

ভালোবাসার নানা ধরন ও প্রকার আছে, তবে সবচেয়ে নিরেট ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আল্লাহর ভালোবাসা। একজন মুমিনের জীবনে আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করা সবচেয়ে বড় কামনা ও প্রত্যাশিত বিষয়। সংক্ষিপ্ত এ জীবনের সবটুকু দিয়েও যদি লাভ করা যায় সে ভালোবাসা, তবে এটাই মুমিনের পরম সৌভাগ্য ও বিশাল প্রাপ্তি। পবিত্র কোরআনে মুমিনের এমন কিছু গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। যারা এসব গুণের অধিকারী আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। আল্লাহতায়ালা যেসব গুণধারীকে ভালোবাসেন, তাদের আলোচনা তুলে ধরা হলো:
তাকওয়া অর্জনকারী: একজন সফল মুমিনের যত গুণাগুণ থাকা অপরিহার্য তার অন্যতম একটি তাকওয়া। তাকওয়ার গুণ যারা অর্জন করে আল্লাহতায়ালা তাদের ভালোবাসেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকওয়া অবলম্বনকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা তাওবা: ৪)
ইনসাফকারী: দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্যতা ও সুশৃঙ্খলতা ঠিক রাখার জন্য মানুষের মধ্যে পরস্পরে যে গুণাগুণ থাকা জরুরি, তার অন্যতম একটি ইনসাফ বা ন্যায়পরায়ণতা। যারা এই গুণ অর্জন করে আল্লাহতায়ালা তাদের ভালোবাসেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের সঙ্গে সদাচরণ করতে ও তাদের প্রতি ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা: ৮)
সৎকর্মকারী: আল্লাহর বিধিবিধান মোতাবেক জীবনযাপন করা একজন মুমিনের সফলতা। যারা আল্লাহর বিধিবিধান মোতাবেক জীবনযাপন করে তারাই সৎকর্মকারী। আর আল্লাহতায়ালা সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআন ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৪)
ধৈর্য ধারণকারী: ইহকাল ও প্রকার উভয় জগতে সফলতা আর সৌভাগ্যতা অর্জনের জন্য একজন মুমিনের যেসব গুণ থাকা জরুরি, তার অন্যতম একটি হচ্ছে ধৈর্য। সুখে-দুঃখে দ্বীন-দুনিয়ার উভয় ক্ষেত্রে সফলতার জন্য ধৈর্যের বিকল্প নেই। যারা ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহতায়ালা তাদের ভালোবাসেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ধৈর্য ধারণকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৪৬)
আল্লাহর ওপর ভরসাকারী: তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ বা আল্লাহর ওপর ভরসা করা মুমিন বান্দার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য, যা আল্লাহতায়ালা অত্যন্ত পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর ওপরই ভরসা রেখো, যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হও।’ (সুরা মায়েদা: ২৩)। আরেক আয়াতে এসেছে, ‘আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। অতএব, মুমিনরা আল্লাহর ওপর ভরসা করুক।’ (সুরাতাগাবুন: ১৩)। আরও এসেছে, ‘মুমিন তো তারাই, যাদের সামনে আল্লাহকে স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় ভীত হয়, যখন তাদের সামনে তার আয়াতগুলো পড়া হয়, তখন তা তাদের ইমানের উন্নতি সাধন করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর ভরসা করে।’ (সুরা আনফাল: ২)। এসব আয়াত থেকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, মুমিনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ বা আল্লাহর ওপর ভরসা করা। আর তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ বা আল্লাহর ওপর ভরসার অর্থ হলো এই, যে কোনো কাজে শুধু নিজের যোগ্যতা এবং ক্ষমতার ওপর ভরসা না করে একমাত্র আল্লাহর ওপরই ভরসা করা। যারা এই গুণ বা বৈশিষ্ট্য অর্জন করে, আল্লাহতায়ালা তাদের ভালোবাসেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৫৯)
পবিত্রতা অর্জনকারী: পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা মানুষের স্বভাবজাত একটি বিষয়। যারা সবসময় পবিত্রতার সঙ্গে থাকে, আল্লাহতায়ালা তাদের ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সেসব লোককে ভালোবাসেন, যারা তার দিকে বেশি বেশি তওবা করে এবং ভালোবাসেন তাদের, যারা বেশি বেশি পবিত্রতা অর্জন করে।’ (সুরা বাকারা: ২২২)
তওবাকারী: গুনাহমুক্ত জীবন মুমিনের একমাত্র চাওয়া। শয়তানের ধোঁকা নফসের প্ররোচনা ও পরিবেশের কারণে নানা সময় গুনাহ হয়ে যায়। এ গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার অনন্য মাধ্যম তওবা। তওবা করার মাধ্যমে গুনাহমুক্ত হওয়া যায়। এর মাধ্যমেই মহান আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন হয়। তওবা আরবি শব্দ। এর অর্থ ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা। ইসলামী পরিভাষায়, পাপের কাজ ছেড়ে দিয়ে মহান আল্লাহর রাস্তায় ফিরে আসাকে তওবা বলে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সেসব লোককে ভালোবাসেন, যারা তার কাছে বেশি বেশি তওবা করে।’ (সুরা বাকারা: ২২২)
লেখক: ইমাম ও খতিব
মন্তব্য করুন