স্বাধীন ফিলিস্তিন দাবিতে সমাবেশ ছাত্রলীগের
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবং নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর পরিচালিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘পতাকা উত্তোলন, পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ’ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাবির টিএসসি-সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা প্রদক্ষিণ করে আবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলেন, যারা গণতন্ত্রের মোড়ল, যারা বাকস্বাধীনতার সার্টিফিকেট দেয়, যারা বলে দেয়, কোন দেশটি গণতান্ত্রিক আর কোন দেশটি অগণতান্ত্রিক, যারা সারা জীবনের জন্য গণতন্ত্রের টেন্ডার নিয়ে নিয়েছে, ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশনের কথা বলে, একাডেমিক ফ্রিডমের কথা বলে, রাইট টু প্রোটেস্টের কথা বলে, রাইট টু অ্যাসেমব্লির কথা বলে—ফিলিস্তিন ইস্যুতে তাদের মুখোশ আজ উন্মোচিত হয়ে গেছে। সাদ্দাম হোসাইন বলেন, আমাদের এই ছাত্র আন্দোলন আর দেশীয় গণ্ডির ভেতর সীমাবদ্ধ নেই। সীমান্ত ব্যারিকেড, ভাষার ব্যবধান—সবকিছু মুছে দিয়ে একাকার হয়ে গেছে যুদ্ধমুক্ত, ন্যায় ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। আমাদের এই ছাত্র আন্দোলনে সমবেত হয়েছেন নির্যাতিত-নিষ্পেষিত ফিলিস্তিনের বন্ধুরাও। আমাদের পূর্বপুরুষরা নিজেদের দেশের মুক্তির জন্য বীরত্বের সঙ্গে যেভাবে লড়াই করেছেন, তেমনি আমরাও ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের পাশে দাঁড়াব। ফিলিস্তিন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিবর্জিত নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি আগ্রাসনের জন্য যারা অস্ত্র এবং অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছে, ইতিহাসের কী অমোঘ পরিণতি, সেখান থেকেই এই দুর্বার প্রতিবাদের জয়ধ্বনি শুরু হয়েছে। যারা জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিলে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ভেটো দিয়েছে, সেই দেশের তারুণ্য আজ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে ‘হ্যাঁ’ বলেছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার যতবার ‘নো’ বলেছে, তার চেয়ে বহুগুণ জোর দিয়ে এই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘ইয়েস’ বলেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনের পক্ষে যারা কথা বলেছে এবং ইসরায়েল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছে, পুলিশি হামলার শিকার হয়েও যারা কণ্ঠস্বর উচ্চ করেছে, তাদের প্রতি ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে আমরা সংহতি জানাই, অভিনন্দন জানাই। ছাত্রলীগের এই কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে ফিলিস্তিনি নাগরিক ইসহাক আহমেদ নামে একজন বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এবং আমাদের সঙ্গে সংহতি পোষণ করার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য পুরো বিশ্বের যে বা যারা কথা বলছেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। বাংলাদেশে ফিলিস্তিনি এক ছাত্র সংগঠনের প্রধান নেতা ও বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ বাদাওয়ী বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রতিনিয়ত আমাদের ফিলিস্তিনের নারী-শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, আমাদের স্বপ্নগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য বাংলাদেশকে, ছাত্রলীগকে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে হাতে ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের পতাকা, দেশটির স্বাধীনতার দাবি এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ সংবলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে পদযাত্রা এবং সমাবেশে অংশ নিতে দেখা যায়। পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন, স্টপ জেনোসাইড’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তি পাক’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, জয় জয় ফিলিস্তিন’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ ইত্যাদি স্লোগান দিতেও দেখা যায়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় সমাবেশে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর সৈকতসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতারা বক্তব্য দেন। রংপুর ব্যুরো জানায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বরে সংহতি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামিম, সহসভাপতি তন্ময়, তানভির আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার টগর, নেসার উদ্দীন, রাকিবুল হাসান রুপম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামিম। বগুড়া ব্যুরো জানায়, সরকারি আজিজুল হক কলেজে ও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের আয়োজনে পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ হয়। আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগ নেতা তন্ময় সাহা, জিহাদ, আরমান হোসেন, সানোয়ার ও রুদ্র বক্তব্য দেন। এ ছাড়া শমিজেক ক্যাম্পাসে সমাবেশে বক্তব্য দেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, সহসভাপতি অর্ঘ্য রায় ও ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. তৌফিক হাসান নিশাত। রাবি প্রতিনিধি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে ছাত্রলীগের দলীয় টেন্ট থেকে পদযাত্রা বের হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। কুবি প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশে বক্তব্য দেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মহসিন জামিল ও সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ। সভা সঞ্চালনা করেন রাকিব হোসেন। এ ছাড়া পাবনা জেলা ছাত্রলীগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, নড়াইল জেলা ছাত্রলীগ একই কর্মসূচি পালন করে স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
০৭ মে, ২০২৪

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রেই আটকা মার্কিন-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি
সৌদি আরব যদি ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দেয়, সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃস্থানীয় এই দেশটির সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র স্বাক্ষর করবে না। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সম্প্রতি ব্রিটেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট করেন। অন্যদিকে সৌদি আরবও জানিয়ে দিয়েছে, ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না হলে তারাও ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না। আর এরকম অবস্থায় আটকে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের বহুল আলোচিত ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ও আল আরাবিয়ার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে সাক্ষাৎকারে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এ সৌদির অন্তর্ভুক্তি-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে সুলিভান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মূল ভিত্তি এবং দর্শন হলো সমন্বয় বা ঐক্যের ভিত্তিতে সামনে অগ্রসর হওয়া। ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদির স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক এই দর্শনের একটি অংশ, তেমনি অন্যদিকে ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণও এর আর একটি অংশ। এই দুই অংশই পরস্পরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। আপনি কোনোটিকেই বাতিল করতে পারবেন না। যদি বাতিল করেন, তাহলে সমঝোতার ভিত্তিই আর থাকে না।’ উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম ২০১৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ মুসলিম আরব রাষ্ট্রগুলোর সামনে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’ নামের একটি বিশেষ চুক্তির প্রস্তাব করেন। এ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক-বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করবে, আব্রাহাম অ্যাকর্ডের আওতায় সেসব দেশকে বিশেষ সামরিক ও বাণিজ্যিক সহায়তা দেবে ওয়াশিংটন। তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের দুই বছরের তৎপরতার পর ২০২০ সালে মিশর, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরক্কো ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি বিশ্বের একমাত্র এই ইহুদি রাষ্ট্রটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কও স্থাপন করে। কিন্তু এই চুক্তির যে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য-মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃস্থানীয় দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপন, তা তখন পর্যন্ত অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিল। ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্পের উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অধরা সেই লক্ষ্য পূরণে মনোযোগী হন। তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা সৌদির সরকারকে প্রস্তাব দেন, দেশটি যদি ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে, তাহলে পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হবে সৌদি। প্রসঙ্গত, পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী দেশগুলোর তালিকায় নিজেদের নাম লেখানো সৌদির সরকারের দীর্ঘদিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও সৌদির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারটি বেশ অগ্রসরও হয়েছিল; কিন্তু গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলা এবং তার জবাবে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান তা থামিয়ে দেয়। চলতি সপ্তাহে সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, রিয়াদ এবং ওয়াশিংটন প্রতীক্ষিত সেই চুক্তির ‘খুবই কাছাকাছি’ রয়েছে। তবে তিনি এ ও বলেছেন, সৌদি আরব স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্থাপনের জন্য একটি সঠিক ও আদর্শ পথ অনুসন্ধানের পক্ষে। ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
০৭ মে, ২০২৪

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির দাবিতে বেরোবি ছাত্রলীগের সমাবেশ
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির দাবিতে বিশ্বব্যাপী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিকদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন, পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শাখা ছাত্রলীগ।   সোমবার ( ৬ মে) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামিম, সহসভাপতি তন্ময়, তানভির আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার টগর, নেসার উদ্দীন, রাকিবুল হাসান রুপমসহ ছাত্রলীগের প্রায় ২ শতাধিক নেতাকর্মী। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের প্রতি সংহতি ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে এক পদযাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বর থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় মিডিয়া চত্বরে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি পোমেল বড়ুয়া।
০৬ মে, ২০২৪

কক্সবাজারে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে ছাত্রলীগের পদযাত্রা
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ করেছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ। বিশ্বব্যাপী চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করে এ কর্মসূচি পালন করে জেলা ছাত্রলীগ। সোমবার (৬ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে পদযাত্রাটি বের করা হয়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত পদযাত্রায় জেলা ছাত্রলীগের হাজারো নেতাকর্মী জাতীয় ও ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেয়। এ সময় সবার গায়ে ছিল ছাত্রলীগের লোগো ও ফিলিস্তিনের পতাকা সম্বলিত সাদা টি-শার্ট। হাতে হাতে শোভা পায় ফিলিস্তিন ও লাল-সবুজের পতাকা। পদযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক পদক্ষিণ করে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। অনুষ্ঠিত হয় ছাত্র সমাবেশ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আজিম কনক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেল আহমদ প্রমুখ।  এদিকে বগুড়ায় স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ। স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে এ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সরকারি আজিজুল হক কলেজে ও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে (শজিমেক) ছাত্রলীগের আয়োজনে পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ আয়োজিত হয়। সরকারি আজিজুল হক কলেজে ছাত্রলীগ স্ট্যান্ড থেকে সংগঠনটির অর্ধশত নেতাকর্মী পদযাত্রা শুরু করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে বটতলায় গিয়ে সমাবেশ করে। ছাত্রলীগ নেতা তন্ময় সাহা, জিহাদ, আরমান হোসেন, সানোয়ার ও রুদ্র বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে ছাত্রলীগের অর্ধশত নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা মিছিলে ফ্রি প্যালেস্টাইন-স্টপ জেনোসাইড, স্বৈরাচার নিপাত যাক-ফিলিস্তিন মুক্তি পাক, উই ওয়ান্ট জাস্টিস-জয় জয় ফিলিস্তিন, ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি-প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। একই সময়ে শজিমেক ক্যাম্পাসে ছাত্র হোস্টেলের সামনে থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পদযাত্র শুরু করেন। ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে তারা একাডেমিক ভবনের সামনে গিয়ে সমাবেশের আয়োজন করেন। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, সহসভাপতি অর্ঘ্য রায় ও ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. তৌফিক হাসান নিশাত বক্তব্য রাখেন। তারা ইসরায়েলি নানা নিপীড়নের কথা তুলে ধরে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
০৬ মে, ২০২৪

ফিলিস্তিন ইস্যুতে চবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনবিরোধী শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন মুভমেন্টে’ সংহতি ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘বয়কট ইসরায়েল’ বলে স্লোগান দিতে দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। সোমবার (৬ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, ফিলিস্তিনের চলমান স্বাধীনতা আন্দোলন শুধু মুসলিমদের ইস্যু নয়, এটা গোটা মানবজাতির মানবতার ইস্যু। আজকের এই মানববন্ধনে উপস্থিত হতে পারাটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা। সবচেয়ে বড় মূল্যবান বিষয় হলো ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো, অন্যায়ের বিপক্ষে দাঁড়ানো। ফ্যাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইশতিয়াক হোসেন মজুমদার বলেন, সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক বিষয় হলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিশেষত স্বয়ং ইসলরায়েলের সবচেয়ে বড় দোসর আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে ও ইসলরায়েলের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য আন্দোলন করছে। অথচ আরবরা জাতি ভাই হয়েও আজ নির্বিকার, আরব শাসকগোষ্ঠীসহ জনগণ পর্যন্ত ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে আছে। তাদের এই ভণ্ডমী একদিন তাদের পতনের কারণ হবে, ইনশাআল্লাহ। যে জাতি স্পেন বিজয় করতে পারে, সে জাতি আজ নিজের বোনের আর্তনাদ শুনতে পায় না। আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী নিয়ামত উল্লাহ ফারাবী বলেন, আমেরিকা গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা সেজে আমাদের মানবাধিকার শেখাতে আসে, অথচ খোদ তাদের ঘরেই প্রতিনিয়ত মানবতা লঙ্ঘন হচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আন্দোলনকারীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, অথচ মার্কিন প্রশাসন সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন দেখতে পায় না। গত ৮ মাসের জুলুমের করাল গ্রাসে আমাদের ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি ভাই শহীদ হয়েছেন, শহীদদের কাতার আরও লম্বা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব বিবেক এখনও আইসিইউতে রয়ে গেছে। আমরা আজকের মানববন্ধন থেকে ইসরাইল ও তাদের দোসরদের সকল পণ্য বয়কট ঘোষণা করছি।
০৬ মে, ২০২৪

ফিলিস্তিন ইস্যুতে ঢাবিতে বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন মুভমেন্ট’-এ সংহতি জানিয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার বিকেলে ঢাবির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘সলিডারিটি উইথ ফ্রি প্যালেস্টাইন মুভমেন্ট ইন আমেরিকান ইউনিভার্সিটিজ’ শীর্ষক এ কর্মসূচি পালিত হয়। সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা শোভাযাত্রা নিয়ে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত যান এবং সেখান থেকে ফের টিএসসিতে এসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। সমাবেশে ফিলিস্তিনি মানুষ ও আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ওই লৌহকপাট’ গান পরিবেশন করেন সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ আবদুল্লাহ সালমান ও তার বন্ধুরা। কবিতা পাঠ করেন ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহীন ও আবিদ হাসান রাফি। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম অপু বলেন, এই আন্দোলন কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য নয়। এই আন্দোলন মানবতার বিরুদ্ধে বিষফোঁড়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এত পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তথ্যপ্রমাণবহুল গণহত্যা এর আগে পৃথিবী কখনো দেখেনি। এই পরিমাণে তথ্যপ্রমাণবহুল গণহত্যা দেখার পরও পৃথিবীর মোড়লরা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। ফলে এ ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন তুলতে হবে। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শাখাওয়াত জাকারিয়া বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য মর্মাহত। এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনের ৩৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অক্টোবর থেকে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চলছে, সারা বিশ্বের মানুষ তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছে, ইসরায়েলের বিরোধিতা করছে। এটি শুধু ফিলিস্তিনের পক্ষের লড়াই নয় বরং এটি সারা বিশ্বের আর্তমানবতার জন্য লড়াই। অন্যদিকে, এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিশ্বব্যাপী চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ঘোষণা দেওয়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় পতাকার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলনের আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন। সংবাদ সম্মেলনে সাদ্দাম হোসাইন বলেন, গোটা পৃথিবীতেই ছাত্র আন্দোলন চলমান রয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে এবং ফিলিস্তিনে যে মানবতাবিরোধী নৃশংস অপরাধযজ্ঞ সংঘটিত হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। ফিলিস্তিনে শিশু, নারীসহ যখন কেউই এই হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পাচ্ছে না, ঠিক তখনই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সংহতি জানাচ্ছে। এজন্য আমরা সোমবার থেকে জোরদার ছাত্র আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছি। বিশেষ করে, এদিন সকাল ১১টায় দেশব্যাপী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন, পদযাত্রা এবং সংহতি সমাবেশ সফল করার জন্য সর্বস্তরের নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, এটি শুধু ছাত্রলীগের আন্দোলন নয়, বাংলাদেশের ৫ কোটি শিক্ষার্থীর আন্দোলন। ছাত্রলীগ একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এই আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। আমাদের এই পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি পৃথিবীর সব মুক্তিকামী মানুষের কর্মসূচি। আমাদের এই সংহতি সমাবেশ পৃথিবীর সব অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে আন্দোলনরতদের জন্যই। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর সৈকত, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীম, দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি, সাধারণ সম্পাদক সজল কুণ্ডুসহ বিভিন্ন শাখার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ন্যায়-ন্যায্যতা-মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি এবং নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর পরিচালিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থী সমাজ, শিক্ষক ও সচেতন নাগরিকরা যে আন্দোলনের সূচনা করেছে তার প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন, পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।
০৬ মে, ২০২৪

ফিলিস্তিন ইস্যুতে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনবিরোধী শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন মুভমেন্টে’ সংহতি জানিয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।  রোববার (৫ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘সলিডারিটি উইদ ফ্রি প্যালেস্টাইন মুভমেন্ট ইন আমেরিকান ইউনিভার্সিটিজ’ শিরোনামে এই কর্মসূচি পালিত হয়। সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ র‍্যালি নিয়ে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে এবং সেখান থেকে পুনরায় টিএসসিতে এসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা দাহ করে সমাবেশ সমাপ্ত করেন।  এ সময় শিক্ষার্থীরা- ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সী, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’; ‘ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, অকোপেশান মোর; 'ফাইভ, সিক্স, সেভেন, এইট, ইসরায়েল টেরোরিস্ট; ইসরায়েলের দোসররা, হুঁশিয়ার সাবধান ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’- ইত্যাদি স্লোগান দেন এবং পৃথিবীজুড়ে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে, মানবতার পক্ষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সমাবেশে ফিলিস্তিনি মানুষ ও আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গান পরিবেশন করেন সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ আবদুল্লাহ সালমান ও তার বন্ধুরা, কবিতা পাঠ করেন ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহীন ও আবিদ হাসান রাফি।  সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম অপু বলেন, আমাদের নতুন কিছু বলার নেই। আমাদের এই আন্দোলন কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য নয়। এই আন্দোলন মানবতার বিরুদ্ধে বিষফোড়া ওইসব রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এত পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তথ্যপ্রমাণবহুল গণহত্যা এর আগে পৃথিবী কখনো দেখেনি। এই পরিমাণে তথ্যপ্রমাণবহুল গণহত্যা দেখার পরেও পৃথিবীর মোড়লরা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ফলে এই ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন তুলতে হবে।  এ সময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শাখাওয়াত জাকারিয়া বলেন, আজকের এই সংহতি সমাবেশে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি জানান দেয়, বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য কতটা মর্মাহত। এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনের ৩৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অক্টোবর থেকে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চলছে, সারা বিশ্বের মানুষ তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছে, ইসরায়েলের বিরোধিতা করছে৷ এটা শুধু ফিলিস্তিনের পক্ষের লড়াই নয় বরং এটা সারা বিশ্বের আর্ত মানবতার জন্য লড়াই।  অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রব নাসিম বলেন, স্বাধীনতার পর ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেই স্বীকৃতিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং বাংলাদেশের পাসপোর্টে 'এক্সেপ্ট' ইসরায়েল শব্দটি যুক্ত করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমানে ষড়যন্ত্র করে সেই একসেপ্ট শব্দটি আমাদের পাসপোর্ট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ৩০ লাখ মা-বোনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার নামান্তর।  ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এ বি জোবায়ের বলেন, যারা নিজেদের সবসময় মানবতার পক্ষে দাবি করে কিন্তু তারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবতাবিরোধী। তাদের কখনো লাশের ক্ষুধা মিটে না। তাদের ঘৃণ্য কাজের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বেই আন্দোলন করে আসছে। তাদের এসব কাজের বিরুদ্ধে যখন আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিল তখন তাদের উপর আমেরিকা সরকার পেটুয়া বাহিনী লেলিয়ে গ্রেপ্তার ও হেনস্তা করে। এমনকি তাদের অনেককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয়।  তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আসছে। এই ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রের নামের কোনো অস্তিত্ব ছিল না, তারা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জায়নবাদের দোসরদের মুখে থুতু নিক্ষেপ করি। আমরা চাই অতি দ্রুত এই ফিলিস্তিনি মানুষের উপর বর্বরোচিত হামলা সমাপ্ত হোক এবং এর সাথে জড়িতদের বিচার করা হোক। আমরা বিশ্ব শান্তি চাই। আমরা এমন বর্বরোচিত হামলা দেখতে চাই না। ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত বলেন, এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ৩৪ হাজার ৬০০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। যারা নিরীহ, যাদের কোনো অপরাধ নেই। এখন পর্যন্ত গাজায় ১০ হাজারেরও বেশি নারী শহিদ হয়েছেন। গাজায় ৩৭টি হাসপাতালের মধ্যে ৩০টি হাসপাতালকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। গাজার ৮৭ শতাংশ স্কুলকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২ বছরেও ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশ খোঁজে বের করলেও তা শেষ হবে না। সেখানে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার গর্ভবতী নারী বেঁচে থাকার অধিকার পাচ্ছে না, এমনকি সুপেয় পানিও পাচ্ছে না। তারা তাদের সন্তান জন্মদান করতে পারছে না। এই নিরীহ মানুষের উপর বর্বরোচিত হামলার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।  আইন বিভাগের শিক্ষক নকিব নাসরুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীরা মানবতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের যে আয়োজন আমি তাকে সমর্থন জানাতে এসেছি। আজকে আমাদের অবস্থান নিপীড়িত মানুষের পক্ষে। ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানাতে মুসলিম হওয়ার প্রয়োজন নেই, একজন মানুষ হলেই যথেষ্ট। এমন গণহত্যা পৃথিবীর সমস্ত ইতিহাসকে ভেঙে দিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কোন যুদ্ধে এত নারী-শিশু এর আগে কখনও হত্যা হয়নি৷  এছাড়া, সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাবি শিক্ষার্থী জয়েন উদ্দিন তন্ময়, শেখ তাওহিদ, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ প্রমুখ। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।
০৫ মে, ২০২৪

স্বাধীন ফিলিস্তিন দাবির আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ছাত্রলীগের কর্মসূচি
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিশ্বব্যাপী চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী সোমবার (৬ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারা দেশে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন, পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ করবে সংগঠনটি। শনিবার (৪ মে) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ন্যায্যতা-ন্যায়-মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি এবং নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর পরিচালিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থী সমাজ, শিক্ষক ও সচেতন নাগরিকরা যে আন্দোলনের সূচনা করেছে তার প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী শহিদের রক্তস্নাত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। পৃথিবী আজ দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে শোষক শ্রেণি, আরেক ভাগে শোষিত। আমি শোষিতের দলে। চলার পথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই দৃঢ় ঘোষণাকে সদা ধারণ করে আমরা বিশ্বব্যাপী চলমান এই ন্যায্যতার আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করি। এতে আরও বলা হয়, নিরীহ-নিরাপরাধ ফিলিস্তিন নাগরিকদের সঙ্গে পরিচালিত জঘন্য হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন পরিচালনা করছে, আন্দোলন-প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাধা-নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছে তা গভীরভাবে অনুধাবন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আজ থেকে ৫৩ বছর আগে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সময় এবং তৎপরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে নানাসময় আন্দোলন করতে গিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং এর নেতাকর্মীরা একই রকম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিল। কেবলমাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামেই ছাত্রলীগের সাড়ে ১৭ হাজার নেতাকর্মীকে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন করতে হয়েছিল। ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ব দরবারে সদা-সর্বদা ক্রিয়াশীল একটি রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম দিক ছিল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অর্জন। একইভাবে তার কন্যা বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার অবিকল্প সারথি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব মানচিত্রে যে বলিষ্ঠতার সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের দাবি উত্থাপন করেছেন, তা অতুলনীয়-অভাবনীয়। তাদের পদান্তন অনুসরণ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ১৯৪ নং রেজুলেশন এবং নিরাপত্তা পরিষদের ২৪২ ও ৩৩৮ নং রেজুলেশনে বর্ণিত দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে শান্তির প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন। কর্মসূচি ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তিতে নেতারা বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান ছাত্র-আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করছে। তা হলো- সোমবার (৬ মে) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন হতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন, পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সব সাংগঠনিক ইউনিটের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে একইসময়ে এই কর্মসূচি পালিত হবে।
০৪ মে, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ইসরায়েলপন্থিদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১ মে) একটি মার্কিন গণমাধ্যমের লাইভ ভিডিওতে এ চিত্র দেখা গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।  ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পত্রিকা ডেইলি ব্রুইন বলেছে, ইসরায়েলের সমর্থকরা ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্প ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছিল। এসময় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগোযোগমাধ্যম এক্সে করা একটি পোস্টে লস এঞ্জেলেস ডেপুটি মেয়র অব কমিউনিকেশনস জ্যাচ সিডল বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবশে করেছে। ইউসিএলএ চ্যান্সেলর জিন ব্লকের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে যান তারা।  মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি এর একটি সহযোগী সম্প্রচারকারী কেএবিসি এর লাইভ ফুটেজে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করার জন্য কিছু মানুষকে লাঠি নিয়ে যেতে দেখা গেছে। আরও কয়েকজনকে প্ল্যাকার্ড ও ছাতা হাতেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ফিলিস্তিনপন্থি প্রতিবাদকারীদের রক্ষার জন্য কাঠের বোর্ড দিয়ে একটি অস্থায়ী ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছিল। সেই ব্যারিকেডের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন ইসরায়েলপন্থি প্রতিবাদকারীরা। প্রতিবেদনে ওই সংঘর্ষের বিষয়ে আরও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না তাও স্পষ্ট নয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের একটি একাডেমিক ভবন থেকে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছিল নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ। তখন প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আইভি লিগ স্কুলটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা প্রতিবাদকারীদের একটি ক্যাম্পকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে দেন তারা। ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা করে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এই হামলায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে, ১ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।  ইসরায়েলের নৃশংসতা ও ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। ফিলিস্তিন মুক্তির স্লোগানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
০১ মে, ২০২৪

ফিলিস্তিন নিয়ে পাল্টে যাচ্ছে পশ্চিমা জনমত
গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতার কারণে ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগের বিষয়ে অবশেষে পশ্চিমাদের উদাসীনতার অবসান ঘটতে শুরু করেছে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের কারণে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নীরব ছিল পশ্চিমা বিশ্বের অনেকেই। এই দখলদারিত্বের বিষয় কখনো বছরজুড়ে আবার কখনো দু-একদিনের জন্য খবরে থাকত। তারপরে এটি আবার হারিয়ে যেত। যারা দুপক্ষের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতেন, তারা খুবই আবেগপ্রবণ ছিলেন। বিষয়টি খুব ‘জটিল’। সুতরাং অনেকে নিরপেক্ষ থাকাই পছন্দ করেছেন। আবার অনেকেই ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে চালানো অপপ্রচার বিশ্বাস করেছিলেন। তবে গত ছয় মাসে ইসরোয়েলি হামলার যে বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা দৃশ্যমান হয়েছে, তাতে ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগের বিষয়ে বড় একটা অংশের যে উদাসীনতা ছিল, তার অবসান ঘটেছে। আলজাজিরার মতো সংবাদমাধ্যম এবং ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের নির্ভীক প্রতিবেদনের ব্যাপক মিডিয়া কভারেজে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গাজা ও ফিলিস্তিনের বাকি অংশের জনগণকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যে বাস্তবতা সহ্য করতে হয়েছে, সে সম্পর্কে মানুষের চোখ খুলে দিয়েছেন তারা। গাজায় কর্মরত ও যুক্তরাজ্যের নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করা অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এনজিও অ্যাকশন ফর হিউম্যানিটির প্ল্যাটফর্মে ইউগভের মাধ্যমে আমরা জরিপ পরিচালনা করেছি। সেখানে দেখেছি, যুক্তরাজ্যের ৫৬ শতাংশ মানুষ এখন ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের পক্ষে। আর মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষ বিপক্ষে এবং বাকিরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। এই সমর্থন অনেক বেশি। আমরা বছরের পর বছর ধরে সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো সংঘাত বিষয়ে জনমত নিয়ে কাজ করছি। সেসব ক্ষেত্রে দেখেছি, যুদ্ধ সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের জনগণ সচেতন তো ছিলই না, বরং এ সম্পর্কে তাদের এতটা আবেগও দেখা যায়নি। এদিকে গাজা প্রসঙ্গে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, উত্তরদাতাদের পাঁচজনের মধ্যে প্রায় তিনজন বা ৫৯ শতাংশ বলেন, ইসরায়েল গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে তারা মনে করেন। আর মাত্র ১২ শতাংশ মনে করে, এখানে তেমন কিছু ঘটেনি। লক্ষণীয় বিষয় হলো, ১ এপ্রিল ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন ত্রাণকর্মীদের হত্যার আগে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিল। নৃশংস ওই ঘটনা যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল। আমরা মনে করছি, ওই ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী যে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে, সে কারণে বিপুলসংখ্যক লোক অনুভব করতে পেরেছে কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটে চলেছে গাজায়। এর চেয়ে ভয়াবহ হামলা আর হয়নি। ইউগভের অন্যান্য জরিপে দেখা গেছে, গাজার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হলে, আরও বেশি লোক যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করবে। ওই জরিপে আরও দেখা গেছে, এই সংখ্যা নভেম্বরে ৫৯ শতাংশ থাকলেও ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ শতাংশে। এ ছাড়া নভেম্বরে গাজার ওপর আক্রমণ ন্যায়সংগত নয় বলে মনে করত ৪৪ শতাংশ; ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশে।  একইভাবে নভেম্বরে শান্তি আলোচনা চাওয়ার পক্ষে ছিল ৬১ শতাংশ মানুষ; ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ শতাংশে। আমরা পশ্চিমা বিশ্বজুড়ে একই রকম অবস্থা দেখছি। ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, গাজায় বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির ন্যায্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে হোয়াইট হাউস প্রশাসন। তবে জনগণ তাতে সমর্থন দিচ্ছে না। সিবিএস/ইউগভের এক জরিপে দেখা গেছে, অক্টোবরে ৪৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক মার্কিন নাগরিক ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠানোর পক্ষে ছিলেন। চলতি মাসে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩২ শতাংশ; যা এক তৃতীয়াংশেরও কম। একই সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পক্ষেও সমর্থন বাড়ছে। আমরা বিশ্বাস করি, পশ্চিমা বিশ্বজুড়ে এই সমর্থন বাড়ছে। এখন পশ্চিমা জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ গাজা, পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, সে সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হয়ে উঠছে। এমনকি যারা একসময় গাজায় বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুকে ন্যায়সংগত মনে করেছিল, তারাও এখন মনে করছে, যা ঘটছে তাকে কোনো কিছু দিয়ে ন্যায্যতা দেওয়া যেতে পারে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, পশ্চিমা সরকারের রাজনীতিবিদরা তাদের জনগণের মনোভাবের সঙ্গে একেবারেই একমত নয়। এটা শুধু নৈতিকতার অবক্ষয় নয়, রাজনৈতিক অদূরদর্শিতাও বটে। ২০২৪ সালকে ‘নির্বাচনের বছর’ বলা হয়েছে কারণ এই বছরের কোনো না কোনো সময়ে বিশ্বের কমপক্ষে ৪৯ শতাংশ লোক ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। যেসব রাজনীতিবিদ বুঝতে পারেন না যে, তাদের জনগণ চায় গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনকে সহায়তা ও সমর্থন বন্ধ করতে রাজনীতিবিদরা ভূমিকা পালন করুক, তারা নির্বাচনে পরাজিত হবেন। এমনকি যারা তাদের বিবেকের মুখোমুখি হতে অস্বীকার করেন, তাদেরও একই পরিণতি হবে। অনেকে বিশ্বাস করে যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টি পরবর্তী সরকার গঠন করবে। ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করতে জনগণের ক্রমবর্ধমান দাবির পেছনেও এই দলের ভূমিকা রয়েছে। এমনকি আমাদের জরিপে দেখা গেছে, পরবর্তী নির্বাচনে যারা লেবারকে ভোট দিতে চেয়েছিলেন তাদের ৭১ শতাংশ বিশ্বাস করেন, ইসরায়েলকে অর্থ সহায়তা বন্ধ করা উচিত যুক্তরাজ্য সরকারের। জনগণের অজ্ঞতার কারণে দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নির্যাতনকে সমর্থন করতে সক্ষম হয়েছিল পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো। সেখানে কী ঘটছে সে বিষয়ে লোকজন মনোযোগ না দেওয়ায় এবং মিথ্যার ফাঁদে পা দেওয়ায় দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে শাসকরা এসব বর্বরতায় সমর্থন দিতে পেরেছে।  এখন সে সময় শেষ হয়ে গেছে। মানবতা সব স্থানেই, সবভাবেই অপরিহার্য। অধিকাংশ মানুষই মনে-প্রাণে শান্তি ও ন্যায়বিচারে বিশ্বাসী। তারা জানে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা অন্যায়। এখন বিশ্ব গাজার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, সবাই দেখতে পাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা কী নিষ্ঠুর, ভয়ংকর বাস্তবতা সহ্য করছে। এটা আরও দীর্ঘায়িত হোক তা তারা চায় না। লেখক : ওথমান মোকবেল প্রধান নির্বাহী, অ্যাকশন ফর হিউম্যানিটি।
২৯ এপ্রিল, ২০২৪
X