মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সূর্যমুখী ফুল চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ বেড়েছে এ উপজেলায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের পশ্চিম লইয়ারকুল, উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাইল হাওর সংলগ্ন এলাকা এবং আশিদ্রোন ইউনিয়নের হরিনাকান্দি গ্রামে চাষ হয়েছে সূর্যমুখী ফুলের। কৃষকরা তাদের ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। সূর্যমুখী ফুল দেখতে প্রতিদিন আশপাশের এলাকা থেকে নানান বয়সি মানুষ ঘুরতে আসছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গলে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সরকারিভাবে সূর্যমুখী চাষ শুরু হয়। কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ রাজস্ব খাতের অর্থায়নে প্রশিক্ষণ ভাতা ও প্রণোদনা বাবদ সার ও বীজ দেওয়া হয়। এবার শ্রীমঙ্গলে ৫২ হেক্টর অর্থাৎ ১২৯ একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে।
অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা সূর্যমুখী চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ দিতে হয়। দেড় ফুট অন্তর অন্তর একটি করে বীজ বপন করে। এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব দেড় ফুট। ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বীজ উৎপাদন করা সম্ভব।
প্রতি একর জমিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। এ ছাড়া সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে উৎপাদিত তেল কোলেস্টেরল মুক্ত ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে এ তেলের চাহিদাও বেশি। চলতি মৌসুমে শ্রীমঙ্গল উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ৩৭০ জন চাষিকে সূর্যমুখী চাষের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে।
উপজেলার পশ্চিম লইয়ারকুল এলাকার বাসিন্দা মো. খলিল মিয়া বলেন, গত বছরও আমি সূর্যমুখী চাষ করেছিলাম। ঝড়-তুফানে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় লোকসান হয়। এবার সাত শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। গত জানুয়ারি মাসে আমি চাষ শুরু করি।
তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে আমাকে বীজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আমি ক্ষেতে ৩/৪ হাজার খরচ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। এই ক্ষেতে দেড়- দুই মণ বীজ সংংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারব। বাজারে বীজের দাম বাড়তি থাকলে লাভবান হওয়ার আশা করছি।
সূর্যমূখী চাষী আশিদ্রোন ইউনিয়নের মো. নুরুল হক বলেন, সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ও খৈল হয়। ফুলের ক্ষেতে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধুও সংগ্রহ করা যায়। এ ছাড়া শুকিয়ে যাওয়া গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখী বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যেই ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারি। অন্যান্য তেল বীজের তুলনায় বেশি তেল পাওয়া যায়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের স্বাবলম্বী করতেই সূর্যমুখী ফুল চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে। আগামীতে সূর্যমুখীর চাষ অনেক বাড়বে।
মন্তব্য করুন