দেশে ফিরে কারাগারের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন তারা
মিয়ানমারের কারাগারে বন্দি থাকা ১৭৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরে এসেছেন। বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর দেড়টার দিকে মিয়ানমারের একটি জাহাজে করে তাদেরকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডাব্লিউটিএ ঘাটে নিয়ে আসা হয়।  দেশে ফিরে এসে কারাগারের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন তারা।  ফিরে আসা এসব বাংলাদেশিদের সিংহভাগই দালালের খপ্পরে পড়ে উন্নত জীবনের আশায় কেউ হেঁটে, আবার কেউ সাগর পথে মালয়েশিয়া যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মিয়ানমার বাহিনীর হাতে আটক হয়ে তাদের অবস্থান হয় কারাগারে।  এদিকে যে জাহাজে বাংলাদেশি বন্দিরা এসেছেন সেই জাহাজেই বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাবেন রাখাইনে চলমান সংঘাত হতে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ২৮৫ জন মিয়ানমার বিজিপি ও সেনা সদস্যরা। ফেরত আসা বাংলাদেশি নাগরিক উখিয়ার মনখালী গ্রামের বদিউল আলমের ছেলে সালা উদ্দিন ও একইগ্রামের শাহ আলমের ছেলে মো. ফারুখ জানান, মিয়ানমার কারাগারে তাদের ওপর চালান হতো নিয়মিত নির্যাতন। দিনে এক বেলা খাবার দেওয়া হতো, তাও আবার খাওয়ার অনুপযোগী। কোনো কথা বলা যায় না। বললেই নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হতো। এভাবেই অন্ধকারে কেটেছে তাদের দশটি বছর। এর আগে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে মিয়ানমারের সিটওয়ে বন্দর থেকে তাদের নিয়ে মিয়ানমারের একটি জাহাজ বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয়। জাহাজটি বুধবার সকালে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় পৌঁছায়। পরে ওই জাহাজ থেকে বাংলাদেশি জাহাজে করে কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর মোহনায় নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে পৌঁছালে ১০ জন করে দলবদ্ধভাবে নামিয়ে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্র মতে, মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা ১৭৩ জনের মাঝে ১২৯ জনের বাড়িই কক্সবাজারে। বাকিদের মাঝে ৩০ জন বান্দরবানের, ৭ জন রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ির। এছাড়াও নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার রয়েছে একজন করে।  ফেরত আসা ১৭৩ জনের মধ্যে ১৪৪ বাংলাদেশি বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে মিয়ানমারে বন্দি ছিলেন। তাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে আগেই। বাকি ২৯ জনের সাজার মেয়াদ শেষ না হলেও এই ফেরত পাঠানোর উদ্যোগের সময় তাদেরকে বিশেষ ক্ষমার আওতায় আনা হয়। বিকেল চারটা নাগাদ হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও যাদের স্বজনরা আসেনি তাদের জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। সেখান থেকেই তাদের ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। এর আগে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছিলেন, কারান্তরীণ বাংলাদেশিদের নিয়ে যে জাহাজটি দেশে পৌঁছাবে তাতে করেই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। 
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

জলদস্যুদের থেকে বেঁচে ফেরা সেই জাহাজ ক্যাপ্টেনের লোমহর্ষক বর্ণনা
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে ৩১ দিন জিম্মি থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক। আগামী ১৯ এপ্রিলের দিকে দুবাইয়ের বন্দরে পৌঁছবে। কীভাবে কাটল ৩১ দিন। সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) হোয়াটসঅ্যাপে গণমাধ্যমের কাছে জিম্মিদশার বর্ণনা দেন তিনি। ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, মার্চের ১২ তারিখ সকালে ২৩ বাংলাদেশি নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ নীল সাগরে ছুটে চলছিল। কেবিনে অফিসের কাজ সেরে সকাল সাড়ে ৯টায় জাহাজ পরিচালনা কক্ষ- ব্রিজ থেকে মাস্টারের চেয়ারে গিয়ে বসি। বসেই জাহাজের দায়িত্বে থাকা তৃতীয় কর্মকর্তাকে বলি, সব ঠিকঠাক আছে তো? মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে কয়লা বোঝাই করে সোমালিয়ার উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর হয়ে যাওয়ার পথে তৃতীয় কর্মকর্তা জানালেন, ‘স্যার, জাহাজের ডান পাশে অনেক দূরে একটি ফিশিং বোট দেখা যাচ্ছে।’ দৃশ্যমান সেই ফিশিং বোট থেকে ব্যবধান বাড়িয়ে দিতে জাহাজটি বাঁয়ে ঘুরিয়ে দিয়ে নৌযানটি আমরা পর্যবেক্ষণ শুরু করি। হঠাৎ করে দেখি, নৌযান থেকে একটি স্পিডবোট সাগরে ভাসানো হয়েছে। তখনই আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই, জলদস্যুরা আসছে। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে কয়লাবোঝাই থাকায় আমাদের গতি ছিল কম। ঘণ্টায় সাড়ে ১০ নটিক্যাল মাইল। স্পিডবোটটি কাছাকাছি চলে এলে ঢেউ সৃষ্টি করে এবং উচ্চচাপে পানি ছিটিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। আবার ডানে-বাঁয়ে জাহাজ ঘুরিয়ে স্পিডবোটটির গতি কমানোর চেষ্টা শুরু করি। এ সময় যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনে যোগাযোগ করি। সেখানে কেউ ফোন ধরেননি। সে সময় যোগাযোগ করে কাছাকাছি কোনো যুদ্ধজাহাজও পাইনি। জলদস্যুরা উঠে যাবে বুঝতে পেরে আমরা জাহাজের সুরক্ষিত কক্ষ- সিটাডেলে আশ্রয় নেওয়ার শেষ চেষ্টা করি। নাবিকের সিটাডেলে যাওয়ার নির্দেশ দিই। তবে চারজন জলদস্যু অস্বাভাবিক গতিতে ব্রিজে উঠে পড়তে সক্ষম হয়। তারা প্রথমে দ্বিতীয় কর্মকর্তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ‘মাস্টার মাস্টার’ বলে চিৎকার করে। আমাকে খুঁজতে থাকে। দ্বিতীয় কর্মকর্তা ভয় পেয়ে যান। আমি দ্রুত সেখানে চলে এসে হাত তুলি। তখনই জলদস্যুরা ‘অল ক্রু’ বলে চিৎকার করতে থাকে। এরপরই আমি সব নাবিককে ব্রিজে চলে আসার নির্দেশ দিই। নাবিকরা শুরুতে বেশ ভয় পেয়ে যান। জলদস্যুরা জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করার কথা বলে। ইঞ্জিন বন্ধ করার পর মাছ ধরার নৌযানটি আমাদের জাহাজের সঙ্গে বাঁধা হয়। ওই নৌযানে একজন পাকিস্তানি এবং বাকিরা ছিলেন ইরানের জেলে। নৌযানে থাকা সব জলদস্যু জাহাজে ওঠে। মোট ১২ জন সশস্ত্র জলদস্যু আমাদের জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আমাদের কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নিলেও ল্যাপটপ ও কয়েকটি মুঠোফোন আমরা লুকিয়ে রেখেছিলাম। এ সময় জলদস্যুরা আনন্দ উল্লাস করতে থাকে। ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর থেকে জলদস্যুদের নির্দেশনায় চলতে থাকে জাহাজটি। এবার তাদের নির্দেশে আমরা এমভি আবদুল্লাহর ইঞ্জিন চালু করি। সোমালিয়ার উপকূলের দিকে যাওয়ার নির্দেশনা দেয় জলদস্যুরা। সে সময় একজন জলদস্যু একটি নম্বরে যোগাযোগ করতে বলে। কল দেওয়ার পর ‘আহমেদ’ পরিচয় দিয়ে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘হাউ আর ইউ ক্যাপ্টেন এভরিথিং ইজ ওকে’ এরপরই জাহাজটি কীভাবে কোথায় নিতে হবে, তার পথনির্দেশনা দিয়ে দেয় জলদস্যুনেতা। সে অনুযায়ী জাহাজ চলতে থাকে। রোজার দ্বিতীয় দিনে ইফতারের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপারেশন আটলান্টার একটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহর পিছু নেয়। যুদ্ধজাহাজ থেকে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ভিএইচএফে জলদস্যুদের নির্দেশনা দেওয়া হয়, ‘তোমরা জাহাজ ছেড়ে যাও। না হলে অভিযান চালানো হবে।’ নির্দেশনায় কোনো কাজ হয়নি। যুদ্ধজাহাজ থেকে একটি হেলিকপ্টার আকাশে ওড়ানো হয়। একপর্যায়ে এমভি আবদুল্লাহর চারপাশে পানিতে হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করা হয়। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। যুদ্ধজাহাজ যাতে দ্রুত চলে যায়, তা বলার জন্য আমাকে জলদস্যুরা ভয় দেখায় অস্ত্র তাক করে। আমি ভিএইচএফে জানাই, ‘আমরা অস্ত্রের মুখে আছি। তোমরা দূরে চলে যাও। প্রায় আধা ঘণ্টা পর যুদ্ধজাহাজ দূরে চলে যায়। যুদ্ধজাহাজ পিছু নেওয়ায় দুই দফা নোঙর তুলে তৃতীয় দফায় সোমালিয়া উপকূলের জেফলের দিকে এমভি আবদুল্লাহকে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। তিনি বলেন, মোট ৩৫ জন জলদস্যু জাহাজে ওঠে। যুদ্ধজাহাজ পিছু নেওয়ায় জলদস্যুরা জাহাজে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসে। রকেট লঞ্চার, মেশিনগান, এম-সিক্সটিনসহ নানা রকমের অস্ত্র। মনে হয়েছে, যেন যুদ্ধক্ষেত্রে আছি। জলদস্যুদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার না করে উপায় নেই। ভালো ব্যবহার করায় তারা আমাদের কেবিনে থাকার সুযোগ দেয়। কবে মুক্তি পাব, মনে মনে শুধু সেই ভাবনা ভিড় করে। আমরা ১৬ জানুয়ারি জাহাজ নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। পথে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর হয়ে মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে কয়লা বোঝাই করেছিলাম। চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়ার আগে প্রায় ১৪ লাখ টাকার বাজার সদাইয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল জাহাজটির মালিকপক্ষ এসআর শিপিং (কেএসআরএম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান)। জাহাজে তিন মাসের খাবার ছিল। জলদস্যুরা জাহাজে দুম্বা নিয়ে আসত। গরম পানিতে সেদ্ধ করে লবণ ও কিছু মসলা মিশিয়ে তারা তা খেতো। এগুলো আমাদের জন্য খাওয়ার অযোগ্য ছিল। একপর্যায়ে তারা নিজেদের রান্না করার জন্য লোক নিয়ে আসে জাহাজে। আমরা ইফতারের সময় লেবুসহ নানা ধরনের শরবত পান করতাম। সেহরিতে ভাতের পাশাপাশি দুধ থাকত। জাহাজে পানি শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়ব—এমন আশঙ্কায় শুধু খাবার পানি সরবরাহ ঠিক রাখতাম আমরা। এদিকে, গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেখে জলদস্যুরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়। তাদের সন্দেহ হয়, নিশ্চয়ই নাবিকদের কাছে মুঠোফোন আছে। আহমেদ বলতে থাকে, ‘তোরা এই ছবি পাঠিয়েছিস’ পরে আমরা বলি, ‘মুঠোফোন নয়, ল্যাপটপ দিয়ে ছবি পাঠানো হয়েছে।’ পরে ল্যাপটপ কেড়ে নেয় জলদস্যুরা। জলদস্যুদের ভিডিও করার বর্ণনা দিয়ে মোহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, মুক্তি পাওয়ার দুই দিন আগে হঠাৎ আহমেদ এসে সবাইকে ডেকে নিয়ে দাঁড়াতে বলে। সে আমাদের ভিডিও করতে শুরু করে। তার কথা অনুযায়ী, আমি নাবিকদের নাম জিজ্ঞাসা করে পরিচয় করে দিই। শুনেছি, এই ভিডিও তারা কেএসআরএম গ্রুপের কাছে পাঠিয়েছে। আমরা যে সুস্থ আছি, তা দেখতে চেয়েছে কেএসআরএম গ্রুপ। আমাদের মনে তখন আশার সঞ্চার হয়। এর দুদিন পর আবার সব নাবিককে ডেকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখে জলদস্যুরা। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখি, ছোট আকারের একটি উড়োজাহাজ আসছে। অদূরে দুটি যুদ্ধজাহাজ। আমরা ভয় পেয়ে যাই। কারণ, তখন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ৬৫ জন জলদস্যু। তাদের কাছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র আছে। জলদস্যুদের নির্দেশে এমভি আবদুল্লাহর নোঙর তুলে পেছনের দিকে সরিয়ে নিতে থাকি। জাহাজ পেছনের দিকে সরিয়ে নেওয়া হতে থাকে। একপর্যায়ে দেখতে পাই, রাতে তীর থেকে জাহাজের দিকে আলো ফেলে ইশারা দেওয়া হচ্ছে। জলদস্যুদের নির্দেশে জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করা হয়। এ সময় পাঁচটি স্পিডবোটে করে সব জলদস্যু অস্ত্রসহ জাহাজ থেকে নেমে যায়। তখন সোমালিয়ার সময় ১৩ এপ্রিল রাত ১২টা ৮ মিনিট অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল প্রথম প্রহর। জলদস্যুরা নেমে যাওয়ার পর জাহাজটি ঘুরিয়ে সোমালিয়া উপকূল ত্যাগ করতে শুরু করি। সবাই পরিবার ও স্বজনদের কাছে মুক্তির বার্তা দিতে ধাকে। এ সময় সবার মধ্যে জীবন ফিরে পাওয়ার আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। রাতের বেলায় জাহাজ চলছে। দুই পাশে তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীতে থাকা চিকিৎসকেরা আমাদের সব নাবিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। স্প্যানিশ নৌবাহিনীর একজন নারী চিকিৎসক আমাকে বলেন, ‘সব নাবিক সুস্থ আছেন।’ তিনি বলেন, আমরা জলদস্যুদের হাত থেকে এত দ্রুত মুক্তি পাব তা কল্পনাও করিনি। সোমালিয়ার উপকূল থেকে জিম্মি জাহাজের এক মাসের মধ্যে মুক্তি পাওয়ার ঘটনার নজির খুব একটা নেই। জিম্মিদশার পর থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদর দপ্তর সার্বক্ষণিক আমাদের জাহাজের অবস্থানের ওপর নজর রেখেছে। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সব সময় আমাদের পাশেই ছিল। এমভি আব্দুল্লাহর বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবারও জাহাজটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ছিল। তবে বুধবার সেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অতিক্রম করবে। সে ক্ষেত্রে ২২ এপ্রিল দুপুরের মধ্যে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছাতে পারে। এই মুক্তির জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা সহযোগিতা না করলে মুক্তি সম্ভব হতো না বলে মনে করেন ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ।
১৭ এপ্রিল, ২০২৪

সহপাঠী ও প্রক্টরের বিরুদ্ধে লোমহর্ষক বর্ণনা অবন্তিকার মায়ের
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অবন্তিকা ফাইরুজা আত্মহত্যা করার পর বেড়িয়ে আসছে নানা তথ্য। অভিযুক্ত সহপাঠী রায়হান সিদ্দিক আম্মান ও সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম দ্বারা কী পরিমাণ হয়রানিমূলক নিপীড়নের স্বীকার হয়েছিলেন অবন্তিকা তার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন মা তাহমিনা বেগম।  গতকাল শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় দ্বীন ইসলাম ও রায়হান সিদ্দিক আম্মানের বিরুদ্ধে করা মামলায় এজহারে লোমহর্ষক বর্ণনা তুলে ধরেন অবন্তিকার মা তাহমিনা বেগম। এজাহারে অবন্তিকার মা উল্লেখ করেছেন, ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা (২৪) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিল। আমার মেয়ে মেধা তালিকা অনুসারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে সিট পায়। অবন্তিকা আমাকে জানায়, তার ক্লাসমেট রায়হান সিদ্দিক আম্মান বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে যৌন হয়রানিমূলক নিপীড়ন দেয় ও বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে জানানোর পরও তিনি আম্মানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো আম্মানের পক্ষ নিয়ে আমার মেয়েকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন। এজন্য আমার মেয়ে হোস্টেলে থাকাটা নিরাপদ মনে না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ছাত্রীদের মেসে থাকা শুরু করে। ‘কিন্তু তাতেও অভিযুক্ত দুজন ক্ষান্ত হননি। তারা অবন্তিকার কয়েকজন ক্লাসমেটের মাধ্যমে তার চলা ফেরার প্রতি নজর রাখতে শুরু করে। তাদের মাধ্যমেও আমার মেয়েকে বিভিন্ন মাধ্যমে মানসিক নিপীড়ন দিতে থাকে। এরই মধ্যে গত ১৪ মার্চ অবন্তিকা কুমিল্লার বাসায় চলে আসে। অন্যমনস্ক অবন্তিকা আমাকে জানায়, যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল ছেড়ে মেসে উঠেছিল সে সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। অর্থাৎ বিবাদী রায়হান সিদ্দিক আম্মান আগের চেয়ে আরও বেশি পরিমাণে আমার মেয়ের সঙ্গে যৌন হয়রানিমূলক কুরুচিপূর্ণ আচরণ করছে।’ তাহমিনা বেগম দাবি করেন, ‘সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম আম্মানের পক্ষ নিয়ে আমার মেয়েকে ৬ থেকে ৭ বার অফিসে ডেকে অপদস্থ করেন। মেয়ে কুমিল্লা চলে আসলেও তাকে খারাপ মেয়ে হিসেবে প্রচার করবে, যেন আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। এসব কারণে আমার মেয়ে কুমিল্লা নগরীর বাঁগিচাগাও বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে।’ কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, নিহত অবন্তিকার মা তাহমিনা বেগম বাদী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী রায়হান সিদ্দিক আম্মানকে আসামি করে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করেন। পুলিশ মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
১৭ মার্চ, ২০২৪

বাংলাদেশি জাহাজ জিম্মির লোমহর্ষক বর্ণনা
ভারত মহাসাগরে প্রায় ৫০ জলদস্যু বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জিম্মি করে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে রেখেছে। ভয় দেখাতে ছুড়ছে একের পর এক গুলি। এরই মধ্যে জাহাজের চিফ অফিসার মো. আবদুল্লাহ গোপনে মালিকের কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছে। ৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের সেই অডিও বার্তায় জিম্মিদশার পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছেন। দেশে পরিবারকে দেখেশুনে রাখার আকুতি জানিয়েছেন। মো. আবদুল্লাহ তার অডিও বার্তায় জানান, জাহাজটিতে খাবার পানি আছে অল্প পরিমাণ। যা দিয়ে আর ২০-২৫ দিন টিকে থাকা যাবে। এমনকি কার্গোগুলো একটু এদিক সেদিক হলেই অগ্নিকাণ্ডের মতো ভয়াবহ বিপদ আসতে পারে। সোমালিয়ান জলদস্যুরা জাহাজে ওঠার পর কার সঙ্গে কী আচরণ করেছে সেই বর্ণনাও দিয়েছেন তিনি। অডিও বার্তার শুরুতেই সালাম দিয়ে তার নাম বলেন। জানান, সাড়ে ১০টার সময় একটা হাইস্পিড বোট জাহাজের দিকে আসতে দেখে এলার্ম বাজানো হয়। সহায়তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেনি। এর মধ্যে জলদস্যু চলে আসে। জাহাজে উঠেই দস্যুরা ক্যাপ্টেন ও সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মি করে। এরপর সবাইকে একসঙ্গে করে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সেকেন্ড অফিসারকে হালকা মারধর করেছে তবে আর কারও গায়ে হাত তোলেনি তারা।  এর কয়েক মিনিটের মধ্যে ফিশিং বোট নিয়ে আরও জলদস্যু আসতে থাকে। সবার হাতেই প্রায় অস্ত্র ছিল। নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল। এ সময় তাদের বোটের তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশি জাহাজের পাম্প দিয়ে তেল নিয়ে নেয়। এরপর জাহাজের ইঞ্জিনও বন্ধ করে দেয় তারা। অডিও বার্তায় জানানো হয়, এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে কারও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জাহাজেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে সবাই ভয়ে আছে। জাহাজে থাকা সবার জন্য দোয়া চেয়েছেন। একই সঙ্গে দেশে পরিবারকে দেখে রাখার আকুতি জানান ওই কর্মকর্তা। তাদের সান্ত্বনা জানানোর কথাও বলেন।  তবে শোনা যাচ্ছে, জিম্মি দশায় থাকা নাবিকদের কাছে বিপুল অর্থ দাবি করা হচ্ছে। দ্রুত টাকা না দিলে মেরে ফেলার কথাও বলছে তারা।  আরেকটি কোম্পানির জাহাজে কর্মরত চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকার আরমান হোসেন বাবু নামের একজনের কাছে অডিওবার্তায় এক নাবিক (নাম জানা সম্ভব হয়নি) বলেছেন, ‘আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে ডাকাতরা (জলদস্যু)। আমি ওয়াশরুম থেকে ভয়েস দিচ্ছি। ওরা সাত-আটজন আছে। আমাদের ওদের ডেরায় নিয়ে যাবে। ওদের সবার কাছে গান (অস্ত্র) আছে।’ অডিওবার্তায় আরও বলা হয়, ‘আমরা মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাইয়ের পথে যাচ্ছিলাম। ওরা (জলদস্যু) দুই মাস আগে ইরানি একটি ফিশিং বোট আটক করেছিল। ওটা আমাদের জাহাজের সঙ্গে বর্তমানে বাঁধা আছে। ওটা থেকেই মূলত জলদস্যুরা আমাদের আক্রমণ করে। ওই ফিশিং বোটটা ওরা হয়তো ছেড়ে দেবে। ওই বোটের জন্য আমরা ডিজেল দিলাম। আমাদের নিয়ে ওরা হয়তো ওদের আস্তানায় চলে যাবে।’  
১৩ মার্চ, ২০২৪

রোহিঙ্গাদের লোমহর্ষক বর্ণনা শুনলেন আইসিসির প্রতিনিধিরা
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন এবং গণহত্যার ঘটনা জানতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ক্যাম্প-১/ডব্লিউ ও ক্যাম্প-১২ এলাকা পরিদর্শন করে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উখিয়া ক্যাম্পের জি/০২ ব্লকে রোহিঙ্গা আরাফাতের শেডে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত ১৫ থেকে ২০ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন। জানা যায়, রোহিঙ্গারা আইসিসির প্রতিনিধিদের কাছে মিয়ানমারে চলা হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। এরপর দুপুরে প্রতিনিধিদল ক্যাম্প-১২-এর সিআইসি অফিসের কনফারেন্স রুমে এনজিও ‘সেভ’-এর ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে বৈঠক করে। সংস্থাটির রোহিঙ্গা ভলান্টিয়াররা আইসিসির প্রতিনিধিদলের কাছে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন, নিপীড়নের একই চিত্র তুলে ধরেন। সংস্থাটির সংগৃহীত রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো বিভিন্ন নির্যাতন ও গণহত্যার তথ্য-উপাত্ত প্রতিনিধিদলের কাছে তুলে ধরা হয়। পরে এনজিও ‘ইপসা’র কুতুপালং অফিসে সংস্থার বাঙালি ও রোহিঙ্গা ভলান্টিয়ারের সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিধিদল। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আইসিসির প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করে। আইসিসির প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের বর্ণনা শুনে আবারও তদন্তে আসার কথা জানান। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে উল্লেখ করে রোহিঙ্গাদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আইসিসি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা স্থানীয়রা রোহিঙ্গা ইস্যু কীভাবে দেখছে এবং রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তাদের মনোভাব কী তা জানতে চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত এনজিওগুলোর অনেক কর্মকর্তা। প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা, কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের এক কর্মকর্তা ছিলেন। অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিনিধিদলটি কুতুপালং-১-পশ্চিম নম্বর ক্যাম্পে ১৫ জন ও বালুখালী ১২ নম্বর ক্যাম্পে ২০ রোহিঙ্গার সঙ্গে আলাপ করে তথ্য সংগ্রহ করেছে। আইসিসি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাপ করা রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মাস্টার জুবাইর জানান, প্রতিনিধিদলের সদস্যরা মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ, হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতনের ভয়াবহতা এবং আগুনে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার তথ্য নিয়েছেন। তথ্য দেওয়া রোহিঙ্গা নারী জামালিকা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে আমাদের ওপর নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছি। এর আগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্যাতন-নিপীড়নের তথ্যানুসন্ধানের জন্য গত বুধবার কক্সবাজার আসেন আইসিসির প্রতিনিধিরা। কক্সবাজারে পৌঁছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।
০৭ জুলাই, ২০২৩
X