বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, ০৭:১৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

করোনার ওমিক্রন প্রতিরোধে প্রয়োজন নতুন টিকা

সংক্রমণ বাড়ছে
করোনার ওমিক্রন প্রতিরোধে প্রয়োজন নতুন টিকা

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের (ধরন) দু-একটি সাব-ভ্যারিয়েন্টের (উপ-ধরন) সংক্রমণ বাড়ছে। বাংলাদেশেও নতুন একটি উপধরনের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। যে সংক্রমণ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর নতুন টিকা। বিশেষ করে যে টিকাগুলো ২০২৪-২৫ সালে উৎপাদিত হয়েছে। এমন তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও)। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, নতুন টিকাগুলো করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে বিশেষ কার্যকর। তবে নতুন টিকা না থাকলে পুরোনো টিকা নিয়েও এটি প্রতিরোধ করা যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা এর আগে করোনা টিকার বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেননি এবং যাদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে (যেমন—হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ইত্যাদি) তাদের টিকা নিতে হবে। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদেরও টিকা নিতে হবে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে প্রতিবার গর্ভধারণের পর টিকা গ্রহণ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশীদ বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, অন্তঃসত্ত্বা এবং যাদের শ্বাসতন্ত্রের রোগ রয়েছে তাদের টিকা নিতে হবে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সব সাব-ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে নতুন টিকা বিশেষ কার্যকর, তবে পুরোনো টিকাও রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের হাতে ১৭ লাখ টিকা মজুত রয়েছে। আমরা সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রদানের ব্যবস্থা করব।’

সংক্রমণ ঠেকাতে ১১ নির্দেশনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেছেন, যাদের শরীরে করোনা রোগের লক্ষণ দেখা দেবে তাদের পরীক্ষা করাতে হবে। তবে সবার পরীক্ষা করানোর দরকার নেই বলেও জানান তিনি। গতকাল বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত কিট মজুত রয়েছে কি না—জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বর্তমানে অধিদপ্তরের কাছে ২৮ হাজার র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিট এবং ১০ হাজার আরটিপিসিআর (রিয়েল টাইম পলিমার চেইন রিঅ্যাকশন) কিট রয়েছে। নতুন করে কিট সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শিগগির সেগুলো যুক্ত হবে বলেও জানান তিনি।

লিখিত বক্তব্যে মো. আবু জাফর বলেন, করোনাভাইরাসের কয়েকটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এরই মধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার প্রতিরোধে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কগুলোয় নজরদারি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদার করতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে ১১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। যেগুলোর মধ্যে জনসাধারণের জন্য করণীয়: ১. জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার ২. শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে নিয়মিত মাস্ক পরা ৩. হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা ৪. ব্যবহৃত টিস্যু নিরাপদ স্থানে ফেলা ৫. নিয়মিত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি বা স্যানিটাইজারে হাত ধোয়া ৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ-নাক-মুখ স্পর্শ না করা। ৭. আক্রান্তদের থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা।

সন্দেহভাজন রোগীদের জন্য পরামর্শ: ১. উপসর্গ থাকলে বাড়িতে বিশ্রামে থাকা ২. রোগীকে মাস্ক পরতে উৎসাহ দেওয়া ৩. সেবাদানকারীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা ৪. প্রয়োজনে আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) বা স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩)-এ যোগাযোগ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, সংক্রমণ রোধে সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আরটিপিসিআর ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা, টিকা সরবরাহ, চিকিৎসা নির্দেশিকা, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অক্সিজেন এবং আইসিইউ সুবিধাসহ বিশেষায়িত কভিড হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় পিপিই, কেএন-৯৫ মাস্ক, ফেস শিল্ডসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও মজুত রাখা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞের বক্তব্য: দেশে করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সি বলেন, ‘আমাদের দেশে কভিডের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটাকে ভ্যারিয়েন্ট অব মনিটরিং হিসেবে উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণ করছে। আক্রান্তদের মধ্যে যদি কারও কো-মর্বিডিটি থাকে, তাবে তারা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবেন। এখনই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের অবস্থা সৃষ্টি হয়নি।’

এক দিনে শনাক্ত আরও ১০ জন: দেশে ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ১০৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ জনে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের প্রত্যেকেই ঢাকা মহানগরী এলাকার বাসিন্দা। এর আগের দিন (১০ জুন) ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন দুজন। এতে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৮০ জনে। মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় এই হার ০৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চার জেলায় একদিনে ৪৩ জনকে পুশইন 

আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত কর্মীর মৃত্যু

করোনা-ডেঙ্গুর প্রকোপ / এইচএসসি পরীক্ষা পেছাচ্ছে না : বোর্ড চেয়ারম্যান

ইরানের জনগণকে বিদ্রোহ করার ডাক দিয়ে নেতানিয়াহুর বার্তা

আয়রন ডোম চুরমার, ইসরায়েলি সদর দপ্তর গুঁড়িয়ে দিল ইরান

একসঙ্গে ছয়টি বিসিএসের সময়সূচি ঘোষণা পিএসসির

সড়কে নিহত সেই ৫ বাসযাত্রীর পরিচয় মিলেছে

পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে পদক্ষেপের কথা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

বাবার মৃত্যুর ৭ দিন পর বাসচাপায় প্রাণ গেল ছেলের 

গোপনে ইসরায়েলকে ভয়ংকর অস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

১০

নেতানিয়াহু এখন কোথায়?

১১

ইরানের নতুন বিমানবাহিনী প্রধানের নাম ঘোষণা

১২

রেহাই পাবে না ইসরায়েল, চূড়ান্ত জবাব আসছে

১৩

যাত্রীর দ্বন্দ্ব মেটাতে গিয়ে লাঞ্ছিত স্টেশন মাস্টার

১৪

আষাঢ়ের প্রথম দিনেই বৃষ্টি নিয়ে সুখবর

১৫

বাংলাদেশের ৫ প্রতিষ্ঠানকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক

১৬

‘তাণ্ডব’ চালিয়ে লোকসানে সোহাগ সিনেমা হল  

১৭

এবার মার্কিন ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেবে ইরান

১৮

নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করল ইসরায়েল

১৯

ইসরায়েলের আরও এক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করল ইরান

২০
X