ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪, ০৮:০৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ফিলিস্তিন ইস্যুতে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘ফ্রি প্যালেস্টাইন মুভমেন্টে’ সংহতি জানিয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছেন ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছবি : কালবেলা
‘ফ্রি প্যালেস্টাইন মুভমেন্টে’ সংহতি জানিয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছেন ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছবি : কালবেলা

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনবিরোধী শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন মুভমেন্টে’ সংহতি জানিয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

রোববার (৫ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘সলিডারিটি উইদ ফ্রি প্যালেস্টাইন মুভমেন্ট ইন আমেরিকান ইউনিভার্সিটিজ’ শিরোনামে এই কর্মসূচি পালিত হয়। সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ র‍্যালি নিয়ে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে এবং সেখান থেকে পুনরায় টিএসসিতে এসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা দাহ করে সমাবেশ সমাপ্ত করেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা- ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সী, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’; ‘ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, অকোপেশান মোর; 'ফাইভ, সিক্স, সেভেন, এইট, ইসরায়েল টেরোরিস্ট; ইসরায়েলের দোসররা, হুঁশিয়ার সাবধান ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’- ইত্যাদি স্লোগান দেন এবং পৃথিবীজুড়ে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে, মানবতার পক্ষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সমাবেশে ফিলিস্তিনি মানুষ ও আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গান পরিবেশন করেন সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ আবদুল্লাহ সালমান ও তার বন্ধুরা, কবিতা পাঠ করেন ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহীন ও আবিদ হাসান রাফি।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম অপু বলেন, আমাদের নতুন কিছু বলার নেই। আমাদের এই আন্দোলন কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য নয়। এই আন্দোলন মানবতার বিরুদ্ধে বিষফোড়া ওইসব রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এত পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তথ্যপ্রমাণবহুল গণহত্যা এর আগে পৃথিবী কখনো দেখেনি। এই পরিমাণে তথ্যপ্রমাণবহুল গণহত্যা দেখার পরেও পৃথিবীর মোড়লরা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ফলে এই ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন তুলতে হবে।

এ সময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শাখাওয়াত জাকারিয়া বলেন, আজকের এই সংহতি সমাবেশে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি জানান দেয়, বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য কতটা মর্মাহত। এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনের ৩৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অক্টোবর থেকে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চলছে, সারা বিশ্বের মানুষ তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছে, ইসরায়েলের বিরোধিতা করছে৷ এটা শুধু ফিলিস্তিনের পক্ষের লড়াই নয় বরং এটা সারা বিশ্বের আর্ত মানবতার জন্য লড়াই।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রব নাসিম বলেন, স্বাধীনতার পর ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেই স্বীকৃতিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং বাংলাদেশের পাসপোর্টে 'এক্সেপ্ট' ইসরায়েল শব্দটি যুক্ত করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমানে ষড়যন্ত্র করে সেই একসেপ্ট শব্দটি আমাদের পাসপোর্ট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ৩০ লাখ মা-বোনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার নামান্তর।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এ বি জোবায়ের বলেন, যারা নিজেদের সবসময় মানবতার পক্ষে দাবি করে কিন্তু তারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবতাবিরোধী। তাদের কখনো লাশের ক্ষুধা মিটে না। তাদের ঘৃণ্য কাজের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বেই আন্দোলন করে আসছে। তাদের এসব কাজের বিরুদ্ধে যখন আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিল তখন তাদের উপর আমেরিকা সরকার পেটুয়া বাহিনী লেলিয়ে গ্রেপ্তার ও হেনস্তা করে। এমনকি তাদের অনেককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয়।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আসছে। এই ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রের নামের কোনো অস্তিত্ব ছিল না, তারা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জায়নবাদের দোসরদের মুখে থুতু নিক্ষেপ করি। আমরা চাই অতি দ্রুত এই ফিলিস্তিনি মানুষের উপর বর্বরোচিত হামলা সমাপ্ত হোক এবং এর সাথে জড়িতদের বিচার করা হোক। আমরা বিশ্ব শান্তি চাই। আমরা এমন বর্বরোচিত হামলা দেখতে চাই না।

ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত বলেন, এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ৩৪ হাজার ৬০০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। যারা নিরীহ, যাদের কোনো অপরাধ নেই। এখন পর্যন্ত গাজায় ১০ হাজারেরও বেশি নারী শহিদ হয়েছেন। গাজায় ৩৭টি হাসপাতালের মধ্যে ৩০টি হাসপাতালকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। গাজার ৮৭ শতাংশ স্কুলকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২ বছরেও ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশ খোঁজে বের করলেও তা শেষ হবে না। সেখানে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার গর্ভবতী নারী বেঁচে থাকার অধিকার পাচ্ছে না, এমনকি সুপেয় পানিও পাচ্ছে না। তারা তাদের সন্তান জন্মদান করতে পারছে না। এই নিরীহ মানুষের উপর বর্বরোচিত হামলার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

আইন বিভাগের শিক্ষক নকিব নাসরুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীরা মানবতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের যে আয়োজন আমি তাকে সমর্থন জানাতে এসেছি। আজকে আমাদের অবস্থান নিপীড়িত মানুষের পক্ষে। ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানাতে মুসলিম হওয়ার প্রয়োজন নেই, একজন মানুষ হলেই যথেষ্ট। এমন গণহত্যা পৃথিবীর সমস্ত ইতিহাসকে ভেঙে দিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কোন যুদ্ধে এত নারী-শিশু এর আগে কখনও হত্যা হয়নি৷

এছাড়া, সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাবি শিক্ষার্থী জয়েন উদ্দিন তন্ময়, শেখ তাওহিদ, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ প্রমুখ। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

ট্রাক্টর চাপায় প্রাণ গেল শিশুর

ঢাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের মিছিল শেষে শিক্ষার্থী খুন

ছাত্রলীগ কর্মীকে বেধড়ক কোপাল প্রতিপক্ষরা

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম

অবশেষে লালমনিরহাটে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি

মিষ্টি বিতরণের ধুম / চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত

উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত

টানা কয়েকদিন বৃষ্টির আভাস

পৃথিবীর যে স্থানে কেউ যেতে পারে না

১০

সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় মামলা

১১

সংগঠনের অবস্থা জানতে জেলা সফর শুরু করছে যুবদল

১২

সৌদিতে প্রথমবার সাঁতারের পোশাকে নারী ফ্যাশন শো

১৩

তিস্তা নদীতে গোসল করতে গিয়ে কিশোরের মৃত্যু

১৪

সমুদ্রপাড়ে সিডিএ প্রকৌশলীদের ‘বারবিকিউ পার্টি’

১৫

জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে চাচার হাতে ভাতিজি খুন

১৬

পশুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

১৭

অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে সরকার : মান্না

১৮

অমরত্ব পেল লেভারকুসেন

১৯

শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য : পরশ

২০
X