কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৫, ০৩:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চব্বিশ ও একাত্তর বাংলাদেশের ইতিহাস পরিবর্তনকারী ঘটনা : ফরহাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ। ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ। ছবি : সংগৃহীত

চব্বিশ ও একাত্তর বাংলাদেশের ইতিহাস পরিবর্তনকারী ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ।

বুধবার (০৬ আগস্ট) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ কথা বলেন তিনি।

পোস্টে ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ লিখেন, ‘চব্বিশ দিয়ে একাত্তরকে মুছে ফেলা’র নয়া বয়ান ৫ আগস্টের পর সচেতনভাবেই বাজারে চাওর করা হয়েছে। চব্বিশ ও একাত্তর বাংলাদেশের ইতিহাস পরিবর্তনকারী ঘটনা। একাত্তর এই জাতিকে আলাদা মানচিত্র ও ভূমি দিয়েছে এবং হাসিনার ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের ভয়াল নির্যাতন থেকে জাতিকে মুক্তি দিয়েছে চব্বিশ। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন বাংলাদেশে চব্বিশ দিয়ে একাত্তরকে মুছে ফেলার রাজনীতি করেনি।

তিনি লিখেন, যারা বারবার দুটোকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর বয়ান তৈরি করেছে, তারাই একাত্তর ও চব্বিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার রাজনীতি করেছে। আমরা মনে করি, একটিকে অপরটির মুখোমুখি দাঁড় করানোর রাজনীতি মূলত চব্বিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং পতিত স্বৈরাচারের পক্ষে পরোক্ষ ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর অপচেষ্টা। হাসিনার গণহত্যাকে স্বাভাবিক (normalize) করে এবং প্রকারান্তরে দায়মুক্তি দিয়ে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনাই তাদের মিশন। রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব কিংবা হীন স্বার্থে এই আরোপিত বয়ানে সাবস্ক্রাইব করছে কতিপয় স্বঘোষিত ‘বাংলাদেশপন্থি’ ও ‘পোস্ট-আইডিওলোজি’ রাজনীতির কতিপয় ধারকগণ।

তিনি আরও লিখেন, চব্বিশে আওয়ামী লীগ ও শাহবাগের রাজনৈতিক করুণ পরাজয়ের পর বাজারে এই কল্পিত ন্যারেটিভ জিইয়ে রাখার মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তৈরি করে বিভাজনের পুরোনো অপচেষ্টা মূলত দিল্লির নয়া প্রকল্প। আর এই নয়া প্রকল্পকে সফল করতে উঠে পড়ে লেগেছে পতিত হাসিনাশাহীর প্রত্যক্ষ সহযোগী ও দিল্লির দোসররা।

ঢাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি লিখেন, নতুন করে হাসিনার রেখে যাওয়া পুরোনো বয়ানের সওদাগরি শুরু করেছে শাপলা-শাহবাগের এই মব সন্ত্রাসীরা। তাদের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা হলো মানুষের উপর হাসিনাবাদ চাপিয়ে দেওয়া। অর্থাৎ, মুক্তিযুদ্ধকে হাসিনার মতো করেই ধারণ করতে হবে এবং হাসিনার তৈরি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আলোকেই বাংলাদেশের রাজনীতি নির্মাণ করতে হবে। এটি গণহত্যাকারী হাসিনাকে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে স্বাভাবিক করার (normalize) এক ঘৃণ্য চক্রান্ত। তাই, তারা মুক্তিযুদ্ধের অপরাপর সকল ন্যারেটিভকে খারিজ করে। তাদের কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য বয়ান হলো হাসিনার বয়ান। মুজিব-বাকশাল ও হাসিনা-শাহবাগ প্রকল্প মুক্তিযুদ্ধকে একটি গোষ্ঠীর ইতিহাস বানিয়ে খোদ মুক্তিযুদ্ধকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

তিনি লিখেন, সুতরাং, যাদের বয়ান গণহত্যার সম্মতি উৎপাদন করে এবং খোদ মুক্তিযুদ্ধকেই প্রশ্নের সম্মুখীন করে, তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য দরকার। আমরা মুক্তিযুদ্ধের হাসিনাবাদী ও শাহবাগী বয়ানকে ইনকার করি। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে যে ঐতিহাসিক দুর্নীতি ও বেইনসাফি হয়েছে, আমরা তার মূলোৎপাটন করে মুক্তিযুদ্ধের গণআকাঙ্ক্ষার ইতিহাস বিনির্মাণ করবো।

এস এম ফরহাদ লিখেন, নতুন বাংলাদেশে এই নব্য হাসিনাবাদের স্লোগানধারীরাই নানা কায়দায় ছাত্রশিবিরকে ফ্যাসিবাদী যুক্তিকাঠামোয় সমস্যাজনক করার চক্রান্ত করে যাচ্ছে। দিল্লির এই এক্সটেনশন হাসিনার কায়দায় জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক সাদিক কায়েমের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তানি ট্যাগ। বাংলাদেশকে যারা ধারণ করে না, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন যারা চায় না, চব্বিশের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সংহতিকে যারা ধারণ করে না, বাংলাদেশের অগ্রগতিকে যারা দিল্লির থ্রেট মনে করে—তাদের একমাত্র লক্ষ্য যেকোনো উপায়ে দিল্লির অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করা।

তিনি লিখেন, আমরা মনে করি, একাত্তরের সকল যুদ্ধাপরাধের বিচার হওয়া উচিত ফেয়ার ট্রায়ালে। শাহবাগ কায়েম করে যারা মব সন্ত্রাস করে বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম বিচারিক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, হাসিনাকে ক্রসফায়ারের বৈধতা দিয়েছে, শাপলা গণহত্যার পক্ষে প্রত্যক্ষ সম্মতি উৎপাদন করেছে এবং চব্বিশে নির্বিচারে গুলি করে নাগরিক হত্যার লাইসেন্স দিয়েছে, তাদের বিচারও করতে হবে। এবং এই বিচারও এমনভাবে হতে হবে, যেখানে কোনো মৌলিক বিচারিক নীতিমালা ভঙ্গ করা হবে না।

বিচারব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি আরও লিখেন, হাসিনা ও শাহবাগের ফ্রেমওয়ার্কে কাউকে যুদ্ধাপরাধী বলা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে অবমাননা করার নামান্তর। যারা সুষ্ঠু বিচারে বিশ্বাস করে না, তারাই মব সন্ত্রাস করে এবং তারাই হাসিনাকে সকল অবৈধ কাজের বৈধতা দিয়েছে।

ফরহাদ লিখেন, জুলাই পরবর্তী সময়ে বাকশাল, মুজিববাদ ও শাহবাগকে মুক্তিযুদ্ধের সুরতে হাজির করে এর বিরোধিতা করাকে ‘রাজাকার’ বানানোর ন্যারেটিভ হাজির করেছে হাসিনা শাহীর প্রত্যক্ষ সহযোগীরা।

পরিশেষ তিনি লিখেন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শাহবাগী ফ্যাসিবাদ পর্যন্ত প্রতিটি গণহত্যার অবশ্যই যথাযথ বিচার হতে হবে। কিন্তু স্কাইপি কেলেঙ্কারি, আইনজীবীকে আইনঘরে নিয়ে যাওয়া, সাক্ষীকে গুম করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া কিংবা মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোনো ট্রায়াল হলে, সেটা অবশ্যই বিচারিক হত্যাকাণ্ড। আমরা বিচার ও নিয়মতান্ত্রিকতায় বিশ্বাসী। সুতরাং, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গণআকাঙ্ক্ষার ইনসাফের বাংলাদেশ বিনির্মাণে যেকোনো অবিচার ও মব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আজীবন জারি থাকবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইভ্যালির রাসেলের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড

সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ আটক ৪

ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার

আ.লীগ নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পড়ে ছিল ৯ রাউন্ড গুলির খোসা

উত্তরায় যুব-স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের অবস্থান

জবি ছাত্রী হলে ছাত্রদলের উপহার সামগ্রী বিতরণ

চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকার কফিল উদ্দিনের

বরগুনায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ

কক্সবাজারে মার্কেটে আগুন

৮ দলের কর্মসূচি নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পোস্ট

১০

চট্টগ্রামে বিজিবি মোতায়েন, সর্বোচ্চ সতর্কতায় পুলিশ

১১

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নদীগুলোর নাব্যতা পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নেবে : বাচ্চু

১২

নিক্সনের গানম্যানের নেতৃত্বে তৈরি হচ্ছিল পেট্রোল বোমা ও ককটেল : পুলিশ

১৩

দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন

১৪

অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর পাশে ছাত্রদল নেতা দয়াল

১৫

একজন উপদেষ্টা ধানমন্ডিতে ভোটার হতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন : ব্যারিস্টার অসীম

১৬

‘গণভোটের চেয়ে আলুচাষিদের ন্যায্যমূল্য পাওয়া বেশি প্রয়োজন’

১৭

খতমে নবুওয়তের মহাসম্মেলন সফলে ঢাকায় গণমিছিল

১৮

চলন্ত পিকআপ থেকে ককটেল বিস্ফোরণ

১৯

ইস্তানবুল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড মিরপুর শাখার উদ্বোধন

২০
X