যক্ষ্মা শনাক্তে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার হবে
দেশের যক্ষ্মা রোগী শনাক্তে এবার ব্যবহার হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)। চলতি বছর মধ্য বা শেষভাগে মহানগরসহ ঢাকা জেলা, খুলনা ও পঞ্চগড়ে পরীক্ষামূলকভাবে এ পদ্ধতির ব্যবহার হবে। এর মাধ্যমে খুব সহজেই যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হবে। ফলে তাদের চিকিৎসার আওতায় এনে রোগ নির্মূলেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজি অব বাংলাদেশ (আইএসিআইবি) এর চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অণুপ্রাণবিদ অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন যক্ষ্মাবিষয়ক সেমিনারে এসব তথ্য জানান। গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সেমিনারে অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. রফিকুল ইসলাম মিলনও। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে ২০২৩ সালে দেশে ৩ লাখ ১ হাজার ৫৬৪ রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে চিকিৎসার আওতায় এসেছে ৮০ শতাংশ রোগী।
২৬ মার্চ, ২০২৪

এআই পদ্ধতিতে শনাক্ত হবে যক্ষ্মা রোগী 
দেশের যক্ষ্মা রোগী শনাক্তে ব্যবহার হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)। এই বছরের মধ্য বা শেষভাগে ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলা, খুলনা ও পঞ্চগড়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতির ব্যবহার হবে। প্রযুক্তির এই ব্যবহারে যে কোনো ধরনের যক্ষ্মা রোগী খুব সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে। ফলে তাদের চিকিৎসার আওতায় এনে রোগ নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি রেস্টুরেন্টে আইএসিআইবি-এর চেয়ারম্যান অণুপ্রাণবিদ অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন এসব তথ্য জানান। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. রফিকুল ইসলাম মিলন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ৩ লাখ ১ হাজার ৫৬৪ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসার আওতায় আছে ৮০ শতাংশ রোগী। বাকি প্রায় ২০ শতাংশ রোগী এখনো রয়েছে শনাক্তের বাইরে। শনাক্তের বাইরে থাকা এই রোগীরা যক্ষ্মার জীবাণু ছড়াচ্ছে এবং আরও রোগী বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করছে। অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কফ পরীক্ষার মাধ্যমে ফুসফুসের যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় করা হয়। অনেক সময় রোগীর কফ দিতে কষ্ট হয়। পর্যাপ্ত কফ দেওয়াও সম্ভব হয় না। এআই পদ্ধতিতে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় সম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তে এআই পদ্ধতির ব্যবহার হলেও আমাদের দেশে এখনো এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে না। সেদিক দিয়ে আমরা প্রথম শুরু করব। এ ছাড়া যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত এবং চিকিৎসাসেবা যাতে নিশ্চিত হয় সে জন্য এ বছরের শেষের দিকে চালু হতে যাচ্ছে কমিউনিটি লিড মনিটরিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে যক্ষ্মা রোগীরাই এই মনিটরিং কাজটি করবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক এই পরিচালক। যে পদ্ধতিতে রোগীরা তাদের চিকিৎসা বিষয়ে নিজেরাই মন্তব্য করতে পারবেন। রোগীদের এসব মন্তব্য সরাসরি মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএইচআরএফ) সভাপতি রাশেদ রাব্বি এবং সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল প্রমুখ।
২৫ মার্চ, ২০২৪

দেশে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী বাড়ছে
মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকার বাসিন্দা আইয়ুব আলী (৫৬)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করেন। গত বছর প্রচণ্ড খুশখুশে কাশি নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কফ পরীক্ষায় তার যক্ষ্মা শনাক্ত হয়। কিছুদিন ওষুধ সেবনের পর তিনি সুস্থবোধ করেন। কাশি কমে যায়। এরপর তিনি ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেন। এতে যক্ষ্মার জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, যক্ষ্মা রোগীর অনিয়মিত ওষুধ সেবন কিংবা চিকিৎসার মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে দেওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও যক্ষ্মার জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। গত বৃহস্পতিবার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শ্যামলী যক্ষ্মা হাসপাতালে যান আইয়ুব আলী। কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি জানান, চিকিৎসক অভয় দিয়ে তাকে বলেছেন, এই অবস্থারও (ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা) চিকিৎসা রয়েছে। আইয়ুব আলীর মতো অনেকেই চিকিৎসায় অবহেলা করে। মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। সরকারি তথ্যমতে, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর হার সবচেয়ে বেশি গার্মেন্টকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, জেলখানার কয়েদি ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে। একাধিক চিকিৎসক বলেন, যক্ষ্মা বাংলাদেশের জন্য একটি অন্যতম মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তবে ১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করার পর বাংলাদেশ সরকার ও কিছু বেসরকারি সংস্থা যক্ষ্মার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত বছর জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের যক্ষ্মাবিষয়ক সভায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যে যেসব সুপারিশ ও সাহসী লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করেছে সেগুলো বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার বদ্ধপরিকর। মাঠ পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী যক্ষ্মা স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। জেলখানা, শহরাঞ্চলের বস্তি এলাকায়, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী এবং গার্মেন্টসে কর্মরত শ্রমিকদের বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে মোবাইল ভ্যানে জিন এক্সপার্ট মেশিন ও ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন দিয়ে যক্ষ্মা শনাক্তের কাজ জোরদার করা হয়েছে। টেকনাফ, উখিয়া ও ভাষানচর এলাকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝেও যক্ষ্মা কর্মসূচি সম্প্রসারিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে গত বছর দুই হাজার ৪৩৭ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০২৩ সালে এধরণের ২ হাজার ৭২৯ জন রোগী শনাক্ত হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার জন্য রোগী ও তার স্বজনদের অবহেলা দায়ী। নিয়মিত ওষুধ খেলে যক্ষ্মা ভালো হয়; কিন্তু কিছুটা সুস্থবোধ করার পর ওষুধ ছেড়ে দেওয়ায়ও ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী বাড়ছে। তবে সরকার এসব রোগীর চিকিৎসায় জোর দিচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ১৮৮২ সালে ২৪ মার্চ রবার্ট কোচ যক্ষ্মা রোগের জীবাণু মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলসিস আবিষ্কার করেন। এর ১০০ বছর পর ১৯৮২ সালে দিনটিকে স্মরণীয় করা ও যক্ষ্মারোগের চিকিৎসা সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ২৪ শে মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উদযাপন করা হয়। এমন পরিস্থিতে আজ ২৪ মার্চ ‘হ্যাঁ! আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি!’Ñ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ উদযাপন করা হবে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। আজ (রোববার) দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক র্যালি, আলোচনা সভা ও লিফলেট বিতরণ করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্যামলী যক্ষ্মা হাসপাতাল ও মহাখালী জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড চালু হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে। শ্যামলী হাসপাতালে প্রতিদিন অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী যক্ষ্মার উপসর্গ নিয়ে আসেন। শ্যামলী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার কালবেলাকে বলেন, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ রোগীরা নিয়মিত ওষুধ খায় না। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও অনেক অ্যান্টিবায়েটিক রেজিস্ট্যার্ন্ড হচ্ছে। তিনি বলেন, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা মোকাবিলায় শ্যামলী যক্ষ্মা হাসপাতালে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। আলাদা ওয়ার্ড রয়েছে। মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালেও আলাদা ওয়ার্ড রয়েছে। এই রোগটি যাতে অন্যদের মধ্যে ছড়াতে না পারে সে জন্য চিকিৎসক-নার্সও আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। যক্ষ্মা একটি ছোঁয়াচে রোগ। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনে সংক্রমিত হয়। শনাক্তের পরিমাণ যত বাড়বে যক্ষ্মা তত কম ছড়াতে পারবে। সারা দেশে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের হার বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলেও এখন রোগী শনাক্তের ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ২০২২ সালের বিশ্ব যক্ষ্মা প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২১ সালে বিশ্বের এক কোটি ৬ লাখ মানুষ যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মাত্র ৬০ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। মারা গেছে ১৬ লাখ মানুষ। আর ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ মানুষের। এর মধ্যে মাত্র ৩৬ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এর চিত্র খুবই ভয়াবহ। এখনো যক্ষ্মার উচ্চ ঝুঁকির দেশ হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ। দেশে প্রতি মিনিটে একজন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে আর প্রতি ১২ মিনিটে একজনের মৃত্যু ঘটছে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির হিসেব মতে, গত বছর (২০২৩ সালে) যক্ষ্মার উপসর্গ আছে এমন প্রায় ৩০ লাখের বেশি মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৩ লাখ ১ হাজার ৫৬৪ জনের নমুনায় রোগটি শনাক্ত হয়। তাদের চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে। এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়ার্ল্ড টিবি রিপোর্ট-২০২২ বলছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে তিন লাখ ৭৫ হাজার টিবি রোগী ছিল। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ পুরুষ, ৪৬ শতাংশ নারী। এদের মধ্যে আবার ৮ শতাংশ শিশু। ৪ হাজার ৫০০ জন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী ছিলেন। ওই বছর ৪২ হাজার মানুষের যক্ষ্মায় মারা যায়। যক্ষা শনাক্তে সারা দেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত জিন এক্সপার্ট ল্যাব, ট্রুনাট মেশিন, এলইডি মাইক্রোস্কোপ, লিকুইড কালচার, এলপিএ, ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন রয়েছে। এ ছাড়াও রাজধানীতে একটি ন্যাশনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরি ও ৫টি রিজিওনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরির মাধ্যমে জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে যক্ষ্মা রোগ শনাক্ত করা হয়। চিকিৎসায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে গত বছর ২ হাজার ৭২৯ জন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সরকারি ৪৪ টি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, ০৭টি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগ এবং এনজিও ক্লিনিক-এ যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। ২০৩৫ সালের মধ্যে শনাক্তকরণ, নোটিফিকেশন, সেবার সহজলভ্যতা, প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং সবার অংশগ্রহণে যক্ষা নির্মূল করা সম্ভব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যক্ষ্মা নির্মূল কার্যক্রম বলছে, সরকারের উদ্যোগের কারণে গত ১০ বছরে যক্ষ্মায় মৃত্যু কমেছে। ২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৩ লাখ জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। ২০১৫ সালে জনসংখ্যার অনুপাতে যেখানে প্রতি লাখে ৪৫ জনের মৃত্যু হতো, ২০২১ সালে এসে তা প্রতি লাখে ২৫ জনে নেমেছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে মৃত্যুহার ৭৬ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। একই সময়ে রোগী শনাক্তের হারও ৫০ শতাংশে উন্নতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (সমন্বয়) ডা. কাজী মো. সালেহীন তৌহিদ কালবেলাকে বলেন, যক্ষ্মা নির্মূলে ব্যাপক কর্মসূচি ও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রোগটি নির্ণয়ে ৬২২টি অত্যাধুনিক জিন এক্সপার্ট মেশিনসহ উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। গত বছর এক লাখ ৬৫ হাজার ৬৩৯ জন রোগীকে টিবি প্রিভেনটিভ থেরাপি প্রদান করা হয়েছে, যা ওই বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় পরবর্তী প্রতিটি রোগীকে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের পাশাপাশি নিয়মিত ওষুধ সেবন নিশ্চিত করতে প্রতিটি রোগীর সঙ্গে একজন ডিওটিএস প্রোভাইডার নিশ্চিত করা হয়। রোগ শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি যক্ষ্মা রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা হয়। ২০১০ সাল থেকে ৯৫ শতাংশের বেশি রোগী চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছে। যক্ষ্মা রোগে মৃত্যুহার কমেছে। ২০১০ সালে দেশে যক্ষ্মা রোগে আনুমানিক মৃত্যু ছিল প্রতি লাখে ৫৪ জন। গত দুই বছরে তা কমে প্রতি লাখে ২৫ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার চিকিৎসায় (ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমানোর লক্ষ্যে) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী স্বল্প মেয়াদি ছয় মাস ওষুধ খাওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা যক্ষ্মার চিকিৎসায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
২৪ মার্চ, ২০২৪

যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
যক্ষ্মা সাধারণত বায়ুবাহিত রোগ, যা বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। একজনের হয়তো টিবির জীবাণু রয়েছে, পালমোনারি টিউবার কোলোসিস যাকে বলা হয়, প্রতিবার হাঁচি বা কাশির সঙ্গে সাড়ে তিন হাজার ড্রপলেট বের হয়, যা বাতাসে উড়ে বেড়ায়। বাতাসের সঙ্গে ভেসে বেড়ানো ড্রপলেট নাক দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে—এমন যে কারও যক্ষ্মা রোগ হতে পারে। যক্ষ্মার জীবাণু যে কেবল ফুসফুসকে আক্রান্ত করে তা নয়; এটি মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে, ত্বক, অন্ত্র, লিভার, কিডনি, হাড়সহ দেহের যে কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সংক্রমিত হতে পারে। টিকা বা ভ্যাকসিনেশনের মধ্য দিয়ে যক্ষ্মা প্রতিরোধ করা যায়। জেনে নিই যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার।  যক্ষ্মার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্বের ১০টি মৃত্যুর কারণের মধ্যে অন্যতম যক্ষ্মা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তথ্যে, প্রতিদিন যক্ষ্মায় বিশ্বে চার হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং আক্রান্ত হন ৩০ হাজার মানুষ। আর জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে যক্ষ্মার উপসর্গ আছে এমন প্রায় ২৯ লাখ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে নতুন করে ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৩১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা হয়।  যক্ষ্মা শনাক্তের ইতিহাস যক্ষ্মা অতি প্রাচীন রোগ। যিশু খ্রিষ্টের জন্মের তিন হাজার সাতশ বছর আগে প্রথম ইজিপ্টের এক মমির ভেতর যক্ষ্মা রোগের জীবাণু পাওয়া যায়। এর ওপরে গবেষণা করতে করতে ১৮৮০ সালে জন পক্স পালমোনারি টিউবার কোলোসিসের ভ্যাকসিন ভিসিজি আবিষ্কার করেন। এর দুই বছর পর ১৮৮২ সালে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী রবার্ট কোচ। তাকে স্মরণ করেই প্রতিবছর মার্চ মাসের ২৪ তারিখ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হয়ে থাকে।  যক্ষ্মা নির্ণয়ে সময়সীমা যক্ষ্মা রোগের জীবাণু টিউবার কোলোসিসের ব্যাকটেরিয়া নির্ণয়ের জন্য সময় লাগে ছয় থেকে আট সপ্তাহ। অথচ অন্য ব্যাকটেরিয়া তিন দিনের ভেতর কালচার করা যায়। আমাদের দেশে টিউবার কোলোসিসের জীবাণু খুবই ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। পৃথিবীর ২২টি দেশে টিউবার কোলোসিসের রোগী খুব বেশি পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় চীন অথবা ভারতে। আমাদের অবস্থান এর আগেও ছিল ষষ্ঠ। বর্তমানে সপ্তম। যক্ষ্মা সংক্রমণ ঝুঁকিতে কারা যক্ষ্মা হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসায় কাজ করছেন এমন মানুষের যক্ষ্মা রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার যারা বস্তিতে থাকেন; যারা গরিব, অপুষ্টির শিকার, ডায়াবেটিসের রোগী; যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন যে কেউ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারেন।  যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ফুসফুসের টিবির লক্ষণ দুই রকম। একটি জেনারেল, অন্যটি সিস্টেমিক। জেনারেল লক্ষণের মধ্যে খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া, দুর্বল লাগা ও শরীর খুব ঘামা। আর বিশেষ লক্ষণের মধ্যে কাশি হওয়া, কফ বের হওয়া, কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ও বুক ব্যথা হতে পারে।  যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা দুই বা তিন সপ্তাহের কাশি হলো, অ্যান্টিবায়োটিকে যাচ্ছে না, তখনই রোগীর টিউবার কোলোসিস হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। যক্ষ্মার কিছু সাধারণ পরীক্ষা আছে। যক্ষ্মা নির্ণয়ে সাধারণত এমটি টেস্ট, স্পুটাম টেস্ট, স্মিয়ার টেস্ট, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, কালচার টেস্ট, এফএনএসি ও বর্তমান যুগের সবচেয়ে আধুনিক জিন এক্সপার্ট পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। রোগের ধরন বুঝে নমুনা হিসেবে রোগীর কফ, লালা, হাড়, বা গ্লান্ডের তরল সংগ্রহ করা হয়। কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন যক্ষ্মা রোগের?  দেশের মোট জনসংখ্যার একটি অংশ জন্মগতভাবেই যক্ষ্মা রোগের জীবাণু বহন করে। তবে শরীরে জীবাণু থাকা মানেই এই নয় যে ব্যক্তি রোগে আক্রান্ত। তবে জীবাণুর ধারক নিজে আক্রান্ত না হলেও তার মাধ্যমে অন্যের শরীরে যক্ষ্মা ছড়াতে পারে। আর সেটা যে কোনো অঙ্গেই হতে পারে। এই জীবাণু থেকে তাদেরই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল। ডায়াবেটিসের রোগীদের এই জীবাণুতে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি। এ ছাড়া পরিবেশদূষণ, দরিদ্রতা, মাদকের আসক্তি, অপুষ্টি, যক্ষ্মার হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ফুসফুস ছাড়াও শরীরের যেসব অঙ্গে যক্ষ্মা সংক্রমিত হয় ফুসফুসে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হলে টানা কয়েক সপ্তাহ কাশি, কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়ার মতো সাধারণ কিছু লক্ষণের ব্যাপারে কমবেশি প্রায় সবারই জানা। শরীরের যে অংশে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হবে, সেই অংশটি ফুলে উঠবে। যেমন গলার গ্লান্ড আক্রান্ত হলে গলা ফুলবে, মেরুদণ্ডে আক্রান্ত হলে পুরো মেরুদণ্ড ফুলে উঠবে। ফোলা অংশটি খুব শক্ত বা একদম পানি পানি হবে না। সেমি সলিড হবে। ফোলার আকার বেশি হলে ব্যথাও হতে পারে। লিভারে যক্ষ্মা হলে পানি এসে পেট অস্বাভাবিক ফুলে যেতে পারে। মস্তিষ্কে সংক্রমিত হলে সেখানেও পানির মাত্রা বেড়ে যায়। অর্থাৎ মানুষের মস্তিষ্ক যে ইডিমা বা পানির মধ্যে থাকে, সেটার পরিমাণ বেড়ে যায়। চামড়ায় বা অন্য যেখানেই হোক না কেন, সেই অংশটা ফুলে ওঠে। এ ছাড়া ক্ষুধামান্দ্য, হঠাৎ শরীরের ওজন কমে যাওয়া, জ্বর জ্বর অনুভব হওয়া, অনেক ঘাম হওয়া ইত্যাদি যক্ষ্মার সাধারণ লক্ষণ। যক্ষ্মা রোগের করণীয় কী যদি শরীরের কোনো অংশ ফুলে ওঠে আর কয়েক দিনেও ফোলা না কমে, এ ছাড়া ফুসফুসে যক্ষ্মার লক্ষণগুলোর মধ্যে হাঁচি-কাশি বাদে বাকি লক্ষণগুলোর কোনো একটি দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে যে ব্যক্তি যক্ষ্মায় আক্রান্ত কিনা। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে যক্ষ্মা পুরোপুরি সেরে যায়, তাই দেরি না করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। যক্ষ্মা দীর্ঘমেয়াদি রোগ হওয়ায় এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ খেতে হয়। যেটা ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে। এমন অবস্থায় যক্ষ্মা রোগীদের ধৈর্যের সঙ্গে নির্দিষ্ট মাত্রা অনুযায়ী পুরো মেয়াদে ওষুধ খেতে হবে। তবে অনেক সময় দুই থেকে তিন মাস ওষুধ খাওয়ার পর রোগী খুব ভালো অনুভব করে। তার রোগের সব লক্ষণ চলে যায়। এমন অবস্থায় অনেকেই সেরে উঠেছেন ভেবে ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেন। এ ক্ষেত্রে পরে আবারও যক্ষ্মা হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং তার ক্ষেত্রে আগের ওষুধ কোনো কাজে আসে না। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রচুর পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সঠিক সময় চিকিৎসা না নিলে এই জীবাণু শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারে এবং চিকিৎসা না নেওয়ার কারণে তার মাধ্যমে আরও অনেকের মধ্যে জীবাণুটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।  শরীরের অন্য অংশের যক্ষ্মা কতটা ছোঁয়াচে যত যক্ষ্মা রয়েছে, এর মধ্যে ৮০ ভাগই ফুসফুসে হয়ে থাকে এবং এটি সবচেয়ে গুরুতর ও ভীষণ ছোঁয়াচে। ফুসফুসের যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সুস্থ মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে। মূলত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে, এমনকি কথা বলা থেকেও যক্ষ্মার জীবাণু খুব দ্রুত একজনের কাছ থেকে আরেকজনের ভেতর ছড়াতে পারে। সে ক্ষেত্রে শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের যক্ষ্মা এতটা ছোঁয়াচে নয়। তাই এটি ফুসফুসে যক্ষ্মার মতো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। শুধু আক্রান্ত ব্যক্তি যদি তার আক্রান্ত স্থান সুস্থ ব্যক্তির কাটা অংশ স্পর্শ করেন, তাহলে এই রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে।  যক্ষ্মা ছড়ানো প্রতিরোধের উপায় যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ানো প্রতিরোধে হাঁচি-কাশির সময় মুখে রুমাল দেওয়া, না হলে অন্তত হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বা সবার থেকে দূরে গিয়ে কাশি দেওয়া। যেখানে সেখানে থুতু-কফ না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে ভালোভাবে জায়গাটি পরিষ্কার করা বা মাটিচাপা দেয়া। কারও মুখের সামনে গিয়ে কথা না বলা অথবা যক্ষ্মা জীবাণুমুক্ত রোগীর সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলা। যক্ষ্মা রোগীর আক্রান্ত স্থান, সুস্থ ব্যক্তির ক্ষতস্থানের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখা। পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। রোগী জীবাণুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। থ্রিএইচটি প্রতিরোধক থেরাপির মাধ্যমে এই জীবাণু থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে রোগীকে রিফাপেন্টিং নামে একটি ওষুধ প্রতি মাসে একবার করে তিন মাস খেতে হয়।  
২২ নভেম্বর, ২০২৩

‘সচেতনতাই পারে যক্ষ্মা মুক্ত দেশ গঠন করতে’
প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্যে পৌঁছতে যক্ষ্মা নির্মূলে “সংসদীয় যক্ষ্মা ককাস” এর ভূমিকা কি হবে এবং “সংসদীয় যক্ষ্মা ককাস” কি ধরনের পলিসি ও আইন প্রস্তুতে কি ধরনের কাজ করতে পারে বুধবার (৩০ আগস্ট) পার্লামেন্টস মেম্বার ক্লাবে সকাল ১১ টায় যক্ষ্মা নির্মূলে বাংলাদেশ সংসদীয় যক্ষ্মা ককাস” এর মতবিনিময় সভায় সংসদ সদস্যরা এ  বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন।  “যক্ষ্মা নির্মূলে বাংলাদেশ সংসদীয় যক্ষ্মা ককাস এর  মতবিনিময় সভা জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এন,টি, পি) এর আওতায়- প্রিপ ট্রাস্ট ও আইসিডিডিআর,বি আয়োজন  করে। বিশিষ্টজনেরা আরো বলেন, বর্তমানে “যক্ষ্মা” বাংলাদেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে “যক্ষ্মা” নির্মূল করা,  প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গীকারকে সামনে রেখে বাংলাদেশ  “সংসদীয় যক্ষ্মা ককাস” গঠন করা - যা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে একমাত্র ককাস। ২০৩৫ সলের মধ্যে এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, মেয়র ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সম্পৃক্ততা জরুরি।  যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এন টি পি) এর মনিটরিং ইভ্যালুয়েশন এক্সপার্ট ডা. আহমেদুল হাসান খান একটি পরিসংখ্যান এর মাধ্যমে উত্থাপন করেন, ২০০৬ সালে “যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হতো মাত্র ৬ হাজার, ২০২১ রোগী শনাক্ত হয় ৩ লাখ ২১ হাজার রোগী, যার মধ্যে ৯৫ শতাংশ রোগী ঔষধ সেবনে সুস্থ হয়ে উঠে, ২০০৬ সালে যক্ষ্মা রোগে মৃত্যু হতো ৭৭ হাজার। যা ২০২১ সালে এসে দাড়িয়েছে মাত্র ৪২ হাজার, যক্ষ্মা টেস্টের মেশিন এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে যা যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত কে সহজলভ্য করেছে। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে যক্ষ্মা রোগীর সেবা উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রিপ ট্রাস্টের ৫ টি কর্ম এলাকার মাঠ পর্যায়ের সুপারিশ সমূহ উপস্থাপন করেন  নির্বাহী পরিচালক ড: ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, টিবি রোগী খুঁজে বের করা কঠিন, টিবি সেন্টারে/ ক্লিনিকে রোগী কম, দারিদ্রতার কারণ যাতায়াত খরচ না থাকায় অনেকে টেস্ট করাতে চান না। চা বাগানের শ্রমিকদের বাইরে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় সেখানে ডট সেন্টার এর ব্যবস্থা  করা। কমিউনিটি ক্লিনিকে যক্ষ্মা রোগ শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করা। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড: শামসুল হক টুকু, এমপি, ডেপুটি স্পিকার, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এবং প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ সংসদীয় যক্ষ্মা ককাস। প্রধান অতিথি বলেন, পার্লামেন্টে থাকাকালীন অবস্থায় সম্মেলন করা দরকার। সভায় সভাপতিত্ব করেন   ফখরুল ইমাম, এমপি, সংসদ সদস্য ও  উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, “সংসদীয় যক্ষ্মা ককাস”। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ডা. আজহারুল ইসলাম খান সিনিয়র টিবি মেটিগেশন কো অর্ডিনেশন এক্সপার্ট, এন টি পি / আইসিডিডিআার’বি, নওমি মান্নান, ম্যানেজার  নলেজ ম্যানেজম্যান্ট আইসিডিডিআার’বি, শবনম জাহান, এমপি,  এ্যাড: জাকিয়া তাবাসসুম এমপি, সুলতানা নাদিরা এমপি,  জিন্নাতুল বাকিয়া এমপি ইত্যাদি প্রমুখ।  আফরোজা হক রীনা বলেন, অজ্ঞতা কুসংস্কার দূর করার জন্য সচেতনতা জরুরি। সভাপতির বক্তব্যে আরমা দত্ত এমপি, বলেন, সচেতনতাই পারে যক্ষ্মা মুক্ত দেশ গঠন করতে। তাই সামাজিক সচেতনতা জরুরি। সকলকে যুক্ত করতে হবে, ডোনার , স্বাস্থ্য  মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য  অধিদপ্তর ও এলাকার জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করতে হবে, ককাসের প্রয়োজনীয়তা প্রচারে সংসদে সভা করা।
৩০ আগস্ট, ২০২৩

যক্ষ্মা নির্মূলে সংসদ সদস্যদের টি বি ককাস সভায়
২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা রোগ নির্মূলে প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে নিজ নিজ এলাকা ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বৃদ্ধি, মান উন্নয়নে যথাযথ নীতিনির্ধারণীমূলক উদ্যোগ নেওয়া, পরীক্ষার মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করে বিনা পয়সায় ওষুধ খাওয়ানো, সচেতনতা বাড়াতে এলাকায় লিফলেট বিতরণ এসব কাজ গুরুত্বসহকারে করতে হবে। যক্ষ্মা নির্মূলে সংসদ সদস্যদের ‘টি বি ককাস’ এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাবিষয়ক অ্যাডভোকেসি সভায় সংসদ সদস্যরা এসব কথা বলেন। সোমবার সকাল ১১টায় পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এন টি পি), আইসিডিডিআর, বি এবং প্রিপ ট্রাস্টের আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সংসদীয় যক্ষ্মা ককাসের সিনিয়র উপদেষ্টা ও প্রধান অতিথি ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক বলেন, নবজাতককে টি বি ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও এটা আজীবন সহায়তা দেয় না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এজন্য স্থানীয় জনগণের মধ্যে যক্ষ্মাবিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে হবে। অ্যাডভোকেসি প্রোগামটিকে কীভাবে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া যায় সেটাও গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ সংসদীয় যক্ষ্মা ককাসের সদস্য সচিব ও প্রিপ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান আরমা দত্ত, এমপি বলেন, আমাদের অঙ্গীকার, ২০৩৫ সালের মধ্যে কীভাবে যক্ষ্মা নির্মূল করব। এটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও অঙ্গীকার ছিল, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও অঙ্গীকার। প্রত্যেক হাসপাতালে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের জন্য যে মেশিন রয়েছে এটা অনেকেই জানেন না।  তিনি আরও বলেন, হতদরিদ্র মানুষ যারা গ্রাম ছেড়ে শহরে আসেন তাদের কোনো কাজে নিলে পরিচয় পত্র নিই। কিন্তু তাদের স্বাস্থ্যের কথা আমূলে নেওয়া হয় না। তাদের মাধ্যমেও যক্ষ্মা ছড়ায়। এই বিষয়টি আমলে নিলেই যক্ষ্মা নির্মূল করা যাবে। প্রিপ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ড. ওমর ফারুক চৌধুরীর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-০১ এর ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল এমপি, লুৎফুন নেসা খান, এমপি,  পাবনা-২ এর আহমেদ ফিরোজ কবির , এমপি, অ্যাড. গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, এমপি, প্রিপ ট্রাস্টের উপপরিচালক শেফালী বেগম প্রমুখ।  
২৮ আগস্ট, ২০২৩

মতবিনিময় সভায় বক্তারা / যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে
যক্ষ্মা কারও একার সমস্যা নয়। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে একসঙ্গে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যক্ষ্মা নির্মূলে সংসদীয় ককাসবিষয়ক মতবিনিময় সভায় এর সদস্যরা এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার বিকেলে পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবে যক্ষ্মা নির্মূলে সংসদীয় ককাসবিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু। তিনি বলেন, দেশে পৌনে চার লাখ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করলে রোগটি নির্মূল করা সম্ভব। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফজালুর রহমান বলেন, দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৭৫ হাজার। প্রতিবছর যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে ১০০ কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়। যক্ষ্মা নির্মূলে সংসদীয় ককাসের চেয়ারম্যান ডা. মো. হাবিবে মিল্লাতের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন যক্ষ্মা নির্মূলে সংসদীয় ককাসের সিনিয়র উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সদস্য সচিব আরমা দত্ত, ফখরুল ইমাম এমপি, পঙ্কজ দেবনাথ এমপি, রওশন আরা মান্নান এমপি, লুৎফুন নেসা খান এমপি, ফেরদৌসী ইসলাম এমপি, শামীমা আক্তার খানম এমপি, কানিজ ফাতেমা আহমেদ এমপি, নার্গিস রহমান এমপি, বাসন্তী চাকমা এমপি, আদিবা আনজুম মিতা এমপি প্রমুখ।
০৬ আগস্ট, ২০২৩

দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৭৫ হাজার
যক্ষ্মা কারও একার সমস্যা নয়। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে একসঙ্গে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যক্ষ্মা নির্মূলে সংসদীয় ককাসবিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সদস্যবৃন্দরা।  আজ শনিবার বিকেলে পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবে যক্ষ্মা নির্মূলে সংসদীয় ককাসবিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি ও প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু। তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে যেভাবে আওয়াজ তোলা হয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সেভাবে আওয়াজ তোলা হয় না। অথচ দেশে পৌণে চার লাখ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করলে রোগটি নির্মূল করা সম্ভব।  যক্ষ্মা নির্মূলে সংসদীয় ককাসের সিনিয়র উপদেষ্টা ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক বলেন, বিনামূল্যে যক্ষ্মা পরীক্ষা করা ও ওষুধ পাওয়া যায়। সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে যক্ষ্মা নির্মূল বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এ জন্য তৃণমূল ও প্রান্তিক পর্যায়ে প্রচার বাড়াতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) প্রোগাম ম্যানেজার ডা. আফজালুর রহমান বলেন, দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৭৫ হাজার। এর মধ্যে ৩০ লাখ রোগীর কফ পরীক্ষা করা হয়। এসব রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। প্রতিবছর যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে ১০০ কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়। যক্ষ্মা নির্মূলে সংসদীয় ককাসের সদস্য সচিব আরমা দত্ত বলেন, যক্ষ্মা নিয়ে যারা গবেষণা ও কাজ করছেন তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরাও রয়েছি।  যক্ষ্মা নির্মূলে সংসদীয় ককাসের চেয়ারম্যান ডা. মো. হাবিবে মিল্লাতের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ময়মনসিংহ-৮ আসনের ফখরুল ইমাম, বরিশাল-৪ আসনের পঙ্কজ দেবনাথ, মহিলা আসন-৩৪৭ এর রওশন আরা মান্নান, লুৎফুন নেসা খান, ফেরদৌসী ইসলাম, অ্যাড. শামীমা আক্তার খানম, কানিজ ফাতেমা আহমেদ, নার্গিস রহমান, বাসন্তী চাকমা, আদিবা আনজুম মিতা প্রমুখ।
০৫ আগস্ট, ২০২৩
X