রাফায় যে কারণে হেরে যাবেন নেতানিয়াহু
ইসরায়েলি সেনারা বারবারই বলছে, তারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় স্থল অভিযানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এ খবর ইসরায়েলের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইসরায়েলের হেয়োম পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির সেনাবাহিনী অভিযানের জন্য এখন কেবল রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশের অপেক্ষায় আছে। অ্যামেরিকাও রাফায় অভিযানের ব্যাপারে এরই মধ্যে সবুজ সংকেত দিয়েছে। গাজার অন্য শহরগুলোর মতো রাফাও ঘন বসতিপূর্ণ। ছোট্ট শহরটিতে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বসবাস করলেও বিভিন্ন স্থান থেকে ইসরায়েলি হামলায় বাস্তুচ্যুত আরও প্রায় ১৪ লাখ মানুষ উপকূলীয় এলাকাটিতে আশ্রয় নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল অভিযান পরিচালনা নিয়ে বিশ্বনেতারা উদ্বেগ জানাচ্ছেন। এর ফলে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষের হতাহতের শঙ্কা তাদের। তাদের উদ্বেগের মূলে রয়েছে, গত ২০০ দিনেরও বেশি ধরে সময় চলা যুদ্ধে গাজার অন্য শহরগুলোতে আইডিএফ সেনাদের হত্যাযজ্ঞ, বেসামরিক মানুষকে তোয়াক্কা না করা এবং তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা। আর একারণেই, বিশ্ব নেতারা, এমনকি ইসরায়েলের পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনও নেতানিয়াহুর কাছে রাফা অভিযানে বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষা এবং মানবিক সহায়তার ব্যাপারে নিশ্চয়তা চাইছেন। ওই অভিযানের পরিকল্পনা তাদের সামনে উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। হিব্রু ভাষার অন্যতম শীর্ষ  সংবাদমাধ্যম মারিভে রাফায় হামলার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগ্রামকে শেষ করে দেওয়া এবং বিনা চ্যালেঞ্জে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্ত করা নিয়ে সংশয় জানানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটিতে বলা হয়- ‘যারা ভাবছেন, রাফাই হবে এই যুদ্ধের শেষ অধ্যায় এবং এর মাধ্যমে হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া সম্ভব হবে, তারা হয়তো অনুধাবন করতে পারছেন না, নেতানিয়াহুর বিজয়ের দাবি তামাশা এবং বিভ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়।’ মারিভ আরও বলছে, নেতানিয়াহুর সেনারা পুরো গাজাকে দখল করলেও তার বাহিনীকে সেখান থেকে প্রত্যাহারের পরই হামাস পুনরায় সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অনেক ইসরায়েলি লেখক, সামরিক বিশেষজ্ঞ নেতানিয়াহুকে চড়া মূল্য দিয়ে হলেও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, লক্ষ্য অর্জনের এটিই একমাত্র উপায়।  ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নানা জটিলতার জন্য শেষ পর্যন্ত  নেতানিয়াহুকে কারাগারেও যেতে হতে পারে। ইসরায়েলি নেতা হিসেবে তিনি তার দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রের বিজয়ের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তিনি এখনো জানেন না সেটি কীভাবে সম্ভবপর হবে। তার এই একগুয়েমি স্বভাবের জন্য তিনি অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের মিত্রদের কথাতেও কর্ণপাত করছেন না। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার শীর্ষ কর্মকর্তা ও কংগ্রেসম্যানদের কথাও শুনছেন না নেতানিয়াহু। এমনকি, শাবাক (ইজরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থা) এবং হামাসের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্বদানকারী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ প্রধানসহ তার সামরিক উপদেষ্টাদের কারও কথাতেই সায় দিচ্ছেন না। অন্যদিকে, নেতানিয়াহু রাফায় হামলা করবেন কী করবেন না, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। তারা স্পষ্টতই বলছে, ইজরায়েলি বন্দি মুক্তির শর্তে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনা হবে না। হামাসসহ অন্য প্রতিরোধ সংগঠনগুলো প্রাণহানি কমানো বিশেষ করে বেসামরিক লোকজনের ওপর ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধের বিষয়টাতে প্রাধান্য দিচ্ছে। একইসঙ্গে তারা বলছে, ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি সাড়ে আট হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির মুক্তি এবং দীর্ঘ  প্রায় ১৮ বছর ধরে উন্মুক্ত কারাগারে বসবাসরত ২৪ লাখ গাজাবাসীর স্বাধীনতা পাওয়া তাদের অধিকার।  অতএব, এমন অনড় অবস্থান এবং ফিলিস্তিনিদের বৈধ প্রতিরোধ সংগ্রামের মুখে নেতানিয়াহু রাফায় হামলা করুক অথবা নাই-বা করুক,  তার স্বপ্নের বিজয় অর্জিত হবে না।  অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রামের পক্ষে বিশ্বজুড়ে সুস্পষ্টভাবেই সমর্থন বাড়ছে। একইসঙ্গে, নেতানিয়াহু এবং তার অব্যাহত অপরাধের প্রতিও ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। কিন্তু নেতানিয়াহু তাদেরকে তোয়াক্কা করছেন না। তিনি বেশ কয়েকবার দাবি করেছেন যে, রাফা অভিযান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই তার ওই দাবিকে অস্বীকার করেছে।  অ্যামেরিকার ‘নিয়ার ইস্টার্ন অ্যাফেয়ার্সের’ অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বারবারা লিফের কাছে রাফায় হামলার জন্য ইজরায়েলকে হোয়াইট হাউজের সবুজ সংকেত দেওয়ার বিষয়ে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তাত্ক্ষণিক নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘মোটেই নয়... আমি নিশ্চিত করতে পারব না যে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। আমরা সামরিক অভিযানের বিষয়ে  সবুজ সংকেত দেইনি।’ কিন্তু নেতানিয়াহু ক্রমাগতভাবে বলেই যাচ্ছেন যে, রাফায় হামলা চালিয়ে হামাসের সামরিক শাখাকে উপড়ে ফেলার মাধ্যমে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য করা হবে। ফলে, এ চিন্তায় তিনি অ্যামেরিকাসহ পশ্চিমা মিত্র এবং মিশরের মতো আঞ্চলিক প্রতিবেশী  মিত্রসহ গোটা বিশ্বের দাবিকে উপেক্ষা করে চলেছেন। তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তির সব প্রচেষ্টাকে অবজ্ঞা করে সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কাছ থেকে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্ত করা করার কথা বলে যাচ্ছেন। ইসরায়েলের একটি সম্প্রচার মাধ্যম কেইন জানাচ্ছে, রাফায় হামলার হুমকির পাশাপাশি যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য আলোচনাও চালিয়ে যাওয়া হবে। ২০০ দিনের  বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ভয়াবহ নৃশংসতা চালানোর পরও নেতানিয়াহু গাজায় বন্দি ইসরায়েলিদের কীভাবে মুক্ত করবেন তার কোনো সুনির্দিষ্ট পথ বের করতে পারেননি। অনেক ইসরায়েলির সঙ্গে তিনিও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগ্রামকে নির্মুলে সামরিক শক্তি প্রয়োগেই মনোযোগী। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই হাজারো বন্দিকে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত করা এবং গাজায় ১৮ বছরের ইসরায়েলি অবরোধ অবসানের চেষ্টা চালাচ্ছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। যদিও নেতানিয়াহু এ ধারণাকে অবজ্ঞা করে যাচ্ছেন। গত ২০০ দিন ধরে নেতানিয়াহু যুদ্ধের নামে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ,  হাজার হাজার শিশু হত্যা এবং  ঘরবাড়ি, স্কুল, কলেজ ও মসজিদসহ সব ধরনের স্থাপনা ধ্বংস করেছেন। কিন্তু তিনি আজও তার বন্দিদের মুক্ত করতে পারেননি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কেবলমাত্র চুক্তির মধ্য দিয়েই তাকে ইসরায়েলিদের মুক্ত করতে হবে।  ফিলিস্তিনি যোদ্ধারাও এ ব্যাপারে সম্মত। তারা গোটা দশেক ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি এবং নারী ও শিশুসহ ফিলিস্তিনি বন্দিদের ইসরায়েলি জেল থেকে মুক্ত করতে চায়। রাফায় হামলার অব্যাহত হুমকি-ধমকি এবং ভেতর ও বাইরে থেকে ইসরায়েলি কর্মকর্তা ও মিত্রদের বক্তব্যই প্রমাণ করে নেতানিয়াহু কতটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।  ইজরায়েলের উদারপন্থি ইহুদিবাদী দল বেতিনো’র প্রধান অ্যাভিগডর লিবারম্যান নেতানিয়াহুর রাফা অভিযান নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, ‘তিনি রাফায় হামলার ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এমন সিদ্ধান্ত নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। হয়তো, তারা হামাসকে হামলার সুনির্দিষ্ট সময় ও তারিখ দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।’ মিডল ইস্ট মনিটর অবলম্বনে অনূদিত
০১ মে, ২০২৪

নেতানিয়াহু হিটলারের চেয়েও ভয়ংকর
ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হিটলারের চেয়ে ভয়ংকর বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আজ সারাবিশ্বই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। মনে হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের যে দাম্ভিকতা, যুদ্ধংদেহী মনোভাব ছিল সেটা আবারও নতুন করে বিশ্ব রাজনীতিতে দেখতে পাচ্ছি। হিটলার যে হলোকাস্ট ঘটিয়েছিল, ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিল, আজ সেই একই রূপে আবির্ভূত হয়েছে গাজায় গণহত্যার নায়ক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এই নেতানিয়াহু জাতিসংঘকে মানে না, হোয়াইট হাউসকে তোয়াক্কা করে না। আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কথা শোনে না। সে হিটলারের চেয়েও ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হয়েছে। ১৪ হাজার শিশুকে গাজায় ইতোমধ্যে হত্যা করে ফেলছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ইরানের আক্রমণের পর পৃথিবীর প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু নেতানিয়াহু ইরান আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে মনে হয় বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি হচ্ছেন নেতানিয়াহু। আপন ইচ্ছায় চলেন, যা খুশি করেন। যাকে ইচ্ছা তাকে মারেনও। তার দাপট মনে হয় হিটলারকেও ছাড়িয়ে যাবে।
১৭ এপ্রিল, ২০২৪

নেতানিয়াহু এ যুগের হিটলার: ওবায়দুল কাদের
ইসরায়েলের নতুন করে ইরান আক্রমণ সিদ্ধান্ত এবং নেতানিয়াহুর দাপট হিটলারকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নেতানিয়াহু এ যুগের হিটলার। নেতানিয়াহু হিটলারের চেয়ে ভয়ংকর ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছেন। এ সময় বিএনপির অনেকে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ৮ মে প্রথম দফার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার না করতে। নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে হয়, কেউ কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। প্রশাসন কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। নির্বিঘ্নে ভোট দানের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি প্রকাশ্যে উপজেলা নির্বাচনের বিরোধিতা করলেও আমাদের জানামতে তাদের অনেকেই অংশগ্রহণ করবেন।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

যুদ্ধবিরতি নিয়ে আবারও আলোচনায় ফিরছে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হতে চলেছে। আজ রোববার মিসরের রাজধানী কায়রোতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে পরোক্ষ এই আলোচনা শুরু হবে। গতকাল শনিবার (৩০ মার্চ) মিসরীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে প্রথমবারের মতো একটি প্রস্তাব পাসের কয়েকদিন পর আবারও দুপক্ষ আলোচনায় বসছে। এ ছাড়া গাজায় বন্দিদের মুক্তির দাবিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জোরদারের পরিপ্রেক্ষিতে এই খবর দিল মিসরের আল কাহেরা টিভি চ্যানেল। গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় বন্দি করে নিয়ে আসে হামাস। একই দিন হামাসকে নির্মূল এবং বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। গত নভেম্বরে সাত দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে ১১০ ইসরায়েলি বন্দিকে হামাস মুক্তি দিলেও এখনো তাদের হাতে ১৩০ জনের মতো বন্দি আছেন। বর্তমানে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন আরেকটি চুক্তি সম্পাদনে আলোচনা চলছে। এতে মধ্যস্থতা করছে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। এবারের আলোচনার মূল লক্ষ্য গাজায় যুদ্ধবিরত এবং হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলিদের মুক্তি নিশ্চিত করা। এ ছাড়া এই চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদেরও মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, রোববার কায়রো আলোচনায় একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে ইসরায়েল। তবে হামাসের এক কর্মকর্তা অবশ্য রয়টার্সকে বলেছেন, প্রথমে ইসরায়েলের সাথে আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে কায়রোর মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে শোনার অপেক্ষা করবেন তারা। এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি আলোচনাকারী দলকে কায়রো ও দোহা উভয়ের মধ্যস্থতাকারীদের সাথে দেখা করার অনুমতি দিয়েছেন নেতানিয়াহু। একই সঙ্গে তাদের সাথে আলোচনা করার জন্য একটি আদেশ দিয়েছেন তিনি। আলজাজিরার সাংবাদিক বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো মধ্যস্থতাকারীরা একটি চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী। তারা বলছেন দুপক্ষের মাঝে একটি চুক্তি হতে পারে। তবে এখনো তাদের মাঝে কিছু বিষয় রয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে যে কোনো ধরনের চুক্তির বিনিময়ে হামাস চাইছে যুদ্ধের সমাপ্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার। অন্যদিকে এমন সম্ভবনা উড়িয়ে দিয়ে ইসরায়েল বলছে, যুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি বিরতি হলেও হামাসকে পরাজিত না করা পর্যন্ত তারা থামবে না।
৩১ মার্চ, ২০২৪

রাফা শহরে হামলা / নেতানিয়াহুকে কড়া ভাষায় সতর্ক করলেন বাইডেন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার রাফা শহরে হামলার বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সবচেয়ে কড়া ভাষায় সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিতে ভরপুর এই শহরে বড় ধরনের হামলা চালালে তা ভুল হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তা গাজার বর্তমান মানবিক সংকটকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে বলেই মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। খবর আলজাজিরার। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হামাসকে পরাজিত করার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তিনি এ-ও বলেছেন, রাফা শহরে বড় ধরনের হামলা চালানো ভুল হবে। তিনি বলেন, রাফায় হামলা চালালে আরও নিরীহ বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হবে। ইতোমধ্যে সেখানে ভয়াবহ মানবিক সংকট বিরাজ করছে। অভিযান চালালে তা আরও খারাপ হবে। গাজায় নৈরাজ্য আরও জোরদার হবে। আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েল আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। সুলিভান জানান, নেতানিয়াহুকে ফোন করে এসব কথা বলেছেন বাইডেন। এ সময় নেতানিয়াহুকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা ও সামরিক কর্মকর্তাদের একটি দলকে ওয়াশিংটনে পাঠাতে বলেছেন তিনি। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের নামে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একের পর এক শহরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ৩১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। গাজার প্রায় সব শহর-নগরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে এখন রাফা শহরের দিকে চোখ পড়েছে দেশটির। আসন্ন এই হামলা বন্ধের দাবি বিশ্বজুড়ে জোরালো হলেও সব চাপ উপেক্ষা করে রাফায় স্থল অভিযানের অনুমোদন দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজার সর্বদক্ষিণের শহর হলো রাফা। এটি মিসরের সীমান্তবর্তী একটি শহর। রাফায় যুদ্ধ শুরুর আগে প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস ছিল। তবে এখন গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মানুষ সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
১৯ মার্চ, ২০২৪

যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার ভবিষ্যৎ জানালেন নেতানিয়াহু
গত অক্টোবরে হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা নিয়ে তখন থেকেই দেশ ও বিদেশ থেকে চাপ আসতে থাকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর। অবশেষে যুদ্ধোত্তর গাজা নিয়ে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন তিনি। খবর বিবিসির। নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা অনুযায়ী, অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করবে ইসরায়েল। হামাসের পরিবর্তে ইসরায়েল-বিদ্বেষী নয় এমন কোনো গোষ্ঠী গাজার শাসনভার পরিচালনা করবে। যুদ্ধ শেষে গাজার শাসন ক্ষমতা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে চায় ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি মন্ত্রিপরিষদের কাছে দেওয়া নেতানিয়াহুর সংক্ষিপ্ত নথিতে এমন কোনো কিছুর কথা উল্লেখ নেই। অবশ্য আগে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত এই সংস্থার কাছে যুদ্ধোত্তর গাজাকে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব অনেকবার নাকচ করেছেন নেতানিয়াহু। এ ছাড়া গাজাকে একটি বেসামরিক অঞ্চলে পরিণত করার স্বপ্ন দেখছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। ক্ষুদ্র এই উপত্যকার জনশৃঙ্খলা রক্ষার বাইরে সব ধরনের সামরিক সক্ষমতা কেড়ে নেবে ইসরায়েল। গাজার সব ধর্মীয়, শিক্ষা ও কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে চরমপন্থা রোধ কর্মসূচি চালু করার কথা বলছে তেল আবিব। এই ধরনের কর্মসূচির পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন আরব দেশকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হতে পারে। তবে কোন দেশকে যুক্ত করা হবে তা বলা হয়নি। শুধু গাজা নয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী অধিকৃত পশ্চিম তীরের স্থল, সমুদ্র ও আকাশ পথের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণও নিজের হাতে নেবে ইসরায়েলি সেনারা। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর এই পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ বলেছেন, নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে। বিশ্ব যদি সত্যিকার অর্থে এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আগ্রহী হয়, তাহলে অবশ্যই ফিলিস্তিনি ভূমির ওপর ইসরায়েলের দখলদারির অবসান ঘটাতে হবে। একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ফিলিস্তিনের সঙ্গে নতুন চুক্তির ইঙ্গিত নেতানিয়াহুর
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলিদের মুক্ত করাতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতকামী সংগঠনটির সঙ্গে নতুন করে বন্দিবিনিময় চুক্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলি সেনাদের ভুল করে ছোড়া গুলিতে হামাসের হাতে বন্দি তিন ইসরায়েলির মৃত্যুর পর এই ইঙ্গিত দিলেন তিনি। গতকাল শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদন এসব তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা। গাজা যুদ্ধকে ‘অস্তিত্বের লড়াই’ বলে অভিহিত করে চাপ ও খরচ সত্ত্বেও বিজয় না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। শনিবার এক সংবাদ তিনি বলেন, গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ করা হবে এবং ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আলোচক দলকে নির্দেশনা দিয়েছে যে হামাসের ওপর চাপ বাড়াতে। আসলে এটা ছাড়া আমাদের হাতে কিছুই নেই। শনিবার ইউরোপে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতা করে আসছে কাতার। কাতারের মধ্যস্থতায় গত ২৪ নভেম্বর প্রথমবারের মতো চার দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে ইসরায়েল ও হামাস। এরপর দুই দফা বাড়িয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ সাত দিন করা হয়। এই চুক্তির আওতায় হামাস শতাধিক ইসরায়েলি বন্দি এবং ইসরায়েল ৩০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়। তবে গত শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হলেও চুক্তি বাড়ানো নিয়ে ঘোষণা দেয়নি কোনো পক্ষই। ইউরোপে অনুষ্ঠিত কথিত এই বৈঠকের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে যান নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, কাতার নিয়ে আমাদের গুরুতর অভিযোগ আছে। তবে এই মুহূর্তে আমরা আমাদের জিম্মিদের মুক্তির কাজ সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করছি। গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে ঢুকে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় নিয়ে আসে হামাস। এই দিনই হামাসকে নির্মূল করতে যুদ্ধ ঘোষণা করে নেতানিয়াহু সরকার। অবশ্য পরে যুদ্ধের লক্ষ্য হিসেবে হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টিও যুক্ত করে ইসরায়েল সরকার। এখন পর্যন্ত ১১০ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তাদের অধিকাংশকে গত মাসে সাত দিনের যুদ্ধবিরতির সময় ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে ছাড়া হয়। তবে এখনো হামাসের হাতে শতাধিক ইসরায়েলি বন্দি রয়েছে।
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন নেতানিয়াহু
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ষষ্ঠ সপ্তাহে গড়িয়েছে। যুদ্ধের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি ইসরায়েলিরা পূর্ণ সমর্থন দিলেও এবার হাওয়া ভিন্ন দিকে বইতে শুরু করেছে। যুদ্ধ যত সামনে গড়াচ্ছে নেতানিয়াহু ও তার ক্ষমতাসীন জোট সরকারের প্রতি মানুষের সমর্থন ততই ভয়াবহভাবে কমেছে। শনিবার (১৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে হামাসকে নিশ্চিহ্নের নাম করে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে সমান তালে হামলা করে যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। ইসরায়েলি এসব হামলায় গাজায় ১২ হাজারের বেশি এবং পশ্চিম তীরে কয়েকশ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। বিরোধী শিবিরে ফাটল হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল যুদ্ধ ঘোষণা করলে নেতানিয়াহুর পাশে এসে দাঁড়ায় দেশের সব বিরোধী দল। এমনকি বিরোধী দল জাতীয় ঐক্য পার্টির নেতা বেনি গ্যান্টজ নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন সরকারে যোগ পর্যন্ত দিয়েছেন। তবে বিরোধী শিবিরে নেতানিয়াহুর প্রতি এতদিন যে সমর্থন ছিল সেখানে ফাটল ধরেছে। গত বুধবার বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার ল্যাপিড ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি করেছেন। নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি যেন তাকে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সে আহ্বান জানান তিনি। ইসরায়েলি টিভি চ্যানেল টোয়েলভকে ল্যাপিড বলেন, আমরা এমন একজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে পারি না যার ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। নেতানিয়াহু সামাজিক ও নিরাপত্তা—দুই দৃষ্টিকোণ থেকেই জনগণের আস্থা হারিয়েছেন। অনমনীয় মন্ত্রিসভা যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই কাতারের মধ্যস্থতায় বিভিন্ন বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে ইসরায়েল, হামাস ও যুক্তরাষ্ট্র। এসব ইস্যুর মধ্যে যেমন রয়েছে যুদ্ধবিরতির মতো বিষয় তেমনি রয়েছে গাজায় হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়। সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কত দিন স্থায়ী হবে, কত জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং হামাসের দাবি মেনে গাজার আকাশে ইসরায়েলের গোয়েন্দা ড্রোন উড়ানো বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েল সরকার সামান্য নমনীয় আচরণও ভালো চোখে দেখছে না ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থি জোট সরকার। এ নিয়ে নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সঙ্গে প্রায়ই বিরোধ বাঁধছে তার ক্ষমতাসীন জোট সরকারের। গত শুক্রবার গাজায় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল রাখতে প্রতিদিন সেখানে দুই ট্যাংকার জ্বালানি প্রবেশের অনুমোদন দেয় ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার এমন সিদ্ধান্তের পরপরই নেতানিয়াহুর প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জোট সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। চাপ আসছে জিম্মি পরিবার থেকেও গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি দুই শতাধিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকের পরিবাবের দিক থেকেও চাপে রয়েছেন নেতানিয়াহু। জিম্মিদের যেকোনো মূল্য মুক্ত করে আনার পক্ষে এসব পরিবার। দিন দিন গাজায় ইসরায়েলি হামলা জোরদারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। এরই মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। গাজায় জিম্মি হওয়া কয়েক জনের পরিবার দাবি করেছে সরকার যেন হামাসের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করে নিয়ে আসে। এমন চুক্তির কথা বেশ আগ থেকেই বলে আসছে হামাস। চুক্তি স্বাক্ষর হলে জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি সব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে হবে। ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে প্রায় ৬ হাজার ৬৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি আছেন। দায় চাপছে নেতানিয়াহুর ঘাড়ে এতদিন জিম্মিদের মুক্ত করতে ইসরায়েলে যে আন্দোলন হয়েছে, তা মূলত অরাজনৈতিকই ছিল। তবে শনিবারের (১৮ নভেম্বর) সমাবেশ থেকে অনেকে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলা নিয়ে আগাম তথ্য দিতে না পারায় নেতানিয়াহুকে দায়ী করেছেন। ওফির দাগান নামে এক ইসরায়েলি সিএনএনকে বলেছেন, তিনিই সবচেয়ে বেশি দায়ী। বিচার বিভাগীয় সংস্কার নিয়ে ব্যস্ততার কারণে তিনি এই হামলা নিয়ে তেমন প্রস্তুতি নিতে পারেননি। এর আগে গত মাসে এই হামলা নিয়ে আগাম গোয়েন্দা তথ্য দিতে না পারার ব্যর্থতার দায় দেশের গোয়েন্দা প্রধানদের ওপর চাপিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন নেতানিয়াহু। তবে শেষ পর্যন্ত সফল হননি তিনি। উল্টো দেশের বিভিন্ন স্তর থেকে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এমনকি সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
১৯ নভেম্বর, ২০২৩

এবার দ্বিমুখী চাপে নেতানিয়াহু
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। ওই দিন হামলা চালিয়ে ১৪০০ ইসরায়েলি হত্যার পাশাপাশি দুই শতাধিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস। হামাসের এই হঠাৎ হামলা ইসরায়েলি সরকার বা গোয়েন্দা সংস্থা কেউ আঁচ পর্যন্ত করতে পারেনি। এই হামলার পর থেকেই সরকার ও বিরোধী এবং জিম্মি পরিবারের কাছ থেকে দ্বিমুখী চাপের মুখে রয়েছেন নেতানিয়াহু। খবর সিএনএনের। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার (২৯ অক্টোবর) এই হামলা নিয়ে আগাম গোয়েন্দা তথ্য দিতে না পারার ব্যর্থতার দায় দেশের গোয়েন্দা প্রধানদের ওপর চাপিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন নেতানিয়াহু। তবে শেষ পর্যন্ত এখানেও সফল হলেন না তিনি। উল্টো দেশের বিভিন্ন স্তর থেকে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এমনকি সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। হামাসের হামলার আগাম গোয়েন্দা তথ্য দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গতকাল রোববার সকালে এক এক্সবার্তায় ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রনেন বার এবং সামরিক গোয়েন্দা প্রধান অ্যাহারন হালিভার দিকে আঙুল তুলেন নেতানিয়াহু। এরপরই বিরোধী ও নিজ সরকারের শরিকদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ দেশের গোয়েন্দা প্রধানদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে নেতানিয়াহুকে তার বিবৃতি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। রোববার এক্সবার্তায় তিনি বলেন, আজ সকালে, বিশেষ করে, আমি সব নিরাপত্তা বাহিনী ও আইডিএফের সেনাদের জোর সমর্থন দিতে চাই। তাদের মধ্যে রয়েছেন সেনাপ্রধান, আইডিএফপ্রধান ও শিন বেতের প্রধান প্রমুখ। গোয়েন্দা প্রধানদের সমর্থনের পাশাপাশি নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ করে গ্যান্টজ বলেছেন, যুদ্ধের সময় দেশের নেতাদের দায়িত্ববোধ দেখাতে হবে। বিরোধীদলীয় নেতা ও ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়ার ল্যাপিডও নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, নেতানিয়াহু রেড লাইন অতিক্রম করেছেন। দোষ এড়ানো এবং নিরাপত্তা সংস্থার ওপর দোষ চাপানোর প্রচেষ্টা ইসরায়েলি সেনাদের দুর্বল করবে। সরকার ও বিরোধীদের সমালোচনার মুখে নিজের এক্সবার্তা সরিয়ে নিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ‘আমার ভুল হয়েছে। আমার এমনটা বলা উচিত হয়নি। আমি এ জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ইসরায়েলের নিরাপত্তা প্রধানদের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’ অন্যদিকে গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি দুই শতাধিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকের পরিবাবের দিক থেকেও চাপে রয়েছেন নেতানিয়াহু। জিম্মিদের যেকোনো মূল্য মুক্ত করে আনার পক্ষে এসব পরিবার। দিন দিন গাজায় ইসরায়েলি হামলা জোরদারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিরাপক্তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। এরই মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আট হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিশু রয়েছে। ফলে এসব ইসরায়েলি পরিবার থেকেও তাদের মুক্ত করে আনতে সরকারের ওপর চাপ আসছে। গত শনিবার রাজধানী তেলআবিবে জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। সেখানেও তাদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। এসব পরিবার গাজায় বন্দি তাদের প্রিয়জনদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানতে চান। তারা হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্তির দাবি করেছেন। গত শনিবার হামাসও ইসরায়েলের সঙ্গে এ ধরনের বন্দি বিনিময় চুক্তি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে নেতানিয়াহুকে জিজ্ঞেস করা হয়। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এসব পরিবারের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন নেতানিয়াহু।
৩০ অক্টোবর, ২০২৩

নেতানিয়াহু ছাড়াও তিন আরব নেতার সঙ্গে বেঠকে বসবেন বাইডেন
ইসরায়েল ‍ও হামাসের যুদ্ধের মধ্যেই ইসরায়েল সফরে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আগামীকাল বুধবার তিনি তেলআবিবে পৌঁছাবেন। এবারের এই মধ্যেপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পাশাপাশি আরও তিন আবর নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন বাইডেন। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। মঙ্গলবার ভোরে তেল আবিবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। নেতানিয়াহুর সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার আলোচনা শেষে বাইডেন ইসরায়েলে সফর করবেন বলে জানান তিনি। ব্লিঙ্কেন সাংবাদিকদের বলেন, নিজ দেশের মানুষকে রক্ষায় ইসরায়েলের কী প্রয়োজন, তা তাদের কাছ থেকেই শুনবেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ইসরায়েলের এসব চাহিদা পূরণে আমরা কংগ্রেসে কাজ অব্যাহত রেখেছি। তিনি বলেন, সফরকালে নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করবেন বাইডেন। ইসরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়ে ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে দেশটিকে আবারও আশ্বস্ত করবেন তিনি। হামাসের বিরুদ্ধে দেশটির যুদ্ধের লক্ষ্য ও কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত শুনবেন। এ ছাড়া মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ইসরায়েল সফরের পর বাইডেন জর্ডান সফরে যাবেন। সেখানে তিনি ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকেই দেশটির পাশে শক্তভাবে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের অংশ হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তেলআবিব সফর করেছেন। সফরকালে তিনি ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এবার এই যুদ্ধের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের তেলআবিব সফর ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থানের আরেক শক্ত বার্তা। তবে বাইডেনের এই সফর ভালোভাবে না-ও নিতে পারে ইরান ও অন্যান্য আরব দেশগুলো। তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে উসকানি হিসেবে দেখতে পারে। এ ছাড়া এমন একসময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইসরায়েল সফরের তথ্য সামনে এলো যখন ইসরায়েলি সেনারা অবরুদ্ধ গাজায় বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে এ হামলার জন্য গাজা সীমান্তে বহু সেনা জড়ো করেছে ইসরায়েল।
১৭ অক্টোবর, ২০২৩
X