সম্প্রতি সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মো. সারওয়ার আলম। তাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
শুক্রবার (০৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন তিনি। পোস্টে একাধিক ঘটনা তুলে ধরেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা লিখেন, চলে যাওয়ার দিন ঘটনাটা বলল সারওয়ার। র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অভিযান করে দেশজুড়ে প্রশংসা পেয়েছিল সে একসময়। কিন্তু এতে ক্ষুব্ধ হয়েছিল শক্তিশালী দুর্নীতিবাজ চক্র। তার প্রমোশন আটকে দেওয়া হয়, গুরুত্বহীন পদে বদলি করা হয় প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে। মনমরা হয়ে সারওয়ার বসে থাকত তার কক্ষে।
তিনি লিখেন, কোভিডের শেষদিক তখন। মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া আটকে আছে কর্মীদের। ভ্যাকসিনের জন্য মরিয়া হয়ে তারা ঘেরাও করে মন্ত্রণালয়। তাদের বিভিন্নভাবে আশ্বাস দেওয়া হয়। একপর্যায়ে সচিবও বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা নাছোড়বন্দা, কারও কথা বিশ্বাস করেন না তারা। শোরগোল ছাপিয়ে একটা কথা শোনা গেল অবশ্য। একজন বললে তার কথা বিশ্বাস করবেন প্রবাসগামী কর্মীরা। তিনি সারওয়ার!
তিনি উল্লেখ করেন, অবশেষে সারওয়ারকে নিচে আসতে বলা হলো। তাকে দেখে কর্মীরা শান্ত হলো। সারওয়ার জানাল কবে তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তার আশ্বাসে ম্যাজিকের মতো কাজ হলো। কর্মীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে চলে গেল। মন্ত্রী-সচিব হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সারওয়ার নিজ রুমে গিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাল। এ ঘটনা বলার সময় চোখ মুছলো সে। আমরাও তাই করলাম।
আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করে উপদেষ্টা লিখেন, সারওয়ারকে আমি প্রথম দেখি আলোচনার টেবিলে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব মাত্র নিয়েছি তখন। কন্সফারেন্স রুমে বিশাল লম্বা টেবিলে বসে আমি উত্তেজিতভাবে কি কি করতে হবে বলি। কারও মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। শুধু মাঝারি আকৃতির, আমারি মতো সাদামাটা একজন সারাক্ষণ উৎসাহ নিয়ে মতামত জানাতে থাকে। সিদ্ধান্ত নিলাম, সেই হবে আমার পিএস। অল্পদিনের মধ্যে বুঝতে পারি, এটাই হচ্ছে একসময়ের বিখ্যাত সারওয়ার।
তিনি লিখেন, তাকে তবু আমি বেশি স্নেহ করতে পারিনি, বকাবকিই বেশি করেছি। কাজ আগায় না এই হতাশা থাকে সারাক্ষণ। তার উপর যাকেই কিছু জিজ্ঞেস করি, দেখি সারওয়ারই আগ বাড়িয়ে বলে দেয় সব। আর ছিল আমার জন্য তার বাড়াবাড়ি রকমের যত্ন। এয়ারপোর্ট যাব, ফিরে আসব, কতবার তাকে বলি আপনাকে যেতে হবে না, যাবেই সে। বকাবকি বেশি করা হলে নিজেই মন খারাপ করতাম, দু-একবার বোধহয় সরি-ও বলেছিলাম তাকে।
তিনি আরও লিখেন, সরকারি অফিসাররা সাধারণত কাজ করেন যান্ত্রিকভাবে। বাড়তি কাজ বা সংস্কার নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই তাদের। তবু প্রধানত সারওয়ারের (এবং আরও দু-একজনের) সার্বক্ষণিক সহায়তা আর সমর্থন নিয়েই কয়েকটা বড় কাজ আমরা করতে পেরেছি। যেমন- প্রবাসী কর্মীদের ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজ করেছি, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক ভাইদের জন্য মাল্টিপল ভিসা করা গেছে, জাপান আর কোরিয়ার বাজার আরেকটু উন্মুক্ত হয়েছে, প্রবাসী লাউঞ্জ স্থাপনসহ প্রবাসী কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পোস্টে তিনি জানান, লক্ষ্য যা ছিল তার অর্ধেকের মতো মাত্র করেছি। এর মধ্যে একদিন এলো সারওয়ারের বদলির খবর। সিলেটে সাদাপাথর বিতর্কের পর তড়িঘড়ি করে তাকে সেখানে ডিসি নিয়োগ করা হয়েছে। অবাক হয়ে দেখলাম, আমার সিলেটি বন্ধু আর পরিচিত মহলে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে আটকাই আর কোন বিবেচনায়!
পোস্টে নিজের আক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন উপদেষ্টা। তিনি লিখেন, তাকে নিয়ে একটা দুঃখ থাকল অবশ্য। আমার সম্পর্কে নানা আজগুবি খবর আসে ফেসবুক আর ইউটিউবে। এগুলো অবশ্য অস্বাভাবিক না। আমার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্টরা আছে, উগ্রবাদীরা আছে, আছে ভিউ ব্যবসায়ীরা, আছে বটবাহিনী। কিন্তু আমাদের সারওয়ার...! রাজনীতির ধারেকাছে না থাকা আপাদমস্তক পেশাদার মানুষ সে। তবু তার বিরুদ্ধেও কালিমা লাগানোর অপচেষ্টা হয়েছে। আমি এর প্রতিকার করতে পারিনি পুরোপুরি। এই কষ্ট থাকবে আমার।
শেষে তিনি উল্লেখ করেন, সারওয়ার আপনাকে মিস করি। দোয়া করি, জুনিয়র অফিসাররা শিখুক আপনাকে দেখে। শুধু সিলেট না, সততা, সাহস আর কর্মনিষ্ঠার জন্য সারা দেশের মানুষ ভালোবাসে আপনাকে। আমাদের আশাবাদী থাকার এটাও একটা কারণ।
মন্তব্য করুন