আপাতত কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁধবাজার থেকে মাদুলিয়া পর্যন্ত রাস্তার গাছ কাটছে না বন বিভাগ। বুধবার (২৪ এপ্রিল) কয়েকটি পত্রিকায় ‘‘কাটা হবে ৩ হাজার গাছ, বন বিভাগ বলছে ‘গাছ রক্ষার কোনো সুযোগ নাই’’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয়রা গাছ না কাটার দাবি তোলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত গাছ কাটা বন্ধ রাখছে তারা।
স্থানীয়দের দাবির মুখে স্থানীয় এমপি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও সরব ভূমিকা পালন করেন। সবার হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত থেকে সাময়িকের জন্য সরে এসেছে বন বিভাগ।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র বলেন, এটা সামাজিক বনায়নের অংশ। টেন্ডার ও ঠিকাদার নিয়োগ হওয়ার পর স্থগিত করার ক্ষমতা আমাদের নেই। বর্তমানে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের করণে আপাতত গাছ কাটা বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গাছ কাটার পর সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে পুনরায় গাছ লাগানো হবে।
তবে এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেননি পরিবেশ গবেষকরা। বন গবেষক গৌতম কুমার রায় মনে করেন, সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে দীর্ঘমেয়াদি বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি গাজী মাহাবুব রহমান বলেন, গাছ কাটার বা বিক্রির পাঁচ বছর আগে থেকে নতুন গাছ রোপণের পরিকল্পনা নিতে হবে। তাহলে পুরোনো গাছ কাটার সময় নতুন লাগানো গাছগুলো পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখবে।
প্রসঙ্গত, কুমারখালীর লাহিনীপাড়া থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত পাউবোর জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। সড়কে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সমিতির মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর আগে কয়েক হাজার ফলদ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করেছিল উপজেলা বন বিভাগ। দরপত্রের মাধ্যমে ২০২৩ সালে যদুবয়রা থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। চলতি বছরেও ওই সড়কের লাহিনীপাড়া থেকে বাঁধবাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটা হয়েছে।
উপজেলা বন বিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আর্থ-সামাজিক ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০৪ সাল থেকে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বন বিভাগ। তারা প্রথমে স্থানীয়দের নিয়ে এলাকাভিত্তিক সমিতি গঠন করে। পরে বিভিন্ন সড়কের ধারে জ্বালানি কাঠের গাছের চারা রোপণ করে। গাছ দেখাশোনা করেন সমিতির সদস্যরা। গাছের বয়স যখন ১০ বছর পূর্ণ হয়, তখন গাছ কাটা ও বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে বন বিভাগ। গাছ বিক্রির টাকা পান সমিতির সদস্যরা, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ, বন বিভাগ ও সড়ক সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
মন্তব্য করুন