প্রথম দিনেই পশ্চিমবঙ্গে সংঘর্ষ
জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ভারতের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার প্রথম দফায় এ ভোট নেওয়া হয়। এ দফায় গতকাল দেশটির ২১টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মোট ১০২টি আসনে ভোট নেওয়া হয়। বেশিরভাগ স্থানে শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। গতকাল পশ্চিমবঙ্গে তিন আসনে প্রথম দফার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাপক সংঘর্ষের পরও সারা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই ভোট প্রদানের হার সবচেয়ে বেশি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ রাজ্যে ভোট প্রদানের হার ছিল ৭৭.৫৭ শতাংশ। আর সারা দেশে এ হার ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ। মোট সাত দফায় আগামী ১ জুন পর্যন্ত এই ভোট গ্রহণ চলবে। ৪ জুন ভোটের ফল ঘোষণা করা হবে। এদিকে ভোট শুরুর আগে দেশবাসীকে রেকর্ডসংখ্যক ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। খবর এনডিটিভি ও আনন্দবাজার অনলাইনের।
গতকাল প্রথম দফায় অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, রাজস্থান, সিকিম, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি আসনে ভোট নেওয়া হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর, লাক্ষাদ্বীপ, জম্মু ও কাশ্মীর এবং পুদুচেরিতেও ভোট নেওয়া হয়। শুক্রবার মোট ১৬ কোটি ৬০ লাখ ভোটার ভোট দেন। স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ভোটকেন্দ্র খোলা হয়। যদিও ভোটাররা তার আগে থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোর সামনে লাইন করে দাঁড়িয়ে যান। ভোটকেন্দ্রগুলো ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বয়স্ক ভোটারদের বাড়ি বাড়ি থেকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের তিনটি লোকসভা কেন্দ্র-আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে গতকাল প্রথম দফায় ভোট নেওয়া হয়। এর মধ্যে সকাল থেকে কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ির বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কোচবিহারের দিনহাটা, চান্দামারি, আলিপুরদুয়ারের তুফানগঞ্জের হরিহরহাট ও শীতলখুচির শালবাড়ি এলাকায় তৃণমূল ও বিজেপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া জলপাইগুড়ির ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকায় বিজেপির একটি বুথ অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আবার তুফানগঞ্জের তৃণমূলের নির্বাচন অফিসও পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। ভোটের আগের জনমত জরিপ অনুযায়ী, সহজ জয় পেয়ে তৃতীয় মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় আসতে চলেছে নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি। লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি এবার এককভাবে ৩৭০টি আসনে জয়লাভের প্রত্যাশা করছে। আর বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের লক্ষ্য মোট ৪০০টি আসনে জয়লাভ করা। গতবারের নির্বাচনে এনডিএ জোট ৩৫৩টি আসন পায়। তার আগের নির্বাচনে (২০১৪ সাল) বিজেপি ৩০৩ আসন পেয়েছিল। মোদিকে টেক্কা দিতে এবার কংগ্রেসের নেতৃত্বে ভারতের বিরোধীদলগুলো ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠন করেছে। তবে জোট গঠনের পর থেকে অন্তর্কলহের কারণেই তারা খবরের শিরোনাম বেশি হয়েছে।
এদিকে ভোট শুরুর ঠিক আগেই এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে পোস্ট করে দেশবাসীকে রেকর্ডসংখ্যক ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, মারাঠি ও অসমিয়া—মোট ছয় ভাষায় পোস্ট করেন তিনি। মোদি তার পোস্টে লেখেন, ‘ভোটারদের প্রতি আমার আবেদন রেকর্ডসংখ্যক ভোটদানের। বিশেষ করে তরুণ ও প্রথমবারের মতো ভোটদাতাদের আমি বিপুল সংখ্যায় ভোটদানের আহ্বান জানাই। সর্বোপরি, প্রতিটি ভোটের গুরুত্ব আছে আর প্রতিটি কণ্ঠস্বরই গুরুত্বপূর্ণ।’ অন্যদিকে ভোট গ্রহণ শুরু হতেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্যে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ভারতের গণতন্ত্র এবং পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ ঠিক করবে আপনার ভোট। তাই বেরিয়ে আসুন এবং গত ১০ বছরে দেশের আত্মায় যে ক্ষত লেগেছে, তাতে আপনার ভোটের মলম লাগিয়ে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করুন। ঘৃণাকে হারিয়ে দিন।’
মমতার দাবি ২০০ আসনও পাবে না বিজেপি: লোকসভা নির্বাচনের যে সমীক্ষাগুলোতে বিজেপিকে এগিয়ে রাখা হয়েছে, সেগুলোকে ভুয়া বলে উল্লেখ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘দেশে ২০০টি আসনও পাবে না বিজেপি। সব সমীক্ষা ভুয়া। লাখ লাখ টাকা ঢেলে সমীক্ষা করেছে। ওতে কান দেবেন না। মানুষের চোখ বলছে, বিজেপি জিতবে না।’
২০ এপ্রিল, ২০২৪