আমজাদ হোসেন শিমুল, রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪, ০৪:০৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

কাজ না করেই ৪১ লাখ টাকার বিল পরিশোধ পিডির

মিলেছে ২৫ লাখ টাকা তছরুপের প্রমাণ
বিএমডিএর প্রকল্প পরিচালক শহিদুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত
বিএমডিএর প্রকল্প পরিচালক শহিদুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ‘ভূগর্ভস্থ সেচ নালা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে সেচ এলাকার সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে কাজ না করেই ৪১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার বিল পরিশোধের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়; অভিযোগ তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটি ২৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা তছরুপের প্রমাণও পেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোট ৩২৯ কোটি টাকার বিএমডিএ’র এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে নিয়োগ পান বিএমডিএর চলতি দায়িত্বের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুর রহমান। দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। দুদকে পাঠানো অভিযোগপত্রে পিডি শহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রকল্পের কাজ না করেই ৪১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার বিল পরিশোধের অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ঠিকাদার কাজ না করলেও এই বিল পরিশোধ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, প্রকল্পের যেটুকু কাজ হয়েছে, তাতে নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহারের অভিযোগও ওঠে।

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি নিয়ে কাজ করা সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুল হুদাকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও করে। কমিটি গত ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী পরিচালকের (ইডি) কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে ২৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা তছরুপের প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ঠিকাদার কাজ না করলেও এই বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান শামসুল হুদা তদন্তের বিষয়টি স্বীকার করে কালবেলাকে বলেন, ‘অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন অনেক আগেই জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্তে কী পাওয়া গেল সেটি আসলে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (ইডি) অনুমতি ছাড়া বলা ঠিক হবে না।’

আর প্রকল্পের মনিটরিং কর্মকর্তা ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘বিভিন্ন মালামাল কেনায় অনিয়ম এবং দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা ইতোমধ্যে নির্বাহী পরিচালকের (ইডি) কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’

সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের একটি সূত্র বলছে, পিডি শহিদুর রহমান প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ইউপিভিসি পাইপ ও গেট ভাল্‌ভ কিনেছেন। নিম্নমানের পাইপ ও গেট ভাল্‌ভ কেনার বিষয়টি প্রকল্পের মনিটরিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফের নজরে আসে। এরপর আব্দুল লতিফ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে ১৮ ডিসেম্বর নির্বাহী পরিচালকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।

এতে বলা হয়, বেঙ্গল প্লাস্টিক পাইপ লিমিটেডের কাছ থেকে যে ৪১ হাজার ১০০ মিটার পাইপ ৩ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার ২২ টাকায় কেনা হয়েছে, সেটি গুণগতভাবে অত্যন্ত নিম্নমানের। গোদাগাড়ী উপজেলার সাহাব্দিপুর, শিয়ালা, কিসমত গোবিন্দপুর এবং তানোর ও মোহনপুর, নওগাঁর মহাদেবপুর ও মান্দা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বৈদ্যপুর, নিজামপুর, কুশমাডাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্কিমে ব্যবহৃত এসব নিম্নমানের পাইপ ইতোমধ্যে ফেটে গেছে। এ কারণে বন্ধ হয়ে গেছে পানির সরবরাহ। অন্য স্কিমগুলোয়ও একই অবস্থা। এসব ফাটা পাইপ এখন বিএমডিএর উপজেলা কার্যালয়গুলোয় স্তূপাকারে পড়ে আছে।

এদিকে রাইজার ভাল্‌ভ কেনার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। শিডিউলে ১৫ কেজি ওজনের ভাল্‌ভ কেনার কথা থাকলেও কেনা হয়েছে ১২ কেজি ওজনের। এ বিষয়টিও মনিটরিং কর্মকর্তা তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। প্রকল্পে গভীর নলকূপ স্থাপনের ক্ষেত্রে এমএস হাউজিং পাইপ এবং এসএস স্টেইনার ব্যবহারের বিষয়টি শিডিউলে উল্লেখ রয়েছে। এখানেও নিম্নমানের প্লাস্টিকের হাউজিং এবং স্টেইনার দিয়ে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পাইপ কেনায় অনিয়ম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিডি শহিদুর রহমান রাজশাহী মহানগরীর অভিজাত আবাসিক এলাকা উপশহরে ২৭১/২ নম্বর ১০ তলা ভবনের তিনতলায় এ ও বি নম্বরের দুটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। প্রতিটি ৩ হাজার বর্গফুটের এই ফ্ল্যাট দুটির একটি তিনি স্ত্রীর নামে করেছেন। ঢাকার উত্তরা এবং উত্তর বাড্ডায়ও তার দুটি ফ্ল্যাট আছে। দেশের বাড়ি কুষ্টিয়ায় কিনেছেন বিপুল পরিমাণ জমি।

তবে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রকৌশলী শহিদুর রহমান জানান, তার শুধু রাজশাহীতে দুটি ফ্ল্যাট আছে। তাও একটি ফ্ল্যাট তার স্ত্রীর। অন্য কোনো সম্পদ নেই বলেও দাবি তার। দুর্নীতির চিত্র তদন্ত প্রতিবেদনে ওঠে আসার বিষয়টিকে বানোয়াট ও ভুয়া দাবি করে জানান, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। হয়রানি করতে দুদকেও অভিযোগ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তার দাবি, পাইপ উন্নত মানেরই কেনা হয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের কড়া মাটির কারণে পাইপ ফেটে গেছে। কাজ না করে বিল দেওয়ার অভিযোগও সত্য নয়।

প্রকল্প পরিচালকের অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুর রশিদ জানান সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটিতে অনিয়ম হয়েছে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এখন নিয়ম অনুযায়ী পিডির কাছে কৈফিয়ত তলব করা হবে। তিনি ব্যাখ্যা দেবেন। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান নির্বাহী পরিচালক।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভোট বর্জনই বিএনপির আন্দোলন : এ্যানি

ডেঙ্গু আক্রান্ত নগরবাসীকে রেখে বিদেশ গিয়ে বসে থাকিনি : সাঈদ খোকন

মায়ের বিদায় বেলায় মোনালির কণ্ঠে ‘তুমি রবে নীরবে’

বৃষ্টির পানি নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ২১

জিয়াউর রহমান বাকশাল সদস্য হয়েছিলেন : ওবায়দুল কাদের

কাঁচা মরিচের বাজারে আগুন

জরিমানা না দেওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী কারাগারে

বর্ণবাদ রোধে কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা ফিফার

চার পদে আটজনকে নিয়োগ দেবে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি

ডিএমপির মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ১৭

১০

আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থহীনের নতুন সদস্যের নাম ঘোষণা

১১

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ নিয়ে নতুন বার্তা ফিলিস্তিনের

১২

ব্যস্ত সূচিতে নিজেকে ফিট রাখাই চ্যালেঞ্জ মেসির

১৩

ইউপিডিএফের ২ কর্মীকে গুলি করে হত্যা

১৪

তীব্র দাবদাহেও থেমে নেই জীবনযুদ্ধ

১৫

ইউজিসির অনাপত্তিপত্র ছাড়াই শেকৃবিতে নিয়োগ

১৬

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন নিয়ন্ত্রণে

১৭

অস্তিত্ব জানান দিতেই লিফলেট বিতরণ বিএনপির : কাদের

১৮

রাতে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, সকালে মিলল স্বামীর মরদেহ

১৯

টাঙ্গাইলে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

২০
X