কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈছাআ) নতুন কমিটি গঠনের দুদিনের মাথায় সংগঠনটির সঙ্গে কার্যত সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছেন এর সদ্য সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। গত শুক্রবার মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। ওই পোস্টে উমামা লেখেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে আমার আনুষ্ঠানিক যাত্রা এখানেই শেষ হলো।’
তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটিকে সুবিধাবাদীরা ভেতর থেকে খেয়ে ফেলেছে। দলীয় লেজুড় ও প্রেসক্রিপশনের বাইরে এই ব্যানার স্বাধীনভাবে কাজ করলে অনেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ত। দিনের পর দিন এমন কোনো নোংরামি নেই, যা তার সঙ্গে করা হয়নি।
এই প্ল্যাটফর্মে কাজ না করার জন্য তার ওপর ‘চাপ সৃষ্টি করার’ অভিযোগ এনে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) নামক রাজনৈতিক দলটি গঠনের পর আমি জুলাইয়ের অসমাপ্ত কাজগুলো করার দায়বদ্ধতা থেকে এই ব্যানার নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু দলীয় লেজুড় ও প্রেসক্রিপশনের বাইরে এই ব্যানারটি স্বাধীনভাবে কাজ করলে অনেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ত। তাই আমার ওপর অনলাইন, অফলাইনে ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করা হয়, যাতে আমি এই ব্যানার নিয়ে কাজ না করি।’
নিজের সহযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তিনি লিখেছেন, ‘যে মানুষগুলোর সঙ্গে আমি পাশে দাঁড়িয়ে মিটিং করছি, মিছিল করছি, তারাই পরিকল্পিতভাবে জুনিয়রদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক প্রচার চালায়। মানুষ বাইরে যত ভালো সাজার চেষ্টা করুক, ভেতর থেকে কতটা ছোটলোক হতে পারে আমি হাড়ে হাড়ে টের পাই ওই সময়গুলোতে। এই কথিত সহযোদ্ধারা মানুষকে টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করে, প্রয়োজন শেষ হলে ছুড়ে ফেলতে এক মুহূর্তও লাগে না। আমি মার্চ-এপ্রিল মাসে এই প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি পোকার মতো ভেতর থেকে প্ল্যাটফর্মকে সুবিধাবাদীরা খেয়ে ফেলেছে।’
ফেসবুক পোস্টে উমামা দাবি করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কাজ করার কারণে তাকে অনলাইন ও অফলাইনে ‘ভয়াবহ চাপ এবং অপপ্রচারের’ মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘আমি যাদের পাশে দাঁড়িয়ে মিটিং-মিছিল করেছি, তারাই আমার বিরুদ্ধে জুনিয়রদের ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে স্মিয়ার ক্যাম্পেইন (কাউকে বদনাম করতে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার ছড়ানো) চালিয়েছে। আমি মার্চ-এপ্রিল মাসে এই প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, ভেতর থেকে পোকার মতো এটিকে খেয়ে ফেলেছে কিছু সুবিধাবাদী।’
উমামা অভিযোগ করেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এবং এসব নিয়ে তার আপত্তি থাকার পরও সংগঠন কর্ণপাত করেনি। এনসিপি গঠনের আগেই অনেক ‘অযাচিত ও ঢালাও’ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে নিজের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে উমামা বলেন, ‘ফেসবুক পেজের অ্যাকসেস আমার কাছে থাকার কথা থাকলেও তা আমাকে দেওয়া হয়নি। উল্টো মার্চ মাসে ওই পেজ থেকেই আমার বিরুদ্ধে পোস্ট করা হয়েছে।’
উমামা তার স্ট্যাটাসে জানান, তিনি শুরুতে কাউন্সিল ভোটে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘যারা সত্যিকারভাবে কাজ করতে চেয়েছিল, তারা অনেকেই প্রার্থী হতে পারেনি। ভোটার তালিকাও ছিল একতরফাভাবে একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারীদের দিয়ে গঠিত।’ তবে শেষ মুহূর্তে প্ল্যাটফর্মের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে একটিমাত্র ভোট দিয়ে আসেন তিনি।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর একজন অংশ না নিয়েও সদস্য পদে আসীন হওয়ায় গভীর হতাশা প্রকাশ করেন উমামা। তিনি লেখেন, ‘এসব দেখে আমি অত্যন্ত লজ্জিত। একই স্বেচ্ছাচারিতা, স্ট্যান্ডবাজি, ভাই-ব্রাদার কোরামের খেলা চলছে। এখন বোধ করি, এই প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’
উমামা তার ফেসবুক পোস্টে স্পষ্ট করে বলেন, ‘অভ্যুত্থানের কথা চিন্তা করে আমি এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সব ধরনের সমর্থন ও কাউন্সিলে দেওয়া ভোট প্রত্যাহার করছি।’ তিনি জানান, তার প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল অভ্যুত্থানের স্বপ্ন রক্ষা করা। কিন্তু বাস্তবে এসে সেটি পূর্ণ হয়নি।
একপর্যায়ে উমামা লেখেন, ‘যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে, আমার বিরুদ্ধে নোংরামি করেছে, অভ্যুত্থানকে বাজারদরে কেনাবেচা করেছে, তাদের আমি কখনো ক্ষমা করব না। রুহের ভেতর থেকে বদদোয়া দিচ্ছি।’
তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি সেই পথ বেছে নেননি। ‘অনেক বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, এত সন্তান এতিম হয়েছে, এসবকে আমি পলিটিক্যালি ক্যাশ করতে পারিনি,’ বলেন তিনি।
শেষে উমামা তার শুভানুধ্যায়ী ও তরুণদের উদ্দেশে লেখেন, ‘আমি পরামর্শ দেব, আপনারা সবাই যাতে পড়াশোনায় মনোযোগ দেন, কাজে মনোযোগ দেন। আমিও ভেঙে পড়ছি না, গুছিয়ে আনছি সবকিছু।’
মন্তব্য করুন