজেলা বন কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান রোকন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন ভেকু দিয়ে মাটি ফেলার সময় গাছগুলো ভেঙে দিচ্ছিল। তাই বিভাগীয় অফিস থেকে দরপত্র আহ্বান করে গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ ক্যানেলের উন্নয়নমূলক কাজ শেষ হলে ফের গাছ লাগানো হবে।
০১ মে, ২০২৪

বরগুনায় রাতের আঁধারে দখল পাউবোর জমি
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে সদর রাস্তার পাশে প্রকাশ্যেই দখল করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি জমিতে নির্বিঘ্নে স্থাপনা তৈরি করছে দখলদার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, দখলকারীদের নোটিশ দিয়ে অবহিত করে কাজ থামাতে বললেও দখলদাররা রাতের আঁধারে কাজ করছেন। এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান তারা। সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদরের উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে আসার সময় সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের পূর্ব পার্শ্বে জনৈক দেলোয়ার হোসেন খানের ডকইয়ার্ডের চারদিকে টিনের বেষ্টনী দিয়ে আটকে ভেতরে কাজ করার শব্দ পেয়ে প্রতিবেদকের মনে কৌতূহল জাগে। এরপর গাড়ি থামিয়ে সেখানে গেলে ভিতরে লোকজনের আচারণ ও দরজা আটকানো দেখে কৌতূহল আরও বেড়ে যায়। পরে অনেক কষ্টে ভেতরে গিয়ে দেখতে পাওয়া যায় পাকা স্থাপনা তৈরি করে তিন চারজন মিস্ত্রি সেখানে রাতের আঁধারে কাজ করছেন। পাকা স্থাপনাটির সামনের অংশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে তৈরি করা হয়েছে। এ সময় স্থাপনাটির মালিক সম্পর্কে মিস্ত্রিদের কাছে জানতে চাইলে জানান, ৪নং কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শিংড়াবুনিয়া এলাকার মৃত জনৈক দেলোয়ার হোসেন খানের ছেলে তামিম খান স্থাপনাটি নির্মাণ করেছেন। রাত ১০টা ৫৬ মিনিটের সময় বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভেয়ার আজিজুর রহমান সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জমি পাউবোর স্বীকার করে কালবেলাকে বলেন, দেলোয়ার খানের ওই জমিতে স্থাপনার কাজ না করার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। এমনকি ১০ মিনিট আগেও কাজ না করার জন্য আমাদের এলজি স্যার গিয়ে বাধা প্রদান করে আসছেন। আমরা আগামীকাল (মঙ্গলবার) বরগুনা থানায় এ বিষয়ে একটি মামলা করবো। আর কাজ চলমান আছে জানালে তিনি উত্তরে জানান, এত রাতে অফিসের কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া ঘটনাস্থলে যাওয়া যাবে না বলে জানান তিনি এবং তাদের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মধুসূন পালের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। এ বিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এল উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মধুসূধন পালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। পরে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবেরএর মোবাইল ফোনেও একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়াও সদর উপজেলার বড়ইতলা ফেরিঘাট থেকে পুরকাটা ফেরিঘাট পর্যন্ত মহাসড়কের রাস্তার দুপাশের সরকারের অধিগ্রহণকৃত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েক কোটি টাকার সরকারি জমি কোরো প্রকার বন্দোবস্ত ছাড়াই অবৈধভাবে দখল করে পাকা, আধা পাকা ও কাঠের তৈরি স্থাপনা তৈরি করে দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করনে কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ধরে রাখতে চান সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান ইউনুছ
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। নতুন দায়িত্ব নিয়েই কালবেলার মুখোমুখি হয়েছেন সিডিএ’র নতুন এই চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগর উন্নয়নে সব ধরনের চেষ্টাই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আস্থা আমার ওপর রেখেছেন, সেটা ধরে রাখার জন্য সর্বোচ্চ মূল্যায়ন বা চেষ্টা করবেন বলে জানালেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষের স্থলাভিষিক্ত হলেন। জানা যায়, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে গত বছরে অন্তত ১২ বারের চেয়ে বেশি ডুবেছে চট্টগ্রাম নগর। আগে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজটি করত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। সাত বছর আগে জলাবদ্ধতা নিরসনের মতো কঠিন ও জটিল কাজটি নিজেদের কাঁধে নেয় সিডিএ। পরে এ নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, যা এখনো দূর হয়নি।  শুধু একটি প্রকল্প নয়, ১৬ বছরে ১৮ হাজার কোটি টাকার অন্তত ২৫টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সিডিএ। তবে বাস্তবায়িত হয়নি কোনো আবাসন প্রকল্প। এর খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। চট্টগ্রামের এসব সংকট কাটাতে কীভাবে উদ্যোগী হবেন নতুন চেয়ারম্যান, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে দৈনিক কালবেলা।   নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সিডিএ’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ কালবেলাকে বলেন, সবেমাত্র সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে সিডিএ ভবনের আসলাম। বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেছি। চউক সভাকক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। কথা বলেছি, জানার চেষ্টা করেছি তাদের অভিজ্ঞতা। নগরের উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি সবাইকে যথাসময়ে অফিসে আসার তাগিদ দিয়েছি। আপাতত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় এমন কর্মকাণ্ড করতে সব কর্মকর্তার সহযোগিতা কামনা করেছি। এখন পর্যন্ত বোঝার চেষ্টা করছি। আশা করি, পরবর্তী ব্যবস্থা ও উন্নয়নের বিষয়ে সব ধরনের চেষ্টাই করা হবে।   সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সিডিএর নিয়ন্ত্রিত এলাকা ১ হাজার ১৫২ বর্গকিলোমিটার। সংস্থাটিতে বর্তমানে ৫১৯ পদের বিপরীতে ৩২০ জন কর্মরত। এ কারণে চাইলেও অনেক কিছু সম্ভব হয়নি প্রতিষ্ঠানটির। তবে আমরা এবার ভিন্নভাবে চেষ্টা করব। কাজ করব মানুষের উন্নয়নে। আশা করি পরিবর্তন আসবেই।    সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রথম দিনই চউকের সিবিএ কর্মকর্তাদের মতামত জেনেছি। এ ছাড়া চউকের বোর্ড মেম্বারদের সঙ্গে আলাদাভাবে সভা করেছি। সেই সভায় জসিম উদ্দিন শাহ, প্রকৌশলী মুনির উদ্দিন আহমদ, মুহাম্মদ আলী শাহ, মোহাম্মদ ফারুক, স্থপতি আশিক ইমরান, জিনাত সোহানা চৌধুরী, এম. আশরাফুল আলম, জিয়াউল হক সুমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জানা যায়, চট্টগ্রামকে একটি পরিকল্পিত ও আধুনিক নগর এবং বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলার মূল দায়িত্ব সিডিএ’র। নগরবাসীর জন্য আবাসন নিশ্চিত করার কাজও এ সংস্থার। সিডিএর আরেকটি বড় দায়িত্ব ভূমির ওপর যে কোনো ধরনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ এবং আধুনিক ও আকর্ষণীয় পর্যটন অঞ্চল ও নগর পরিকল্পনাসংক্রান্ত উন্নয়নমূলক কাজ করা।  সিডিএ’র গত ১৫ বছরের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে নগরপরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলীরা বলছেন, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম গড়ার চেয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশি নজর দিয়েছে সিডিএ। বিশেষ করে উড়াল সড়ক ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ।  সিডিএ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামকে সিডিএর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর সিডিএ মূল দায়িত্ব পালনের চেয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দেয়। নিতে থাকে একের পর এক প্রকল্প। ২০০৯ থেকে ২০২৩—এই ১৫ বছরে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অন্তত ২৫টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সিডিএ। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে জলাবদ্ধতা, নতুন সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, উড়ালসড়ক ও সড়ক স¤প্রসারণ ইত্যাদি। ইতিমধ্যে ১৮টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। কাজ চলছে সাতটির। এ ২৫টি প্রকল্পের কোনোটিই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। ফলে প্রকল্পগুলোর ব্যয় বেড়েছে। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। চারবার প্রকল্প সংশোধন করতে হয়েছে। ৮৫৬ কোটি টাকার এই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।  পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এই প্রকল্পের ‘নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন’-এ বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছে। এতে বলা হয়, ফিডার রোড-২, সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস রোড নির্মাণ করা না হলে এলাকাবাসীর যাতায়াতে অসুবিধা হবে। পাশাপাশি প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ সুফল মিলবে না। প্রতিবেদনে সড়কগুলো নির্মাণের সুপারিশও করা হয়।  এ ছাড়া বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের বাংলাবাজার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সংযোগ সড়কে ২০১৩ সালে অনুমোদনের সময় প্রকল্প ব্যয় ছিল ১৭২ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এরপর দুই দফা ব্যয় বেড়ে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ৩৫৩ কোটি টাকা। তবে শেষ দফায় বর্ধিত ৩৩ কোটি টাকা দিতে রাজি হয়নি সরকার। এ টাকা জনগণের কাছ থেকে টোল হিসেবে আদায় করা হবে। এই সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে ১৬টি পাহাড় কেটেছে সংস্থাটি। এর ফলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও আশপাশের বিদ্যমান পাহাড় ঝুঁকিতে রয়েছে।  
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

‘সরকার ও বেসরকারি সংগঠনের প্রচেষ্টায় ক্ষুধা ও দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে’
‘জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে ভবিষ্যতের রূপান্তর’- এ চেতনাকে ধারণ করে ৩৫ বছরপূর্তি উদযাপন করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে)’। এ উপলক্ষে সোমবার (২৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে দিনব্যাপী সংলাপ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আশা প্রকাশ করেছেন, সরকার ও বেসরকারি সংগঠনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে। সকালে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সংগঠনের সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার। এরপর ভিডিওচিত্র প্রদর্শন ও ডিএসকের ৩৫ বছরের অর্জন নিয়ে আলোচনা হয়।  অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, একটি গৌরবান্বিত মুক্তিসংগ্রামের ভেতর দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক মূল্যবোধ, সম্মান, সমৃদ্ধ ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে অসমতা, কুসংস্কার, জনগোষ্ঠী ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও লিঙ্গভেদ এবং ক্ষুধা থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।  স্বাগত বক্তব্যে ডিএসকের নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহ বলেন, বিগত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রকৃতিভিত্তিক, পদ্ধতি অনুসরণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করার চেষ্টা করতে হবে। নদ-নদী, খাল, বিল, হাওর-বাঁওড় সুরক্ষিত রাখার জন্য ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তে প্রকৃতিভিত্তিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। আলোচনায় আরও অংশ নেন, পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক (নিবন্ধন ও নিরীক্ষা) মো. আনোয়ার হোসেন, ওয়াটার এইড বাংলাদেশের পরিচালক হাসিন জাহান, দেশীয় পরিচালক, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু আবদুল্লাহ মো. ওয়ালী উল্লাহ, ডিএসকে মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম গোলাম মরতুজা ও ডিএসকে সদস্য মোছা. রেজিয়া বেগম প্রমুখ। বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘কেমন বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার। সংগঠনের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. এ বি এম আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে সংলাপে আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, বিআইডিএস’র মহাপরিচালক অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেন, ডিএসকের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার, নারী নেত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ঢাকা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী উত্তম কুমার রায়, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক ব্যাংকার মামুন রশীদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রাখী মং প্রমুখ। 
২৯ এপ্রিল, ২০২৪
X