ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও শিল্প নগরী আহমেদাবাদ। এর আকাশপথ দীর্ঘদিন ধরে দেশের সঙ্গে বিশ্বের সংযোগের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এই মহানগরের আকাশে দুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা স্মৃতিতে গভীর দাগ ফেলেছে। ১৯৮৮ সালের ফ্লাইট ১১৩ এবং এ বছরের এয়ার ইন্ডিয়া এআই ১৭১-এর মর্মান্তিক পতন শুধু সংখ্যা নয়; এ দুর্ঘটনা হাজারো মানুষের স্বপ্নভঙ্গ, অজস্র অশ্রু এবং অগণিত জীবনের অপূরণীয় ক্ষতির গল্প, যা ইতিহাসের পাতায় চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
১৯৮৮ : ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১১৩
১৯৮৮ সালের ১৯ জুলাই, ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-২০০আহমেদাবাদের টেবিলটপ রানওয়েতে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ১৩৩ জন যাত্রী ও ক্রু সকলেই প্রাণ হারান। দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ রানওয়ে, প্রতিকূল আবহাওয়া এবং পাইলটের ভুল সিদ্ধান্ত। এই ঘটনা ভারতের বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয়।
টেবিলটপ রানওয়ে বলতে এমন একটি রানওয়ে বোঝানো হয় যা পাহাড়, টিলা বা মালভূমির উপরে অবস্থিত, যার এক বা উভয় প্রান্তে খাড়া ঢাল বা গভীর খাদ থাকে। এর আকৃতির কারণে এটি ‘টেবিলটপ’ নামে পরিচিত।
২০২৫ : আধুনিক ড্রিমলাইনারের মর্মান্তিক পতন
৩৭ বছর পর, ২০২৫ সালের ১২ জুন, আধুনিক প্রযুক্তির বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার এআই ১৭১ আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে উড্ডয়ন করার পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মেঘানিনগরের আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। পাইলট ‘মেডে’ সংকেত পাঠানোর পর দ্রুতই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, হতাহতদের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে, যা ১৯৮৮ সালের দুর্ঘটনার চেয়ে অনেক বেশি। যদিও বিমানের প্রযুক্তি উন্নত, তবুও মানবিক ত্রুটি, আবহাওয়া এবং যান্ত্রিক গোলযোগের ঝুঁকি এখনও রয়ে গেছে।
দুটি দুর্ঘটনার পটভূমি ও সময় ভিন্ন হলেও, একই শহরের আকাশে শোকের ছায়া এখনও ঝলসে। ১৯৮৮ সালের দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ টেবিলটপ রানওয়ে, আর ২০২৫ সালের আধুনিক বিমানের বিধ্বস্ত হওয়া আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সত্ত্বেও আকাশপথের ঝুঁকি কাটিয়ে ওঠা কতটা জটিল ও দুরূহ।
মন্তব্য করুন