গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার ঘিরে চলমান দ্বন্দ্বের মধ্যেই কাউন্সিলের জন্য তপশিল ঘোষণা করেছেন দলটির নুরপন্থিরা। গতকাল বৃহস্পতিবার পুরানা পল্টনে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ তপশিল ঘোষণা করেন তাদের নির্বাচিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরিফুল ইসলাম। অন্যদিকে একই দিনে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে রেজা কিবরিয়ার অপসারণকে সম্পূর্ণ অবৈধ ও প্রতারণামূলক বলে দাবি করেন দলটির শীর্ষ ৯ নেতা, যারা কদিন আগেও সদস্য সচিব নুরের পক্ষে ছিলেন। এর ফলে গণঅধিকার পরিষদে সংকট আরও ঘনীভূত হলো।
১০ জুলাই জাতীয় কাউন্সিলের তপশিল ঘোষণা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরিফুল ইসলাম বলেন, ৬ জুলাই সকাল ১১টা থেকে ৭ জুলাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে। ৮ জুলাই যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৯ জুলাই বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রচার চালানো যাবে। ১০ জুলাই সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উচ্চতর পরিষদের ভোট গ্রহণ এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাতীয় কাউন্সিলের ভোট গ্রহণ চলবে।
নির্বাচনী বিধিমালা সম্পর্কে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা এবং জেলা ও মহানগর পর্যায়ের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা ভোটার বলে গণ্য হবেন। অনলাইন ও অফলাইনে ভোট প্রদান করা যাবে। এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারণা ও বিদ্বেষ ছড়াতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ড. রেজা কিবরিয়ার কথিত অপসারণ সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ অপসারণ প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি না এবং তিনি দলের আহ্বায়ক হিসেবে বহাল আছেন বলে মনে করি। সেইসঙ্গে আমরা ঘোষণা করতে চাই, ড. রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে যারা কাউন্সিলের দিন নির্ধারণ করেছেন তারা পরিকল্পিতভাবে দলকে ভাঙনের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছেন।’
নুরুল হক নুর দলের গঠনতন্ত্রের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কীভাবে রেজা কিবরিয়াকে অব্যাহতি দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যাও দেন ফারুক হাসান। তিনি বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার পক্ষে যারা রয়েছেন, কেবল তাদের বক্তব্য দলের অফিসিয়াল বক্তব্য হিসেবে গৃহীত হবে। নুরুল হক নুর বা বাকিরা কোনো সংবাদ সম্মেলন বা বিবৃতি দিলে তা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হিসেবে বিবেচিত হবে না।’
নুরের বিরুদ্ধে রেজা কিবরিয়া অর্থ লোপাটের যে অভিযোগ করেছেন, তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘নুরকে প্রতিমন্ত্রী করার অফার দিয়ে, ১০টি আসন দেওয়ার অফার দিয়ে সরকার পক্ষে নিতে চেয়েছে—এমন অভিযোগ রয়েছে। নুর সে অফার গ্রহণ করেছেন না প্রত্যাখ্যান করেছেন, তা এখনো তদন্তাধীন। পাশাপাশি ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকে কী কী আলোচনা করেছেন, তা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের নুর জানাননি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন ও জাকারিয়া পলাশ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব মো. আতাউল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সহকারী সদস্য সচিব মো. শামসুদ্দিন প্রমুখ।
এদিকে দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নুরুল হক নুর। গণঅধিকার পরিষদের ব্যানারে দলের একটি পক্ষের সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদের বড় কেন্দ্রীয় কার্যালয় আছে। যারা কার্যালয়ে যেতে পারেন না, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন কিছু লোকজন গণঅধিকার দাবি করে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তারা কী বলেছেন, সেটা মুখ্য বিষয় নয়।’
নুর অভিযোগ করেন, দলের পদবঞ্চিত, দলছুট ও সুবিধাবাদী নেতারা গণঅধিকার পরিষদকে ভাঙার জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘১০ জুলাই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের নবজাগরণ হবে। বেইমান, মীরজাফররা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে হারিয়ে যাবে।’
মন্তব্য করুন