জাফর আহেমেদ
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০২:৩২ এএম
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৯ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অনিয়মের কারণে বদলি হন বারবার

পুলিশের সেই শিবলী নোমান হাজার কোটির মালিক

পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম শিবলী নোমান। ছবি : সংগৃহীত
পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম শিবলী নোমান। ছবি : সংগৃহীত

এস এম শিবলী নোমান। পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার। বরাবরই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে তাকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করেননি সেখানেও। দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বনে গেছেন হাজার কোটি টাকার মালিক। গাজীপুর ১০০ বিঘা জমিতে মেসার্স এন এ এগ্রো, গোপালগঞ্জে ৪০০ বিঘা জমিতে সর্দার এগ্রো এবং রাজধানীর খিলক্ষেতে অটো হ্যাভেন নামে গাড়ির শোরুমের মালিক শিবলী নোমান। এ ছাড়া আছে ডুপ্লেক্সসহ একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট। তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকারও অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম শিবলী নোমান গাজীপুর ও নিজ এলাকা গোপালগঞ্জে সম্পত্তির পাহাড় গড়ে তুলেছেন। গোপালগঞ্জে ৪০০ বিঘা জমিতে সর্দার এগ্রো নামে একটি ফার্ম গড়ে তুলেছেন। এই ফার্মে কাজ করেন অর্ধ শতাধিক শ্রমিক। সেখানে ৫টি পুকুর আছে শিবলীর। শেওড়াবাড়ী এলাকায় অবস্থিত ফার্মের উত্তর পাশে প্রথম পুকুরের আয়তন ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ, দ্বিতীয়টির ৭১ দশমিক ১০ শতাংশ, তৃতীয়টির ৯৩ শতাংশ আর চতুর্থটির আয়তন ৬৬ শতাংশ । বিশালাকৃতির আরেকটি পুকুরের আয়তন ২ একর ৮৬ শতাংশ। এ ছাড়া ফার্মের দুপাশের জলাভূমিতে বিপুল পরিমাণ জায়গা কিনেছেন সাবেক এই অতিরিক্ত উপকমিশনার। এর মধ্যে উত্তর পাশে কেনা জলাভূমির আয়তন ৯ একর ৮৪ শতাংশ। আর দক্ষিণ পাশের আয়তন ১২ একর ৪০ শতাংশ ।

জানা গেছে, সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার অবসরে যাওয়ার আগে অবৈধ আয়ের টাকা বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি গাজীপুর মহানগরের ২২৭/১ পাজুলিয়া অঞ্চলে ১০০ বিঘা জমি কিনে সে জমিতে মেসার্স এন এ এগ্রো নামে একটি ফার্ম গড়ে তুলেছেন। রাজধানীর খিলক্ষেতে অটো হ্যাভেন নামের গাড়ির শোরুমের মালিক শিবলী নোমান। বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি গাড়ির শোরুমটি শিবলী নোমান নিজেই দেখাশোনা করেন। তবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের নামে। এ ছাড়া স্ত্রীর নামেও আছে অনেক সম্পদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলা নিয়ে বাণিজ্যে বেশ পটু ছিলেন শিবলী নোমান। টাকা দিলেই ছোট মামলাকে বড় করতে বিভিন্ন ধারা যুক্ত করে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করতেন। আবার টাকার বিনিময়ে মামলা থেকে নাম কেটে দিতেন অনেকের। প্রভাব খাটিয়ে চাকরিতে নিয়োগের সুপারিশ করতেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পুলিশে চাকরি এবং পদোন্নতির ব্যবস্থা করা ছিল তার মূল কাজ। বিভিন্ন পদে পদোন্নতির জন্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নিতেন। এ ছাড়া কনস্টেবল, এসআই নিয়োগে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন তিনি।

অভিযোগ আছে, ক্ষমতার অপব্যবহার শত বছরের পুরোনো বলাকইড় আজাহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম বদলে নিজের মা-বাবার নাম দেন। বিষয়টি প্রচারের জন্য আশপাশের গ্রামের লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ান।

শিবলী নোমানের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালানিদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তিনি রমনা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) থাকাকালে ২০১৪ সালে ১৩ মার্চ রামপুরা থানার পুলিশ ২৩৫টি সোনার বারসহ একটি গাড়ি আটক করে। পরে সেখান থেকে ১৬৫টি বার আত্মসাৎ করে বাকিগুলো উদ্ধার দেখানো হয়। এ ঘটনা জানাজানির পর রামপুরা থানার তিন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। থানার ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালাকে প্রত্যাহার করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, চোরাচালানিদের সঙ্গে বরাবরই নোমানের যোগাযোগ ছিল।

মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো পরিচালনায় সহায়তা দিতেন শিবলী নোমান। বিনিময়ে কোটি টাকা ঘুষ নিতেন। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় ক্লাবগুলোতে জুয়া ও ক্যাসিনো পরিচালনায় মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শিবলী নোমানের সম্পৃক্ততা পায় প্রশাসন। পরে তাকে মতিঝিল বিভাগ থেকে ডিবিতে বদলি করা হয়। এর ২৩ দিন পর পার্বত্য চট্টগ্রামের নবম আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়। সেখানে গিয়েও তিনি থেমে থাকেননি। আইনের রক্ষক হয়ে তিনি নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এমনকি মাদক বাণিজ্যেও জড়িয়ে পড়েন।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম শিবলী নোমান কালবেলাকে বলেন, ‘চাকরির তদবিরসহ কোনো ধরনের ঘুষ ও অনিয়মের সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম না। আমার কোনো অবৈধ সম্পত্তি নেই। গোপালগঞ্জে যেসব পুকুর ও সম্পত্তি আছে, তা আমার পূর্বপুরুষের। খিলক্ষেতে গাড়ির শোরুমে বন্ধুদের সঙ্গে আমার ছেলে গিয়ে আড্ডা দেয়; কিন্তু এটা আমাদের না।’

মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় দেশের বাইরে ছিলাম। মতিঝিলে ক্যাসিনো চালিয়েছে নেপালিরা। এসব তথ্য আমি ঊর্ধ্বতন স্যারদের দিয়েছিলাম।’

স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। উল্টো চোরাকারবারিদের ধরতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছি।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শুল্ক কার্যকর হলো আজ, কীভাবে সামলাবেন মোদি?

শিক্ষার্থীদের পুলিশের ধাওয়া, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

আবারও নিষিদ্ধ হতে পারে ভারতের ফুটবল

ডানা মেলেছে স্বপ্নের পাঁচপুকুরিয়া সেতু

সীমান্তে ১১ বাংলাদেশিকে বিএসএফের পুশইন

জেনেভা ক্যাম্পে সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান, মাদক-অস্ত্রসহ আটক ১১

অপর্ণা সেনের প্রেমে পড়ে বাংলা শিখেছিলেন কমল হাসান

সম্পর্ক গভীর করতে ভালোবাসা বোঝার পাঁচটি ভাষা জানুন

‘কেউ ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করলে বরদাশত করা হবে না’

ডাকসুর এক ভিপি প্রার্থী গ্রেপ্তার

১০

ঢাকায় পা রাখল নেদারল্যান্ডস ক্রিকেট দল

১১

যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলায় যুদ্ধজাহাজ ও ড্রোন মোতায়েন ভেনেজুয়েলার

১২

মেক্সিকো ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে : রাষ্ট্রদূত আনসারী

১৩

রাকসুর নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা

১৪

কখনো কোমরপানি, কখনো কোলে চড়ে স্কুলে যায় শত শিক্ষার্থী

১৫

সহকর্মীকে নিয়ে পরী মণির গুঞ্জন

১৬

বিপিএল মাতানো ক্রিকেটারকে ‘মুক্তি’ দিলেন আইপিএল খেলা ক্রিকেটার

১৭

ইরান ও পাক সেনাপ্রধানের ফোনালাপ, আলোচনায় ছিল যেসব বিষয়

১৮

বাচ্চা পটি করতে চাইছে না? জেনে নিন কী করবেন

১৯

সিলেটে পাথরকাণ্ডে এবার মাঠে নেমেছে সিআইডি

২০
X