সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ধরে রাখতে চান সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান ইউনুছ

সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ। ছবি : কালবেলা
সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ। ছবি : কালবেলা

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। নতুন দায়িত্ব নিয়েই কালবেলার মুখোমুখি হয়েছেন সিডিএ’র নতুন এই চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগর উন্নয়নে সব ধরনের চেষ্টাই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আস্থা আমার ওপর রেখেছেন, সেটা ধরে রাখার জন্য সর্বোচ্চ মূল্যায়ন বা চেষ্টা করবেন বলে জানালেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষের স্থলাভিষিক্ত হলেন।

জানা যায়, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে গত বছরে অন্তত ১২ বারের চেয়ে বেশি ডুবেছে চট্টগ্রাম নগর। আগে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজটি করত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। সাত বছর আগে জলাবদ্ধতা নিরসনের মতো কঠিন ও জটিল কাজটি নিজেদের কাঁধে নেয় সিডিএ। পরে এ নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, যা এখনো দূর হয়নি।

শুধু একটি প্রকল্প নয়, ১৬ বছরে ১৮ হাজার কোটি টাকার অন্তত ২৫টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সিডিএ। তবে বাস্তবায়িত হয়নি কোনো আবাসন প্রকল্প। এর খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। চট্টগ্রামের এসব সংকট কাটাতে কীভাবে উদ্যোগী হবেন নতুন চেয়ারম্যান, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে দৈনিক কালবেলা।

নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সিডিএ’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ কালবেলাকে বলেন, সবেমাত্র সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে সিডিএ ভবনের আসলাম। বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেছি। চউক সভাকক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। কথা বলেছি, জানার চেষ্টা করেছি তাদের অভিজ্ঞতা। নগরের উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি সবাইকে যথাসময়ে অফিসে আসার তাগিদ দিয়েছি। আপাতত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় এমন কর্মকাণ্ড করতে সব কর্মকর্তার সহযোগিতা কামনা করেছি। এখন পর্যন্ত বোঝার চেষ্টা করছি। আশা করি, পরবর্তী ব্যবস্থা ও উন্নয়নের বিষয়ে সব ধরনের চেষ্টাই করা হবে।

সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সিডিএর নিয়ন্ত্রিত এলাকা ১ হাজার ১৫২ বর্গকিলোমিটার। সংস্থাটিতে বর্তমানে ৫১৯ পদের বিপরীতে ৩২০ জন কর্মরত। এ কারণে চাইলেও অনেক কিছু সম্ভব হয়নি প্রতিষ্ঠানটির। তবে আমরা এবার ভিন্নভাবে চেষ্টা করব। কাজ করব মানুষের উন্নয়নে। আশা করি পরিবর্তন আসবেই।

সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রথম দিনই চউকের সিবিএ কর্মকর্তাদের মতামত জেনেছি। এ ছাড়া চউকের বোর্ড মেম্বারদের সঙ্গে আলাদাভাবে সভা করেছি। সেই সভায় জসিম উদ্দিন শাহ, প্রকৌশলী মুনির উদ্দিন আহমদ, মুহাম্মদ আলী শাহ, মোহাম্মদ ফারুক, স্থপতি আশিক ইমরান, জিনাত সোহানা চৌধুরী, এম. আশরাফুল আলম, জিয়াউল হক সুমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, চট্টগ্রামকে একটি পরিকল্পিত ও আধুনিক নগর এবং বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলার মূল দায়িত্ব সিডিএ’র। নগরবাসীর জন্য আবাসন নিশ্চিত করার কাজও এ সংস্থার। সিডিএর আরেকটি বড় দায়িত্ব ভূমির ওপর যে কোনো ধরনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ এবং আধুনিক ও আকর্ষণীয় পর্যটন অঞ্চল ও নগর পরিকল্পনাসংক্রান্ত উন্নয়নমূলক কাজ করা। সিডিএ’র গত ১৫ বছরের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে নগরপরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলীরা বলছেন, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম গড়ার চেয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশি নজর দিয়েছে সিডিএ। বিশেষ করে উড়াল সড়ক ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ।

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামকে সিডিএর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর সিডিএ মূল দায়িত্ব পালনের চেয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দেয়। নিতে থাকে একের পর এক প্রকল্প। ২০০৯ থেকে ২০২৩—এই ১৫ বছরে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অন্তত ২৫টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সিডিএ। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে জলাবদ্ধতা, নতুন সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, উড়ালসড়ক ও সড়ক স¤প্রসারণ ইত্যাদি। ইতিমধ্যে ১৮টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। কাজ চলছে সাতটির। এ ২৫টি প্রকল্পের কোনোটিই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। ফলে প্রকল্পগুলোর ব্যয় বেড়েছে। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। চারবার প্রকল্প সংশোধন করতে হয়েছে। ৮৫৬ কোটি টাকার এই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এই প্রকল্পের ‘নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন’-এ বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছে। এতে বলা হয়, ফিডার রোড-২, সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস রোড নির্মাণ করা না হলে এলাকাবাসীর যাতায়াতে অসুবিধা হবে। পাশাপাশি প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ সুফল মিলবে না। প্রতিবেদনে সড়কগুলো নির্মাণের সুপারিশও করা হয়।

এ ছাড়া বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের বাংলাবাজার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সংযোগ সড়কে ২০১৩ সালে অনুমোদনের সময় প্রকল্প ব্যয় ছিল ১৭২ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এরপর দুই দফা ব্যয় বেড়ে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ৩৫৩ কোটি টাকা। তবে শেষ দফায় বর্ধিত ৩৩ কোটি টাকা দিতে রাজি হয়নি সরকার। এ টাকা জনগণের কাছ থেকে টোল হিসেবে আদায় করা হবে। এই সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে ১৬টি পাহাড় কেটেছে সংস্থাটি। এর ফলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও আশপাশের বিদ্যমান পাহাড় ঝুঁকিতে রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাকিস্তানে কমলো জ্বালানি তেলের দাম

চাঁদা না দিলে ক্রসফায়ারের হুমকির অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে

বৃষ্টি নামবে কবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

আটকে গেল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থছাড়

এই কাহিনী আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে

সিডনিতে শ্রীকান্ত আচার্যের একক সংগীত সন্ধ্যা

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

তাপপ্রবাহ বইছে ৫৮ জেলায়, ২ দিনের সতর্কবার্তা

ভালোবাসার টানে ঝিনাইদহে ফিলিপাইনের তরুণী

নায়িকা ববি পরেন ২ লাখ টাকার ট্রাউজার

১০

হঠাৎ অবসরের ঘোষণা ভারতীয় অধিনায়কের

১১

ঢাকা ছাড়লেন ডোনাল্ড লু

১২

আর্জেন্টিনার শক্তিশালী দল ঘোষণা

১৩

নন-ক্যাডার কোটায় সিনিয়র সহকারী সচিব হলেন ৮ কর্মকর্তা

১৪

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগুন

১৫

গাজার পথে ব্রিটিশ ত্রাণবাহী জাহাজ

১৬

আমেরিকায় থেকে গ্রামে গড়ে তুলেছেন গরু-দুম্বার খামার

১৭

সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ২১০৬৩ হজযাত্রী

১৮

পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে সম্পর্ক গভীর করতে চীনে পুতিন

১৯

শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন দিবস / শুক্রবার আ.লীগের একগুচ্ছ কর্মসূচি

২০
X