‘ভয়ংকর সন্ত্রাসীরা অপহরণ করার পর জীবন নিয়ে দেশে ফিরতে পারব, এটা ভাবতেও পারিনি। গত ১৮ মাস অত্যন্ত বিপৎসংকুল পরিবেশের মধ্যে ছিলাম। মনে হয়েছিল, যে কোনো মুহূর্তে সন্ত্রাসীরা আমাকে হত্যা করবে।’ কথাগুলো বলছিলেন ইয়েমেনে আলকায়দার হাতে অপহরণের শিকার জাতিসংঘের কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) সুফিউল আনাম। সন্ত্রাসী সংগঠনটির হাত থেকে মুক্তি পেয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরেন তিনি।
এর আগে সুফিউল আনামের খোঁজে ইয়েমেন যায় পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। গত মঙ্গলবার তাকে উদ্ধার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আনা হয় দেশে।
ঢাকায় নেমে সাংবাদিকদের কাছে জিম্মিদশার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সুফিউল আনাম। কীভাবে অপহরণ হলেন, সে অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, দেড় বছর আগে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার সময় আমাকে অপহরণ করা হয়। ইয়েমেনের চারজন সহযোগী ছিলেন। অবর্ণনীয় দিন কেটেছে। প্রতিটি দিনে ছিল মৃত্যুর ভয়। ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। তা কেবল সিনেমায় দেখা যায়।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চল থেকে অপহরণের শিকার হন একেএম সুফিউল আনাম। এরপর থেকে কোনো খোঁজ মিলছিল না তার। সে সময় ধারণা করা হয়, অপহরণের পর তাকে হত্যা করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী। এর প্রায় সাত মাস পর গত ৭ সেপ্টেম্বর ওই কর্মকর্তার একটি ভিডিও প্রকাশ করে জঙ্গিগোষ্ঠীদের অনলাইন তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ। তাতে আলকায়দার দাবি-দাওয়া মেনে নিজেকে মুক্ত করতে সুফিউল আকুতি জানান জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে। উল্লেখ করেন নিজের দুর্দশা ও শারীরিক দুরবস্থার কথা। তাকে মুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে চিঠিও পাঠায় তার পরিবার।
তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা আমাদের পাহাড়ে ও মরুভূমিতে রেখেছিল। সারাক্ষণ আমার চোখ বাঁধা ছিল। তারা ১৮ বার আমার স্থান পরিবর্তন করে। এ সময় আমাকে ১০টি জায়গায় রেখেছিল। তবে ভাগ্য ভালো, তারা নির্যাতন করেনি। অপহরণকারীদের টাকা শেষ হয়ে গেলে ভালোভাবে খাবার দিত না বলেও জানান সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা।
তাদের কেন অপহরণ করা হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতিসংঘে কাজ করি বলে টার্গেট করেছিল বলে মনে হয়। তারা ভিডিও করেছিল তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে। নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু বলতে চাইছি না।
এ সময় উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান সুফিউল আনাম। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) কর্মকর্তাদের প্রতি। তিনি বলেন, তাদের এই দায়িত্বপূর্ণতা ভুলব না। সাবেক সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে দেশের প্রয়োজনে চ্যালেঞ্জ নেবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এনএসআইর পরিচালক ইমরুল মাহমুদ বলেন, স্যারকে উদ্ধার করার বিষয়টি ছিল দীর্ঘ প্রক্রিয়া। দেড় বছরের চেষ্টায় এ সফলতা এসেছে। অপহরণকারীরা ৩০ লাখ মার্কিন ডলার চেয়েছিল; কিন্তু কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয়নি।
এ সময় আরও ছিলেন এনএসআইর অতিরিক্ত পরিচালক বদরুল হাসান চৌধুরী ও উপপরিচালক বদরুল হাসান বিদ্যুৎ।
মন্তব্য করুন