মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন এবং গণহত্যার ঘটনা জানতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ক্যাম্প-১/ডব্লিউ ও ক্যাম্প-১২ এলাকা পরিদর্শন করে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উখিয়া ক্যাম্পের জি/০২ ব্লকে রোহিঙ্গা আরাফাতের শেডে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত ১৫ থেকে ২০ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন।
জানা যায়, রোহিঙ্গারা আইসিসির প্রতিনিধিদের কাছে মিয়ানমারে চলা হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। এরপর দুপুরে প্রতিনিধিদল ক্যাম্প-১২-এর
সিআইসি অফিসের কনফারেন্স রুমে এনজিও ‘সেভ’-এর ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে বৈঠক করে। সংস্থাটির রোহিঙ্গা ভলান্টিয়াররা আইসিসির প্রতিনিধিদলের কাছে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন, নিপীড়নের একই চিত্র তুলে ধরেন। সংস্থাটির সংগৃহীত রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো বিভিন্ন নির্যাতন ও গণহত্যার তথ্য-উপাত্ত প্রতিনিধিদলের কাছে তুলে ধরা হয়। পরে এনজিও ‘ইপসা’র কুতুপালং অফিসে সংস্থার বাঙালি ও রোহিঙ্গা ভলান্টিয়ারের সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিধিদল। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আইসিসির প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করে।
আইসিসির প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের বর্ণনা শুনে আবারও তদন্তে আসার কথা জানান। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে উল্লেখ করে রোহিঙ্গাদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আইসিসি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা স্থানীয়রা রোহিঙ্গা ইস্যু কীভাবে দেখছে এবং রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তাদের মনোভাব কী তা জানতে চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত এনজিওগুলোর অনেক কর্মকর্তা।
প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা, কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের এক কর্মকর্তা ছিলেন।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিনিধিদলটি কুতুপালং-১-পশ্চিম নম্বর ক্যাম্পে ১৫ জন ও বালুখালী ১২ নম্বর ক্যাম্পে ২০ রোহিঙ্গার সঙ্গে আলাপ করে তথ্য সংগ্রহ করেছে।
আইসিসি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাপ করা রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মাস্টার জুবাইর জানান, প্রতিনিধিদলের সদস্যরা মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ, হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতনের ভয়াবহতা এবং আগুনে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার তথ্য নিয়েছেন।
তথ্য দেওয়া রোহিঙ্গা নারী জামালিকা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে আমাদের ওপর নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছি।
এর আগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্যাতন-নিপীড়নের তথ্যানুসন্ধানের জন্য গত বুধবার কক্সবাজার আসেন আইসিসির প্রতিনিধিরা। কক্সবাজারে পৌঁছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।
মন্তব্য করুন