কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৩, ১০:২৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ইসির ক্ষমতা খর্ব করে পাস আরপিও সংশোধনী বিল

ভোট বন্ধ ইস্যু
জাতীয় সংসদ ভবন। ছবি : সংগৃহীত
জাতীয় সংসদ ভবন। ছবি : সংগৃহীত

ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল পাস হয়েছে। বিরোধী দলের সদস্যদের আপত্তির মুখে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এ বিল পাস হয়।

বিরোধী দল দাবি করেছে, নির্বাচনের অধিকার খর্ব করে দলীয়করণের লক্ষ্যে এ আইনটি আনা হয়েছে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। ইসির যদি কামড় দেওয়ার ক্ষমতাই না থাকে, তাহলে সেই ইসি দিয়ে আমরা কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করতে পারি। প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দল নিজেদের স্বার্থে আরপিওতে কিছু সংশোধন করে। নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করতে আরপিও সংশোধনের দরকার নেই। দরকার নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ। অবশ্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০২৩’ উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিরোধী দলের সদস্যদের বাছাই কমিটিকে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নিষ্পত্তি হয়।

আরপিওর সংশোধনী অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করার পর কোনো আসনের পুরো ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না ইসি। যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আসবে, শুধু সেসব (এক বা একাধিক) ভোটকেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে। এরপর তদন্ত সাপেক্ষে ফলাফল বাতিল করে ওইসব কেন্দ্রে নতুন নির্বাচন দিতে পারবে ইসি।

বর্তমান আরপিও অনুযায়ী, অনিয়ম বা বিরাজমান বিভিন্ন অপকর্মের কারণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যদি মনে করে তারা আইনানুগ নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না, তাহলে নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে। এখন এ ক্ষমতা সীমিত করে ইসিকে শুধু ভোটের দিন সংসদীয় আসনের (অনিয়মের কারণে) ভোট বন্ধ করতে পারার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য ইসির কর্মকর্তাদের কেউ কেউ দাবি করেছেন, সংশোধনীতে ইসির ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এত দিন আইনের এ ধারায় অস্পষ্টতা ছিল। এখন কোন কোন ক্ষেত্রে ইসি ভোট বন্ধ করতে পারবে, তা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।

সংশোধনীতে আরপিওর ৯১ ধারার (এ) উপধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দের বদলে ‘পোলিং’ শব্দ প্রতিস্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘ইলেকশন’ শব্দ দিয়ে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া বোঝায়। অর্থাৎ তপশিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সময়টা হলো ‘ইলেকশন’। আর ‘পোলিং’ হলো শুধু ভোটের দিন। এ সংশোধনী পাস হলে নির্বাচন কমিশন অনিয়মের কারণে শুধু ভোটের দিন কোনো ভোটকেন্দ্র বা পুরো সংসদীয় আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু ‘ইলেকশন’ শব্দটি থাকলে ভোটের আগেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইসি ভোট বন্ধ করতে পারত। তাই এখানে তাদের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে। তবে আইনে ‘ইলেকশন’ শব্দটির সংজ্ঞাও পরিষ্কার নয়।

এ ছাড়া সংশোধিত আরপিওতে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা গণমাধ্যমকর্মী এবং পর্যবেক্ষকদের কাজে কেউ বাধা দিলে তাকে শাস্তির আওতায় আনার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ এবং টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সরকারি সেবার বিল পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আগে মনোনয়ন দেওয়ার সাত দিন আগে এসব ঋণ পরিশোধ করতে হতো।

এর আগে বিল বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, আমরা জানি নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলে যে কোনো নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু এ অধিকার খর্ব করা হলো। এখন কী করা হলো? তারা সেন্টারগুলো বন্ধ করতে পারবে; কিন্তু পুরো নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না। এটা হলে এ ইসি দিয়ে আমরা কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচনটা করাব। তাদের যদি বাইট করার মতো কিছু না থাকবে, তাহলে তো বসে বসে দেখবে।

গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, আপাতদৃষ্টিতে বিলটির উদ্দেশ্য মহৎ মনে হলেও আসলে ভিন্ন। প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দল নিজেদের স্বার্থে আরপিওতে কিছু সংশোধন করে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন মানুষের প্রত্যাশা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে যে, মানুষ নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়েছে। তারা ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় না।

মোকাব্বির খান আরও বলেন, দেশের মানুষ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ, দলীয় সরকারের অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে, তার সবই প্রশ্নবিদ্ধ। এ ধরনের নির্বাচন বাংলার মানুষ আর চায় না। মানুষ চায় একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।

জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ইচ্ছা থাকলে দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনেই সুষ্ঠু ভোট করা সম্ভব। ইসির মানসিকতার ওপর নির্ভর করে নির্বাচন। সোজা বাংলায় তাদের মেরুদণ্ড শক্ত কি না।

পীর ফজলুর রহমান বলেন, এ আইনে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। এটি ঠিক হয়নি। নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এসেও নির্বাচন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হয়নি। আগে যেখানে পুরো ভোট বন্ধের সুযোগ ছিল, সেটা বাদ দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নেওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বাহাত্তারের আদেশ বহাল থাকলে ইসি শক্তিশালী হতো। হুন্ডা, গুন্ডার নির্বাচনকারীরা ভয় পেত।

রেজাউল করিম বাবলু বলেন, নির্বাচনের অধিকার খর্ব করে দলীয়করণের লক্ষ্যে এ আইনটি আনা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমাদের আদর্শগত শত্রু বিজেপি, বললেন থালাপতি বিজয়

৩৮ বছরের শিক্ষকতা শেষে অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় প্রধান শিক্ষককে বিদায়

পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনার নাম হবে গণহত্যাকারী : আসিফ মাহমুদ

নির্বাচনে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে নানা চেষ্টা চলছে : তারেক রহমান

নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পাঁচ বাংলাদেশি ফুটবলার

অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

রিজার্ভ বেড়ে ৩০.৮৫ বিলিয়ন ডলারে

জাকসু নির্বাচন, ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ নিয়ে আসছে ছাত্রশিবির

ঢাকঢোল পিটিয়ে বেদখলে থাকা জমি উদ্ধার 

‘আর একটা পাথর সরানো হলে জীবন ঝালাপালা করে দেব’

১০

আমাদের দাবি না মানলে নির্বাচন হবে না : জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি

১১

মানুষ ভাত পাচ্ছে না আর উপদেষ্টারা হাঁসের মাংস খুঁজতে বের হচ্ছেন : আলাল

১২

বিচারককে ‘ঘুষ’, বারে আইনজীবীর সদস্যপদ স্থগিত

১৩

ট্রাক প্রতীক নিয়ে নিজ এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন আবু হানিফ 

১৪

শিক্ষককে ছুরি মারা সেই ছাত্রী এখন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে

১৫

নথি সরিয়ে ১৪৬ কোটি টাকার কর ফাঁকি, কর্মকর্তা বরখাস্ত

১৬

নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রাসঙ্গিকতা

১৭

আগামী সরকারে থাকবেন কিনা জানালেন ড. ইউনূস

১৮

বাঁশের পাতার নিচে মিলল ৩৭ হাজার ঘনফুট সাদাপাথর

১৯

একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে : মির্জা ফখরুল

২০
X