৩ হাজার গাছ কাটতে একাট্টা বন বিভাগ ও জেলা পরিষদ
গত দু’সপ্তাহ ধরে যশোরসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে অতিতীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে এ বিভাগের যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় সর্বত্র গাছ লাগানোর জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও ৩ হাজার গাছ কাটতে একাট্টা যশোর জেলা পরিষদ ও বন বিভাগ। গত ছয় বছরে সড়ক, মহাসড়ক উন্নয়নের জন্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা মূল্যের ৪ হাজার ২শ গাছ কেটেছে যশোর জেলা পরিষদ। বর্তমানে যশোর নড়াইল সড়কে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ৯৬১টি গাছ কাটা চলমান। এ ছাড়া যশোর সামাজিক বন বিভাগ সম্প্রতি ২ হাজার ৪৪টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে সামাজিক সংগঠনগুলো। গত ২৫ এপ্রিল দুটি পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২ হাজার ৪৪টি বড় গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেয় যশোর সামাজিক বন বিভাগ। দরপত্র বিজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম। দরপত্রে উল্লেখিত এসব গাছের মধ্যে রেইনট্রি, বকাইন, মেহগনি, সেগুন, বাবলা, খৈয়েবাবলাসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে। বন বিভাগের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহবান জানিয়েছে যশোর রোড উন্নয়ন ও শতবর্ষী গাছ রক্ষা কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার আজিজুল হক ও সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান ভিটু গণমাধ্যমের কাছে এক বিবৃতি পাঠিয়েছেন। ওই বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম বন বিভাগ সামাজিক বনায়নের গাছ সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর হতে আন্দুলিয়া পর্যন্ত ২৪৩টি বর্ষীয়ান বৃক্ষ, চাঁচড়া থেকে ভাতুড়িয়া, সাড়াপোল, তেতুলিয়া পর্যন্ত ৯৭৯টি বর্ষীয়ান বৃক্ষ, কেশবপুর উপজেলার বড়েঙ্গা বাজার থেকে পাচারই পর্যন্ত ৫০২টা, বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাখোলা থেকে তালবাড়ীয়া পর্যন্ত ৩১০টি বৃক্ষ বিক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করেছে। বিবৃতিতে আরও বলেন, আমরা বন বিভাগের এই অপরিণামদর্শী উদ্যোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে বন বিভাগের দরপত্র আহ্বান বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে পরিবেশ বিধ্বংসী, গাছ বিধ্বংসীদের বিরুদ্ধে সচেতন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি । সঙ্গে শহরের বেজপাড়া এলাকার কবরস্থানের গাছ নিধনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। যশোরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, আমার যা বলার তা লিখিতভাবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলে দিয়েছি। এর বাইরে আর কিছু বলার নেই।  বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির প্রতিবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, দু’একটি সংগঠন তাদের কথা বলতেই পারে। গাছ কাটার তপশিল প্রকাশ করা হয়েছে। সেখান থেকে পিছিয়ে আসার আপাতত কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রতি যশোর শহরের বেজপাড়া কবরস্থানের ৫০টি গাছ বিক্রি নিয়ে প্রতিবাদ জানায় সচেতন যশোরবাসী। অভিযোগ ছিল, কবরস্থান কমিটির সদস্যরা কোনো সরকারি দপ্তরের অনুমতি না নিয়েই ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় ৫০টি ছোটবড় গাছ বিক্রি করে দেয়। যশোরে অতিতীব্র দাবদাহের মধ্যে উঠে এসেছে যশোর জেলা পরিষদের বিগত কয়েক বছরে ৪ হাজারের বেশি গাছ কাটার বিষয়। এ সময়ের মধ্যে তারা নতুন কোনো গাছ লাগায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছে কয় লেন রাস্তা হবে সেটা চূড়ান্ত না হওয়ায় ইচ্ছামতো তারা গাছ লাগাতে পারছে না। এমনকি তাদের গাছ লাগানোর কোনো নির্দেশনাও নেই। জেলা পরিষদের তথ্যমতে, গত ৬ বছরে চারটি সড়কের পাশ থেকে তাদের মালিকানাধীন ১৪ কোটি টাকা মূল্যের ৪ হাজার ২১০টি গাছ কাটা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১ হাজার ৮৯৫টি গাছ কাটা হয়েছে যশোর-খুলনা মহাসড়ক উন্নয়নের সময়। যার বিক্রয় মূল্য ছিল চার কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০২১ সালে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের হৈবতপুর ব্রিজ এলাকা থেকে ৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা মূল্যের ১২টি গাছ কাটা হয়। সে বছর যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কে ৮৩৫টি গাছ কাটা হয়। যার মূল্য দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২২ সালে যশোরের রাজারহাট থেকে চুকনগর মহাসড়কে ৫০৭টি গাছ কাটা হয়। যার মূল্য ছিল এক কোটি ৫৭ লাখ টাকা। বর্তমানে যশোর-নড়াইল সড়কে চার কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ৯৬১টি গাছ কাটা চলমান। এ ছাড়া ঐতিহাসিক যশোর রোডের (যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের) শতবর্ষী রেইনট্রি গাছসহ অন্যান্য গাছ বিক্রির উদ্দেশ্য তালিকাভুক্ত করেছে ৬৯৭টি। তবে ঐতিহাসিক যশোর রোডের এই শতবর্ষী গাছ না কাটার জন্য পরিবেশবাদীদের আন্দোলন ও হাইকোর্টে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আপাতত গাছ কাটছে না জেলা পরিষদ। যশোর রোড উন্নয়ন ও শতবর্ষী গাছ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, সড়কের উন্নয়নের জন্য গাছ রেখেও পার্শ্ববর্তী দেশে উন্নয়ন চলছে। কিন্তু জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অপরিকল্পিতভাবে গাছ কেটে সাবাড় করেছেন। হাজার হাজার গাছ কাটলেও তিনি কখনো গাছ লাগাননি। যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান জানান, যৌক্তিক কারণ ছাড়া গাছ কাটার সুযোগ নেই। মহাসড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদকে গাছ অপসারণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। সেই চিঠির আলোকে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি ও বিভাগীয় কমিশনারের অনুমোদন দেয়। এরপরেই গাছ কাটার দরপত্র আহবান করা হয়। গাছ বিক্রির টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হয়।
০৩ মে, ২০২৪

আরও ১২০০ গাছ কাটছে বন বিভাগ
তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ। রেহাই পাচ্ছে না প্রাণিকূলের হাজারো জীব। তীব্র গরমে মাঠে ধান কাটার পাশাপাশি বিলে মাছ ধরেন কৃষক ও জেলেরা। রোদ যখন মাথার ওপর, তখন ক্লান্ত কৃষক ও জেলেরা বিলের পাশের সড়কে সারি সারি গাছের ছায়াতে বসে বিশ্রাম নেন। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে গাছের গুরুত্ব অপরিসীম সেখানে পরিবেশ বিপরীতমুখী কাজে মত্ত বগুড়ার আদমদীঘি বন বিভাগ। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল। সান্দিড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে এ বিলে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা। রাস্তার পাশে রয়েছে সারি সারি গাছ। তবে এখন থেকে আর সড়কের পাশে দেখা যাবে না দাঁড়িয়ে থাকা সবুজে ঘেরা গাছগুলো। এসব গাছ কেটে ফেলছে বন বিভাগ। এতে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। বিলের পাড় ও রাস্তার পাশের সড়কে এসব গাছের বয়স প্রায় ২০ বছর। সড়কে ছায়া দেওয়া এসব গাছ কাটার বিরোধিতা করছেন স্থানীয়রা। কিন্তু বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়ম মেনেই এসব গাছ কাটা হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া গ্রাম থেকে রক্তদহ বিল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটারের বেশি সড়কের পাশ ও বিলের পাড় দিয়ে প্রায় ১ এক হাজার ২০০ গাছ কাটার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কাটা হয়েছে প্রায় ৪০০-৫০০টি গাছ। স্থানীয় বাসিন্দা আছর আলী নামের এক কৃষক কালবেলাকে বলেন, বন বিভাগ থেকে গাছ কাটছে কাটুক তবে দেখে শুনে বেশি বয়সী গাছ ও মারা যাওয়া গাছগুলো কাটুক। আবার নতুন নতুন গাছ লাগাবে। তবে একবারে সব গাছ কাটায় আমাদের কৃষকদের অসুবিধা হবে। কাজে গিয়ে গরমের মধ্যে গাছের ছায়ায় বসে শান্তি পেতাম। সান্দিড়া গ্রামের বাসিন্দা কাদের আলী নামে এক জেলে বলেন, এখানে গাছগুলো সব কাটা হচ্ছে তবে কোনো গাছ লাগানো হচ্ছে না। কোনো গাছ লাগানো হবে কিনা তার ঠিক নেই। এই গাছগুলো কাটায় আমাদের সব পেশার লোকদেরই অসুবিধা হচ্ছে। এই বিল ও বিলের আশপাশে প্রায় কয়েকশ কৃষক, জেলে প্রতিদিন কাজ করে সড়কের পাশে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেই। গাছ কাটার ফলে রোদের কারণে আমাদের কাজ করতে অসুবিধা হবে। তাহমিদ নাফিস দিপ্ত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, গাছ আমাদের পরিবেশের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ এটি আমাদের সকলেরই জানা। সান্তাহারের সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে একটি এ রক্তদহ বিল। তীব্র গরমেও এখানে ছায়া, বাতাস থাকত অনেক। আর সামনে বিলের অথৈ পানি। এ সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পেত গাছগুলোর কারণে। সব গাছ কেটে ফেলে সৌন্দর্য নষ্ট করছে বন বিভাগ। সবুজ আন্দোলন নামের পরিবেশবাদী সংগঠনের আদমদীঘি উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সাগর খান বলেন, বন বিভাগ গাছ কাটবে আবার গাছ লাগাবে। কিন্তু এরা গাছ কেটে আর রোপণ করে না। এই গাছগুলো একবারে না কেটে কয়েক পর্যায়ক্রমে কাটতে পারত। এতে নতুন গাছ রোপণ করে আবারও পর্যায়ক্রমে আগের গাছ কাটলে পরিবেশ সৌন্দর্য দুটাই রক্ষা পেত। একই সংগঠনের উপজেলার সভাপতি গোলাম রব্বানী দুলাল বলেন, পরিবেশ রক্ষায় নিয়মমাফিক গাছ কেটে নতুন গাছ রোপণ করতে হবে। কিন্তু বন বিভাগ থেকে এর আগেও উপজেলার নওগাঁ-বগুড়া মহাসড়কের পাশ থেকে কাটা হয়েছে হাজার হাজার গাছ। পরবর্তীতে এসব গাছ লাগানোর কথা থাকলেও দুই বছর পার হলেও একটি গাছও রোপণ করেনি তারা। বন বিভাগ গাছ কেটেই চলছে তবে লাগাচ্ছে না একটিও।   আদমদীঘি বন বিভাগের কর্মকর্তা মতিউর রহমান কালবেলাকে বলেন, স্থানীয় সমিতির নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ১০ বছর পর পর গাছগুলো কেটে ফেলতে হবে। তারপর নতুন করে আবার গাছ লাগাতে হবে। তবে এই গাছগুলো ২০ বছর আগের, যার কারণে গাছগুলো রাখার আর সুযোগ নেই। আমরা গাছগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে কাটছি। পরবর্তীতে আমরা আবারও এই সড়কের পাশ দিয়ে গাছ রোপণ করব। এর আগে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের সীমান্ত কেল্লাবাড়ি থেকে রংপুরের তারাগঞ্জের পাঁচ কিলোমিটার অংশের প্রায় আড়াই হাজার গাছ কাটা হয়েছে। এসব গাছ তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পে ক্যানেলে লাগানো ছিল। ২২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫০ টাকায় দরপত্রের মাধ্যমে জবা এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এসব গাছ কাটার জন্য দেওয়া হয়।
০৩ মে, ২০২৪

আড়াই হাজার গাছ কাটছে বন বিভাগ
তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ। রেহাই পাচ্ছে না প্রাণিকূলের হাজারো জীব। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। সেখানে পরিবেশ বিপরীতমুখী কাজে মত্ত রংপুর বন বিভাগ। গত দুই মাস ধরে তারাগঞ্জ উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পে ক্যানেলে লাগানো গাছগুলো কাটার যেন উৎসবে মেতেছে তারা। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবাদীরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তারাগঞ্জ উপজেলার তিস্তা সেচ ক্যানেলের উন্নয়নকাজের জন্য ক্যানেলের দুই ধারে লাগানো গাছগুলো কেটে ফাঁকা করা হয়েছে। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আয়তন অনুযায়ী ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও তারাগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ৩ শতাংশের কম। তিস্তা সেচ ক্যানেলকেন্দ্রিক বনায়নের একটি বড় অংশ থাকলেও গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে, ফলে ১ শতাংশের নিচে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরপরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উন্নয়নমূলক কাজের জন্য গাছগুলো কেটে ফেলার দরপত্র দিয়েছে। ইতোমধ্যে গত দু’মাসে চার তৃতীয়াংশ গাছ কাটা হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, ক্যানেলের দুই ধারে গাছ থাকায় শিক্ষার্থীরা ছায়া পথে স্কুল-কলেজে যায়। খড়া রোদে আরামে পথ চলে সাধারণ ও স্থানীয় পথচারী। বিকেলে ঘুরতে আসত পাশাপাশি এলাকা থেকে অনেকেই। এ বিষয়ে পরিবেশবাদী ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, এত গাছ একসঙ্গে কাটা ঠিক হয়নি। ক্যানেল সংস্কারের নামে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রজেক্টের তেমন দরকার ছিল না। এতে অর্থের যেমন অপচয় তেমনি গাছগুলো কাটায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের সীমান্ত কেল্লাবাড়ি থেকে তারাগঞ্জের পাঁচ কিলোমিটার অংশের প্রায় আড়াই হাজার গাছ বিক্রি করা হয়েছে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জবা এন্টারপ্রাইজ সূত্রে জানা গেছে।  ২২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫০ টাকায় দরপত্রের মাধ্যমে জবা এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এসব গাছ দেওয়া হয়। গাছ বিক্রির ৮০ শতাংশ টাকা উপকারভোগী ও ২০ শতাংশ টাকা বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ পাবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জবা এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে সাব কন্ট্রাকে ক্রয় মালিকানা প্রতিষ্ঠান মাসুদ স’মিলসের মালিক মাসুদ রানা মোবাইল ফোনে বলেন, বন বিভাগ থেকে দরপত্র মূলে গাছগুলো কেনা হয়েছে। প্রয়োজনেই গাছগুলো কাটছি। তবে গাছ না থাকলে যাতায়াতে খুব কষ্ট হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা বলেন, গাছগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন বিভাগের। তবে তাপপ্রবাহের সময় গাছগুলো কাটা ঠিক হয়নি। বাকি গাছগুলো যাতে তাপপ্রবাহ পর্যন্ত কাটা না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বলব। উপজেলা বন কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান রোকন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকেরা ভেকু দিয়ে মাটি ফেলার সময় গাছগুলো ভেঙে দিচ্ছিল। তাই বিভাগীয় অফিস থেকে দরপত্র আহ্বান করে গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ ক্যানেলের উন্নয়নমূলক কাজ শেষ হলে ফের গাছ লাগানো হবে।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

গাছ কাটার সিদ্ধান্তে অনড় বন বিভাগ
আপাতত কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁধবাজার থেকে মাদুলিয়া পর্যন্ত রাস্তার গাছ কাটছে না বন বিভাগ। বুধবার (২৪ এপ্রিল) কয়েকটি পত্রিকায় ‘‘কাটা হবে ৩ হাজার গাছ, বন বিভাগ বলছে ‘গাছ রক্ষার কোনো সুযোগ নাই’’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয়রা গাছ না কাটার দাবি তোলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত গাছ কাটা বন্ধ রাখছে তারা। স্থানীয়দের দাবির মুখে স্থানীয় এমপি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও সরব ভূমিকা পালন করেন। সবার হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত থেকে সাময়িকের জন্য সরে এসেছে বন বিভাগ। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র বলেন, এটা সামাজিক বনায়নের অংশ। টেন্ডার ও ঠিকাদার নিয়োগ হওয়ার পর স্থগিত করার ক্ষমতা আমাদের নেই। বর্তমানে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের করণে আপাতত গাছ কাটা বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গাছ কাটার পর সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে পুনরায় গাছ লাগানো হবে। তবে এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেননি পরিবেশ গবেষকরা। বন গবেষক গৌতম কুমার রায় মনে করেন, সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে দীর্ঘমেয়াদি বৃক্ষরোপণ করতে হবে। কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি গাজী মাহাবুব রহমান বলেন, গাছ কাটার বা বিক্রির পাঁচ বছর আগে থেকে নতুন গাছ রোপণের পরিকল্পনা নিতে হবে। তাহলে পুরোনো গাছ কাটার সময় নতুন লাগানো গাছগুলো পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখবে। প্রসঙ্গত, কুমারখালীর লাহিনীপাড়া থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত পাউবোর জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। সড়কে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সমিতির মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর আগে কয়েক হাজার ফলদ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করেছিল উপজেলা বন বিভাগ। দরপত্রের মাধ্যমে ২০২৩ সালে যদুবয়রা থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। চলতি বছরেও ওই সড়কের লাহিনীপাড়া থেকে বাঁধবাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। উপজেলা বন বিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আর্থ-সামাজিক ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০৪ সাল থেকে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বন বিভাগ। তারা প্রথমে স্থানীয়দের নিয়ে এলাকাভিত্তিক সমিতি গঠন করে। পরে বিভিন্ন সড়কের ধারে জ্বালানি কাঠের গাছের চারা রোপণ করে। গাছ দেখাশোনা করেন সমিতির সদস্যরা। গাছের বয়স যখন ১০ বছর পূর্ণ হয়, তখন গাছ কাটা ও বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে বন বিভাগ। গাছ বিক্রির টাকা পান সমিতির সদস্যরা, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ, বন বিভাগ ও সড়ক সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে গেল ২০ একর শালবন, অসহায় বন বিভাগ
শাল-গজারির বনে ঘেরা সৌন্দর্যের লীলাভূমি টাংগাইলের সখীপুর। দু-চোখ যেদিকে যায়, মনে হয় সবুজের সমারোহ। কিন্তু চৈত্র-বৈশাখ মাস এলেই দুর্বৃত্তের আগুনে পোড়ে সখীপুরের শাল-গজারির বন। বনবিভাগের অনুমতি ছাড়া যেখানে প্রবেশ নিষেধ সেখানে ঘটছে আগুনের ঘটনা।  প্রতিবছর এ মৌসুমে বনে আগুন দেওয়ার কারণে পুড়ে যায় ছোট গজারিগাছ, ঝোপঝাড়, পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ। বিনষ্ট হয় বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। বন পোড়ানোর কারণে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। বিলুপ্ত হচ্ছে বন্যপ্রাণী, কীটপতঙ্গ ও পাখি। ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। গত এক মাসে সখীপুরের বনাঞ্চলে অন্তত ১৫টি জায়গায় আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সর্বশেষ বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার বহেড়াতৈল বিটের আওতায় ছাতিয়াচালা সাইনবোর্ড এলাকায় একটি গজারি বনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে প্রায় পাঁচ একর গজারির বন আগুনে পুড়ে যায়। গজারিয়া বিট কার্যালয়ের আওতাধীন অন্তত ৪টি স্থানে শাল-গজারির বনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। কালিয়ানপাড়া, গজারিয়া, কীর্ত্তনখোলা বংকী এলাকায় শাল-গজারির বনে আগুনের ঘটনায় প্রায় ৮ থেকে ১০ একর বন পুড়ে যায়। নলুয়া বিটের আওতাধীন দেওদিঘি বাজারের পশ্চিম পাশে দুটি গজারির বন, নলুয়া বিট কার্যালয়ের দক্ষিণ দিকে ৩০০ গজ দূরে একটি, ঘেচুয়া এলাকায় দুটি ও আমের চারা এলাকায় একটি বনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। গজারিয়া বিটে সখীপুর-সিডস্টোর সড়কের কীর্ত্তনখোলা এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি বনে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। স্থানীয় মানুষদের ভাষ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে অন্তত ৪টি শাল-গজারির বন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয়রা জানান, বনের কাছাকাছি নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি। তারা লাকড়ি সংগ্রহের উদ্দেশে অনেক সময় গজারি বনে আগুন দিয়ে থাকেন। কেউ বনের জমি দখলের উদ্দেশে বনে আগুন দেয়। বনের ভেতরের সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরাও অনেক সময় বনে আগুন দেয়। স্থানীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সখীপুরে ৪টি রেঞ্জের আওতায় ১৩টি বিট কার্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে শাল-গজারির বন রয়েছে। ফাল্গুন-চৈত্র ও বৈশাখ মাসে প্রকৃতির নিয়মে শাল-গজারির পাতা ঝরে পড়ে। বনাঞ্চলের আশপাশের বাসিন্দারা জমি দখল ও লাকড়ি সংগ্রহের উদ্দেশে রাতে আবার কখনো দিনে বনে আগুন দেন। ঝরাপাতাগুলো শুকনা থাকায় মুহূর্তেই বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চলতি বছর বনে দেওয়া আগুনে ইতোমধ্যে অন্তত ২০ একর বন পুড়ে গেছে বলেও বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।  নলুয়া বিট কর্মকর্তা সাফেরুজ্জামান বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে কয়েকটি গজারির বনে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। আমরা খুবই সতর্ক অবস্থায় আছি। এতে গতবারের থেকে এবার বনে আগুনের ঘটনা কমেছে। আমার কার্যালয়ে তিনজন স্টাফ রয়েছেন। চার-পাঁচ হাজার একর জমির বন দেখভাল করতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারি মুজিব কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুনির্মল চন্দ্র বসু বলেন, বনে আগুন দেওয়ার ফলে যেভাবে বন্য পশু-পাখি ও কীটপতঙ্গ ধ্বংস হচ্ছে তাতে পরিবেশগত বিপর্যয় অনিবার্য।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪

শরণখোলায় হঠাৎ বাঘের আনাগোনা, কী বলছে বন বিভাগ
পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের চত্বরে আবারও বাঘের দেখা মিলেছে। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সরাসরি এবং রাত ১২টার দিকে বাঘের উপস্থিতি টের পান বনরক্ষীরা। সন্ধ্যায় বাঘটি রেঞ্জ অফিস চত্বরে বিচরণ করা হরিণের পালে আক্রমণ করে। এ সময় বনরক্ষীরা কৌশলে বাঘটিকে তাড়িয়ে দিলে গভীর রাতে আবার ফিরে আসে। এ ঘটনার পর সন্ধ্যার পরে কোনো বনরক্ষীকে একা বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে অফিস চত্বরে কয়েকটি হরিণ ঘাস খাচ্ছিল। অফিসের বারান্দায় তার পরিবারের সদস্যরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন সময় বনের ভেতর থেকে বিশাল একটি বাঘ এসে আক্রমণ করে হরিণের পালে। পরে ব্যারাক থেকে বনরক্ষীরাও বিষয়টি দেখতে পেয়ে তাকে জানান। এ সময় নানাভাবে শব্দ করে বাঘটিকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। রাত ১২টার দিকে হরিণের অস্বাভাবিক ডাকাডাকি শুনতে পান তারা। এতে ধারণা করা হচ্ছে বাঘটি গভীর রাতে আবারও ফিরে এসেছিল। এ নিয়ে চলতি বছরে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন অফিসে চারবারে ছয়টি বাঘের দেখা পেলেন বনরক্ষীরা। এর আগে ৭ অক্টোবর রাতে ধানসাগর ফরেস্ট স্টেশন অফিসের বনরক্ষীদের ব্যারাকের সামনে দুটি বাঘ দেখা গেছে।  চলতি বছরের ৮ আগস্ট সকালে কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের বনরক্ষীদের ব্যারাকের খুব কাছে চলে আসে বিশাল এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এ সময় মোবাইলে বাঘটির ভিডিও ধারণ করেন বনরক্ষীরা। এ ছাড়া গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রেঞ্জের চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ি অফিসের পুকুরপাড়ে দেখা মেলে জোড়া বাঘের। প্রায় ২২ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে বাঘ দুটি আবার বনে ফিরে যায়। রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, ‘আগেও গভীর রাতে প্রায়ই বাঘ এসেছে অফিস চত্বরে। সরাসরি দেখতে না পেলেও বিভিন্ন স্থানে বাঘের পায়ের অসংখ্য ছাপ দেখে তা বুঝতে পেরেছি। তবে এভাবে সন্ধ্যার সময় আসেনি কখনো।’ তিনি আরও বলেন, বাঘ দেখার পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই হয়তো সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।
০৯ নভেম্বর, ২০২৩

সাগরে ভাসছিল ৯ জেলে, উদ্ধার করল বন বিভাগ
নিম্নচাপের প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ায় বঙ্গোপসাগরে ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে ভাসতে থাকা ৯ জেলেকে মান্দারবাড়িয়া এলাকা থেকে উদ্ধার করেছেন বন বিভাগের সদস্যরা।  গত ২ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে তাদের উদ্ধারের পর শুক্রবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যার পরে তাদের পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কার্যালয়ে আনা হয়। সেখান থেকে এসব জেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান বন বিভাগের কর্মকর্তারা। উদ্ধারকৃত জেলেরা হলেন- পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার হোগলপাতি গ্রামে মৃত মজিদের ছেলে খলিল, খলিলের ছেলে মানিক, দুলাল ও হেলাল, একই গ্রামের জয়নালের ছেলে আলাউদ্দিন, রশিদের ছেলে ছায়েদ, সুনামিয়ার পুত্র খলিল, উলুবেরিয়া গ্রামের কাদের বিশ্বাসের পুত্র শহিদুল ইসলাম, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা থানার বকুলতলা গ্রামের লতিফ মৃধার ছেলে জিয়া উদ্দিন মৃধা। উদ্ধার জেলেরা বলেন, ইলিশ মাছ ধরার জন্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানকালে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পড়ি। এ সময় আমাদের ট্রলারের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। সাগরেই ভাসতে থাকি। একপর্যায়ে জীবনে বেঁচে ফিরব এমন আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। পরে ভাগ্যক্রমে মান্দারবাড়িয়া ফাঁড়ির বন বিভাগের একটি টহল টিমের নজরে পড়লে তারা উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সাগর থেকে উদ্ধার ট্রলার মাঝি খলিল বলেন, বন বিভাগের সহযোগিতায় আমরা প্রাণ ফিরে পেয়েছি, তিন দিন সাগরে ভাসা অবস্থায় প্রাণের মায়া ছেড়ে দিয়েছিলাম। বন বিভাগের সদস্যদের দেখা পেয়ে নতুন করে বাঁচার উপায় খুঁজে পেলাম। পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, উদ্ধার ৯ জেলে বন বিভাগের হেফাজতে ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের নিরাপদে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে ইলিশ মাছ ধরার পাস পারমিট পাওয়া গেছে। বৈধভাবেই সাগরে মাছ ধরছিলেন এসব জেলে। আরও পড়ুন : সাজা এড়াতে পলাতক ৩৬ বছর
০৫ আগস্ট, ২০২৩

কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিএলসি নবায়নে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জে কাশিয়াবাদ স্টেশনে বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) নবায়নে বনজীবীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জেলে বাওয়ালিদের অভিযোগ, মাছ, কাঁকড়া, মধু ও গোলপাতা আহরণে সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য বিএলসি নবায়নে সরকার নির্ধারিত ফি চেয়ে ৬০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নির্ধারিত সময় পার হলেও বিএলসি নবায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বন বিভাগ। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের  খুলনা রেঞ্জের কাশিয়াবাদ স্টেশনের আওতায়  ৯০০ বিএলসি আছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ১০০ মণের নৌকার বিএলসির সরকারি রাজস্ব ২৪ টাকা, ৫০ মণের জন্য ১২ টাকা। আর ২৫ মণের নৌকার রাজস্ব ছয় টাকা। তবে, বনজীবীদের কাছ থেকে বিএলসি নবায়ন করতে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । বনজীবীদের অভিযোগ, অসাধু বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে দালালদের মাধ্যমে ২৫ মণের নৌকার বিএলসি নবায়নে ৬০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে বাওয়ালি জানান, তারা স্থানীয় দালালের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বিএলসি নবায়ন করেছেন। বনের পাস বন্ধ, কোনো আয় নেই। তারপরও তাদের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বিএলসি নবায়ন করতে হয়েছে। আরও পড়ুন: হেরোইনসহ স্ত্রীকে ফেলে কৌশলে পালাল স্বামী তারা আরও জানান, দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে বিএলসি নবায়ন না করলে হুমকির মধ্যে থাকতে হয়। এ কথা কারও কাছে জানালে তাকে সুন্দরবনে বৈধ বা অবৈধ কোনোভাবেই প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তা ছাড়া কেউ লাফালাফি করলে তার বিরুদ্ধে একাধিক বন মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। অতিরিক্ত টাকা দিতে অস্বীকার করলে বিএলসি নবায়নে হয়রানির শিকার হতে হয়। নৌকা স্টেশনে এনে মাপ জরিপ করে মিলিয়ে বিএলসি দেওয়া হয়। কিন্তু দালালের মাধ্যমে করলে টাকা বেশি খরচ হয়। কোনো ঝামেলা করে না, নৌকা ও মাপার জন্য স্টেশনে আনতে হয় না। সম্প্রতি কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় ও কমিউনিটি পেট্রোলিং টিম (সিপিজি) সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুস আদায় ও মারধরের অভিযোগে গত বুধবার উপজেলার মঠবাড়ি গ্রামের বনজীবী জেলে মো. কালাম গাজী বাদী হয়ে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসেন  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জেলে বাওয়ালিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে একাধিক মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী জেলেরা।  এ প্রসঙ্গে কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, বিএলসি নবায়নে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে আপনার সাথে সাক্ষাতে কথা বলব বলে ফোন কেটে দেন। এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের মোহসিন হোসেন  বলেন, এ ব্যাপারে অফিসের যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৩১ জুলাই, ২০২৩
X