প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান রেখেই আগামী সংসদ নির্বাচন হবে বলে এক দফা দিয়েছে ১৪ দলীয় জোট। সেইসঙ্গে এ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে বলে অভিমত জোটের নেতাদের। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এ জোট নির্বাচন ঘিরে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা ও নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেবে। সেপ্টেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচারে নামার আগেই জোটের শরিকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত করার তাগিদ দিয়েছেন জোটের নেতারা। গতকাল বুধবার গণভবনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সভায় এসব বিষয় উঠে আসে। মার্কিন প্রতিনিধিদলের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর নিয়ে সভায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে কোনো দেশ নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিলে তা সামাল দিতে কৌশলী হবে সরকার ও ১৪ দলীয় জোট। এ ছাড়া বাংলাদেশে ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে
ইসলামী ও এবি পার্টির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন জোটের নেতারা। সূত্র জানায়, জনগণের স্বার্থ পরিপন্থি কোনো ধরনের অসাংবিধানিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোট কখনো আপস করবে না। আগামী নির্বাচন সাংবিধানিক উপায়েই হবে এবং সেই নির্বাচনের নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হবে না বলে একদফায় সম্মত হয়েছে ১৪ দলের শরিকরা। সভায় এ বিষয়ে একমত পোষণ করে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসীম সাহসিকতা, প্রজ্ঞা, সততা ও দক্ষতা নিয়ে যখন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন তা থেকে জাতিকে বিচ্যুত করার এক সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে। চক্রান্তকারীরা অপশক্তির সহায়তায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপকে উৎসাহিত করছে। একটি চিহ্নিত মহল দেশের সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের লক্ষ্য সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ও চলমান উন্নয়নের গতিধারাকে ব্যাহত করা। পাশাপাশি চক্রান্তকারীরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভণ্ডুল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তবে ১৪ দলীয় জোট সেসব ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করবে। ১৪ দল সব ধরনের অপশক্তিকে মোকাবিলা করবে। নেতারা আরও বলেন, যথাসময়েই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর সেই নির্বাচনে ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেবে। এজন্য জোটগত প্রচার সেপ্টেম্বরে শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে আসন ভাগাভাগি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় তা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্য চূড়ান্ত করতেও দাবি করেন অনেকে। বৈঠকে ১৪ দলের নেতারা ইইউর সফররত দলের জামায়াত ও এবি পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, জামায়াত হলো যুদ্ধাপরাধীদের দল, তাদের সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধি বৈঠক করে গর্হিত কাজ করেছে। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গণহত্যার সঙ্গে জড়িত নাৎসিদের সঙ্গে কেউ তো বৈঠক করতে পারে না। তবে কেন তারা যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক করল। আর এবি পার্টি তো জামায়াতের একটি অংশ। এ বিষয়ে রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু সমালোচনা করেন। কূটনীতিকদের সমালোচনা করে নেতারা আরও বলেন, বিএনপি বিদেশিদের দেখানোর জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলেও ঠিকই পদযাত্রার নামে তারা গণ্ডগোল বাধিয়েছে। বিদেশিদের দেখানোর জন্য তাদের লাশের প্রয়োজন ছিল, তাও তারা করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা যে ভিসা নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ সময় ১৪ দলের নেতাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্বাধীন দেশ, মাথা উঁচু করে চলব। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গেই বৈরিতা নয় নীতিতে চলব। কিছু কিছু দেশ আমাদের স্যাংশনও দিতে চায় আবার তাদের পণ্য কেনার জন্য চাপও দেয়। কোনো দেশ যদি নতুন করে স্যাংশন দেয়, তাহলে তা কৌশলে সামলাতে হবে। সভায় ঢাকা-১৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার বিষয় এলে সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় দলের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈঠকে জোট নেতারা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তারা সরকারপ্রধানকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন। বিএনপির আন্দোলনকে ছাড় না দিতেও জোটের কেউ কেউ পরামর্শ দেন। জোট নেতারা বলেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, সেটা নিয়েও ভাবতে হবে। সেক্ষত্রে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নিয়েও গুরুত্ব আরোপ করেন। বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বক্তব্য দেন। সভায় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, গণ-আজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন