

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউক্রেনের তিন দিনের আলোচনা কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমঝোতা কর্মকর্তাদের ফোনালাপের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, খুবই গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার রাতভর ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলা চালায় রাশিয়া।
গতকাল রোববার ইউক্রেনের প্রধান শিল্প কেন্দ্র ক্রেমেনচুকের মেয়র বলেন, তাদের শহরটিতে বারবার ব্যাপক হামলা হয়েছে। তবে এখনো কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। হামলা হয়েছে রাশিয়ায়ও। মস্কো জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৭৭টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে। খবর বিবিসির।
যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে উভয়পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য শান্তি প্রস্তাব প্রস্তুত করতে ফ্লোরিডার মায়ামিতে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের আলোচনার মধ্যেই বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।
শুক্রবার থেকে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর ও অবকাঠামো লক্ষ্য করে বড় ধরনের বিমান হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার চালানো সবচেয়ে বড় বিমান হামলাগুলোর একটি এটি।
ওই আলোচনাকে গঠনমূলক বললেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, কোনো ধরনের গঠনমূলক অগ্রগতির বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে মস্কো সত্যিকারের শান্তির পথে এগোতে রাজি কি না, তার ওপর।
ইউক্রেনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ী দূত কিথ কেলগ বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তি চুক্তি এখন খুবই কাছাকাছি এবং তা মূলত দুটি বড় বিষয় সমাধানের ওপর নির্ভর করছে। যার একটি হলো দনবাস অঞ্চলের ভবিষ্যৎ এবং অন্যটি হলো জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ। তবে রাশিয়ার নেতারা এ প্রস্তাবের আমূল পরিবর্তন চেয়েছেন।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া হামলায় রাশিয়া মোট ৬৫৩টি ড্রোন ও ৫১টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রান্তে জ্বালানি স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো হামলার নিশানা করা হয়েছে।
আলোচনার ক্ষেত্রে এ অচলাবস্থা আবারও দেখিয়ে দিয়েছে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আর যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান আছে। কারণ, পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনী টানা অগ্রসর হচ্ছে।
এসব হামলায় অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। হামলায় ২৯টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহর ক্লিমেনকো নিশ্চিত করেছেন। হামলায় সাময়িকভাবে জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে পারমাণবিক চুল্লিগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বলেছে, মস্কোর অভিযানের শুরু থেকেই রুশ দখলে থাকা এ স্থাপনায় ছয়টি বন্ধ চুল্লিকে ঠান্ডা রাখতে এবং ভয়াবহ বিপর্যয় ঠেকাতে অবিরাম বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন।
যুদ্ধক্ষেত্রের সাম্প্রতিক বাস্তবতা এখন রাশিয়ার অনুকূলে। এ অবস্থায় জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে।
দোনেৎস্কের পোকরোভস্ক শহরের খুব কাছে পৌঁছে গেছে রুশ বাহিনী। পাশের শহর মিরনোহরাদকেও প্রায় চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে তারা।
রাশিয়া এখন কার্যত পুরো লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। খেরসন পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলীয় এলাকার বড় অংশও তাদের দখলে। এসব এলাকার যুদ্ধক্ষেত্রে মোটামুটি স্থিতিশীল অবস্থা থাকলেও রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে।
শুধু নভেম্বরেই রুশ সেনারা প্রায় ৫০৫ বর্গকিলোমিটার (১৯৫ বর্গমাইল) এলাকা দখল করেছেন, যা অক্টোবর মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আলোচনার অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ আজ লন্ডনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসও সেখানে থাকবেন।
মাখোঁ বলেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়ার ওপর আমাদের চাপ বজায় রাখতেই হবে।’
মন্তব্য করুন