আমাজনের গহীন জঙ্গল থেকে ৪০ দিন পর উদ্ধারকৃত চার শিশু কথা বলতে শুরু করেছে। কীভাবে তারা এতদিন সাপ, জাগোয়ারের মতো হিংস্র প্রাণীদের সাথে লড়াই করে টিকে ছিল সেখানে, উঠে আসছে লোমহর্ষক সব বর্ণনা। উদ্ধারকৃত ৪ শিশুর মধ্যে সবচেয়ে বড় মেয়ে ১৩ বছর বয়সী লেসলি জানিয়েছে, জঙ্গলে বিমান দুর্ঘটনার ৪ দিন পর্যন্ত বেঁচে ছিল তার মা। মৃত্যুর আগে গুরুতর আহত অবস্থায়ও তাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন কীভাবে এমন প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে হয়।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বাবার কাছে জানিয়েছে, কি কি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের। সবচেয়ে বেশি চিন্তা ছিল, ১১ মাস বয়সী ছোট বোনকে নিয়ে।
বেঁচেফেরা শিশুদের বাবা মানুয়েল রানোক বলেন, বড় মেয়ে জানিয়েছে দুর্ঘটনার পরও ৪ দিন পর্যন্ত তাদের মা বেঁচে ছিলেন। তিনি ছিলেন মারাত্মক আহত। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের সেখান থেকে পালানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি বনের মধ্যে টিকে থাকার বিভিন্ন কলাকৌশলও শিখিয়ে দিয়েছিলেন সন্তানদের। তার পরামর্শ মেনেই জীবন বাঁচাতে এক সময় একটি গাছের তলায় আশ্রয় নিয়েছিল তারা। বাকি ৩ ভাই-বোনকে আগলে রেখেছিল বড় মেয়েই। মা ছাড়াও দাদির কাছ থেকে আগেই জানা ছিল অনেক কিছু। কোন গাছের পাতা দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করতে হয়, কোন গাছের ফল খাওয়া যায় এর সবই জানা ছিল বড় বোনের। সেই মূলত বাকি ৩ ভাইবোনকে আগলে রেখেছিল দিনের পর দিন। গহীন জঙ্গল থেকে কখনো ফিরতে পারবে এমন ধারণাও ছিল না তাদের।
এর আগে শিশুটির দাদা জানায়, বিমান দুর্ঘটনায় তাদের মায়ের মৃত্যুর পর আটা আর ফলমূল খেয়ে বেঁচে ছিল তারা। এদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে শিশুদের শারীরিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। তবে এখনো স্বাভাবিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে না তারা। আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।
গেল ১ মে কলম্বিয়ার আরারাকুয়ারা থেকে গুয়ারাভিয়ারে প্রদেশে যাওয়ার পথে অ্যামাজনে বিধ্বস্ত হয় ছোট আকারের যাত্রীবাহী একটি বিমান। এতে শিশুদের মা ও পাইলটসহ তিনজনের মৃত্যু হলেও বেঁচে যায় চার ভাইবোন। এ দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর ৯ জুন তাদের উদ্ধার করা হয় গভীর জঙ্গল থেকে। সাপ-জাগোয়ারের মতো হিংস্র প্রাণীদের সাথে লড়াই করে গহীন জঙ্গলে ছোট শিশুদের টিকে থাকাটাকে অলৌকিক বলছেন অনেকে।
মন্তব্য করুন