স্বাধীন ফিলিস্তিন দাবিতে সমাবেশ ছাত্রলীগের
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবং নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর পরিচালিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘পতাকা উত্তোলন, পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ’ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাবির টিএসসি-সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা প্রদক্ষিণ করে আবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলেন, যারা গণতন্ত্রের মোড়ল, যারা বাকস্বাধীনতার সার্টিফিকেট দেয়, যারা বলে দেয়, কোন দেশটি গণতান্ত্রিক আর কোন দেশটি অগণতান্ত্রিক, যারা সারা জীবনের জন্য গণতন্ত্রের টেন্ডার নিয়ে নিয়েছে, ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশনের কথা বলে, একাডেমিক ফ্রিডমের কথা বলে, রাইট টু প্রোটেস্টের কথা বলে, রাইট টু অ্যাসেমব্লির কথা বলে—ফিলিস্তিন ইস্যুতে তাদের মুখোশ আজ উন্মোচিত হয়ে গেছে।
সাদ্দাম হোসাইন বলেন, আমাদের এই ছাত্র আন্দোলন আর দেশীয় গণ্ডির ভেতর সীমাবদ্ধ নেই। সীমান্ত ব্যারিকেড, ভাষার ব্যবধান—সবকিছু মুছে দিয়ে একাকার হয়ে গেছে যুদ্ধমুক্ত, ন্যায় ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। আমাদের এই ছাত্র আন্দোলনে সমবেত হয়েছেন নির্যাতিত-নিষ্পেষিত ফিলিস্তিনের বন্ধুরাও। আমাদের পূর্বপুরুষরা নিজেদের দেশের মুক্তির জন্য বীরত্বের সঙ্গে যেভাবে লড়াই করেছেন, তেমনি আমরাও ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের পাশে দাঁড়াব।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিবর্জিত নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি আগ্রাসনের জন্য যারা অস্ত্র এবং অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছে, ইতিহাসের কী অমোঘ পরিণতি, সেখান থেকেই এই দুর্বার প্রতিবাদের জয়ধ্বনি শুরু হয়েছে। যারা জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিলে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ভেটো দিয়েছে, সেই দেশের তারুণ্য আজ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে ‘হ্যাঁ’ বলেছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার যতবার ‘নো’ বলেছে, তার চেয়ে বহুগুণ জোর দিয়ে এই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘ইয়েস’ বলেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনের পক্ষে যারা কথা বলেছে এবং ইসরায়েল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছে, পুলিশি হামলার শিকার হয়েও যারা কণ্ঠস্বর উচ্চ করেছে, তাদের প্রতি ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে আমরা সংহতি জানাই, অভিনন্দন জানাই।
ছাত্রলীগের এই কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে ফিলিস্তিনি নাগরিক ইসহাক আহমেদ নামে একজন বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এবং আমাদের সঙ্গে সংহতি পোষণ করার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য পুরো বিশ্বের যে বা যারা কথা বলছেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
বাংলাদেশে ফিলিস্তিনি এক ছাত্র সংগঠনের প্রধান নেতা ও বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ বাদাওয়ী বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রতিনিয়ত আমাদের ফিলিস্তিনের নারী-শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, আমাদের স্বপ্নগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য বাংলাদেশকে, ছাত্রলীগকে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ।
কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে হাতে ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের পতাকা, দেশটির স্বাধীনতার দাবি এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ সংবলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে পদযাত্রা এবং সমাবেশে অংশ নিতে দেখা যায়। পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন, স্টপ জেনোসাইড’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তি পাক’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, জয় জয় ফিলিস্তিন’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ ইত্যাদি স্লোগান দিতেও দেখা যায়।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় সমাবেশে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর সৈকতসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতারা বক্তব্য দেন।
রংপুর ব্যুরো জানায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বরে সংহতি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামিম, সহসভাপতি তন্ময়, তানভির আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার টগর, নেসার উদ্দীন, রাকিবুল হাসান রুপম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামিম।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, সরকারি আজিজুল হক কলেজে ও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের আয়োজনে পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ হয়। আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগ নেতা তন্ময় সাহা, জিহাদ, আরমান হোসেন, সানোয়ার ও রুদ্র বক্তব্য দেন। এ ছাড়া শমিজেক ক্যাম্পাসে সমাবেশে বক্তব্য দেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, সহসভাপতি অর্ঘ্য রায় ও ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. তৌফিক হাসান নিশাত।
রাবি প্রতিনিধি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে ছাত্রলীগের দলীয় টেন্ট থেকে পদযাত্রা বের হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব।
কুবি প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশে বক্তব্য দেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মহসিন জামিল ও সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ। সভা সঞ্চালনা করেন রাকিব হোসেন।
এ ছাড়া পাবনা জেলা ছাত্রলীগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, নড়াইল জেলা ছাত্রলীগ একই কর্মসূচি পালন করে স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
০৭ মে, ২০২৪