শাহ আলম খান
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ০২:৩৬ এএম
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৪, ০৭:২৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভয় তাড়াতে ব্যয়ে লাগাম

লক্ষ্য পূরণে সংশয়
ভয় তাড়াতে ব্যয়ে লাগাম

বড় দুঃসময় যাচ্ছে অর্থনীতির। শুধু ডলারের সংকটই দীর্ঘ সময় ধরে ভোগাচ্ছে পুরো অর্থনীতিকে। এতে জ্বালানি, সার ও বিদ্যুতের বাড়তি দাম গেড়ে বসেছে। তবু আছে অতিরিক্ত চাহিদার চাপ। পরিস্থিতি মোকাবিলা ও দাতা সংস্থার চাপে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়েছে। প্রণোদনার হারও যৌক্তিক করা হচ্ছে। এসবের প্রভাবে বেড়েছে অভ্যন্তরীণ পণ্য উৎপাদন ও ব্যবসার খরচ, আর আমদানি হয়েছে প্রায় ডাবল ডিজিটের মূল্যস্ফীতি। যার উত্তাপে দিশেহারা সীমিত আয়ের মানুষ।

এমন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের চতুর্থ মেয়াদে ২২তম বাজেট ঘোষিত হয়েছে, যা দেশে ৫৪তম বাজেটও বটে। প্রথমবারের মতো অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া ৮১ বছর বয়সী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২১০ পৃষ্ঠার এই বাজেট বক্তব্যে যে অভিপ্রায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, তাতে মোটাদাগে তিনি দেশের অর্থনীতিকে এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে আগের সেই সুসময়ে প্রত্যাবর্তন এবং জনজীবনে স্বস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। একই সঙ্গে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরে—‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ করেছেন, যার বাস্তবায়নের কাজ এই বাজেট থেকেই শুরু করতে চান। আর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এজন্য বাজেটীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে আগাম প্রস্তুতি, প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা এবং সেই অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যয় করারও সদিচ্ছা দেখিয়েছেন। তবে পাশাপাশি এ বাজেটের বিভিন্ন রাজস্ব পদক্ষেপের মাধ্যমে দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তপূরণের সুস্পষ্ট নমুনার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

এমন এক সময় এ বাজেট দেওয়া হলো, যেই পরিস্থিতিতে ২০২৬ সাল নাগাদ এলডিসি-উত্তরণ, ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের মর্যাদা এবং ২০৪১ সালে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার মতো উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যেতে হবে। একই সঙ্গে ধাপে ধাপে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নসহ আগামী পাঁচ বছরের মেয়াদান্তে অর্থনৈতিক যাত্রা নির্ধারণের বিষয় রয়েছে। এই বহুমুখী চাপ সামলে অগ্রবর্তীমূলক অর্থনীতির পথে অগ্রসর হওয়া যে কোনো অর্থমন্ত্রীর জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এ এইচ মাহমুদ আলীর জন্য তো কাজটি আরও কঠিন, কারণ তাকে প্রস্তাবিত এই বাজেটে এতসব কিছুর বাস্তবিক সমন্বয় ঘটাতে হবে। সেটি কতটা করতে পেরেছেন, সব মহলে এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যেখানে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। এতে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে।

এর আগে সকালে একসঙ্গে হেঁটে জাতীয় সংসদে প্রবেশ করেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সেখানে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এই বাজেট জাতীয় সংসদে প্রস্তাবের জন্য অনুমোদন করা হয়। পরে সংসদের বাজেট অধিবেশনে যোগ দেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত এই বাজেটে এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে রাখা মোট ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে—দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া; কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা; আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা; লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি; দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো; ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা; সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজেটের আকার অন্যান্য বারের তুলনায় ছোট হলেও সেটি সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই বাস্তবতায় আকার ছোট বলা হলেও আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ব্যবধান রাখা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। যার পুরোটাই ধার করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের আগে অর্থমন্ত্রী তার প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, অর্থনীতি ঠিক করতেই বাজেট ছোট করা হয়েছে। অকারণে অর্থ ব্যয় বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। তবে যতটুকু সম্ভব ভালো করার চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করবে এবারের বাজেট।

বাজেটের কিছু উদ্যোগে ইতিবাচক দাবি করলেও বেসরকারি আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ব্যাংক খাতের অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধিকে দেখছেন মূল্যস্ফীতির উসকানি হিসেবে। তিনি জানান, যেখানে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি উৎস থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সেটি বৈদেশিক উৎসের ক্ষেত্রে ঠিক থাকলেও অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া ঋণের লক্ষ্যমাত্রা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। এটা দেশে ব্যাংক ব্যবস্থায় আরও চাপ তৈরি করবে, যা প্রকারান্তরে মূল্যস্ফীতিকেই উসকে দেবে। যদিও সরকার চায় বাজেটীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে।

এদিকে ব্যয় কমাতে অর্থমন্ত্রী তার প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের আগামী তিন বছরের মধ্যে ভর্তুকি পুরোপুরি পর্যায়ক্রমে তুলে দেওয়ার এবং বিভিন্ন আর্থিক খাতে সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন। এ ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখা, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি, মানবসম্পদ ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সেবা সহজ করতে সরকারের জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে বাজেটে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন বলে স্পষ্ট হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বিশ্বাস করেন, এর মাধ্যমে আগামী অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নসহ সরকারের নতুন ভিশন স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পথে চলতে সহায়তা করবে। এসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রী সরকারের আয় বাড়ানোর নানা কৌশল প্রয়োগের পরিকল্পনাও পরিষ্কার করেছেন। এজন্য স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নীতি ও কর সহায়তা প্রদান, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতি, রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, সম্পদের পুনর্বণ্টন ও বৈষম্য হ্রাস, দেশীয় শিল্পের সংরক্ষণ ও বিকাশ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণে নীতি ও কর সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ারও বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী করদাতা, ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব করনীতি প্রণয়নের মাধ্যমে রাজস্ব আয়ে প্রত্যক্ষ করের অবদান ২০৩১ সালের মধ্যে ৪২ শতাংশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীতকরণে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, করনেট সম্প্রসারণ ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা জিডিপির ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

রাজস্ব আয় বাড়ানোর কৌশল বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে বলা হয়, চলমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং অভ্যন্তরীণ সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব খাতের যুগোপযোগী সংস্কার এবং সেই লক্ষ্যে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, কর নেট বৃদ্ধি, করবহির্ভূত রাজস্ব আদায় এবং প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে, যাতে পর্যাপ্ত সম্পদের জোগান নিশ্চিত করা যায়। বাজেট ঘাটতি ধারণযোগ্য পর্যায়ে রেখে ঘাটতি নির্বাহে বৈদেশিক উৎসের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করা হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়কর আইনে কর প্রণোদনা সংক্রান্ত একটি অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিধান অনুযায়ী, দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট করহার এবং নগদসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫% কর পরিশোধ করলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। তিনি আশা করছেন, এর মাধ্যমে দেশে অপ্রদর্শিত অনেক অর্থ অর্থনীতির মূল স্রোতে আসবে এবং উৎপাদনশীল খাতে ভূমিকা রাখবে। অন্যদিকে এ ছাড়া বাজেটে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ২৭টি নিত্যপণ্যসহ সাধারণের ব্যবস্থা বেশ কিছু পণ্যে করভার কমানো হয়েছে। আবার রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির জন্য কিছু খাতকে করের আওতায় আনা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বাজেট প্রস্তাবে তিনি বলেন, দেশের বাজারে সরবরাহ শৃঙ্খলে ত্রুটি বাংলাদেশে এ উচ্চ মূল্যস্ফীতির একটি প্রধান কারণ। তবে আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার অবচিতি (মান কমে যাওয়া)। ২০২১-২২ অর্থবছরে করোনা অতিমারির প্রকোপ কমে এলে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ওই বছরে বাণিজ্য ঘাটতি ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হারের ওপর চাপ তৈরি হয়। তবে সরকার চেষ্টা করছে এর থেকে উত্তরণের। এজন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে এবং রাজস্বনীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। তদুপরি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি সীমিত পরিসরে চালু রাখা হলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে নিম্ন আয়ের মানুষের সুরক্ষা প্রদান কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হবে। গৃহীত এসব নীতিকৌশলের ফলে আশা করছি আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নেমে আসবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসৃজন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলাসহ সরকারের অগ্রাধিকার খাতসমূহে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। এজন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা ছিল।

অর্থমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের দর্শনকে দর্পণে রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রতিটি খাতে আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী ভৌত, সামাজিক ও প্রযুক্তি অবকাঠামো বিনির্মাণের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে, যাতে স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার এবং সর্বোপরি স্মার্ট অর্থনীতির সুফল দেশের সর্বশেষ প্রান্তে থাকা নাগরিকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়। সমুদ্র তলদেশের খনিজসম্পদ ইত্যাদি আহরণসহ সুনীল অর্থনীতির সব সম্ভাবনার সদ্ব্যবহারের ওপর এবারের বাজেটে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে।

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, সরবরাহ ব্যবস্থার গুরুত্ব বিবেচনায় যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন বাবদ আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮০ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে ৮৫ হাজার ১৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল।

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাজেটে ১৯১টি পণ্যের সাপ্লিমেনটরি ডিউটি এবং ৯১টি পণ্যের রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। আবার মেইড ইন বাংলাদেশ স্লোগানকে সামনে রেখে বাজেটে দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণ সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। তবে এর সুষম উদ্যোগ কতটা অর্থবছর শেষে রাজস্ব আয়ের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় ফল দেবে, সেটি নিয়ে সংশয় তো রয়েছেই।

অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য হিসেবে মূল্যস্ফীতি কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বললেও এবারের বাজেটে মোবাইল, ইন্টারনেটসহ বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে খেয়াল করতে হবে যে আইটেমগুলোর ওপরে কর বসানো হয়েছে, সেটা আল্টিমেটলি রাজস্ব জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর পরও মূল্যস্ফীতি কমাতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখবে না। এতে শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামাতে পারবে কি না, এ বিষয়ে সন্দেহ আছে। তবে বাজেটের মূল যে নীতি পরিবর্তনগুলো করা হয়েছে, সেগুলো ঠিকই আছে। ব্যাংক খাতে সুনির্দিষ্টভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামী দিনে আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাবে। একইভাবে অর্থ পাচার এবং হুন্ডির বিষয়েও বাজেট বক্তৃতায় কোনো কিছু বলা হয়নি। হুন্ডির বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে, খেলাপি ঋণ কমাতে এবং ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। নতুবা বাজেটের অনেক লক্ষ্য অর্জন সংশয়েই থেকে যাবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসরায়েলকে এক হাত নিল ফ্রান্স-জার্মানি

দেশের চার এলাকাকে ‘অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন’ ঘোষণা

মাঝরাতে মিথিলার খুশির খবর

‘ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার’ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

সাব ব্রাঞ্চ ইনচার্জ পদে ইউসিবি ব্যাংকে চাকরির সুযোগ

রাজধানীতে আজ কোথায় কোন কর্মসূচি

এসএমসিতে চাকরির সুযোগ, আজই আবেদন করুন

সিদ্ধিরগঞ্জে বিস্ফোরণে নাতির পর নানির মৃত্যু

ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন আজ

আজ ঢাকার আবহাওয়া কেমন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১০

২৬ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১১

ডাকসু নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু আজ

১২

তিন সহযোগীসহ ‘মাদক সম্রাট’ শাওন গ্রেপ্তার

১৩

ফের সৈকতে ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

১৪

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৫

২৬ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

পাঁচ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ

১৭

ক্ষমতায় গেলে এক কোটি কর্মসংস্থান করবে বিএনপি : টুকু

১৮

ড. ইউনুস কি ভালো ভোট করতে পারবেন : মান্না

১৯

ষড়যন্ত্রকারীদের সতর্কবার্তা দিলেন আমিনুল হক

২০
X