সূর্যমুখী আবাদে কৃষক এরশাদ মাহমুদের চমক
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া সুখবিলাস গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ। উচ্চশিক্ষিত এরশাদ মাহমুদ ইউরোপের উন্নত জীবনকে পেছনে ঠেলে ১৯৮৮ ইংরেজি থেকেই করে যাচ্ছেন নানা কৃষিজ ফল-ফসল, মাছ চাষ ও বিলুপ্ত প্রাণী গয়ালসহ গৃহপালিত পশুর খামার। তার এমন ব্যতিক্রমী কৃষি ও খামার গড়ার জন্য স্বর্ণপদকসহ অর্জন করেছেন একাধিক জাতীয় পুরস্কার। রাঙামাটি কিংবা বান্দরবান যাওয়ার পথেই রাঙ্গুনিয়ার সুখবিলাস গ্রামে বর্তমানে তার সূর্যমুখী আবাদ সবার দৃষ্টি কেড়েছে। যাত্রাপথে গাড়ি থামিয়ে সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে এবং দৃষ্টিনন্দন এই ফুলের বাগান দেখতে ভিড় করছেন পর্যটকরা। সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়ার সবচেয়ে বড় সূর্যমুখী বাগান গড়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ। তার এই আবাদ স্বপ্ন দেখাচ্ছে অন্যান্য কৃষকদেরও। উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের তিনটি স্পটে ৮০ শতাংশ বিস্তৃর্ণ কৃষি মাঠজুড়ে সূর্যমুখী আবাদ করেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই খামারি। সরকারের তেল ফসলের আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এবং অন্যান্য কৃষকদের উৎসাহিত করতেই মূলত গেল ৭/৮ বছর ধরে সূর্যমুখী ফুল চাষে মনোনিবেশ করেছেন বলে জানান তিনি। তার দেখাদেখিতে স্থানীয় অনেকেই এই চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে এবছর আবাদ করেছেন বলে জানা যায়। তিনি জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। তার সূর্যমুখী ফুলের আকার উপজেলার অন্যান্য এলাকায় আবাদকৃত ফুলের মধ্যে সবচেয়ে বড়। গেল কয়েক বছর ধরে সূর্যমুখী আবাদ করে নিজের পরিবারের প্রয়োজনীয় তেলের চাহিদা মিটছে। এবার তিনি চাহিদার চেয়েও বেশি পরিমাণ তেল পাবেন বলে আশা করেন। শুধু এরশাদ মাহমুদই নন, একইভাবে উপজেলার বিভিন্ন বিস্তৃর্ণ কৃষি মাঠজুড়ে আবাদ হয়েছে সূর্যমুখীর। জানা যায়, প্রথাগত চাষাবাদ ছেড়ে বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কৃষকরা। এতে সরিষাসহ তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গেল কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে সূর্যমুখীর আবাদ। এ বছরও বিস্তৃর্ণ কৃষি মাঠে চাষ হয়েছে সূর্যমুখীর। পাকা, আধা পাকা সূর্যমুখী ফুলে বিস্তীর্ণ জমি এখন হলুদ আকার ধারণ করেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন বিস্তির্ণ কৃষি মাঠে ১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর আবাদ হয়েছে। উপজেলায় ৫০ জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে এক কেজি করে বীজ এবং ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেয়া দেওয়া হয়েছে। এসব বীজে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। এর বাইরেও ব্যক্তি উদ্যোগেও বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে।  কৃষকরা জানান, সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উপাদন সম্ভব। প্রতি কেয়ারে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উপাদন হবে প্রতি কেয়ারে ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৩০০ টাকা। প্রতি কেয়ার জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নয়ন বড়ুয়া জানান, সূর্যমুখী ফুলের বীজ রোপণ থেকে শুরু করে পুনরায় বীজ সংগ্রহে ১১০ থেকে ১২০ দিন সময় লাগে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, উপজেলায় এবার সূর্যমুখীর আবাদ বেড়েছে। কৃষি অফিসের নানা প্রণোদনা কর্মসূচি এবং মাঠপর্যায়ে কৃষকদের উৎসাহিত করায় আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বড় বাগান গড়ে তুলেছেন পদুয়ার এরশাদ মাহমুদ। পতিত জমিকে আবাদ উপযোগী করে এই আবাদ করেছেন। তার মতো সবাই অনাবাদি জমিকে চাষ উপযোগী করে তেল ফসলের আবাদ করতে চাইলে কৃষি অফিস সার্বিক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে যাবে।
০১ মে, ২০২৪

শ্রীমঙ্গলে সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের মুখে হাসি
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সূর্যমুখী ফুল চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ বেড়েছে এ উপজেলায়।  সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের পশ্চিম লইয়ারকুল, উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাইল হাওর সংলগ্ন এলাকা এবং আশিদ্রোন ইউনিয়নের হরিনাকান্দি গ্রামে চাষ হয়েছে সূর্যমুখী ফুলের। কৃষকরা তাদের ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। সূর্যমুখী ফুল দেখতে প্রতিদিন আশপাশের এলাকা থেকে নানান বয়সি মানুষ ঘুরতে আসছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গলে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সরকারিভাবে সূর্যমুখী চাষ শুরু হয়। কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ রাজস্ব খাতের অর্থায়নে প্রশিক্ষণ ভাতা ও প্রণোদনা বাবদ সার ও বীজ দেওয়া হয়। এবার শ্রীমঙ্গলে ৫২ হেক্টর অর্থাৎ ১২৯ একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা সূর্যমুখী চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ দিতে হয়। দেড় ফুট অন্তর অন্তর একটি করে বীজ বপন করে। এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব দেড় ফুট। ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতি একর জমিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। এ ছাড়া সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে উৎপাদিত তেল কোলেস্টেরল মুক্ত ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে এ তেলের চাহিদাও বেশি। চলতি মৌসুমে শ্রীমঙ্গল উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ৩৭০ জন চাষিকে সূর্যমুখী চাষের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। উপজেলার পশ্চিম লইয়ারকুল এলাকার বাসিন্দা মো. খলিল মিয়া বলেন, গত বছরও আমি সূর্যমুখী চাষ করেছিলাম। ঝড়-তুফানে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় লোকসান হয়। এবার সাত শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। গত জানুয়ারি মাসে আমি চাষ শুরু করি। তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে আমাকে বীজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আমি ক্ষেতে ৩/৪ হাজার খরচ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। এই ক্ষেতে দেড়- দুই মণ বীজ সংংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারব। বাজারে বীজের দাম বাড়তি থাকলে লাভবান হওয়ার আশা করছি।  সূর্যমূখী চাষী আশিদ্রোন ইউনিয়নের মো. নুরুল হক বলেন, সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ও খৈল হয়। ফুলের ক্ষেতে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধুও সংগ্রহ করা যায়। এ ছাড়া শুকিয়ে যাওয়া গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখী বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যেই ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারি। অন্যান্য তেল বীজের তুলনায় বেশি তেল পাওয়া যায়। শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের স্বাবলম্বী করতেই সূর্যমুখী ফুল চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে।  আগামীতে সূর্যমুখীর চাষ অনেক বাড়বে।
২৩ মার্চ, ২০২৪

সূর্যমুখীর বাম্পার ফলনে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দিনাজপুরের চাষিদের
সকালে ঘুম থেকে উঠেই যেমন দেখা যায় সূর্য পূর্ব আকাশে জ্বলজ্বল করে উঁকি দিচ্ছে। ঠিক তখনই মনে হয় যেন সূর্যের দিকে তাকিয়ে উঁকি দিচ্ছে হাজার হাজার অন্য এক সূর্য। এ আর কিছুই নয়, এ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। এমনই অপরূপ চোখ ধাঁধানো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে চিরিরবন্দর বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ যেন সবুজের মাঝে সূর্যমুখী ফুলের অপরূপ দৃশ্যে যেন হলুদ বরণ সাজে সেজেছে প্রকৃতি। যতদূর চোখ যায়, সূর্যের দিকে মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী। আর এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।  সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। মাঠের পর মাঠ ফুটে থাকা সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে কৃষকের চোখে-মুখে স্বপ্ন পূরণের আশা দেখা যাচ্ছে। চিরিরবন্দর একটি কৃষিপ্রধান উপজেলা। প্রায় সারাটি বছরজুড়ে এখানকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে থাকে কোনো না কোনো ফসল। আর তাই বর্তমানে এখানে অন্যান্য ফসলের সঙ্গে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী।  চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চিরিরবন্দর উপজেলার পুনট্টি, নসরতপুর, ফতেজংপুর, ইউসুবপুর, সাইতাড়া, আউলিয়া পুকুর ইউনিয়নসহ কমবেশি করে কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষ করছেন। এ বছর উচ্চ ফলনশীল আরডিএস ২৭৫, হাইসান-৩৩ ও বারি সূর্যমুখী-৩ জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে বীজ, সার ও ওষুধসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে। কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, গত বছর উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছিল। চলতি বছর ১৭ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। চাহিদা এবং ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন। অনেক পতিত জমিতে কৃষি চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যে কৃষকদের বাড়তি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশে সূর্যমুখী তেলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কোলেস্টরেলমুক্ত এ তেল উৎপাদনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও এর ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। চিরিরবন্দরে বিগত বছরগুলোর মতো এবারেও সূর্যমুখীর চাষাবাদ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অধিকতর লাভবান হওয়ার আশায় স্বপ্ন বুনছেন সূর্যমুখী চাষিরা। সূর্যমুখী একটি অতি লাভজনক ফসল, এবারে সূর্যমুখীর ভালো ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ভালো ফলন এবং লাভবান হওয়ার আশাবাদ চাষিদের। সূর্যমুখী ক্ষেত ঘুরে দেখতে এসে মো. আরাফাত উল মোমিন  বলেন, সূর্যমুখী হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে তাই বন্ধুদের সঙ্গে একটু দেখতে ও ছবি তুলতে আসলাম। এখানে এসে সূর্যমুখী ক্ষেত ঘুরে দেখতে ও ছবি তুলতে পেরে অনেক ভালো লেগেছে।   উপজেলার পুনটি ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের কৃষক সাবিরুল ইসলাম বলেন, গত বছর উপসহকারী ওবায়দুল্লাহ কথা মতো সূর্যমুখীর চাষ করে সফল হয়েছি। তাই এ বছরও সূর্যমুখীর চাষ করেছি। ফলন অনেক ভালো। আশা করছি, গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি লাভবান হতে পারব।  কামরুজ্জামান বলেন, আমার সূর্যমুখী ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি লাভবান হতে পারব। কৃষকের জমিতে এখন হাসি ফুটিয়েছে সূর্যমুখী। চিরিরবন্দর উপজেলায় ১৭ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের বাগানের মালিক হাজী আমির হোসেন, আব্দুস সালাম, বাবুল আর্মি ও আবু নাসের জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের অনুপ্রেরণা থেকেই এই এলাকায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু। কৃষকরা আরও জানান, সরকারিভাবে কৃষকদের মাঝে সূর্যমুখী ফুলের বীজ, সার ও ওষুধ দিয়েছেন। ফলন ভালো হওয়ার প্রত্যাশা করছি। ফলনের ন্যায্যমূল্য পেলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে এবং আমাদের মতো আরও কৃষক সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হবেন। চিরিরবন্দর উপজেলায় সরকারি প্রণোদনায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করার জন্য কৃষকদের বীজ, সার ও প্রয়োজনীয় কীটনাশক দেওয়া হয়েছে। এ বছরে উপজেলায় ব্যাপক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করা হয়েছে। আগামী বছর আরও ব্যাপক আকারে সূর্যমুখী ফুলের চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে এবং কৃষকরা যেন ন্যায্যমূল্য পায়, সে দিকটি নিশ্চিত করা হবে। আরও জানান, আমাদের ভোজ্যতেল বেশিরভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, দেশে যদি এই সূর্যমুখী প্রকল্প সফলতা পায় তা হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে এই তেল বিদেশে রপ্তানি করতে পারব বলে আশা করছি।
২০ মার্চ, ২০২৪

সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সূর্যমুখী
হলুদের আভায় ছেয়ে আছে বিস্তৃত সূর্যমুখীর বাগান। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নজরকাড়া এক হলুদ আঙিনা। আর এ আঙিনায় হাসিতে নিজেদের ভালো কিছু সময় কাটাতে এখানে ছুটে আসেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। বর্তমানে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার কৃষি জমিগুলো সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে মেতে উঠেছে। কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাই কৃষকরাও ঝুঁকেছেন সূর্যমুখী চাষে।  বালিয়াকান্দি সদর উপজেলার আমতলা বাজার পূর্বমৌকুরি গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মনির শেখ (৩৫)। তিনি জানান, আগে জমিতে ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসলের চাষ করতেন। এ বছর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে সূর্যমুখী ফুলের বীজ ও সার পেয়ে ১ বিঘা জমিতে তা আবাদ করি। আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। আর বীজ বিক্রির করেছি ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। তাই এ বছর কৃষি অফিস থেকে চাষিরা বেশি পরিমাণে বীজ সংগ্রহ করে ২ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করেছেন। তিনি আরও জানান, প্রতি বিঘা জমিতে বপনের জন্য ১ কেজি সূর্যমুখী বীজের প্রয়োজন হয় এবং খুবই কম মাত্রায় সার দিতে হয়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক কম শ্রমে অধিক ফলন পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দা সজল কুমার বলেন, বিকেল হলেই প্রায়ই আমি এ মাঠের দিকে আসি। কয়েকদিন ধরে একটু খেয়াল করলাম সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করাতে মাঠের সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে। আমার পাশাপাশি এখন আমার বন্ধুরা এ ফুলের বাগান দেখতে আসেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, সূর্যমুখীর বীজ থেকে উৎপাদিত তেল স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী, সেই সঙ্গে এই তেল বিভিন্ন অসুখে প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করে। ভবিষ্যতে আরও বেশি সূর্যমুখী ফুলের চাষ বাড়াতে কৃষকদের বীজ ও সার সহায়তার পাশাপাশি ফলন বৃদ্ধি পেতে সব ধরনের সহায়তার কথা জানান তিনি। চলতি বছর তেল বীজ কৃষি প্রণোদনার আওতায় উপজেলার ৫ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রায় ১৫ হেক্টরে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে।
০৮ মার্চ, ২০২৪

দিনাজপুরে সাড়া ফেলেছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় তৃতীয়বারের মতো চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। সূর্যমুখী চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের চাষি ডা. তৌফিক এলাহী আনসারী। শুধু তিনিই নন, আরও অনেক কৃষক এবার সূর্যমুখীর ফুলের চাষবাদ করেছেন। তথ্য মতে, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে তৃতীয়বারের মতো উপজেলার পৌরসভাসহ কয়েকটি ইউনিয়নে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হচ্ছে। অনাবাদি জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। তাই এসব জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করে ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে দেখা যায়, গাছে গাছে ফুটেছে সূর্যমুখী ফুল। এসব ফুলেই স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা। বাগানগুলো সড়কের পাশে হওয়ায় দূর থেকে তাকালে যে কেউ আকৃষ্ট হতে বাধ্য। প্রকৃতি যেন হলুদ গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে।   এ বিষয়ে কৃষক ডা. তৌফিক এলাহী আনসারী বলেন, ১১ বিঘা জমিতে আরডিএস-২৭৫ জাতের সূর্যমুখীর বীজ লাগিয়েছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সূর্যমুখীর চাষ শুরু করি। এখন ফলন দেখে আমি অনেক খুশি।  তিনি আরও বলেন, প্রতিদিনই অনেক দূর-দূরান্ত থেকে বাগান দেখার জন্য দর্শনার্থীরা আসেন। তারা ছবি তুলে আবার ফেসবুকে আপলোডও দিচ্ছেন। যা দেখে আমার অনেক ভালো লাগে। আরেক কৃষক মনি আরা বলেন, আমি ৫ বিঘা জমিতে আরডিএস-২৭৫ জাতের সূর্যমুখীর বীজ লাগিয়েছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ও দিক নির্দেশনায় সূর্যমুখী চাষ শুরু করছি। এ মৌসুমে জমি থেকে (প্রায়) ২৪ মণের মতো বীজ পাব।   উপজেলার ফকির পাড়ার কৃষক জাকির হোসেন, কৃষানী মমতাজ বেগম, মির্জাপুরের মোজাম্মেল, জাহিদুল, ভগবতীপুরের হুয়ায়ুন করিব, চকহরিদাশ পুরের পিয়ারা বানুসহ অনেককেই সূর্যমুখী চাষ করছেন তিন বছর ধরে। উপজেলার কৃষিবিদ ও কর্মকর্তা ফিরোজ আহম্মেদ কালবেলাকে বলেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষে খরচ কম। সূর্যমুখী ফুলের বীজ নভেম্বর মাসের দিকে রোপণ করতে হয়। বীজ রোপণের তিন থেকে চার দিনের মধ্যে চারা গজায়। এবার এই মৌসুমে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ১৩৫ জন কৃষককে বিরামপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এতে দিওর, জোতবানী ও বিনাইল ও খানপুর ইউনিয়নে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হচ্ছে। এ ছাড়াও দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করতে এবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। কৃষকরা সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হবেন বলে আশা করছি। এ বছর প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী তেলবীজের আবাদ হয়েছে।
০৬ মার্চ, ২০২৪

সূর্যমুখী চাষে তাক লাগালেন দুই ভাই
আলিম পরীক্ষা দিয়ে হাতে কোনো কাজ না থাকায় জেলার ত্রিশাল উপজেলার সদর ইউনিয়নের সতেরপাড়া গ্রামের শিক্ষার্থী মো. রাজীব হাসান (২০) কোচিং শিক্ষকের পরামর্শে ছোট ভাই দাখিল পরীক্ষার্থী রেজাউল করিমকে (১৮) সঙ্গে নিয়ে ২০ শতক জমিতে শুরু করেন সূর্যমুখী ফুলের চাষ। জীবনের প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে সফলতা পায় এ দুই ভাই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরিষা ও গম চাষের পাশাপাশি বিকল্প ফসল হিসেবে সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন ত্রিশালের কৃষকরা। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে উপজেলায় সূর্যমুখীর বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় সূর্যমুখী থেকে লাভবান হওয়ার আশা করছেন কৃষকরা। কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে চাষ করা এই ফসলের বাণিজ্যিক ব্যবহার সম্পর্কে এখনো অজ্ঞ তরুণ চাষিরা। এক্ষেত্রে ফসল বিক্রি ও মাড়াইয়ে কৃষি অফিসের সহযোগিতা আশা করছেন তারা। সূত্র জানায়, ভোজ্যতেল হিসেবে সয়াবিনের একক আধিপত্যের বাজারে। বিকল্প তেল উৎপাদনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষকরা। সেই সঙ্গে সয়াবিন তেলের তুলনায় কম কোলেস্টেরল এবং সহজেই চাষ উপযোগী হওয়ায় সূর্যমুখী আবাদ অনেকটাই লাভজনক। তাছাড়া মাঠে আবাদের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় ও পতিত জমিতেও চাষ করা যায় এই তেলবীজ জাতীয় ফসল। এই অবস্থায় সূর্যমুখী চাষ সম্প্রসারণের পাশাপাশি কৃষক পর্যায়ে তেল উৎপাদনের জন্য কলকারখানা স্থাপন করে সরকারকে পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এবার উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ৭ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। এতে কৃষি পুনর্বাসন প্রণোদনার আওতায় কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে এক কেজি করে আরডিএস জাতের সূর্যমুখীর বীজ বিতরণ করার পাশাপাশি হাতে-কলমে কৃষকদের বীজ আহরণ পদ্ধতি শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে।   সূর্যমুখী চাষি আলিম পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাজীব হাসান বলেন, আমি দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার পর বেশ কিছুদিন সময় পেয়েছিলাম তখন আমার কোচিং শিক্ষক আব্দুল্লাহ ফাহাদ স্যার আমাকে অনুপ্রেরণা দেয় সূর্যমুখী চাষ করতে। এরপর কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে আমি ও আমার ছোটভাই ২০ শতাংশ জমিতে এই ফুলের চাষ করেছি। এখন ফলন দেখে আমরা খুশি। রাজীব আরও জানায়, ২০ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষে খরচ হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। এখন ফুল পরিপক্ব হওয়ার পর এক ধরনের কালো বীজ তৈরি হবে। পরে তা রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে বিক্রি করতে হবে। কিন্তু এই বীজ কারা ক্রয় করে বা কোথায় বিক্রি করে তা আমার জানা নেই। এক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তারা আমাকে সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে শুনেছি তেল উৎপাদন এবং পাখির খাবারের জন্য এ বীজ ব্যবহার হয়। এ বিষয়ে উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিশাত মাহবুবা রহমান বলেন, আগে কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। আমাদের চেষ্টায় এখন তারা সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে বিনামূল্যে বীজ দেওয়া থেকে শুরু করে চাষাবাদে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাই সূর্যমুখী চাষ দিন দিন বাড়ছে।
০১ মার্চ, ২০২৪

খাগড়াছড়িতে সূর্যমুখী চাষে সম্ভাবনার হাতছানি
খাগড়াছড়ির রামগড়ে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুল চাষ হচ্ছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য বেশ উপযোগী। একইসঙ্গে রামগড় কৃষি অফিসের সহায়তায় সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পরীক্ষামূলকভাবে কৃষক প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৩ হেক্টর জমিতে এই ফুলের আবাদ করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নাকাপ, দাতারাম পাড়া, লাচারীপাড়া ও ফেনীরকুল চরসহ বিভিন্নস্থানে প্রাথমিকভাবে ২০ জন কৃষক ২০ বিঘা জমিতে কৃষক প্রণোদনা প্রদর্শনী প্রকল্পের আওতায় সূর্যমুখী ফুলের চাষের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে রামগড় উপজেলাতে প্রাথমিকভাবে মোট ৩ হেক্টর জমিতে এই ফুলেন পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়েছে। তবে সূর্যমুখী ফুল থেকে স্থানীয় পর্যায়ে তেল সোধনের ব্যবস্থা করা গেলে এটি চাষাবাদে কৃষকরা আরও উৎসাহী হবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। রামগড় পাহাড়াঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম ফয়সাল জানান, সূর্যমুখীর তেল মানবদেহের ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। এ তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চেয়ে একটু আলাদা। কোলেস্টেরলমুক্ত এ তেলে প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় এটি আমাদের শরীরের দুর্বলতা কমায় ও কার্যক্ষমতা বাড়ায়। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে এ ফুলের তেল দশগুণ বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। এ তেল হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগীর জন্যও নিরাপদ, ক্যানসার প্রতিরোধক ও মানসিক চাপ দূর করে। তেলটিতে থাকা ভিটামিন ই ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এককথায় সূর্যমুখী তেল মানবদেহের মহৌষধ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। জাপান প্রেরত প্রবাসী ক্যশাই মার্মা জানান, কৃষি অফিসের প্রণোদনা পেয়ে উৎসাহিত হয়ে এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি । এটি একদিকে মনোমুগ্ধকর অন্যদিকে লাভজনক ফসল। প্রথমবারই ভালো ফলন হয়েছে আগামীতে আরও বেশি পরিমাণে আবাদ করার পরিকল্পনা করেছি। লাচারীপাড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা চিং থোয়াই মগ জানান, ধান-পাট চাষে প্রচুর পরিশ্রম এবং খরচ হয় কিন্তু এটি চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। যে কারণে আগামীতে অনেক কৃষকই সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকবে। রামগড় উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শরিফ উল্যাহ বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষে খরচ কম। এতে সার-ওষুধ কম লাগে। তেমন পরিচর্যাও করতে হয় না। কৃষি অফিসের সার্বিক ত্বাবধানে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাশেদ চৌধুরী জানান, পুষ্টি চাহিদা পূরণে সূর্যমুখী তেলের জন্য বিদেশ থেকে এর বীজ আমদানি করতে হয়। দেশে এর আবাদ করা গেলে আর তা করা লাগবে না।  তিনি বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয়। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক বিঘা জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ও এর খৈল গরু ও মহিষের উৎকৃষ্টমানের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ঈশ্বরদীর প্রকৃতিতে আভা ছড়াচ্ছে রূপবান সূর্যমুখী
প্রকৃতিতে অসাধারণ রূপবান উদ্ভিদ সূর্যমুখী। এ ফুলের নান্দনিক হলদে আভায় মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। সূর্যমুখী হাসে, আর তার হাসিতে প্রকৃতি অপরূপ রূপে সাজে। তাই সূর্যমুখী শুধু ফুলই নয়, এটি একদিকে সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের সৌন্দর্য্যে তৃষ্ণা মেটায়, অন্যদিকে এটি একটি উৎকৃষ্ট মানের তেল বীজ ফল হিসেবে কাজ করে থাকে। পাবনার ঈশ্বরদীর মতো সূর্যমুখী ফুলের এত বড় আকারের বাগান আগে পাবনা জেলার আর কোথায় দেখা যায়নি। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মাঠে সিডের জন্য ৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। সূর্যমুখীর হলুদ আভায় ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা।  তাই দিনভর সূর্যমুখী বাগানে ভিড় করছে ফুলপ্রেমীরা। সূর্যমুখী দেখতে আসা দর্শনার্থী তমালিকা জাহান বলেন, শহরের ঘরবন্দি থেকে একটু মুক্ত হাওয়ায় বেড়াতে ও বাগান ভরা ফুল দেখতে এখানে আসা। তবে প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব সুন্দর লাগছে। তাই সবাই মিলে এ মনোরম দৃশ্য ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করছি। কৃষি অফিস জানায়, ঈশ্বরদীর মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কম পক্ষে আধা লিটার তেল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে সাত মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। আর বিঘায় তেল উৎপাদন হবে ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের বাজারমূল্য ২৫০-৩০০ টাকা। বিঘাতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে সরিষা ও সূর্যমুখী তেলের। তবে সমস্যা একাটাই টিয়া পাখি ও কাঠবিড়ালির উৎপাত। টিয়া ও কাঠবিড়ালি সূর্যমুখীর বীজ খেয়ে ফেলে। যে কারণে দিন-রাত পাহারা দিতে হয়। এজন্য কৃষক পর্যায়ে আগ্রহ কমছে।    দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের স্টেশন ইনচার্জ ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলতাব হোসেন।  তিনি বলেন, সূর্যমুখী বীজ থেকে আমরা উৎকৃষ্টমানের ভোজ্যতেল পেয়ে থাকি। দেশের মোট আবাদযোগ্য জমির ৭৫ ভাগে ধান চাষ হয়। আবাদযোগ্য জমির শতকরা তিনভাগ জমিতে তেল চাষ হয়। চাহিদামতো তেল জাতীয় শষ্য চাষ হচ্ছে না। চাহিদার মাত্র দশ ভাগ ভোজ্যতেল আমরা উৎপাদন করতে পারি। নব্বইভাগই বিদেশ হতে আমদানি হয়। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য আমরা সূর্যমুখীর প্রজনন বীজ উৎপাদনের প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ঈশ্বরদীতে পাঁচ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর প্রজনন বীজ উৎপাদনের জন্য চাষ করেছি। এখান থেকে উৎপাদিত বীজ আমরা বিএডিসিকে সরবরাহ করব। বিএডিসি তাদের কৃষি জমিতে এবং সংযুক্ত কৃষকদের মধ্যে এ বীজ বণ্টন করবে। বারি-৩ জাতের নতুন সূর্যমুখী ফুলের ব্যাপক আবাদের মাধ্যমে দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার জানান, সূর্যমুখী চাষের জন্য কৃষকদের বীজ ও সার প্রণোদোনা দেওয়া হয়েছে। সাত বিঘায় আবাদ হচ্ছে। সূর্যমুখী ফুলেকুর তেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এতে মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন-ই থাকায় মেয়েদের বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ ও ত্বকের উজ্জ্বলতার জন্য খুবই উপকারিতা রয়েছে। এজন্য জাতটি কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ঈশ্বরদীতে সূর্যমুখী চাষের বিস্তারে নানাভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি। তবে সমস্যা হলো টিয়া পাখি ও সূর্যমুখীর বীজ খেয়ে ফেলে। যেকারণে দিন-রাত পাহারা দিতে হয়। নাহলে উৎপাদন ব্যাপক কমে যায়। যেকারণে কৃষকরা তেমন আগ্রহ দেখায় না।
০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
X