চারপাশে আপনার গা ঘেঁষে সাঁতরে বেড়াচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। ভেসে যাচ্ছে জলজ প্রাণী। কানে বেজে চলেছে প্রিয় গানের সুর। এমন অদ্ভুত মায়াময় কি থাকতে পারে? পারে বৈকি! গান আর সমুদ্রের নীলচে পানি—দুটোই অসম্ভব পছন্দের? ভাবুন দেখি কেমন হতো যদি সেই অতল জলের তলায় বসেই উপভোগ করা যায় গান। সঙ্গে থাকবে বাদ্যযন্ত্রের ঝঙ্কার। এমন সুযোগ পেতে হলে ৯ জুলাই তারিখে থাকতে হবে ফ্লোরিডার কিস ন্যাশনাল মেরিন স্যানকচুয়ারিতে। সেখানে এদিন ঘটা করে পালন হয় লোয়ার কিস আন্ডারওয়াটার মিউজিক ফেস্টিভ্যাল। কদিন আগে পালিত হলো এ উৎসবের ৩৮তম আয়োজন।
প্রবালের জনপ্রিয়তা বাড়াতে এবং সেইসঙ্গে সামুদ্রিক প্রবাল প্রাচীর ও পরিবেশ সংরক্ষণের কথা সবাইকে ভালো করে জানান দিতেই দারুণ এ আয়োজন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
সমুদ্রে বাজানো মিউজিক সম্প্রচারের দায়িত্বে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় রেডিও স্টেশন ইউএস-১ ১০৪.১ এফএম। কীভাবে করা হয় এ আয়োজন? পানির নিচে যন্ত্রপাতি আর তারের সংযোগ নিয়ে যান বাদকরা। বিশাল সব স্পিকার থাকে ওপরে ভাসতে থাকা নৌকায়। সেখান থেকেই আবার সম্প্রচার হয় রেডিওতে।
সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এ আয়োজন। শত শত সংগীত ও সমুদ্রপ্রেমী মানুষ তখন ডুব দিয়ে দেখে আসে কনসার্টের ঝলক।
উৎসবের আগের দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে অংশগ্রহণকারীরা জড়ো হন। এদিন ভিড়টা থাকে প্রচুর। কর্মীরাও ব্যস্ত থাকেন আয়োজন নিয়ে।
এই মিউজিক ফেস্টিভ্যালে প্রাধান্য পায় সমুদ্র ও বাস্তুসংস্থান নিয়ে লেখা গানগুলো। বিশেষ করে জিমি ব্যুফের ‘ফিনস’ আর বিটলসের ‘ইয়োলো সাবমেরিন’ তো থাকবেই।
সামুদ্রিক পরিবেশকে খুব একটা বিরক্ত না করেও যে সমুদ্র উপভোগ করা যায়, সেটাও দেখায় এ উৎসব। দর্শক-শ্রোতাদের কনসার্টের মাধ্যমে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করে আয়োজকরা।
শেষ পর্যন্ত আপনি যদি এ মিউজিক ফেস্টিভ্যালে চলেই যান, তাহলে সমুদ্রের নিচে দু-একটা জলপরী দেখে ঘাবড়াবেন না মোটেও। কারণ এ কনসার্টে সমুদ্রের থিমেই কস্টিউম পরেন মিউজিশিয়ানরা। এ উৎসবের বেশিরভাগ বাদ্যযন্ত্রই স্থানীয় শিল্পী অগাস্ট পাওয়ার্সের বানানো। টিন আর কপার দিয়ে মাছ আকৃতির বাদ্যযন্ত্র বানাতে পারেন তিনি। আর সেগুলো নিয়েও পানিতে নেমে পড়ার সুযোগ পান অংশগ্রহণকারীরা।
ফ্লোরিডায় প্রবাল প্রাচীর আছে প্রচুর। সেগুলো সংরক্ষণের জন্য যে সচেতনতা প্রয়োজন, সেটা যে অপ্রতুল, সেটা একবাক্যে মানে কর্তৃপক্ষ। পরিবেশের সুরক্ষা নিয়ে সচেতনতা তৈরির এ উৎসব আয়োজনের সময় এমন স্থানটাই তাই বেছে নেওয়া হয়, যেখানে প্রবালের ওপর খারাপ প্রভাব পড়বে না।
নিজের ঘরে বসে গান যতটা স্পষ্ট শুনতে পারেন আপনি, আন্ডারওয়াটার মিউজিক ফেস্টিভ্যালে ব্যাপারটা মোটেও সেটা হবে না। তাতে কি! সমুদ্রতলে গানের ছিটেফোঁটা শোনারও যে অনুভূতি, সেটাইবা কম কীসে।
মন্তব্য করুন