ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ষষ্ঠ সপ্তাহে গড়িয়েছে। যুদ্ধের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি ইসরায়েলিরা পূর্ণ সমর্থন দিলেও এবার হাওয়া ভিন্ন দিকে বইতে শুরু করেছে। যুদ্ধ যত সামনে গড়াচ্ছে নেতানিয়াহু ও তার ক্ষমতাসীন জোট সরকারের প্রতি মানুষের সমর্থন ততই ভয়াবহভাবে কমেছে। শনিবার (১৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে হামাসকে নিশ্চিহ্নের নাম করে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে সমান তালে হামলা করে যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। ইসরায়েলি এসব হামলায় গাজায় ১২ হাজারের বেশি এবং পশ্চিম তীরে কয়েকশ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
বিরোধী শিবিরে ফাটল
হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল যুদ্ধ ঘোষণা করলে নেতানিয়াহুর পাশে এসে দাঁড়ায় দেশের সব বিরোধী দল। এমনকি বিরোধী দল জাতীয় ঐক্য পার্টির নেতা বেনি গ্যান্টজ নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন সরকারে যোগ পর্যন্ত দিয়েছেন। তবে বিরোধী শিবিরে নেতানিয়াহুর প্রতি এতদিন যে সমর্থন ছিল সেখানে ফাটল ধরেছে।
গত বুধবার বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার ল্যাপিড ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি করেছেন। নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি যেন তাকে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সে আহ্বান জানান তিনি।
ইসরায়েলি টিভি চ্যানেল টোয়েলভকে ল্যাপিড বলেন, আমরা এমন একজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে পারি না যার ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। নেতানিয়াহু সামাজিক ও নিরাপত্তা—দুই দৃষ্টিকোণ থেকেই জনগণের আস্থা হারিয়েছেন।
অনমনীয় মন্ত্রিসভা
যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই কাতারের মধ্যস্থতায় বিভিন্ন বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে ইসরায়েল, হামাস ও যুক্তরাষ্ট্র। এসব ইস্যুর মধ্যে যেমন রয়েছে যুদ্ধবিরতির মতো বিষয় তেমনি রয়েছে গাজায় হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়।
সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কত দিন স্থায়ী হবে, কত জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং হামাসের দাবি মেনে গাজার আকাশে ইসরায়েলের গোয়েন্দা ড্রোন উড়ানো বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েল সরকার সামান্য নমনীয় আচরণও ভালো চোখে দেখছে না ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থি জোট সরকার। এ নিয়ে নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সঙ্গে প্রায়ই বিরোধ বাঁধছে তার ক্ষমতাসীন জোট সরকারের।
গত শুক্রবার গাজায় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল রাখতে প্রতিদিন সেখানে দুই ট্যাংকার জ্বালানি প্রবেশের অনুমোদন দেয় ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার এমন সিদ্ধান্তের পরপরই নেতানিয়াহুর প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জোট সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী।
চাপ আসছে জিম্মি পরিবার থেকেও
গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি দুই শতাধিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকের পরিবাবের দিক থেকেও চাপে রয়েছেন নেতানিয়াহু। জিম্মিদের যেকোনো মূল্য মুক্ত করে আনার পক্ষে এসব পরিবার। দিন দিন গাজায় ইসরায়েলি হামলা জোরদারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। এরই মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
গাজায় জিম্মি হওয়া কয়েক জনের পরিবার দাবি করেছে সরকার যেন হামাসের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করে নিয়ে আসে। এমন চুক্তির কথা বেশ আগ থেকেই বলে আসছে হামাস। চুক্তি স্বাক্ষর হলে জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি সব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে হবে। ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে প্রায় ৬ হাজার ৬৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি আছেন।
দায় চাপছে নেতানিয়াহুর ঘাড়ে
এতদিন জিম্মিদের মুক্ত করতে ইসরায়েলে যে আন্দোলন হয়েছে, তা মূলত অরাজনৈতিকই ছিল। তবে শনিবারের (১৮ নভেম্বর) সমাবেশ থেকে অনেকে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলা নিয়ে আগাম তথ্য দিতে না পারায় নেতানিয়াহুকে দায়ী করেছেন।
ওফির দাগান নামে এক ইসরায়েলি সিএনএনকে বলেছেন, তিনিই সবচেয়ে বেশি দায়ী। বিচার বিভাগীয় সংস্কার নিয়ে ব্যস্ততার কারণে তিনি এই হামলা নিয়ে তেমন প্রস্তুতি নিতে পারেননি।
এর আগে গত মাসে এই হামলা নিয়ে আগাম গোয়েন্দা তথ্য দিতে না পারার ব্যর্থতার দায় দেশের গোয়েন্দা প্রধানদের ওপর চাপিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন নেতানিয়াহু। তবে শেষ পর্যন্ত সফল হননি তিনি। উল্টো দেশের বিভিন্ন স্তর থেকে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এমনকি সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
মন্তব্য করুন