বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে (শজিমেক) ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পড়ার টেবিল দখলকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ৮জন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করেছেন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। বুধবার (১ মে) রাত ১০টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষকালে কলেজ ছাত্রাবাসের সাতটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ঘটনা খতিয়ে দেখতে কলেজ কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
শজিমেক শিক্ষার্থীরা জানান, তৃতীয় বর্ষের (৩১তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ফুয়াদ হোসেনের সঙ্গে গত মঙ্গলবার একটি পড়ার টেবিল দখলকে কেন্দ্র করে একই ব্যাচের আলী হাসানের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জেরে বুধবার রাত ১০টার দিকে ফুয়াদ ও আলী হাসানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রেজাউল আলম জুয়েল পুলিশ সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।
এ সময় অধ্যক্ষ ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। সে সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্মসম্পাদক মিনহাজুলসহ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। রাত সাড়ে ১১টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ শজিমেকে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
পরে অধ্যক্ষের নির্দেশে আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে আলী হাসান, সীমান্ত, ইসলাম, অর্পণ নিলয়, রিদওয়ান হক, তালহা, নাদিম ও আরিফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, সংঘর্ষে আলী হাসানের পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মেহেদী হাসান, যুগ্মসম্পাদক আশরাফুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম। তারা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে ফুয়াদের পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান বর্তমান কমিটির সহসভাপতি অর্ঘ্য রায়, তানভির আহমেদ সাকি, যুগ্মসম্পাদক তোফায়েল তুষার ও ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন। তারা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শৈশব রায়ের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
শজিমেক কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্মসম্পাদক আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বর্তমান সভাপতি শৈশব রায়ের অনুসারী ছাত্রলীগের একাংশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তারা কলেজের ছাত্রাবাসের পাঁচটি কক্ষের পড়ার টেবিল, ল্যাপটপ, ফ্রিজ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
সহসভাপতি অর্ঘ্য রায় দাবি করেন, ওই ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। হোস্টেলে একটি পড়ার টেবিল নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষ সংঘাতে জড়িয়েছে। কলেজ প্রশাসনের তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রেজাউল আলম জুয়েল বলেন, বুধবার রাতে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র সরকারকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শজিমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সংঘর্ষকালে যাদের আটক করা হয়েছিলো অধ্যক্ষের নির্দেশে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন