বিশাল ভারতবর্ষের তুলনায় বিশ্বকাপ ট্রফিটা খুব ছোট। কিন্তু ছোট্ট এই ট্রফি ঘিরে কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের আবর্তন ভারতবর্ষের চেয়েও বিশাল। দশ দেশ, দশ ভেন্যুতে ৪৬ দিন ধরে সেই স্বপ্নের আবর্তনে চরকির মতো ঘুরতে থাকবে, যার মধ্যে বাংলাদেশও আছে। শুধু আছে বললে কিছুই বলা হয় না। আজ থেকে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ জেতার আশা নিয়ে স্বপ্ন বুনছে তারা।
স্বপ্ন দেখতে সাহস লাগে। আবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন সফল করতে শুধু সাহস থাকলেই হয় না, দক্ষতাও লাগে। ভারতের মাটিতে পা রাখা বাংলাদেশ কি যথেষ্ট দক্ষ? ‘ক্যাপ্টেনস ডে’র সম্মিলনীতে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো হয়েছে। গত বিশ্বকাপের পর থেকে দেখবেন আমরা বাছাইপর্বে ৩ বা ৪ নম্বর দল ছিলাম পয়েন্টের হিসাবে। আমরা সত্যিই ভালো করেছি দল হিসেবে। এখন বিশ্বকাপে ভালো কিছু করে দেখানোর পালা। আমাদের দল প্রস্তুত। দেশ হয়তো গতবার যা করেছিলাম, তার চেয়ে ভালো কিছু আশা করছে।’ বিশ্বকাপ জয়ের কথা সরাসরি বলেননি সাকিব। কিন্তু গত বছর থেকেই দলের সদস্যরা স্বপ্নটা মনের কোণে আঁকতে শুরু করেন। মেহেদী হাসান মিরাজও বলেছেন সে কথা, ‘বাংলাদেশের বিশ্বকাপজয়ের সম্ভাবনা অনেক। আমার মনে হয়, সবাই ভালো ফর্মে আছে। ভালো ক্রিকেট খেলছে। অভিজ্ঞতা আছে। সব দিক থেকে আমাদের দল একটা প্যাকেজ। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের এ বছর অনেক সম্ভাবনা আছে বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার। আমাদের প্রথম লক্ষ্য, আমরা সেমিফাইনাল খেলতে চাই। তারপর আমাদের হাতে আর দুটি ম্যাচ থাকবে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। সেমিফাইনালে যখনই উঠতে পারব, তখন দুটি ম্যাচ জিতলে চ্যাম্পিয়ন। আমাদের দলের ভেতর সেই সম্ভাবনা আছে।’
অনেকে বলবেন সম্ভাবনা এক, বাস্তব ভিন্ন। যে কাঠ জ্বলেনি, তাকে আগুন বলার বোকামি কেউ করতে চাইবে না। তা ছাড়া বিশ্বকাপের লড়াই সহজ নয়। এখানে যারা খেলবেন, তারা উৎকর্ষের চূড়ায় বসে আছেন। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের ১০ জন কমবেশি ব্যাটিং করতে জানেন। আদিল রশিদেরও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০টি সেঞ্চুরি আছে। গতবারের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডও দারুণ দল।
সব পজিশনে এত বিকল্প যে, নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন না খেললেও পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ে না। টিম সাউদির ইনজুরি হলে ট্রেন্ট বোল্ট ব্যাটন তুলে নেন। অস্ট্রেলিয়াও বড় টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দল। ক্যাঙ্গারুর লেজের ঝাপটানিতেও কত টুর্নামেন্টে কত দেশের স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়েছে। পাকিস্তান স্বপ্নের পেস বোলিং নিয়ে বিশ্বকাপ খেলছে। শাহিন শাহ আফ্রিদির একটা আগুনে স্পেলই প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। চোকার দক্ষিণ আফ্রিকাও নাকি এবার ভালো দল। সর্বোপরি ভারত আছে বিশ্বজয়ের অপেক্ষায়। সেই ২০১১ সালে কাপ জিতে মুম্বাইয়ের মেরিন ড্রাইভে উৎসব করেছিল ভারত। তার ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা ভারতবর্ষে। সেই স্মৃতি রোহিতরা আবার ফিরিয়ে আনতে চান। জাসপ্রিত বুমরাহ আগুনে গোলা ছুড়তে প্রস্তুত হয়ে আছেন। ব্যাট নিয়ে প্রতিপক্ষকে কচুকাটা করার জন্য প্রস্তুত রোহিত-কোহলি-শুভমান-রাহুলরা।
এত বড় বড় প্রতিপক্ষের বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে বিশ্বকাপ জয় সহজ নয়। সাকিবরা তা জানেন। জেনেও যদি স্বপ্ন দেখেন, বুঝতে হবে লড়াইয়ের প্রস্তুতিও নিয়েছেন। কিন্তু বিশ্বকাপ দল নির্বাচন নিয়ে যে নাটক হয়েছে, তা অন্য কিছুর ইঙ্গিত দেয়। তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়া ভুল কি ঠিক, সে আলাপ অন্য কোনোদিন হবে। আজ বিশ্বকাপ শুরুর আগে কেবল স্বপ্নের কথা হোক। ১৬ কোটি মানুষ যে স্বপ্ন দেখছে অনেক দিন ধরে। সফল করার দায়িত্ব অবশ্য ১১ জনের। সাকিব ১১ জনের অন্যতম। আবার দলের নেতাও। পারবেন লড়াই জিতে আসতে?