

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে যাওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস বলেছে, তারা এ উপত্যকায় থাকা শেষ ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ শিগগির ফেরত দেবে। পাশাপাশি যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশের সুবিধার্থে তারা অস্ত্র সমর্পণ নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছেন। এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রোববার বলেছেন, দ্বিতীয় ধাপ শুরু করা কঠিন হবে, কিন্তু হয়তো এ মাসেই শুরু হতে পারে।
যদিও যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মধ্যে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। এতে এ পর্যন্ত ৩৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শর্ত ভঙ্গ করে এখনো সহায়তা প্রবেশ সীমিত করে রেখেছে তারা, সম্মতির চেয়ে অনেক কম পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহে অনুমতি দিচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি কি মেনেছে ইসরায়েল: পরিষ্কার উত্তর—ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি মানেনি। ১০ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ৫৯০ বারের বেশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে এবং ৩৬০-এর বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। দুই বছরের আগ্রাসনে গাজার মোট মৃতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা ২০ দফা পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই ধাপে ইসরায়েলের উচিত ছিল—হামলা বন্ধ করা, সেনা পিছিয়ে নেওয়া, পর্যাপ্ত সাহায্য ঢুকতে দেওয়া, বন্দিবিনিময় করা। কিন্তু ইসরায়েল তা করেনি। নেতানিয়াহু এখনো বলছেন, যুদ্ধ শেষ হয়নি এবং হামাসকে অস্ত্রহীন করতে হবে।
সেনা কি প্রত্যাহার হয়েছে: ইসরায়েল সেনা কিছুটা পিছিয়েছে, কিন্তু ‘হলুদ লাইন’ নামের সীমা প্রতিদিন আরও ভেতরে ঠেলে দিচ্ছে বলে হামাস অভিযোগ করেছে। এর ফলে মানুষ বারবার নতুন জায়গায় সরতে বাধ্য হচ্ছে এবং অনেকে সীমার কাছে গিয়ে নিহত হচ্ছে।
মানবিক সাহায্য কি ঢুকছে: সম্পূর্ণ অবরোধের কারণে গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ তৈরি হয়েছিল। যুদ্ধবিরতির পর কিছু সাহায্য প্রবেশ করেছে, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। যেসব পণ্য ঢুকছে তার বেশিরভাগই বাণিজ্যিক, মানবিক নয়। বর্তমানে ৯ হাজার ৩০০-এর বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।
ইসরায়েল কি সত্যিই যুদ্ধবিরতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: এটা খুবই অনিশ্চিত। ইসরায়েল আগেও একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙেছে। নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থানও খুব দুর্বল, তাই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের (বিশেষ করে ট্রাম্পের) ওপর নির্ভরশীল। ট্রাম্পের চাপ তিনি নিজের সরকারের ডানপন্থি অংশকে বোঝানোর জন্যও ব্যবহার করতে পারেন।
দ্বিতীয় ধাপে কী হবে: দ্বিতীয় ধাপে গাজার শাসন ব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার দৈনন্দিন প্রশাসন চালাবেন রাজনৈতিক দলহীন ‘টেকনোক্র্যাটরা’। তাদের তদারকি করবে আন্তর্জাতিক ‘বোর্ড অব পিস’। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে আন্তর্জাতিক বাহিনী। কিন্তু হামাস ও অন্য ফিলিস্তিনি দল এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে।
শেষ পর্যন্ত চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা কতটা: এখনো পরিষ্কার নয়। গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি অস্থির, আর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বও অনিশ্চিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক স্বার্থ, ট্রাম্পের অভিজ্ঞতার অভাব—সব মিলিয়ে কিছুই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন